![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্বার্থপর মানুষ
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সোমবার রাত্র ১০:০৩ ময়ূর ভিলা মোহাম্মদপুর ঢাকা- ১২০৭
প্রিয় মৃন্ময়ী,
নিম্নোক্ত লেখাটি আব্বুর। তুলে রাখলাম। গত পরশুদিন অর্থাৎ ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি লিখেছেন।
বরগুনা জেলায় উদীচীর সৃষ্টির ইতিহাস
মো: শাহজাহান, এডভোকেট, সভাপতি, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, বরগুনা জেলা সংসদ।
সবুজ ছায়াঘেরা নিসর্গ, চারপাশে ছড়িয়ে থাকা নদ-নদী আর বঙ্গোপসাগরের কোলে শুয়ে থাকা অপার সৌন্দর্যের সুষমাম-িত জনপদের নাম বরগুনা। প্রাকৃতিক পরিবেশ- প্রতিবেশ, নদ-নদী, খাল-বিল, সাগর সৈকত, মোহনা, চর, দ্বীপ, ঝড়-বন্যা-জলোচ্ছ্বাস নিয়ে বরগুনা জেলার একটি নিজস্ব বৈচিত্র্য আছে।
বরগুনা ছিল একটি থানা। ১৯৬৯ সালের ১ জানুয়ারি বরগুনা মহকুমায় পরিণত হয়। ১৯৮৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বরগুনার জেলায় রূপান্তরিত হয়। বরগুনা জেলার আয়তন ১৯৩৯.৩৯ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা প্রায় এগারো লক্ষ। বরগুনা জেলা মোট ৬টি উপজেলায় বিভক্ত। উপজেলাগুলো হল- বরগুনা সদর, আমতলী, তালতলী, বেতাগী, পাথরঘাটা ও বামনা।
বরগুনা একটি সাংস্কৃতিক ঐহিত্য বহনকারী জেলা। এ জেলায় অনেক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। বৃটিশ আমলের শেষ দিকে বরগুনায় আনুষ্ঠানিকভাবে সাংস্কৃতিক চর্চা শুরু হয়। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আগে মরহুম লাল মিয়ার পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বরগুনা ‘ড্রামাটিক ক্লাব’। ঐ সময় ড্রামাটিক ক্লাবের মাধ্যমে নাট্যমোদী ব্যক্তিদের মাধ্যমে ‘রামানুজ’, ‘বাসুদেব’, ‘চাঁদের মেয়ে’, ‘টিপু সুলতান’, ‘সিংহাসন বিজয়’, ‘চন্দ্রহাসি’, ‘বঙ্গে বর্গী’, ‘পথের শেষে’, ‘শাহজাহান’, ‘আলীবাবা’, ‘ভাওয়াল সন্ন্যাসী’ নামক নাটকগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে মহকুমা হওয়ার পরে বরগুনা ‘শিল্পী সংসদ বা আর্ট কাউন্সিল’ প্রতিষ্ঠিত হয়। আর্ট কাউন্সিলের মাধ্যমেও অসংখ্য নাটক মঞ্চস্থ হয়।
বরগুনা জেলা হবার আগে ১৯৮১ সালে বরগুনা মহকুমা শহরে ডা: এয়ার বিশ্বাসের উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতায় শিমুলতলায় প্রথম বৈশাখীমেলা অনুষ্ঠিত হয়। বৈশাখীমেলা শেষে বরগুনাতে প্রথম উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী গড়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন ডা: এয়ার বিশ্বাস, বিশিষ্ট সঙ্গীত ও নাট্য শিল্পী শঙ্কল শাওজল, সুখরঞ্জন শীল, চিত্তরঞ্জন শীল, জহিরুজ্জামান প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ। বাবু চিত্তরঞ্জন শীলকে আহ্বায়ক করে বরগুনাতে প্রথম উদীচী বরগুনা শাখার আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি হিশেবে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন মুখাভিনেতা পার্থ প্রতিম মজুমদার বরগুনায় উপস্থিত হয়ে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী বরগুনা শাখার কার্যকরী সংসদ গঠন করেন। ঐ কার্যকরী সংসদের সভাপতি ছিলেন সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জনাব মো: শাহজাহান মিয়া (বর্তমানে মৃত) এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বাবু চিত্তরঞ্জন শীল (বর্তমানে ‘খেলাঘর’ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বিশিষ্ট সাংবাদিক)। দ্বিতীয় সম্মেলনটি হয় ১৯৮৩ সালের শেষ দিকে। ঐ কমিটির সভাপতি হন বাবু চিত্তরঞ্জন শীল এবং সাধারণ সম্পাদক হন বাবু শেখর চন্দ্র দাস (বর্তমানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার এবং ঢাকার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী)। সাধারণ সম্পাদক শেখর চন্দ্র দাস পড়াশুনার তাগিদে ঢাকায় চলে আসলে উদীচী বরগুনা সংসদের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে এবং সকল শিল্পী-কর্মী নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েন। ১৯৮৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বরগুনা জেলা হিশেবে ঘোষিত হবার পরে এডভোকেট মো: শাহজাহান এবং ততকালীন বিএম কলেজের ছাত্র মো: হাবিবুর রহমান উদীচীর হাল ধরেন।
১৯৮৫ সালে বরগুনার সচেতন শিল্পীকর্মী ও সাংস্কৃতিকমনা ব্যক্তিদের নিয়ে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে অত্যন্ত জাঁকজঁমকভাবে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী বরগুনা জেলা সংসদের প্রথম জেলা কমিটি গঠিত হয়। উক্ত কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন এডভোকেট মো: শাহজাহান এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন এডভোকেট মো: হাবিবুর রহমান। ঐ কমিটিতে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন- ডা: জহিরুল ইসলাম (বর্তমানে সিভিল সার্জন), ডা: মিজানুর রহমান, অধ্যাপক স্বরোচিষ সরকার (বর্তমানে ডক্টর স্বরোচিষ সরকার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক), অধ্যাপক তপন কুমার দাস, এডভোকেট কমল কান্তি দাস, এডভোকেট গাজী আব্দুল মোতালেব, খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী মো: মোশারফ হোসেন কনু, শিল্পী হোসনে আরা লাভলী, জাহাঙ্গীর সিকদারসহ বরগুনার প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার শিল্পীকর্মী ভাইবোনেরা। ঐ সময়কার শিল্পীকর্মী ভাইবোনেরা প্রত্যেকেই বর্তমানে নিজ-নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে নিজ-নিজ কর্মক্ষেত্রে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন।
