নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চক্ষে আমার তৃষ্ণা

না বলা কথা... [বি:দ্র: এই ব্লগটি কাউকে না পড়ার জন্য অনুরোধ করিছ। এটি একান্তই ব্যক্তিগত ব্লগ। ধন্যবাদ। ]

পপকর্ণ

স্বার্থপর মানুষ

পপকর্ণ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর ধর্ম নিয়ে বিরূপ মন্তব্য এবং আমার বক্তব্য

০১ লা অক্টোবর, ২০১৪ ভোর ৬:০৮

নিউইয়র্কে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ধর্মসহ বিভিন্ন বিষয়ে মন্তব্য করায় সর্বমহলে বেশ সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছেন। গণমাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হচ্ছে যে, প্রধানমন্ত্রী তাকে মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কার করছেন বা করতে যাচ্ছেন। সরকারের কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র এখনো তার পদত্যাগ নিশ্চিত করেনি। তবে আওয়ামী লীগের হানিফ সাহেব বলেছেন, তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। (এক্ষেত্রে প্রথম আলো-তে প্রকাশিত হুমায়ূন আহমেদ-এর একটি স্যাটায়ার লেখা স্মরণ করতে পারি। লেখাটিতে তিনি মিডিয়া ক্যুর মাধ্যমে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনকে পদত্যাগ করিয়েছিলেন। লতিফ সিদ্দিকীর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে বা ঘটতে যাচ্ছে। এই অধমের নিতান্ত অনুমান।) আরো বেশি লক্ষ্যণীয় হলো প্রথম আলো-র সংবাদ শিরোনাম। এমনিতেই লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ক্রমাগত সংবাদ পরিবেশন করেও কিছু করা যাচ্ছিল না। এবার একদম 'সাইজ' করার মত মোক্ষম অস্ত্র পাওয়া গেছে! ইসলাম ধর্ম নিয়ে লতিফ সিদ্দিকীর কটূক্তি! আর যায় কোথায়?!



এদিকে ধর্মীয় সংগঠনগুলো এমনিতেই রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা। এবার তারাও মওকা পেয়েছেন। ইতোমধ্যে ইসলাম ধর্মের স্বঘোষিত 'হেফাযত'কারীরা জিহাদি সমাবেশের ডাকও দিয়েছেন। আরেক শ্রেণির মানুষ দাবি তুলেছেন কালোআইন নামে কুখ্যাতি পাওয়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের অধীনে মন্ত্রীর বিচার করে শাস্তি প্রদান করতে হবে। ফেসবুকে দেখলাম ব্যারিস্টার আন্দালিব পার্থ মন্ত্রীকে পাথরের বদলে জুতা মেরে ছওয়াব কামাই করার প্রকাশ্য আহ্বান জানিয়েছেন!



লতিফ সিদ্দিকীকে বরখাস্ত করা ছাড়া সরকারের হাতেও খুব বেশি কিছু করার সুযোগ নেই। এমনিতেই নামকাওয়াস্তে নির্বাচন করে ক্ষমতায় টিকে আছে সরকার। গদির শিকড় নড়বড়ে। তার উপর ধর্মের মতো স্পর্শকাতর একটা অস্ত্র কোনোভাবেই বিরোধীদের হাতে, বিশেষ করে কাঠমোল্লাদের হাতে তুলে দেয়া যাবে না। এমনিতেই 'শাহবাগিদের' থামানো গেছে অনেক কষ্টে। সুতরাং খারাপ কিছু ঘটার আগে 'জঞ্জাল' প্রথমেই সাফ করা ভালো।



সবমিলিয়ে বাংলাদেশের বেশ সরগরম অবস্থা। এবং হওয়াটাই স্বাভাবিক। ব্যক্তিগতভাবে আমি আরো বেশি খুশি হতাম যদি একইভাবে পূজামণ্ডপ ভাঙা নিয়ে বাংলাদেশ সরগরম হতো। (শুধু একবার কল্পনা করে দেখুন- পূজামণ্ডপ নয়, মসজিদের কোনো মিনার ভাঙা হচ্ছে! দেশে কী রক্তগঙ্গাই না বয়ে যেতো!) সেটি অবশ্য হবার নয়! কেননা, কাঠমোল্লাদের কাছে ধর্মীয় অনুভূতি শুধু মুসলমানদের জন্যই প্রযোজ্য; ইসলাম বাদে অন্য ধর্মতো কোনো ধর্মই না; তার আবার অনুভূতি কী? ছ্যাঁ!



