নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চক্ষে আমার তৃষ্ণা

না বলা কথা... [বি:দ্র: এই ব্লগটি কাউকে না পড়ার জন্য অনুরোধ করিছ। এটি একান্তই ব্যক্তিগত ব্লগ। ধন্যবাদ। ]

পপকর্ণ

স্বার্থপর মানুষ

পপকর্ণ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শেষ করলাম আনোয়ার উল আলম-এর 'রক্ষীবাহিনীর সত্য-মিথ্যা'

০২ রা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:৩১

২ মার্চ ২০১৪ রবিবার দুপুর ২টা এয়ারটেল অফিস পিঙ্কসিটি গুলশান- ২ ঢাকা



প্রিয় মৃন্ময়ী,



শেষ করলাম আনোয়ার উল আলম-এর 'রক্ষীবাহিনীর সত্য-মিথ্যা'। চমৎকার তথ্যসমৃদ্ধ একটি বই। অনেক অজানা কাহিনী উন্মোচন করেছেন বইটির লেখক, যিনি জাতীয় রক্ষীবাহিনীর একজন প্রতিষ্ঠাতা উপ-পরিচালক ছিলেন। লেখকের আরেকটি পরিচয় হল তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, যিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে টাঙ্গাইলের 'কাদেরিয়া বাহিনী'র বেসামরিক প্রধান ছিলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে মাস্টার্স করেন।



বঙ্গবন্ধুর শাসনকালের সবচেয়ে সমালোচিত একটি অধ্যায় হল জাতীয় রক্ষীবাহিনী গঠন ও এর কার্যক্রম। আজ পর্যন্ত আমি কোথাও রক্ষীবাহিনীর সমালোচনা বৈ প্রশংসা শুনিনি। তাই যখনি প্রথম আলো'তে বইটি সম্পর্কে জানতে পারি, তখনি পড়ে ফেলার জন্য তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েছিলাম। অবশেষে তৃষ্ণা মিটল। বইটি পড়ে মনে হল রক্ষীবাহিনীর যেসব সমালোচনা করা হয়, সেসব বেশির ভাগই একদম অযৌক্তিক, বানোয়াট, গুজব এবং অর্ধসত্য। অবশ্যই রক্ষীবাহিনীর কিছু প্রশ্নবিদ্ধ কার্যক্রম রয়েছে। তবে মহলবিশেষের পরিকল্পিত নানা গুজবই রক্ষীবাহিনীকে বিতর্কিত করে তোলে। আর এসব গুজব সশস্ত্র বাহিনীর সাথে রক্ষীবাহিনীর একটি প্রকাশ্য মানসিক দ্বন্দ্ব প্রকট করে তোলে। অথচ রক্ষীবাহিনীর বেশ কিছু কার্যক্রম ছিল প্রশংসাযোগ্য; বিশেষ করে সদ্য স্বাধীন দেশে অস্ত্রউদ্ধার, চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ ও আইনশৃঙ্ক্ষলার অবনতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি রক্ষীবাহিনী দারুণ ভূমিকা পালন করে।



রক্ষীবাহিনী নিয়ে কিছু উল্লেখযোগ্য সমালোচনার ব্যবচ্ছেদ করা যাক। তৎকালীন সময়ে সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে দুটো গুজব 'সত্য' হিশেবে ছড়িয়ে পড়ে। একটি হল, রক্ষীবাহিনীর সদস্য সংখ্যা এক লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে এবং এদের অধিকাংশ ভারতীয়। অন্যটি হল, রক্ষীবাহিনীর বাজেট সশস্ত্র বাহিনীর বাজেটের চেয়ে বেশি। দুটি তথ্যই সশস্ত্র বাহিনীর ভিতরে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি করে এবং সরকারের উপর মারাত্মকভাবে ক্ষুব্ধ করে। অথচ বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর দেখা গেল রক্ষীবাহিনীর সর্বমোট সদস্য মাত্র বারো হাজার এবং ভারতীয় কোনো সদস্য পাওয়া গেল না। তবে রক্ষীবাহিনীর উপর পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ হত ভারতে; তৎকালীন সময়ে সেটাই স্বাভাবিক ছিল। তাছাড়া শুধু রক্ষীবাহিনী নয়, সশস্ত্র বাহিনীর অনেক কর্মকর্তাও ভারতে প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। আর বাজেটের ক্ষেত্রে দেখা গেল ১৯৭৩ সালে রক্ষীবাহিনীর জন্য বাজেট ছিল মাত্র ৯ কোটি যেখানে সেনাবাহিনীর জন্য বাজেট ছিল ৯২ কোটি, যা পরবর্তীতে বাড়িয়ে ১২২ কোটি করা হয়।



