নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চক্ষে আমার তৃষ্ণা

না বলা কথা... [বি:দ্র: এই ব্লগটি কাউকে না পড়ার জন্য অনুরোধ করিছ। এটি একান্তই ব্যক্তিগত ব্লগ। ধন্যবাদ। ]

পপকর্ণ

স্বার্থপর মানুষ

পপকর্ণ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নবীজীর বিদায় হজ্ব ভাষণ এবং অন্যান্য

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:২০

১ ফ্রেব্রুয়ারি ২০১৪ শনিবার দুপুর ১টা ২৫ ময়ূর ভিলা মোহাম্মদপুর ঢাকা-১২০৭



প্রিয় মৃন্ময়ী,

আজ থেকে ভাষার মাস শুরু। একই সাথে আমাদের প্রিয় অমর একুশে বইমেলারও উদ্বোধন আজ। আমার দেখা আমার প্রজন্মের সবচেয়ে মেধাবি কবি হল বন্ধু আজাদ। ওর এবার দুটি বই বের হবে। সম্ভবত ওর অধিকাংশ বইতেই আমার তোলা ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। এই ছেলেটির অনেক গুণ রয়েছে, একই সাথে তার কিছু বিরক্তিকর অভ্যাসও রয়েছে। তারপরও ছেলেটিকে আমি মারাত্মক পছন্দ করি ওর মেধার জন্য, ওর ধারালো লেখনীর জন্য, ক্ষুরধার স্মরণশক্তির জন্য। সবচেয়ে বিরক্তিকর দিক হল আজাদের এসব গুণাবলীর জন্য আমার কখনোই জেলাসি (ঈর্ষা) কাজ করে না। (অবশ্য কারো প্রতিই আমার ঈর্ষা কাজ করে না; সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকে এই আবেগটাকে প্রশ্রয় না দিতে।) দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমার প্রতি ওর ঈর্ষান্বিত মনোভাব মাঝেমধ্যেই নগ্নভাবে প্রকাশ পেয়ে যায়। যাহোক, আমার এই মেধাবি বন্ধুটিকে নিয়ে একদিন বিস্তারিত লিখব।



২.

আজ মিমের প্যারেন্টস ডে। আম্মু ওর সাথে দেখা করতে গেছেন। অবশ্য বিশ্ব ইজতেমার কারণে গতকালই আম্মু রওয়ানা হয়ে ময়মনসিংহ গিয়েছেন। আগামি ১৮ ফেব্রুয়ারি মিমের জন্মদিন। সেজন্য মিম বিশাল এক লিস্ট ধরিয়ে দিল আমাকে। কিন্তু সবসময় আমি ওর জিনিসপত্রগুলো কিনে দিলেও গতকাল উত্তরাতে জমি নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে এবার কিছুই কিনে দিতে পারিনি। জানিনা আম্মু ঠিকভাবে সব কিনেছেন কিনা। বিশেষ করে মিমের কূপার'স-এর কেক খুব পছন্দ। কিন্তু আম্মু তা নিয়ে যাননি।



যাহোক, মিমের সাথে কিছুক্ষণ আগে কথা হল। পরীক্ষার আগে এটাই সম্ভবত শেষ প্যারেন্টস ডে। অবশ্য আমি-ফারিয়া যেবার গিয়েছিলাম, সেটাই শেষ দিন হবার কথা। পরে আরো দুদিন প্যারেন্টস ডে ঘোষণা করা হল। প্রার্থনা করি মিমের এসএসসি পরীক্ষা যাতে ভালো হয়। যেন চমৎকার রেজাল্ট করতে পারে। ওর ডাক্তার হবার স্বপ্ন যেন পূরণ হয়। যেন ঢাকা মেডিকেলে চান্স পেতে পারে।



৩.

এবার শিরোনাম প্রসঙ্গে লিখব। ভাবছি ধর্ম নিয়ে ব্যাপক পড়াশুনা করব। বিশেষ করে নবীজীর জীবন নিয়ে। গতকাল একটি ব্লগে নবীজীর বিদায় হজ্ব ভাষণ পড়ে বাসনাটা আরো বেড়ে গেল; যদিও বিদায় হজ্জ্ব ভাষণ আমরা পাঠ্যপুস্তকেই পড়েছি। তারপরও নিচে তুলে রাখলাম সেই অনবদ্য ভাষণটি।



