![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চার’পা বিশিষ্ট্য পশুদের রাজ্য। খুব ভালই চলছিল তাদের রাজ্য ও সরকার । রাজা আছে, মন্ত্রী আছে, আছে ডাক্তার কবিরাজও। রাজ্যে যে সব পশু বসবাস করে সব পশুর চার চারটি করে পা আছে। পশুগুলো পরিশ্রমী ও স্বাবলম্বী । খাদ্যের কোন সংকট তাদের নাই। এই রাজ্যের পশুদের আরও ভাল গুণ হল অল্পতে তুষ্ট।
একক ক্ষমতা বলে মহিষ ঐ পশু রাজ্যের রাজা। আর সেই রাজ্যে আছে গাধা ও গণ্ডারসহ অনেক পশু। রাজ্যে গর্ধব চন্দ্র মহাশয় যাকে গাধা নামে ডাকা হয়ে থাকে। সে হল রাজ্যে বড় সমস্যা। কোন সময় কোন কাজ করতে হবে। সে নিজেও জানে না। অকল্পনীয়, অপ্রত্যাশিত, আজব কিছু ঘটনা ঘটানোই তার কাজ। একই সাথে গন্ডার এতোই অলস যে কোন কাজই করে না । দেশের জন্য গণ্ডার এখন বোঝা। গণ্ডারে এই অলসতা দিন দিন বেড়েই চলছে
এই অবস্থা দেখে ঘোড়া বলতেছে যে, আগে দেখতাম মানুষ অলস । শুধু আমার পিঠের উপর বসে বসে সব কাজ করতো। আমার যে কি কষ্ট হতো। মাঝে মাঝে পিঠ থেকে ফেলে দিতে ইচ্ছা হতো । দিতামও ফেলে অমনি আমরা উপর অত্যাচার নেমে আসতো। আর এখন দেখি গণ্ডার সেই মানুষের চেয়েও বেশি অলস। একে তো এই রাজ্যে রাখা ঠিক হবে না।
ঘোড়া অমনি রাজাকে ম্যাসেজ করলো। সে রাজাকে বলল। যে এই মূর্খ্য অলস গন্ডারকে রাজ্য ছাড়া করতে। না হয় দেশের সবাইকে অলস বানিয়ে ছাড়বে। ঘোড়ার ম্যসেজের প্রতি উত্তরে রাজা মহিষ ঘোড়াকে ইমেল করে জানালো যে, দেশ ছাড়ার চেয়ে রাজ্য সরকার চিন্তা করছে এই অলস কে কি করে পরিশ্রমী করে গড়ে তোলা যায়। অচিরেই এই ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
সত্যি সত্যি রাজ্য সরকার মহিষ প্রজ্ঞাপন জারি করলেন। যে বা যারা অলস গণ্ডারকে জাগিয়ে তুলতে পারবে তাকে রাজ্য থেকে উপহার দেয়া হবে। এই কথা শুনে সবাই চেষ্টা শুরু করে দিলো। গরু তার শিং দিয়ে গুতা মারে উঠানোর চেষ্টা কিন্তু শিং ভেঙ্গে যায় গণ্ডার উঠেনা। ছাগল তারা মাথা দিয়ে দাক্কা মারে কাজ হয় না। গাধা দাড়িম দাড়িম গণ্ডারের শরীরের উপর পরে কিন্তু গণ্ডার হুঁশও করে না। একে একে সব পশুই চেষ্টা করে ব্যার্থ হলো। রাজা মহিষ মনে মনে ভাবে যে তাহলে কি গণ্ডারকে উঠানো যাবে না?
