নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোহাম্মাদ শফিক

আমি সাধারণ একজন মানুষ এবং সাধারণ কিছু চর্চা করতে পছন্দ করি..........সেটা অবশ্যই সত্যের মত প্রকাশ .............।

মোহাম্মাদ শফিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

History behind the “ড্রাকুলা”

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৭

ড্রাকুলা (ইংরেজি: Dracula) আইরিশ লেখক ব্রাম স্টোকার রচিত একটি উপন্যাস। ১৮৯৭ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাসের প্রধান খলচরিত্র ভ্যাম্পায়ার কাউন্ট ড্রাকুলা। এরপর এই উপন্যাস এবং কিছু পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে একে বিভিন্নভাবে রূপায়নের চেষ্টা করা হয়েছে। এগুলি হল ভ্যাম্পায়ার সাহিত্য, ভৌতিক সাহিত্য, গথিক উপন্যাস ও আক্রমণ সাহিত্য। এটা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সিনেমা, টিভি সিরিয়াল। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কাউন্ট ড্রাকুলা, ডার্ক প্রিন্সঃ হিস্টরি অব ড্রাকুলা, ড্রাকুলা আনটোল্ড, শ্যাডো অব দ্যা ভ্যাম্পায়ার, টুইলাইট, ভ্যাম্পায়ার ডাইরীস ইত্যাদি।

ড্রাকুলা কি শুধুই মিথ বা স্টোকারের সংকলিত রক্তচোষা সুপার ন্যাচারাল প্রাণীর চরিত্র মাত্র? চলুন উদ্ঘাটন করি...।
ড্রাকুলা একটি পদবী মাত্র যা পরবর্তীতে তার নামের প্রতি যথেষ্ট সু বিচার করে। তার সত্যিকার নাম ছিল তৃতীয় ভ্লাদ(Vlad-III)। মানুষকে ইমপেল করে হত্যা করত বলে, তার ডাক নাম দেওয়া হয় ভ্লাদ টেপেস(Vlad Tepes) যার ইংরাজি মানে দাড়ায় “ভ্লাদ দ্যা ইমপেল”(Vlad the Impel)। ভ্লাদের জন্ম ১৪৩১ সালের ডিসেম্বর মাসে শিগিসোয়ারা( Sighisoara)র নগর ভবনে, যা রোমানিয়ার ট্রানসিলবানিয়া(Transylvania) প্রদেশের একটি অংশ। তার বাবা দ্বিতীয় ভ্লাদকে ডাকা হতো ড্রাকুল,যার মানে “ড্রাগন” বা “শয়তান”(devil)। কারণ অটোম্যান সম্রাজ্যের হাত থেকে খ্রিষ্টানদের বাঁচানোর জন্য, রোমান রাজা ১৪১০সালে এক ধরণের সিক্রেট সৈন্য(knights) গঠন করেছিল। যার নাম দেওয়া হয় “অর্ডার অব দ্যা ড্রাগন”, ১৪৩১ সালের দিকে তিনি অর্ডার অব দ্যা ড্রাগনের একজন সদস্য হলে, তাকে ড্রাকুল উপাধি দেওয়া হয়। ১৪৩৬ সালে প্রথম আলেকজান্দ্রুকে( Alexandru I – House of Danesti) হত্যা করে ওয়ালেকিয়া(Wallachia বর্তমানে Balkans) দখল করেন।
অন্য দিকে, ড্রাকুলা মানে ড্রাকুলের সন্তান(son of Dracul),এইরূপে তৃতীয় ভ্লাদকে ডাকা হয় শয়তানের বাচ্চা(son of the Devil) বা ড্রাগনের বাচ্চা(son of the Dragon)। কিন্তু রোমানিয়ান ভাষাতে “ড্রাকুল” অনুবাদ করলে এর অর্থ হয় “শয়তান”।