তাঁকে উঠতে দেখে সবার গুঞ্জন থেমে গেল। একই মাঠে এক লাখ মানুষ উপস্থিত আছেন, অথচ কারও কোন সারা শব্দ টের পাওয়া যাচ্ছে না। সবার কান শুনতে উদগ্রীব, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ(সঃ) কী বলেন তা শোনার জন্য।

একটি উটের পিঠে চেপে আরাফাতের বিশাল সমতল ময়দানে প্রিয় নবীজি (সঃ) একবার সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে দৃষ্টি বুলালেন। তাঁর চোখ জুড়িয়ে গেল। লক্ষাধিক মুসলমান আজ জড়ো হয়েছেন দুই টুকরো কাপড়ে নিজেদের শরীর জড়িয়ে। সবার কন্ঠে উচ্চারিত হচ্ছে একই বাক্য, "লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক!"

"আমি এসেছি, ও আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে হাজির হয়েছি!"

আনন্দে তাঁর মন ভরে গেল। তাঁর চোখে কী ভেসে উঠলো দীর্ঘ বাইশ বছরের সংগ্রামময় দিনগুলোর দৃশ্য? শুরুর দিকে নিজের গোত্রের লোকেদেরই বিরোধিতা। তারপরে ধীরে ধীরে পুরো শহরের বিরুদ্ধাচরণ। মুসলমানদের একঘরে করে রাখা। একসময়ে তাঁর প্রাণ নাশের শঙ্কা জাগলে প্রিয় সঙ্গী আবুবক্করকে(রাঃ) সাথে নিয়ে মাতৃভূমি মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিযরত। তারপরেও তাঁদের প্রতি মক্কাবাসীর প্রতিহিংসা কমে না। বদর এবং ওহুদের যুদ্ধে এবং আরও ভিন্ন ভিন্ন ঘটনায় শহীদ হতে হলো প্রিয় সাহাবী হযরত হামযাহ(রাঃ) সহ আরও কত সাহাবীকে! সব সংগ্রাম, ত্যাগ, সহনশীলতা শুধু মাত্র আজকের এই দিনটির জন্যই! গোত্রে গোত্রে লড়াই বন্ধ হোক। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ দূর হোক। বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা হোক।

"লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক!"

তিনি বুঝতে পারছেন, পৃথিবীতে তাঁর আগমনের উদ্দেশ্য সম্পন্ন হয়েছে। এবার তাঁর বিদায়ের পালা। বিদায়ের আগে, এত মুসলমানকে একসাথে পেয়ে আবেগে তাঁর মন ভরে উঠছে। অবশেষে তিনি সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে বলতে শুরু করলেন।

"হে মানব জাতি! তোমরা আমার কথা শোন! এরপর এই স্থানে, তোমাদের সাথে আমি আর একত্রিত হতে পারবো কিনা জানি না।

হে মানুষ! আল্লাহ বলেন, 'হে মানব জাতি! তোমাদেরকে আমি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। এবং তোমাদেরকে সমাজ ও গোত্রে ভাগ করে দিয়েছি। যেন তোমরা পরষ্পরের পরিচয় জানতে পারো। অতএব শুনে রাখো, মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই। আরবের উপর কোন অনারবের, অনারবের উপর কোন আরবের শ্রেষ্ঠত্য নেই। তেমনি সাদার উপর কালোর, কিংবা কালোর উপর সাদার কোন শ্রেষ্ঠত্য নেই। তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি সম্মান, ও মর্যাদার অধিকারী - যে আল্লাহকে ভালবাসে!'

হে মানুষ! শুনে রাখো, অন্ধকার যুগের সকল বিষয় ও প্রথা আজ থেকে বিলুপ্ত হলো। যাহিলি যুগের রক্তের দাবীও রোহিত করা হলো।

হে মানুষ! শুনে রাখো, অপরাধের দায়িত্ব কেবল মাত্র অপরাধীর ওপরই বর্তায়, পিতা তার পুত্রের জন্য, আর পুত্র তার পিতার অপরাধের জন্য দায়ী নয়।

হে মানুষ! তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্মান, তোমাদের সম্পদ পরষ্পরের জন্য চিরস্থায়ীভাবে পবিত্র ও নিরাপদ করা হলো। যেমন আজকের এই দিন, আজকের এই মাস, এই শহর সকলের জন্য পবিত্র ও নিরাপদ!

