![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বলিলাম ভাই সাহেব সময় হবে, একটু কথা কইতাম। বলিলেন মৃদু হাসিয়া সময় কই হুনেন না মাহফিল চলতাছে, আহেন ভাই আমার লগে দুই-একটা ভালা কথা হুনবেন। বলিলাম আমিও ওই দিকে যামু চলেন হুনি কি কয়। ভাই সাহেব আনন্দের সহিত রাজি হইলে............।
আমি: কিছু না মনে করলে একটা কথা জিগামু?
ভাই সাহেব: যা কওয়ার তাড়াতাড়ি কন...
আমি: আমনেও কি ওই পীরের মুরিদ, মানে কইছিলাম ওই পীরে বিশ্বাস করেন?
ভাই সাহেব: এইডা একটা কতা কইলেন। ওনারে তো হগলে বাবা কইয়া ডাহে, আর ওনার মত বালা মানুষ আর আছে! উনি কত কেরামতি জানে, উনি আমাগো জান্নাতের কতা কয়। বুঝলেন ভাইজান মোরা হইলাম পাপী বান্দা, মোগো কতা কি আল্লাহ্ কবুল করবো, বাবা কইছে হে মোগো জন্য আল্লার কাছে দোয়া করব, উনি তো হইল উছিলা।
আমি: আমিও যদি জান্নাতে যাইতে চাই তাইলে কি বাবা আমারে তার সাথে কইরা নিইয়া যাইব?
ভাই সাহেব: প্রথমে আমনের ওনার মুরিদ হইতে হইবে। যদি ওনার সুদৃষ্টি আমনের উপর পরে, তাইলে তো কেল্লা ফতে – সোজা জান্নাত!!!
আমি: সুদৃষ্টি ক্যামনে পামু, কন ত? আমিতো নামাজ পরি না, সুরা-কেরাত জানি না...
ভাই সাহেব: দূর আমনে ত দেহি কিছুই জানেন না। আরে ভাই, বাবা তো মারফতের চর্চা করে, শুনছি এর জন্য নামাজ-কালাম না পরলেও অয়। বুঝলেন ভাইজান ডাইরেক্ট আল্লার সাথে সংযোগ। বাবা সাগর ক্যালা, আম, কেজি পেঁয়ারা এইগুলা পছন্দ করে, আর যদি পারেন দুই-তিন পুড়িয়া গাঁজা সাথে কইরা নিয়া যাইয়েন। বাবা খুব খুশি হইব।
আমি: ভাই সাহেব বাঁচাইলেন আমারে, এতো সহজে যে জান্নাতে যাওন যায় আগে বুঝিনাই। কিন্তু ভাই গাঁজার ব্যাপারটা বুঝলাম না, গাঁজা-সিগারেট নাকি খারাপ লোকেরা খায়ই...?
ভাই সাহেব: হুম! জীবনে অনেক পাপ করছি, নামাজ-কালাম কিছুই পরি নাই, তাইতো বাবার কাছে আহি। টাহা তো জীবনে কম ইনকাম করি নাই, বাবারে কিছু দিয়া যদি জান্নাতে যাওন যাই, ক্ষতি কি? বয়স তো আর কম অয় নাই, এ্যাহনি বাবা দরার সঠিক সময়, আমনে কি কন? আর কি জানি কইলেন গাঁজা, না? গাঁজা- সিগারেট খারাপ লোকেরা খায়ই ঠিক আছে, কিন্তু বাবা গাঁজা খায়ই আত্মার সাধনের জন্য। এত সব আমনে এহনে বুঝবেন না,আগে মুরিদ হন তারপর আস্তে-আস্তে বুঝবেন।
আমি: হুম! বুঝছি কিন্তু এইভাবে কি আরা জান্নাত পাওন যায়...???
আমরা যদি উপরের গল্পটা লক্ষ্য করি,তাহলে দেখা যায় কত সহজে জান্নাত লাভ করা যায়। সত্যই এভাবে আল্লাহতালার নৈকট্য লাভ করা যায়? উত্তর না।
কারণ, কার ইবাদত আল্লাহ্ কতটুকু কবুল করেছেন বা কে আল্লাহ্র নৈকট্য প্রাপ্য ব্যাক্তি তা কেবল তিনি ভাল জানেন। এমনকি এভাবে নিশ্চিতরূপে আল্লাহ্র প্রিয় বা অলি-আউলিয়া বা জান্নাতি বলে ( কুরআন অথবা ছহীহ হাদীছে যাদের নাম উল্লেখ আছে কেবল মাত্র তারা ব্যতীত ) কাউকে বিশ্বাস করা ইসলামী বিশ্বাস ও আকিদার পরিপন্থী। এমনকি আমরা এটুকু বলতে পারি না যে, অমুক ব্যাক্তি জান্নাতে যাবেনই। কোনো আমল বা কোনো কেরামতি বা অলৌকিকত্ব এ বিষয়ে প্রমাণ পেশ করে না যে, সে জান্নাতি। আমরা যাকে কেরামতি মনে করছি তা শয়তানের অলৌকিকত্ব বা ওয়াচওয়াছা কি না তা আমরা কেউ বলতে পারি না। জীবিত বা মৃত অবস্থায় তাঁর (পীর-আউলিয়া) প্রতি সেজ্দা করা বা মৃত্যুর পর তার কবরে মাথা নত করা বা তার উছিলায় প্রার্থনা করা শিরক বলে গণ্য হবে।
আমাদের দেশে এক শ্রেণীর ভন্ড পীর আছে, যারা নিজেদের সঠিক পীর অলি-আউলিয়া দাবি করে মানুষকে প্রতিনিয়ত প্রতারিত করেছে। আমরা বিভিন্ন সময় টেলিভিশন বা সংবাদপত্রে এই রকম ভণ্ড পীরদের খবর পেয়ে থাকি, এইসব পীর-আউলিয়া থেকে আমাদের সব সময়ই সাবধান থাকতে হবে, নয়ত শিরকের মত কঠিন গুনাহে্ জড়ানোর সম্ভাবনা থাকে।
এখন জানতে হবে পীর কি?