ভ্লাদ ড্রাকুল প্রথম ছয় বছর পার্শ্ববর্তী দুই দেশের(অটোম্যান ও হাঙ্গেরি) সাথে ভাল সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করছিল। কেননা অটোম্যানরা ছিল শক্তিতে অপ্রতিরোধ্য,অন্যদিকে ওয়ালেকিয়া ছিল হাঙ্গেরি রাজার অধিভুক্ত। ১৪৪২ সালে অটোম্যান তুর্কি বাহিনী ট্রানসিলবানিয়া আক্রমণ করলে, ভ্লাদ ড্রাকুল নিরপেক্ষ অবস্থান নেয়। ঐ যুদ্ধে অটোম্যানদের সাময়িক পরাজয় হলে, হাঙ্গেরিয় বাহিনী ভ্লাদকে ও তার পরিবারকে ওয়ালেকিয়া ছাড়তে বাধ্য করে।
১৪৪৩ সালে অটোম্যানদের সহেয়তায় ভ্লাদ ড্রাকুল পুনরায় ওয়ালেকিয়া দখল করে এবং সুলতান দ্বিতীয় মুরাদের সাথে শান্তি চুক্তি করতে বাধ্য হয়। শান্তি চুক্তি শর্ত অনুযায়ী, প্রতি বছর ওয়ালেকিয়া যুবকদের পাঠাতে হবে সুলতানের সৈন্য বাহিনীতে( Janissaries)।

১৪৪৪ সালে শান্তি চুক্তির অংশ হিসাবে এবং সুলতানের প্রতি আরও বিশ্বস্ততা দেখানোর জন্য ভ্লাদকে তার দুই সন্তান পাঠাতে হয় কনস্টান্টিনোপল(বর্তমান ইস্তাম্বুল) শিক্ষার জন্য। তাদের একজনের নাম “ভ্লাদ- III”, আর অন্যজনের নাম “রাদু দ্যা হান্ডসাম”। এই ভ্লাদ-IIIই প্রবর্তিতে ড্রাকুলা হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। রাদু মুসলমান হয় এবং রাদু বেগ উপাধি গ্রহণ করে। ঐখানে থাকাকালীন অবস্থায় তিনি কুরআন মুখস্থ করেন, হাদিসসহ আরও অনেক কিছু শিক্ষা লাভ করে। তার ভাল আচরণের জন্য সুলতান দ্বিতীয় মুরাদের ছেলে দ্বিতীয় মুহাম্মাদ আল ফাতাহর সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠে।

এমনকি ভ্লাদ দ্য ইমপেলারও কুরআন, হাদিস, অস্ত্রশিক্ষা ইত্যাদি শিখতে থাকেন, যদিও তিনি মুসলমান ছিলেন না। তিনি আরবি, ফার্সি, তুর্কি ও রোমানিয়ান ভাষাসহ অন্যান্য ভাষাতে কথা বলতে পারতেন। তার অবাধ্যতার ও বেপরোয়া আচরণের জন্য প্রায়ই তাকে শাস্তি পেতে হয়েছে।

১৪৪৭ সালে ড্রাকুলার বাবা ভ্লাদ ড্রাকুলকে হত্যা করে টারগোভিসতের( Targoviste) বোয়ারস( boyars) ও ব্যবসায়ীরা এবং তার বড় ভাই মিরছাকে( Mircea) গরম লোহার রড দিয়ে অন্ধ করে এবং জীবিত কবর দেয়। হাঙ্গেরিয়ানরা তাদের নিজেদের মনোনীত প্রার্থী Danesti বংশের লোকের হাতে ওয়ালেকিয়ার শাসনভার তুলে দেয়।

ভ্লাদ ১৪৪৮ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে তুর্কিদের বাহিনী দের সমর্থন নিয়ে ওয়ালেকিয়া সাময়িক সময়ের জন্য পুনরুদ্ধার করে। কিন্তু দুই মাসের মধ্যে তাকে সিংহাসন ছাড়তে বাধ্য করে এবং কারারুদ্ধ করে হাঙ্গেরিয়ানরা। পরে অবশ্য বিভিন্ন ছলচাতুরীর মাধ্যমে ট্রানসিলবানিয়া গবর্নর নিযুক্ত হন।