এবার ঘোষনা নতুন করে দিয়ে পশু রাজ্যের রাজা মহিষ বলল “যে তাহার রাজ্যে সবচেয়ে অলস গণ্ডারকে জাগিয়ে তুলতে পারবে তাহাকে উপযুক্ত পুরস্কারে পুরস্কৃত করা হবে।” এমন কী তাদেরকে রাজ্যে মন্ত্রী করা হবে। পুরস্কারের আশায় অনেকেই এল। অনেকেই চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়ে চলে গেলো, কিন্তু কোন মতেই গণ্ডারকে তুলতে পারা গেল না।
অবশেষে এল শিয়াল। শিয়ালের নিকট এই সংবাদ কানে যায়। তাই সে চলে আসে মন্ত্রী হয়ার আসায়। সে নিজে মনে মনে ভাবে সারা জীবন আমাকে কেউ পশু হিসাবেই মেনে নেয় না । চোর মনে করে জঙ্গলেই আমার বাসা।গণ্ডারকে জাগিয়ে তূলার ফলে যদি একবার সরকারে প্রবেশ করতে পারি । তাহলে আমাকে আর পায় কে । যে ভাবনা সে কাজ। সে সরকার প্রধানের নিকট খবর দিলো যে আমি পারবো। তবে কেউ যেন আমাকে চোর বা সন্ত্রাসী না বলে । রাজ্য সরকার তার শর্ত মেনে নেয়। শিয়াল এবার নেমে পরে গণ্ডারকে জাগিয়ে তূলার জন্য ।
কিভাবে শিয়াল গণ্ডারকে জাগিয়ে তুলবে এই দৃশ্য এক নজর দেখার জন্য সব পশু একই স্থানে জড়ো হলো। সবার মনে প্রশ্ন যেখানে সব পশু ফেল। এমন কি হাতি ঘোড়া পর্যন্ত। সেখানে শিয়াল কিভাবে গণ্ডারকে জাগিয়ে তুলবে। এক পশু অন্য পশুকে কানে মুখে বলাবলি করছে। শিয়াল তো ভাল কথা কারো পক্ষে গণ্ডারকে জাগিয়ে তুলতে পারবে না।
সে যাই হউক। শিয়াল কারো কথায় কর্নপাত না করে সে নিজের কাজ করে যাচ্ছে। সে কিছুক্ষণ গণ্ডারে আশে পাশে এসে পরীক্ষা করে দেখে। অতপর একখানা লাঠির উপর চিকন দাঁড়ালো লোহা লাগিয়ে নেয়। সে পাছায় নরম স্থানে শক্তি দিয়ে দেয় এক খোচা। অমনি ভ্যা করে দাড়িয়ে যায় গণ্ডার । তা দেখে পশুরা লাফিয়ে ওঠে। কিন্তু গণ্ডার দাড়িয়ে দেখে রাজ্যের সব পশু এখানে উপস্থিত। একটু লজ্জা পায় সে। তার মনে প্রশ্ন আসে এই পশু এখানে কেন?
এই করতে করতে আবার শুয়ে পড়ে। শিয়াল আবার দেয় খোঁচা। এভাবে গণ্ডার যতবার শুয়ে পড়ে ততবার শিয়াল দেয় খোঁচা।
বিরক্ত হয় গণ্ডার!
এই শিয়াল ? কি হয়েছে তোর।
শিয়াল বলে- সরকারের নির্দেশ। আমার করার কিছু নাই।
তুই আর শুইতে পারবি না।
গণ্ডারের এই অবস্থা দেখে ছাগলের মায়া লাগে সে কানেমুখে গণ্ডারকে বলে দেয়। আর গন্ডার দাঁড়িয়ে থেকে এর পর রাগ করে চলে যায়। সব পশু খুশিতে মাটিতে গড়াগড়ি খেতে থাকে । অতপর প্রতিশ্রুতি মত শিয়ালকে পুরস্কৃত করা হয়। তাকে করা হয় মন্ত্রী।
বনের অন্যান্য পশুপাখি শিয়ালের ভাগ্যে ঈর্ষা অনুভব করিতে শুরু করিল। তাহারা এত কষ্ট করে রাজাকে তৈল মর্দন করে রাজার শুভদৃষ্টির আওতায় আসতে পারে নাই। আর শিয়াল কি না এক খোঁচায় গন্ডারকে জাগিয়ে রাজা মহিষের মন জয় করে নিলো।
এটা কি মেনে নেয়া যায় ?