উদীচী বরগুনা জেলা সংসদের নেতৃত্বে ১৯৮৬ সালে আমতলী, বেতাগী, পাথরঘাটা ও বামনা শাখা গঠন করা হয়। বিভিন্ন সময়ে নেতৃত্বে পরিবর্তন, শিল্পীকর্মীদের স্থানান্তর, প্রতিকূল পরিবেশের কারণে ঐ সকল শাখাগুলোর কাজ কখনো-সখনো স্থবির হয়েছে। তবে বর্তমানে শাখাগুলোর কাজ যথারীতি চলছে।
১৯৮৫ সালের প্রথম জেলা সংসদ গঠনের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে কেন্দ্রীয় উদীচীর প্রতিনিধি এবং এলাকার বরণ্যে ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে প্রতি দু’বছর পরপর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ২০০৮ সাল পর্যন্ত মূল নেতৃত্বে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে নতুন নতুন শিল্পীকর্মী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের আগমণ যেমন ঘটেছে, তেমনি জীবনযাত্রার তাগিদে প্রস্থান বা স্থানান্তরও ঘটেছে। ২০০৮ সালের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে এডভোকেট মো: শাহজাহান সভাপতি পদ থেকে বিদায় নেন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন যথাক্রমে এডভোকেট মো: হাবিবুর রহমান ও সঙ্গীতশিল্পী হোসনেয়ারা লাভলী (বর্তমানে কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য)। ২০১০ সালের ১৪ অক্টোবর এডভোকেট মো: হাবিবুর রহমান সড়ক দুর্ঘটনায় অনাকাক্সিক্ষতভাবে মৃত্যুবরণ করলে ২০১১ সালের শেষ দিকে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী বরগুনা জেলা সংসদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে এডভোকেট মো: শাহজাহান সভাপতি ও এডভোকেট মো: আব্দুল মোত্তালিব মিয়া সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় সংসদের নির্দেশে পুনরায় ২০১২ সালের শেষ দিকে বরগুনা জেলা সংসদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় যা বর্তমানে কার্যরত। এ সংসদের সভাপতি এডভোকেট মো: শাহজাহান এবং সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মো: আব্দুল মোত্তালিব মিয়া, জাতীয় পরিষদ সদস্য এডভোকেট মো: জাকির হোসেন বাবুল।
বরগুনা জেলায় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী বরগুনা জেলা সংসদ ১৯৮৫ সালে সৃষ্টি হবার পর থেকে অদ্য পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এবং উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর আদর্শ ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ যাবতকাল পর্যন্ত হাজারো অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন করেছে। গণসঙ্গীতের পাশাপাশি ‘ইতিহাস কথা কও’, ‘দিন বদলের পালা’ গীতিনাট্য এবং ‘খ্যাপা পাগলীর প্যাচাল’, ‘দেয়ালের লিখন’, ‘ইবলিশের পোস্টমর্টেম’, ‘ফেরারী নিশান’, ‘ইয়ার্কি’, ‘তোমরাই’, ‘ইঙ্গীত’, ‘ইবলিশ’, ‘মাদুলী’সহ অসংখ্য নাটক ও অনুষ্ঠান মঞ্চস্থ করেছে বরগুনা জেলা উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী।
স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস, বুদ্ধিজীবী দিবস, মে দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবস এবং কেন্দ্রীয় উদীচীর নির্দেশিত দিবসসমূহ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে বরগুনা উদীচী। বরগুনা জেলা উদীচী স্থানীয় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, শ্রমিক সংগঠন, পুলিশ প্রশাসন, প্রেসক্লাব, ছাত্রলীগ, ছাত্র ঐক্য সমিতিসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে গণসঙ্গীত, সংগ্রামী দিনের গান, গীতিনাট্য ও নাট্যনুষ্ঠান করে আসছে।
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী বরগুনা জেলা শাখার তত্ত্বাবধানে ‘বিষখালী থিয়েটার’ নামক একটি নাট্য সংগঠন ও ‘সাগর সৈকত সঙ্গীত বিদ্যালয়’ নামে একটি সঙ্গীত শিক্ষার বিদ্যালয় রয়েছে।
বরগুনা জেলার প্রতিটি উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে মানুষের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার জন্যে বরগুনা জেলা উদীচী সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান অব্যাহত রেখেছে। বরগুনা উদীচী বর্তমানে একটি শক্তিশালী সংগঠন। প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে। স্বৈরশাসক এরশাদ-বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে সোচ্চার আন্দোলন করাসহ দেশে সকল প্রকার সহিংসতা প্রতিরোধ আন্দোলনে বরগুনা উদীচী সব সময়ই রাজপথে থাকে।
©somewhere in net ltd.