এর মধ্যে খ্রিষ্টান বিশ্ব অটোম্যানদের শক্তি ও ব্যাপ্তি নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা নতুনভাবে ক্রুসেডারদের একত্রিত করার চেষ্টা করে। ১৪৫৬ সালে হাঙ্গেরিয় বাহিনী তুর্কি দখলকৃত সার্বিয়া আক্রমণ করে। ক্রুসেডারদের এই প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয় এবং তারা পরাজিত হয়। এই সুযোগে ভ্লাদ টেপেস বরংবার ওয়ালেকিয়া আক্রমণ করে এবং ওয়ালেকিয়া সিংহাসন সম্পূর্ণ তার দখলে নিয়ে আসে, যা ১৪৬২ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

অনেক ইতিহাসবিদ, তার এই স্বল্প সময়ের শাসনকালকে মধ্যযুগের বর্বরতা ও সাক্ষাৎ শয়তানের কর্মকাণ্ড বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন। ভ্লাদ, তার শত্রুকে শাস্তি ও হত্যার জন্য শূলবিদ্ধ(Impalement) করার পদ্ধতি বেছে নিতেন। তাছাড়া অন্যান্য শাস্তির মধ্যে ছিল মাথায় পেরেক ঢুকানো, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ কেটে ফেলা, অন্ধ করে দেওয়া, শ্বাস রুদ্ধ করে হত্যা, নাক-কান কেটে দেওয়া, যৌন অঙ্গ কেটে দেওয়া(বিশেষত মহিলাদের), জীবিত পুড়িয়ে ফেলা ইত্যাদি। শত্রুর রক্ত তাকে আনন্দ দিত। তার এই অত্যাচার থেকে কেউ বাদ পরত না, যেমন মহিলা, শিশু, বৃদ্ধ, কৃষক, পুরোহিত, অ্যাম্বাসেডর, এমনকি বিদেশী শক্তিও তার অত্যাচারের শিকার ছিল।

তার প্রথম নৃশংসতার পরিচয় পাওয়া যায় বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার মধ্য দিয়ে। এক ইস্টার সানডেতে সব বোয়ারস ফ্যামিলিকে রাজকীয় খাবারের দাওয়াত দেয় এবং সকলকে বন্দী করে শূলে চড়িয়ে হত্যা করে।

সুলতান মুহাম্মাদ ১৪৫৯ সালে ভ্লাদ এর কাছে দূত পাঠায় ট্যাক্স এর জন্য। তারা তাকে বলে তোমাকে অবশ্যই যিযিয়া(কর) দিতে হবে। কিন্তু সে যিযিয়া দিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং বলে যদি তোমরা আমর দরবার হলে ঢুকতে চাও, তবে অবশ্যই তোমাদের মাথার পাগড়ি(টারবান) খুলতে হবে। তারা বলে, না! আমরা এটা তোমার জন্য খুলবো না। আমরা কখনই কোনো কাফিরদের(অবিশ্বাসীরা) জন্য আমাদের পাগড়ি খুলিনা। সুতারং সে বলল,খুলে-ফেল! কিন্তু তারা পুনরায় অস্বীকৃতি জানায় । ড্রাকুলা বলে,“ যদি তারা আমার জন্য পাগড়ি খুলতে অস্বীকৃতি জানায়, তবে তারা কখনোই এটা খুলতে পারবে না”। এবং সে আদেশ দেয়, তাদের পাগড়ির উপর থেকে পেরেক মারতে, যার ফলে তাদের মৃত্যু হয়।

এই খবর যখন সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতাহ জানতে পায়, তখন হামযা বেগ এর নেতৃতে প্রচুর সৈন্য পাঠায় ড্রাকুলার সাথে যুদ্ধের জন্য। কিন্তু ড্রাকুলা অটোম্যানদের যুদ্ধ কৌশল সম্পর্কে ভাল জানত, ফলে বিভিন্ন ভাবে হামযা বেগ সহ ২০,০০০ হাজার সৈন্য হত্যা করে এবং প্রত্যেকে শূলেবিদ্ধ(Impale) করে রাখা হয়। অটোম্যান আর্মি যখন তাদের সৈন্য চেক করতে আসে, সবাইকে ইমপেল অবস্থায় দেখতে পায়। এই লোমহর্ষক জায়গাটি ইতিহাসে "the Forest of the Impaled" নামে পরিচিত।