যদি খোঁচা দিয়ে মন্ত্রী হওয়া যায় তাহলে আমরাও খোঁচাখুচি শিখব।
প্রয়োজনে খোচার উপর আনার্স করবো, মাস্টার্স করবো, এমনকি পি এইচ ডি করবো। যা ভাবা, তাই কাজ। শুরু হইল খোঁচাখুচি। এ ওকে খোচা দেয়, তো ও দেয় সে কে। খোঁচার মহাৎসব শুরু হলো সারা রাজ্যে। এই খোঁচাখুচিতে সব থেকে এগিয়ে জনাব গর্ধব চন্দ্র
সাহা মানে গাধা।
আর যাবে কোথায়?
যাকে পায় তাকেই খোচায়। একদিন গরু মহাশয় ঘুমাইয়া ছিলো। গাধা নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারল না। দিল এক খোঁচা। আর গরু দিলো দোড়। সে কি থামে। না কিছু মানে। গরুর নাকি সুরসুরি বেশি আবার ভয়ও বেশি । আর গাধার খোচায় এই দু’টাই কাজ করেছিলো এক সাথে । ফলে গরু পাগলের মতো দোড়াদোড়ি করে দিলো।
একে তো গরু মহাশয়ের কাচা ঘুম ভেঙ্গে গেছে, তার উপর ক্ষুধাও লেগেছিল। ছিলো ভয় ও শুরশুরি। আর গাধা দেরী না করে গরু মশাই কে দিল খোঁচা। সেই খোঁচায় নিরিহ হরিণের এক পা গেল কেটে। পা’ কাটা হরিণ দেখে গরু মহাশয় খিদা, দুঃখ, কষ্ট ভুলে হাসতে লাগলো।
সহজ সরল হরিণ আর কি করবে?
গিয়ে রাজা মহিষ সাহেবের কাছে নালিশ জানাইলো। মহিষ দেখিল, বিষয়টা গুরুতর।
ডাক দিলেন রাজ্যের পুলিশ ভেড়াকে । ভেড়া রাজা মহিষকে বলল যে, সারা রাজ্য খোঁচাময় হয়ে গেছে। সবাই কাজ কর্ম বাদ দিয়া খোঁচাখুচিতে ব্যস্ত। সবাই পরোপকারও ভুলে গেছে। কেউ বিপদে পড়লে তাকে সাহায্য করা বাদ দিয়া খোঁচা মারিতে থাকে। এতো বেশি খোঁচাখুঁচি যে, আমরা এটা বন্ধ করতে পারবো না। কারন আমরাও মাঝে মাঝে খোঁচাখুঁচি করি। মহিষ চুপ বেয়াদব। দূর হও! আমার থেকে, বলে বের করে দিলো পুলিশ ভেড়াকে।
রাজা অবাক। ব্যাপার খানা কি? আমার রাজ্যে খোঁচাখুঁচি? অতএব খোঁচা বন্ধ করতে হবে। ঘোড়াকে ডাকা হলো। রাজ্যের সেনাবাহিনী ঘোড়া। সাথে বনের বানরকে ডাকা হলো। বানরকে প্রধান করিয়া তিন সদস্য বিশিষ্ঠ তদন্তকমিটি গঠন করা হলো। অনেক চড়াই উৎরাই পেড়িয়ে তদন্ত কমিটি অবশেষে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করলো। তাহাতে লেখা, ”রাজা মহাশয় এই রাজ্যে খোঁচাখুঁচি বন্ধ করা যাবে না। কারণ মানুষের মধ্যে যে খূচাখুচির সভাব আছে তা আজ পশুদের মধ্যে ভর করছে।
তাই আমাদের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটির সুপারিশ করতেছি। আগে মানুষের দীর্ঘ দিনের খোঁচাখুচি বন্ধ করতে হবে। তাহলে পশুদের খোঁচাখুঁচি অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যাবে।
পশু রাজ্যের রাজা মহিষ আরও চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তিনি এবার হাতিকে ডাকলেন । তার কাছে জানতে চাইলেন হে হাতি!