“পীর” একটি ফার্সি শব্দ, যার অর্থ “শিক্ষক”। যিনি খিলাফতের আওতাই একটি তরিকার শিক্ষা দিয়ে থাকেন। এই ধরণের রীতি সূফীবাদ বা সূফী দর্শন থেকে এসেছে। সুফিবাদ (সূফীবাদ বা সূফী দর্শন ) একটি ইসলামি আধ্যাত্মিক দর্শন। আত্মা সম্পর্কিত আলোচনা এর মুখ্য বিষয়। আত্মার পরিশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনই হলো এই দর্শনের মর্মকথা। সুফিবাদ উৎকর্ষ লাভ করে পারস্যে। সেখানকার প্রখ্যাত সুফি-দরবেশ, কবি-সাহিত্যিক এবং দার্শনিকগণ নানা শাস্ত্র, কাব্য ও ব্যাখ্যা-পুস্তক রচনা করে এই দর্শনকে সাধারণের নিকট জনপ্রিয় করে তোলেন। কালক্রমে বিখ্যাত ওলীদের অবলম্বন করে নানা তরিকা গড়ে ওঠে। সেগুলির মধ্যে চারটি প্রধান তরিকা সর্বাধিক প্রসিদ্ধি লাভ করে:
o বড় পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী (রঃ) প্রতিষ্ঠিত কাদেরিয়া তরিকা,
o সুলতানুল হিন্দ হযরত খাজা মু’ঈনুদ্দীন চিশতী (রঃ) প্রতিষ্ঠিত চিশতিয়া তরিকা,
o হযরত খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দী (রঃ) প্রতিষ্ঠিত নকশবন্দিয়া তরিকা এবং
o হযরত শেখ আহমদ মুজাদ্দিদ-ই-আলফে ছানী সারহিন্দী (রঃ) প্রতিষ্ঠিত মুজাদ্দিদিয়া তরিকা।
এছাড়া সুহ্রাওয়ার্দিয়া, মাদারীয়া, আহমদিয়া ও কলন্দরিয়া নামে আরও কয়েকটি তরিকার উদ্ভব ঘটে।
বাংলায় সুফিবাদের আবির্ভাবকাল সঠিকভাবে বলা কঠিন। তবে একাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত এদেশে ইসলামের সর্বাধিক প্রচার ও প্রসার হয়েছে বলে জানা যায়। ১২০৪-৫ খ্রিস্টাব্দে বখতিয়ার খলজী কর্তৃক বাংলাদেশ বিজিত হলে ইসলামের শরীআত ও মারিফত উভয় ধারার প্রচার ও প্রসার তীব্রতর হয়। শাসকশ্রেণীর সঙ্গে বহু পীর-দরবেশ এদেশে আগমন করে ইসলাম প্রচারে মনোনিবেশ করেন। মুসলিম বিজয়োত্তর যে কয়জন সুফি-দরবেশ ইসলাম ও সুফিবাদ প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, তাঁদের মধ্যে শেখ জালালুদ্দীন তাব্রিজি(রঃ), শাহ জালাল(রঃ), শেখ আলাউল হক (রঃ), খান জাহান আলী(রঃ), শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামা(রঃ), শাহ ফরিদউদ্দীন (রঃ) প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। এঁরা সুফিবাদের আধ্যাত্মিক তত্ত্ব চমৎকারভাবে তুলে ধরে সাধারণ মানুষকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেন, ফলে বঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে এই মতবাদ প্রসার লাভ করে।
এইসব ধর্ম প্রচারের পন্থা দিন দিন বিকৃত করে, নিজেকে পীর দাবি করে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা বা মূল্যবান মাল জিনিস। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নামে গড়ে তুলেছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। ধর্ম প্রচারের নামে অপপ্রচার করে, সাধারণ মানুষ কে করছে বিপথগামী। ইসলামের দাওয়াত বা আল্লাহ্র নৈকট্য লাভের পথ হচ্ছে আল-কুরআন বুঝে পড়া এবং সহিহ্ হাদীস মেনে চলা। ভণ্ডামীর পথ পরিহার করে সত্য দিনের ( ইসলাম ) পথে ঈমানের সাথে চলার তৌফিক দান করুন, আমীন।
©somewhere in net ltd.