বিখ্যাত/ কুখ্যাত 'আদর্শবাদী-সন্ত্রাসী' সিরাজ শিকদারকে গ্রেফতার থেকে হত্যা পর্যন্ত রক্ষীবাহিনীর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। অথচ জনমানসে এমনটাই প্রতিষ্ঠিত যে, সিরাজ শিকদারকে রক্ষীবাহিনী হত্যা করেছে। রক্ষীবাহিনীর জলপাই রং-এর পোশাক নিয়েও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রশ্ন তোলা হয়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী খাকি পোশাক ব্যবহার করত। তাই রক্ষীবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা সদস্যদের ওই পোশাকের প্রতি ঘৃণা কাজ করে। তাই তারা বেছে নেয় ভারত থেকে আনীত জলপাই রং-এর পোশাক। অবশ্য ভারত থেকে খাকি ও জলপাই রং- দুই ধরনের পোশাকই আনা হয়েছিল। কিন্তু বামপন্তীরা গুজব ছড়ায় যে, জলপাই রং-এর পোশাক নেয়ার কারণ হল ভারতীয় সৈন্যরা যাতে একই পোশাকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে; যেহেতু ভারতের সেনাবাহিনীরও একই রং-এর পোশাক ছিল। অথচ তখন বাংলাদেশ-ভারতের নৌবাহিনীর পোশাক একই রং অর্থাৎ শাদা ছিল; কিন্তু এটি নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি কিংবা কারো মনে হয়নি যে, ভারতীয় সৈন্যরা একই পোশাক পরে নৌপথে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে। আর সবচেয়ে বড় উপহাস হল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরবর্তী সময়ে জলপাই রংয়ের পোশাকই বেছে নেয়। অথচ এটি নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা হয়না কখনো।



এরকম আরো অনেকগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গুজব/মিথ্যা ছড়ানো হয় রক্ষীবাহিনী সম্পর্কে। অবাধ তথ্যের অভাবে সাধারণ মানুষও সেসব বিশ্বাস করতে শুরু করে। ক্রমেই মানুষের কাছে অজনপ্রিয় হয়ে ওঠে রক্ষীবাহিনী।



বইটি পড়ে কিছু ঘটনা ও মানুষ সম্পর্কে নতুনভাবে জানতে পারি। যেমন- এম এ জি ওসমানী সাংসদ ছিলেন; আবার একই সময়ে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়কের পদ আঁকড়ে ছিলেন। তার আপত্তির কারণেই বঙ্গবন্ধু জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করেননি; জ্যেষ্ঠতা ডিঙিয়ে সফিউল্লাহকে সেনাপ্রধান করেন; যা স্বাভাবিক কারণেই জিয়াকে ক্ষুব্ধ করে। জিয়াকে শান্ত রাখতে বঙ্গবন্ধু 'উপ-প্রধান'-এর পদ সৃষ্টি করেন এবং সেই পদে জিয়াকে নিয়োগ দেন। অথচ এই ওসমানীই বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিকল্পনার সাথে যুক্ত ছিলেন এবং সফল অপারেশনের পর সফিউল্লাহকে অভিনন্দন জানান। বেঈমান আর কাকে বলে!



খালেদ মোশাররফ সম্পর্কে বরাবরই উঁচু ধারণা পোষণ করতাম। কিন্তু এখন জানতে পারলাম খালেদ মোশাররফ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডকে স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছিলেন। তাছাড়া খালেদ ছিলেন মোশতাক ও ওসমানীর স্নেহধন্য। আবার ৩ নভেম্বরের অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য ছিল অবৈধ মোশতাক সরকারকে উচ্ছেদ করে বিশ্বাসঘাতক মোশতাককে গ্রেফতার কিংবা হত্যা করা এবং বঙ্গবন্ধুর খুনীদের শায়েস্তা করা। এর মূল পরিকল্পক ছিলেন জাতীয় রক্ষীবাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক নুরুজ্জামান। অথচ খালেদ মোশাররফের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। তিনি শুধু সেনাপ্রধান হয়েই সন্তুষ্ট ছিলেন না; হতে চেয়েছিলেন দেশের রাষ্ট্রপতি। তাঁর ব্যক্তিগত উচ্চাভিলাষের কারণে অভ্যুত্থানটি ব্যর্থ হয় এবং তিনিসহ অনেকেই নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।