তুমি মানুষের সাথে ওঠা বসা কর।
তুমি বলো মানুষের মধ্যে আসলে কিসের খোঁচাখুঁচি।
হাতি বলল আপনি শুনে ঠিক থাকতে পারবেন কি?
মহিষ বলল হ্যা, আমি পারবো, তুমি বলো।
হাতি বলল- মানুষের মধ্যে খোঁচাখুঁচি বহু প্রকার আছে । এই যেমন- রাজনৈতিক খোঁচাখুঁচি, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি। প্রত্যেকটি আবার প্রকার আছে যেমন- ধর্মীয় এর মধ্যে আছে- পীর- আহলে হাদিস, তাবলীগ, কাওমী খোঁচাখুঁচি। ব্যক্তি ব্যক্তিকে, দল দলেকে, মতবাদ মতবাদকে, সরকার জনগণ, আস্তিক-নাস্তিক, এক দেশ অন্য দেশকে। মানুষের মধ্যে এখন আর কেঊ মানুষ নেই। সবাই কাফির- মুশরিক হয়ে গেছে। তারাই বলে- আমি না এই যে বলে অপরকে তুই কাফির আর ওপরে বলে তুই কাফির, তাহলে কে মুসলিম? আবার বলে তুই মানুষ না ইন্ডিয়ান অপরে বলে তুই পাকিস্তানি? তাহলে মানুষ কে?
মহিষ হাতির কথা শুনে বলে ওঠে- হায় হায় কি বলো তুমি,
হাতি হ্যাঁ সত্যিই।
মহিষ তাহলে।
গন্ডার হঠাৎ বলে উঠে আমি এই কারনেই অলস ঘুমিয়ে থাকি। যাতে এই খোঁচাখুঁচি থেকে বেঁচে যাই। সব পশু হো হো করে হেসে ওঠে।
ঘোড়া বলে আমি এখনও তো মানুষের ভীড়ের মধ্যে চলি কিন্তু মানুষে মানুষে যে ব্যবহার তা শুনে পালাতে মন চায় । শুধু পারি না আমাকে বেঁধে রাখে তাই।
ঘোড়া মহিষকে লক্ষ করে বলছে রাজা মহাশয় আপনি কক্ষনো দেখছেন মহিষ মহিষকে মেরে ফেলতে। মহিষ বলে না তো!! ছাগল ছাগল কে বা গরু ছাগলকে এই রাজ্য থেকে বের করে দিতে । মহিষ বলে না!! শুধু এটাই না পশুদের মধ্যে যে আচারন নাই এদের মধ্যে সব আছে। মানুষ এখণ পশুর চেয়ে খারাব। মানুষ যদি খারাপ হয় তাহলে তারা পশুর চেয়ে খারব বেশি হয়।
হাতি এসে বলে মহিষকে আসেন আমরা মানুষের জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করি। কারন আমরা কোন না কোন ভাবে মানুষের ঊপকার পাই। সবাই রাজি হলো আর পশু মানুষের পরস্পারিক খোঁচাখুঁচি থেকে মুক্ত থাকার জন্য দোয়া করা শুরু করলো............।।
১০ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৮:৫৯
প্রাইমারি স্কুল বলেছেন: আমি ভাল লেখক না , চেষ্টা করছি সমাজের চিত্রটা তুলে আনতে, ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য
২| ১০ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৮:৫৮
প্রাইমারি স্কুল বলেছেন: আমি ভাল লেখক না , চেষ্টা করছি সমাজের চিত্রটা তুলে আনতে, ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১২:১৬
শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: পশু রাজ্যের বর্ণনা এবং চরিত্র খুব সুন্দর লেগেছে। শেষে একটা ম্যাসেজ ( বার্তা দিয়েছন) যা লেখার পূর্ণতা দান করেছে।