![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্বার্থপর মানুষ
৬ জানুয়ারি ২০১৪ সোমবার বিকেল ৪টা এয়ারটেল অফিস পিঙ্কসিটি গুলশান-২ ঢাকা
প্রিয় মৃন্ময়ী,
মনটা ভালো নেই! বিমর্ষ, বিষণ্ন! বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নির্বাচনের নামে জাতিকে এক হাস্যকর নাটক উপহার দিলো! এই কলঙ্কের নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য লজ্জ্বা! আওয়ামী লীগের সমর্থকদের লজ্জ্বা! সর্বোপরি সমগ্র জাতির জন্য লজ্জ্বা!
যে দুর্নামটা আওয়ামী লীগের কখনোই ছিল না, সেই দুর্নামই স্বেচ্ছায় সাদরে অর্জন করল শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ভোট নামক প্রহসন অনুষ্ঠানের দুর্নাম ছিল শুধু বিএনপি-জাতীয় পার্টির। সেই কাতারে এবার আওয়ামী লীগও যুক্ত হল। কলঙ্কিত হল আওয়ামী লীগের গর্বিত ইতিহাস।
প্রতিদ্বন্দ্বীহীন ১৫৩টি আসনে আগেই বিনা নির্বাচনে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি ১৪৭টি আসনে গতকাল ৫ জানুয়ারি ২০১৪ ভোট গ্রহণ হয়। আমার ব্যক্তিগত ধারণা সব মিলে ১০% ভোটও পড়েনি। যদিও আওয়ামী লীগ তথা নির্বাচন কমিশন দাবি করেছে ৪০%-এর উপর ভোট পড়েছে। তবে প্রচুর জালভোট পরেছে। এরকম কারচুপি আর জালভোটের নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ কতদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন!
মাত্র গুটিকয়েক আসনে ভোটার উপস্থিতি বেশ ভালো ছিলো। বাকিগুলোতে সাধারণ মানুষের কোনো অংশগ্রহণই ছিল না। বাংলাদেশে এই প্রথম ৪২টি কেন্দ্রে কোনো ভোটই পড়েনি। ব্যাপক অনিয়ম, জালভোট আর কারচুপির নির্বাচন অনুষ্ঠান করল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন 'নির্বাচনকালীন ঐক্যজোটের সরকার'। কী লজ্জ্বা!
আমাদের বরগুনাতে শম্ভু কাকা 'বিপুল ভোটে' নির্বাচিত হয়েছেন। হেরেছেন দেলোয়ার কাকা। অথচ বাস্তবতা হল সত্যিকারের নির্বাচন হলে দেলোয়ার কাকারই জেতার কথা। প্রচুর জালভোট আর নির্লজ্জ্ব কারচুপি করে শম্ভু কাকা বিজয়ী হলেন! আমি জানিনা ওনার মত 'ভদ্র' মানুষ কীভাবে এই লজ্জ্বা ধারণ করবেন! আব্বু এবার কারো পক্ষেই নামেননি। তিনি ছিলেন নীরব দর্শক।
একইভাবে বরগুনা-২ আসনে অর্থ্যাৎ রিমন সাহেবও নিজেই ভোট-কাটায় অংশ নিয়েছেন বলে শুনলাম। যেখানে কিছুদিনকার আগের নির্বাচনেই তিনি ষাট হাজারের মত ভোট পেয়েছেন, সেখানে এই ভোটারবিহীন নির্বাচনে তিনি লাখের উপর ভোট পেয়েছেন দেখানো হয়েছে! হাস্যকর বটে!
২.
এই নির্বাচনটি এতটা ভোটারবিহীন হবার কথা না! আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বিএনপি-জামায়াত যদি সন্ত্রাস-সহিংসতা করে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি না করত, এবং এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করত, তাহলে অন্তত ৪০-৫০% মানুষ ভোটে অংশগ্রহণ করত। কিন্তু সরকারও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি (আসলে সার্বিকভাবে সেটা বেশ কঠিন একটি কাজ; তারপরও ধারণার চেয়ে কম সহিংসতা হয়েছে); আর বিএনপি-জামায়াতও জনসম্পৃক্ততাহীন আন্দোলনের নামে নাশকতা-সন্ত্রাস-সহিংসতা করে আতঙ্কিত-ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করতে সমর্থ হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মানুষের কাছে ভোটের চেয়ে জীবনের নিরাপত্তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নিশ্চয়ই একজন সচেতন মানুষ ভোট দিতে গিয়ে জেনে-শুনে নিজের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলবেন না!
৩.
ব্যক্তিগতভাবে আমি মনেপ্রাণে চাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকুক। কেননা, আওয়ামী লীগের পক্ষেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সম্ভব; আওয়ামী লীগেই সময়ই দেশের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয় বিশেষত কৃষি-শিক্ষা-বিদ্যুৎ খাতে; আওয়ামী লীগই দেশটিকে জঙ্গিবাদমুক্ত রেখে প্রগতিশীল বাংলাদেশ হিসেবে নিশ্চিত করতে পারে; আওয়ামী লীগই আন্তর্জাতিক বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে পারে। কিন্তু আমার প্রত্যাশা আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকাটা হবে সত্যিকারের জনগণের ভোটের মাধ্যমে; কোনোভাবেই কারচুপির নির্বাচনের মাধ্যমে নয়। আমি যেরকম কোনোভাবেই চাইনা বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসুক, একইভাবে এটাও চাই আওয়ামী লীগ দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয় দিবে না; ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠা করবে; সন্ত্রাস-সহিংসতার বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিবে।
৪.
আমি ব্যক্তিগতভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে। এবারের নির্বাচন আবারো প্রমাণ করল সত্যিকারের গণরায়ের প্রতিফলন সম্ভব কেবল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে। সরকারি কর্মকর্তারা বস্তুত কখনোই ক্ষমতাসীন দলের বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে কিছু করতে পারেন না বা যেতে সাহস পান না। । সুতরাং ক্ষমতাসীনরা ইচ্ছেমত কারচুপি করতে পারে; জালভোট দিতে পারে; প্রভাব বিস্তার করতে পারে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আমাদের পৌরসভার নির্বাচনও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হলে আমরা বিজয়ী হতাম। (যদিও স্থানীয় নির্বাচন সব সময় ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে হয়।) শম্ভু কাকা প্রশাসনের উপর অযাচিত-অনাকাঙ্ক্ষিত প্রভাব বিস্তার করে আমাদের পরাজয় সুনিশ্চিত করেছেন; শাহাদৎ কাকার অনৈতিক জয় নিশ্চিত করেছেন।
তাছাড়া দুর্নীতিবাজদের তথা অসৎ রাজনীতিকদের উচিৎ-শিক্ষার জন্যও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প নেই।
©somewhere in net ltd.