হে মানুষ! তোমরা ঈর্ষা ও হিংসা বিদ্বেষ থেকে দূরে থাকবে। ঈর্ষা ও হিংসা মানুষের সকল সৎ গুণকে ধ্বংশ করে।

হে মানুষ! নারীদের সম্পর্কে তোমাদের আমি সতর্ক করে দিচ্ছি। তাঁদের সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করোনা। তাঁদের উপর যেমন তোমাদের অধিকার রয়েছে, তেমনি তোমাদের উপর তাঁদেরও অধিকার রয়েছে। সুতরাং, তাঁদের কল্যানের দিকে সবসময়ে খেয়াল রেখো।

হে মানুষ! অধীনস্থদের সম্পর্কে সতর্ক হও। তোমরা নিজেরা যা খাবে, তাঁদেরও তা খাওয়াবে। নিজেরা যা পড়বে, তাঁদেরও তা পড়াবে। শ্রমিকের শরীরের ঘাম শুকানোর আগেই, তাঁর মজুরি পরিশোধ করবে।

হে মানুষ! ঈমানদার সেই ব্যক্তি, যার হাত ও মুখ থেকে, অন্যের সম্মান, ধন সম্পদ ও প্রাণ নিরাপদ। সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে, অন্যের জন্যও তাই পছন্দ করে।

হে মানুষ! ঈমানদারেরা পরষ্পরের ভাই। সাবধান! তোমরা একজন আরেকজনকে হত্যা করার মত কুফরী কাজে লিপ্ত হয়োনা।

হে মানুষ! শুনে রাখো! আজ থেকে বংশগত শ্রেষ্ঠত্য বা কৌলিন্যপ্রথা বিলুপ্ত করা হলো। কুলীন বা শ্রেষ্ঠ সেই, যে বিশ্বাসী ও মানুষের উপকার করে।

হে মানুষ! ঋণ অবশ্যই ফেরত দিতে হবে। বিশ্বস্ততার সঙ্গে প্রত্যেকের আমানত রক্ষা করতে হবে। কারও সম্পত্তি, সে যদি স্বেচ্ছায় না দেয়, তবে তা অপর কারোর জন্যে হালাল নয়। তোমরা কেউ দুর্বলের ওপর অবিচার করো না।

হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রভুর ইবাদত করবে! নামাজ কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, রোজা রাখবে, হজ্জ করবে। আর সঙ্গবদ্ধভাবে নেতাকে অনুসরণ করবে। তাহলে তোমরা জান্নাতে দাখিল হতে পারবে।

হে মানুষ! শুনে রাখো, একজন কুশ্রী কদাকার ব্যক্তিও যদি তোমাদের নেতা মনোনিত হয়, যতদিন পর্যন্ত সে আল্লাহর কিতাব অনুসারে তোমাদের পরিচালিত করবে, ততদিন পর্যন্ত তার আনুগত্য করা তোমাদের অবশ্য কর্তব্য।

হে মানুষ! শুনে রাখো, আমার পর আর কোন নবী নেই।

হে মানুষ! আমি তোমাদের কাছে দুটো আলোকবর্তিকা রেখে যাচ্ছি। যতদিন তোমরা এই দুটো অনুসরন করবে, ততদিন তোমরা সত্য পথে থাকবে। এর একটি হলো আল্লাহর কিতাব! দ্বিতীয়টি হলো আমার জীবন দৃষ্টান্ত!

হে মানুষ! তোমরা কখনই ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করোনা। কারন অতীতে বহু জাতি ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কারণে ধ্বংশ হয়ে গেছে।

হে মানুষ! প্রত্যেককেই শেষ বিচারের দিনে সকল কাজের জন্য হিসেব দিতে হবে। অতএব সাবধান হও।

হে মানুষ! তোমরা যারা এখানে হাজির আছো আমার বাণীকে সবার কাছে পৌছে দিও!"

এরপর তিনি জনতার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করলেন, "হে মানুষ! আমি কী তোমাদের কাছে আল্লাহর বাণী পৌছে দিয়েছি?"

সবাই একসাথে জবাব দিল, "হ্যা!"

তিনি আবারও একই প্রশ্ন করলেন, "হে মানুষ! আমি কী তোমাদের কাছে আল্লাহর বাণী পৌছে দিয়েছি?"

এবারও সবাই একই জবাব দিল, "হ্যা!"

তিনি তৃতীয়বার একই প্রশ্ন করলেন, "এরপর নবীজি বললেন, "হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাকো! আমি আমার সকল দায়িত্ব পালন করেছি!"

এবারও সবার জবাব একই, "হ্যা!"

এরপর নবীজি আল্লাহকে উদ্দেশ্য করে বললেন, "হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাকো! আমি আমার সকল দায়িত্ব পালন করেছি!"

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.