যাই হোক, যেহেতু 'তুমুল শক্তিশালী' মন্ত্রীর বিচারের দাবি উঠেছে, আমার আগ্রহ হলো বাংলাদেশের আইন এক্ষেত্রে কী বলছে, সেগুলো একটু খোঁজ নিয়ে জানা। মোটামুটি যা খুঁজে পেলাম, সেগুলো নিম্নরূপ:



দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৯-এ লেখা আছে-

(১) চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তাদান করা হইল।

(২) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে-

(ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের, এবং

(খ) সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল।



দণ্ডবিধির 295A-তে বলা আছে-

Whoever, with deliberate and malicious intention of outraging the religious feelings of any class of the citizens of Bangladesh, by words, either spoken or written, or by visible representations insults or attempts to insult the religion or the religious beliefs of that class, shall be punished with imprisonment of either description for a term which may extend to two years, or with fine, or with both.



এবার দেখি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা কী বলছে। সেখানে লেখা আছে-

(১) কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েব সাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্ভুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূতি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানী প্রদান করা হয়, তাহা হইলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ।



(২) কোনো ব্যক্তি উপধারা (১)-এর অধীন অপরাধ করিলে তিনি সর্বনিম্ন সাত বৎসর ও সর্বোচ্চ চৌদ্দ বছর কারাদণ্ডে এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।



প্রথমত, সংবিধানের বিষয়ে আসি। মত প্রকাশের ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ের উপর আইনের মাধ্যমে যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ আরোপ করা যায়, সেসব ক্ষেত্রের মধ্যে নৈতিকতা ও শালীনতার কথা বলা থাকলেও সুনির্দিষ্টভাবে 'ধর্মীয় অনুভূতি'র কথা বলা নেই।



দ্বিতীয়ত, দণ্ডবিধির ধারানুযায়ী লতিফ সিদ্দিকীর শাস্তি দিতে হলে প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এবং বিদ্বেষপূর্ণ উদ্দেশ্য নিয়ে উক্ত মন্তব্য করেছেন। এবং এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি দুই বছর কারাদণ্ড কিংবা জরিমানা কিংবা উভয়।



তৃতীয়ত, কালোআইন হিশেবে কুখ্যাতি পাওয়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় যদি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, সেক্ষেত্রে কিছু প্রশ্ন তোলা আবশ্যক। এই ধারাটিতে কিছু শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যেগুলো সংজ্ঞায়িত করা প্রয়োজন। 'নীতিভ্রষ্ট', 'রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি', 'ধর্মীয় অনুভূতি'--- এগুলোর সংজ্ঞা কী? পরিধি কতদূর? সর্বোপরি তিনি কি 'ইচ্ছেকৃতভাবে ইলেকট্রনিক বিন্যাসে কিছু' প্রকাশ করেছিলেন? নাকি, তার অজ্ঞাতে অন্য কেউ অনুমতি না নিয়েই ভিডিও করে তা প্রচার করেছিলেন? আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো এই ধারার অধীনে তার বিচার করতে হলে অভিযোগটি খোদ সরকারের আনতে হবে; কোনো সাধারণ মানুষ অভিযোগ করতে পারবে না।



আইনের কথা শেষ। লেখাও শেষ। তবে শেষ কথার আগের কথা হলো- বিবিসিতে দেয়া লতিফ সিদ্দিকীর সাক্ষাৎকার পড়লাম। তার সাহসের তারিফ না করে পারছি না। বেশ কিছু কথাও যুক্তিযুক্ত। তিনি স্পষ্টভাবেই সাহসিকতার সাথে বক্তব্যের দায়দায়িত্ব নিয়েছেন। আইনানুযায়ী অপরাধ হলে বিচারের সম্মুখীন হতেও প্রস্তুত তিনি। তবে আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় না থেকে মন্ত্রিত্ব থেকে তার পদত্যাগ করা উচিৎ। তার পদত্যাগ প্রত্যাশিত ও কাম্য। তিনি একটি বিষয় বুঝতে ভুল করছেন। তা হলো ব্যক্তি স্বাধীনতা ও তার রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে আসীন ব্যক্তির সীমাবদ্ধতার পার্থক্যটা। ব্যক্তিগতভাবে যাই বিশ্বাস করুন না কেন, অন্তত মন্ত্রীর মত একটি দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে তিনি প্রকাশ্যসভায় (সভাটি যতই ঘরোয়া হোক না কেন; তাকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী হিশেবেই) ইসলাম ধর্ম পালনকারীদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করতে পারেন না। এটা বাক্ স্বাধীনতা বা ব্যক্তি স্বাধীনতা নয়, স্রেফ অসভ্যতা।



একইসাথে বলব যেসব দুষ্কৃতিকারী-দুর্বৃত্ত মন্দির-মূর্তি ভাঙার সাথে জড়িত, তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ভুলে গেলে চলবে না যে, সম্মান শুধু ইসলাম ধর্মের কিংবা মুসলমানদেরই প্রাপ্য না, অন্যান্য ধর্মের ক্ষেত্রেও তা সমভাবে প্রযোজ্য। 'অনুভূতি' নামক শব্দ মুসলমানদের ন্যায় অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও বিরাজমান।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.