নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চক্ষে আমার তৃষ্ণা

না বলা কথা... [বি:দ্র: এই ব্লগটি কাউকে না পড়ার জন্য অনুরোধ করিছ। এটি একান্তই ব্যক্তিগত ব্লগ। ধন্যবাদ। ]

পপকর্ণ

স্বার্থপর মানুষ

পপকর্ণ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভলান্টিয়ারিং

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:২২

৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রবিবার রাত্র ১১:২১ ৩৫, প্লামরোজ রোড, টরন্টো



'আচ্ছা, আপনি আমার ইমেইলে আপনার সিভিটা পাঠিয়ে দিন। দেখি কিছু করতে পারি কিনা আপনার জন্য।'--- এই বলে তিনি ফোন কেটে দিলেন। আমি পড়লাম মহা বিপদে। কেননা, কানাডিয়ান স্টাইলে কোনো রেজুমি আমার নেই। তারপর ভাবলাম ল্যাপটপ কিনেই ওনাকে কানাডিয়ান ফরম্যাটে রেজুমি বানিয়ে ইমেইল করব। ৪/৫ দিন হয়ে গেল; কিন্তু ল্যাপটপ আর কেনা হচ্ছে না! শেষে ডেস্কটপে বসে কানাডিয়ান ফরম্যাটে রেজুমি করে ৫/৬ দিন পর ইমেইল করলাম। বেশ রাগ লাগছিল নিজের উপর। কেননা, যেখানে উচিৎ ছিল তখনি রেজুমি পাঠিয়ে দেয়া, সেখানে ইমেইল করতেই কিনা ৫ দিন লাগিয়ে ফেললাম!



আশাটা ছেড়েই দিয়েছিলাম! দুই সপ্তাহ পর হঠাৎ একদিন আবিষ্কার করলাম তিনি আমাকে কল দিয়েছিলেন কিন্তু আমি তখন সাবওয়েতে কাজে ছিলাম বলে টের পাইনি। তবে আমার রেসপন্স না পেয়ে কল ব্যাক করার কথা বলে একটি ভয়েসমেল দিয়ে রেখেছেন। সাথে-সাথেই ফোন ব্যাক করলাম। কিন্তু তিনি রেসপন্স করলেন না। আমিও আবার ভয়েসমেল দিয়ে রাখলাম। তিনি ঘন্টাখানেক পর রাত্র ৯টার দিকে ফোন দিলেন। কিছুক্ষণ কথা বললাম। তিনি জানতে চাইলেন যে, বৈধভাবে ছাত্র হিশেবে আমি কতক্ষণ কাজ করতে পারব। তাকে বিস্তারিত জানালাম। তিনি আমাকে এসবের ডিটেল্স উল্লেখ করে একটি ইমেল দিতে বললেন এবং তিনদিন পর দুপুর ২টা থেকে ৪টার মধ্যে দেখা করতে বললেন।



সমস্যা তৈরি হলো অন্য জায়গায়। মাসুদকে আমি আগেই কথা দিয়ে রেখেছিলাম যে, ওইদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত্র ১০টা পর্যন্ত আমি কাজ করব। আমি ওনাকে মধ্যরাত্রে ইমেইল করে ইমিগ্রেশনের বিস্তারিত লিখে পাঠালাম এবং পরে আরেকটি ইমেল দিলাম যে, আমি ৫ সেপ্টেম্বরের পর যেকোনো দিন দেখা করতে চাই। তিনি কোনো রেসপন্স করলেন না। আমি হতাশ হলাম। শেষে ৫ সেপ্টেম্বর ফোন দিলাম সকালে। তিনি ফোন রিসিভ করে এক ঘন্টা পর ফোন দিতে বললেন। তারপর বেশ কয়েকবার ফোন দিলাম। কোনো রেসপন্স পেলাম না। অবশেষে বিকেলবেলা পেলাম। তিনি আমাকে গতকাল বিকেল তিনটায় দেখা করতে বললেন।



অবশেষে গতকাল ৬ সেপ্টেম্বর যথাসময়ে উপস্থিত হলাম। তিনি আমাকে পৌনে দুই ঘন্টা বসিয়ে রাখলেন কারণ তার তখন ক্লায়েন্ট ছিল। তারপর কথা হলো। কী কথা হলো, সেসব বিস্তারিত না লিখে এটুকু লিখছি যে, আগামিকাল ৮ সেপ্টেম্বর দুপুর ২ টায় তার ল ফার্মে আমি জয়েন করতে যাচ্ছি। এবং সেটা ভলান্টিয়ার হিশেবে। অর্থাৎ তিনি আমাকে কোনো পেমেন্ট করবেন না। কেননা, আমি কানাডার লিগ্যাল সার্ভিস সম্পর্কে কিছুই জানি না। যাই হোক, তারপরও আমি রাজি হয়েছি জয়েন করার জন্য। অন্তত শিখতে তো হবে। অভিজ্ঞতা তো হবে।



আর হ্যাঁ, এতক্ষণ যে মানুষটির কথা বললাম, তাঁর নাম মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, ব্যারিস্টার, সলিসিটর ও নোটারি পাবলিক। তিনি আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএল.বি., এলএল.এম. করে লন্ডন থেকে আবারো এলএল.এম. করেছেন। তারপর কানাডা এসে ব্যারিস্টার হয়েছেন। ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামের চেম্বারে ৫ বছর কাজ করেছেন; পরবর্তীতে ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে ৫ বছর শিক্ষকতা করেছেন। ল ফার্মের নাম- Emerald Legal Professional Corporation. ড্যানফোর্থে কার্যালয়।



আর যেটি উল্লেখ না করলেই নয়, তা হলো ওনার সাথে আমি যোগাযোগ করেছিলাম নিজাম হাসমি ভাইর রেফারেন্সে। নিজাম হাসমিও এখানের ব্যারিস্টার, আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন।



২.