তোফায়েল আহমেদের প্রতি আমার বরাবরই শ্রদ্ধা রয়েছে। বইটি পড়ে শ্রদ্ধা আরো বেড়ে গেল। বঙ্গবন্ধুর নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ প্রতিরোধ গড়ে তোলা তো দূরের কথা, উল্টো পালিয়ে গিয়েছিলেন। এমনকি উপরাষ্ট্রপতি নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী মনসুর আলী পর্যন্ত বাসা থেকে বেরিয়ে যান। তাদের আর হদিস পাওয়া যায়নি। কেবল তোফায়েল আহমেদই বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য সাহসিকতার সাথে রক্ষীবাহিনীর প্রধান কার্যালয়ে আসেন; যদিও ঢাকায় কোনো ব্যাটিলিয়ন না থাকার কারণে রক্ষীবাহিনী কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করতে পারেনি। তাজউদ্দীন অবশ্য বাসাতেই ছিলেন; তবে তিনি বিচলিত ছিলেন! তাছাড়া তাঁর বিশেষ কিছু করারও ছিল না। বঙ্গবন্ধু তাঁর মত মানুষকে দূরে ঠেলে দিয়ে বিশ্বাসঘাতকদের কাছে টেনে নিয়েছিলেন। অথচ তাজউদ্দীন যদি প্রধানমন্ত্রী থাকতেন, নিশ্চিতভাবেই একাত্তরের ন্যায় সরকারের হাল ধরতেন এবং হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেন।



তৎকালীন সেনাপ্রধান সফিউল্লাহও নিদারুণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। সেনাবাহিনীর উপর তিনি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। বঙ্গবন্ধুকে বাঁচানো দূরে থাক, হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে পারেননি; উল্টো চাপের মুখে অসহায়ভাবে মোশতাক সরকারের প্রতি সমর্থন জানান।



তবে সেনাবাহিনীর সবচেয়ে চতুর কর্মকর্তা ছিলেন জিয়া। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে নিজে জড়িত সরাসরি অংশগ্রহণ করেননি; তবে পরিকল্পনা জানা সত্ত্বেও অনাপত্তি জানাননি বরং সমর্থন জানিয়েছেন। একইভাবে ৩ নভেম্বরের অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা সম্পর্কে আগেই জেনেছিলেন; সেক্ষেত্রেও তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেননি; তবে প্রচ্ছন্ন সমর্থন জানিয়েছেন। ভুলটা করেছিল খালেদ মোশাররফ জিয়াকে গৃহবন্দী করার মধ্য দিয়ে। খালেদের হঠকারী পদক্ষেপের ফলে গৃহবন্দী জিয়া সাধারণ সৈনিকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। এসব ঘটন-অঘটনের প্রত্যক্ষ সুবিধাবাদী হন জিয়া। অবশ্য তাঁকেও নিষ্ঠুরভাবে প্রাণ দিতে হয় আরেক অভ্যুত্থানে। পাপ তার বাপকেও ছাড়ে না!



আরো অনেক কিছু লেখার আছে। তবে ইচ্ছে নেই। লেখাটি শেষ করব এই বলে যে, বিএনপির আমলে প্রতিষ্ঠিত বর্তমান RAB আর রক্ষীবাহিনীর কার্যক্রমের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। অথচ রক্ষীবাহিনীর সমালোচনা হয় প্রচুর, RAB-এর হয় না। আর জাতীয় রক্ষীবাহিনী বাংলাদেশের একমাত্র আইনশৃঙ্ক্ষলা বাহিনী, যার নামকরণ হয় খাঁটি বাংলায়। আর বামপন্থী বিশেষ করে চীনা সমাজতন্ত্রীদের সমাজবিরোধী নানা কর্মকাণ্ডই বঙ্গবন্ধুর সরকারকে তটস্থ করে রাখত! সেসব 'সন্ত্রাসীদের' বিরুদ্ধে রক্ষীবাহিনী ব্যবস্থা নেয়; কিন্তু চীনা সমাজতন্ত্রীদের পক্ষ থেকে প্রচার করা হয় যে, রাজনৈতিক কর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে! এবং জনমানসে সেটাই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় যে, বঙ্গবন্ধুর শাসনকালে হাজার-হাজার ‘রাজনৈতিক কর্মী’ হত্যা করা হয়েছে!!



২.

আজ জাতীয় পতাকাদিবস। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ সর্বপ্রথম ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। একাত্তরের উত্তাল দিনে এটি ছিল ভবিতব্য স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য এক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। দু:খজনক হল দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয় না। পত্রিকাতেও খুব একটা গুরুত্ব দেয়া হয় না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.