অটোম্যানরা ইসলামিক রাজ্য বিস্তারে এতোটাই মরিয়া ছিল, যে ড্রাকুলার প্রতি তাদের ততটা মনোযোগ ছিল না। ড্রাকুলা মূলত এই সুযোগটাই ভাল ভাবে কাজে লাগিয়ে ছিল। ১৪৬২ সালে মুহাম্মদ আল ফাতাহ , ড্রাকুলার আপন ভাই রাদুকে পাঠায় তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য। শেষমেশ রাদু ওয়ালেকিয়া দখল করে নেয় এবং সেখানে ইসলামিক শাসন ব্যবস্থা চালু করেন। ড্রাকুলা গোপনে পালিয়ে যায় এবং প্রথম স্ত্রী আত্মহত্যা করে বলে জানা যায়।

ড্রাকুলা, ম্যাথিয়াস করনিবাসের কাছে সাহায্যের আবেদন করে, কারণ ম্যাথিয়াস করনিবাস(অন্যতম একজন ক্রসেডার) ছিল অটোম্যানদের গোঁড় বিরোধী। কিন্ত হাঙ্গেরিয় রাজা তাকে কারারুদ্ধ করে। অন্য একদলের মতে, রাদু ক্ষমতা দখলের পর ড্রাকুলার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে। তা যা-ই হোক না কেনো, এর পরও সে অনেক ধরণের নৃশংসতা চালায়। এমনকি খ্রিস্টানরাও তার থেকে দূরে চলে যায়।

ড্রাকুলা অর্থোডক্স খ্রিষ্টান ছিল। সে ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ছিল না। কিন্তু সে পোপকে বলেন, “ তোমরা যদি আমাকে আরও সৈন্য দাও, আমি তোমাদের জন্য ক্যাথলিক খ্রিষ্টান হব, তোমরা চাইলে আমি আমর ধর্ম পরিবর্তন করব”। সত্যিকার অর্থে ড্রাকুলা বিশ্বাসী মানুষ ছিলেন না, কিভাবে যুদ্ধক্ষেত্রে স্বার্থ হাঁচিল করা যায় তাই নিয়ে ব্যাস্ত থাকতো।

১৪৭৫ সালে ভ্লাদের ভাই রাদুর মাত্র ৪০ বছর বয়সে হঠাৎ মৃত্যু হলে, ড্রাকুলা ক্রুসেডদের সাহায্য নিয়ে সাময়িক ক্ষমতা দখল করে।

অটোম্যানরা প্রচুর সৈন্য সহ ওয়ালেকিয়া আক্রমণ করে, ১৪৭৬ সালে ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে যুদ্ধের মাঠে ড্রাকুলা নিহত হয়। তার হত্যা নিয়ে অনেক মতভেদ আছে, মুসলিমরা তাকে হত্যা করছে অথবা তার নিজের লোকের হাতেই তার মৃত্যু হয়। যেভাবেই হোকনা কেন, ড্রাকুলার মৃত্যু হয়েছিল এবং তা অটোম্যানদের প্রচেষ্টার ফলে।
তুর্কি বাহিনী তার মাথা কেটে নিয়ে যায় এবং কনস্টান্টিনোপল এর গেটে ২-৩ মাস শূলবিদ্ধ করে রাখে। যাতে অমুসলিমরা বুঝতে পারে, তাদের সাথে যুদ্ধের শাস্তি কি হতে পারে??!!!!!

১৫ শতাব্দীতে লিফলেটে ড্রাকুলা সম্পর্কে গল্প আকারে লিপিবদ্ধ হয়। অন্যদিকে ১৯২৩ সালে মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের হাতে ওসমানীয় খিলাফত পতন ঘটে, সেই সাথে অটোম্যানদের সোনালী ইতিহাসও ধ্বংস করে দেওয়া হয়। ফলে ড্রাকুলা সম্পর্কে সম্পূর্ণ সঠিক ইতিহাস পাওয়া যায়নি। আর ব্রাম স্টোকারের উপন্যাস সম্পর্কে আমরা কম বেশি সবাই জানি...............।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.