দুপুরবেলা সিমরান হঠাৎ ভয়েসমেল দিলো। কল ব্যাক করলাম। সে বিকেলে দেখা করতে আগ্রহী। ৬টায় ইটন সেন্টারে গেলাম দেখা করতে। দুজনে টিম হর্টনে খেয়ে হাঁটতে হাঁটতে ওন্টারিও লেকে হারবার ফ্রন্টে গেলাম। সেখান থেকে সিএন টাওয়ার, রজার্স সেন্টার হয়ে টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালে গেলাম হেটেই! বেচারি একদম ক্লান্ত হয়ে পরেছিল! আবারো টিম হর্টনে খেলাম। তারপর চারপাশের উৎসবমুখর পরিবেশ উপভোগ করলাম দুজন। বাসায় ফিরলাম সোয়া ১০ টার দিকে। জাহাঙ্গীর কাকা আমার উপর ভীষণ বিরক্ত। তিনি খুব দুশ্চিন্তায় আছেন আমি কোর্সে ফেইল করি কিনা!



আর হ্যাঁ, সিমরানের পরিচয় হলো সে আমার সাথেই জেনারেল এলএল.এম. করবে এবং ভারতীয় শিখ। ভারতের বিচারক ছিল সে। চাকরি ছেড়ে দিয়ে পড়তে এসেছে এখানে। এখানেই ক্যারিয়ার গড়তে চায়।



৩.

বাসে বসে ফেসবুক সার্ফিং-এর সময় আনিসুল হকের স্ট্যাটাসে প্রিয় একটি কবিতা লেখা দেখলাম। নিচে হুবুহু তুলে দিলাম।



বোঝাপড়া

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর



মনেরে আজ কহ যে,

ভালো মন্দ যাহাই আসুক

সত্যেরে লও সহজে।

কেউ বা তোমায় ভালোবাসে

কেউ বা বাসতে পারে না যে,

কেউ বিকিয়ে আছে, কেউ বা

সিকি পয়সা ধারে না যে,

কতকটা যে স্বভাব তাদের

কতকটা বা তোমারো ভাই,

কতকটা এ ভবের গতিক—

সবার তরে নহে সবাই।

তোমায় কতক ফাঁকি দেবে

তুমিও কতক দেবে ফাঁকি,

তোমার ভোগে কতক পড়বে

পরের ভোগে থাকবে বাকি,

মান্ধাতারই আমল থেকে

চলে আসছে এমনি রকম—

তোমারি কি এমন ভাগ্য

বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!

মনেরে আজ কহ যে,

ভালো মন্দ যাহাই আসুক

সত্যেরে লও সহজে।

অনেক ঝঞ্ঝা কাটিয়ে বুঝি

এলে সুখের বন্দরেতে,

জলের তলে পাহাড় ছিল

লাগল বুকের অন্দরেতে,

মুহূর্তেকে পাঁজরগুলো

উঠল কেঁপে আর্তরবে—

তাই নিয়ে কি সবার সঙ্গ

ঝগড়া করে মরতে হবে?

ভেসে থাকতে পার যদি

সেইটে সবার চেয়ে শ্রেয়,

না পার তো বিনা বাক্যে

টুপ করিয়া ডুবে যেয়ো।

এটা কিছু অপূর্ব নয়,

ঘটনা সামান্য খুবই—

শঙ্কা যেথায় করে না কেউ

সেইখানে হয় জাহাজ-ডুবি।

মনেরে তাই কহ যে,

ভালো মন্দ যাহাই আসুক

সত্যেরে লও সহজে।

তোমার মাপে হয় নি সবাই

তুমিও হও নি সবার মাপে,

তুমি মর কারো ঠেলায়

কেউ বা মরে তোমার চাপে—

তবু ভেবে দেখতে গেলে

এমনি কিসের টানাটানি?

তেমন করে হাত বাড়ালে

সুখ পাওয়া যায় অনেকখানি।

আকাশ তবু সুনীল থাকে,

মধুর ঠেকে ভোরের আলো,

মরণ এলে হঠাৎ দেখি

মরার চেয়ে বাঁচাই ভালো।

যাহার লাগি চক্ষু বুজে

বহিয়ে দিলাম অশ্রুসাগর

তাহারে বাদ দিয়েও দেখি

বিশ্বভুবন মস্ত ডাগর।

মনেরে তাই কহ যে,

ভালো মন্দ যাহাই আসুক

সত্যেরে লও সহজে।

নিজের ছায়া মস্ত করে

অস্তাচলে বসে বসে

আঁধার করে তোল যদি

জীবনখানা নিজের দোষে,

বিধির সঙ্গ বিবাদ করে

নিজের পায়েই কুড়ুল মার,

দোহাই তবে এ কার্যটা

যত শীঘ্র পার সারো।

খুব খানিকটে কেঁদে কেটে

অশ্রু ঢেলে ঘড়া ঘড়া

মনের সঙ্গ এক রকমে

করে নে ভাই, বোঝাপড়া।

তাহার পরে আঁধার ঘরে

প্রদীপখানি জ্বালিয়ে তোলো—

ভুলে যা ভাই, কাহার সঙ্গে

কতটুকুন তফাত হল।

মনেরে তাই কহ যে,

ভালো মন্দ যাহাই আসুক

সত্যেরে লও সহজে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.