নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর উৎসবে আঁধারে আবদ্ধ ...!!!

মুচি

ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে- অবাক বিস্ময়ে ....

মুচি › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাহাড়ে ২৬ শে মার্চ

২৭ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৩



“রাঙামাটির পাহাড় আমার ভাল লাগে নি,
এ পাহাড় আমার ভাল লাগবে কি করে?
এ পাহাড়ে কোন টান নেই, ভালোবাসা নেই,
এ পাহাড়ে যে মায়াময় লিলি ব্যোম নেই।“

আবার পাহাড়ে আমি, প্রকৃতির অনেক কাছাকাছি, যে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য মোহিত করে আমায় ও অনেককে। দু’মাসের মধ্যেই দু’দুবার যাওয়া হলো। জানুয়ারির ৩০ তারিখে ছিলাম বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ে। আর এবার মার্চের ২৬ তারিখ আমি রাঙামাটির আধুনিক পাহাড়ে।

বর্তমানে বেকার বিধায় তেমন কোন কাজ কর্ম নেই। আমার ৪ কামলা (চাকুরিজীবি) বন্ধু - অনির্বান, সাব্বির, তৌহিদ ও প্রীতম পরিকল্পনা করে যে রাঙামাটি ঘুরতে যাবে। যেহেতু আমার বেসরকারী চাকুরিজীবি বন্ধুদের ছুটি-ছাটা খুবই কম, তাই ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসকেই ঘুরতে যাবার দিন ঠিক করে। আমি মাত্রই বান্দরবান-নাফাখুম ঘুরে এলাম, এর ফলে এখনই আমার আর যাওয়ার তেমন আগ্রহ কিংবা আর্থিক সামর্থ্য কোনটাই ছিল না। আমাকে খানিকটা জোড়পূর্বক রাজি করায় আমার বন্ধু অনির্বাণ। ধার দেনা করে আমি ট্যুরে যাবার জন্য প্রস্তুতি নেই। বন্ধুরা সবাই চাকুরিজীবি হওয়ায় আমরা একদিনের শর্ট ট্যুরে আমরা রওনা হই গত ২৫ মার্চ রাত ৭.১০ এ কল্যানপুর বাসস্টপ থেকে হানিফ পরিবহনের পিচ্চি বাসে। ৯.২০ এ সায়দাবাদ থেকে আমাদের কোচ ছাড়ে। মাঝে মাঝেই আমাদের বাসের ড্রাইভার নিজেকে পাইলট ভেবে বাসের গতি ১০০ ছাড়িয়েছ। ভয়ে আত্মা খাঁচাছাড়া হবার যোগার। এই বুঝি বাস রাস্তার ভূমি ত্যাগ করে আকাশে উড়ে যায়! ঘুম ঘুম চোখে ভয় ভয় হয়- বাসের সাথে সাথে না আত্মাটাও খাঁচাছাড়া হয়ে উড়াল দেয়! এখনও অনেক কিছু বাকি, এত দ্রুত মরতে চাই না আমরা কেউই।

২৬ মার্চ ভোর ৫.০০ টার দিকে আমরা কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই অবশেষে পৌঁছে যাই কাপ্তাই এ ঠিক কর্ণফুলি জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গেটে। আমাদের প্রথম উদ্দেশ্য ছিল জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ঢুকব। আর্মির এক বড় ভাইয়ের সৌঁজন্যে আমরা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ঢুকব। কিন্তু এত ভোরে আমরা ঢুকব কি করে? এদিকে নাস্তাও করা দরকার। কিন্তু এত রাতে কোন খাবার দোকান খোলে নি। তাই কাপ্তাই জেটি ঘাটে ঘুরোঘুরি করতে থাকি রাতভোর কে সকাল বানানোর উদ্দেশ্যে। হ্রদে একটা ভাসমান মাছের আরতের আশেপাশে কিছু জেলে ভাইদের কাজকর্ম দেখে, হ্রদের জলে সূর্যোদয় দেখে আলো ফুটলে পরে একটা "আজিজ হোটেল" এ মুরগির তেহারি ( আসলে খিচুরি টাইপ) দিয়ে সকলের নাস্তা শেষ করি। এদিকে ঘড়িতে মাত্র ৬ টা বাজে। অনির্বাণ আর্মির সেই বড় ভাইকে ফোন দেয়। কিন্তু ভাই ফোন ধরে না। বুঝতে পারলাম ভাই ঘুমায়। ফলে সকাল সকাল আমাদের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ঢোকা সম্ভব হয় না। ফলে আমরা প্ল্যানে কিঞ্চিত পরিবর্তন করে আগে রাঙামাটি শহর দেখে ফেরার পথে আর্মির অনুমতি নিয়ে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র দেখব বলে ঠিক করি।

তখন মাত্র সাড়ে ৬ টার মত বাজে। কাপ্তাই শহরের একটাও দূর পাল্লার বাসের কাউন্টার খুলে নি। আমরা সি এন জি অটো খুঁজতে খুঁজতে দেখি শ্যামলী পরিবহনের একটি কাউন্টার খুলছে মাত্র। আমরা দেরি না করে ফেরার টিকিট কিনে নেই। এরপর সাড়ে পাঁচশ টাকায় একটি সি.এন.জি. পেয়ে তাতে রওনা হই রাঙামাটি শহরের দিকে। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ পাড়ি দিতে দিতে আমরা। ড্রাইভার ভাইয়ের আঁতরের সুবাসে মুগ্ধ হই। আমি প্রথমে ভাবি যে কোন পাহাড়ি ফুলের ঘ্রাণ বন থেকে আসছে। কিন্তু অনির্বাণ আমার ভুল ভাঙায়।
রাস্তার পাশ ঘেষে কাপ্তাই লেক। ভোরের হালকা কুয়াশার আভায় মনে হয় যেন মেঘের অপরূপ সৌন্দর্য্য আমাদের পাশে। আমাদের অটোর বাঙালি ড্রাইভার আমাদেরকে আশপাশ দেখাতে দেখাতে ও পাহাড়ে তাদের জীবন সম্পর্কে ধারণা দিতে দিতে নিয়ে চলে। তাদের সাথে পাহাড়িদের চমৎকার সম্পর্কের মাঝে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি ও তাদের নিপীরণের কথাও জানায়। পথে আসাম বস্তি নতুন বাজারে ও বনভান্তের স্মৃতি মন্দির পড়ে। আমরা অটো থামিয়ে কিছুক্ষণ দেখে নেই।




প্রায় ঘন্টা তিনেকের ঘন্টা মধ্যে আমরা রাঙামাটি শহরে পৌঁছে যাই। প্রথমেই আমরা রাঙামাটি জেলা কারাগারের অপর পাশের একটি বাড়িতে থামি। বাড়ির নাম "কল্পতরু"। হাতির দাঁতের অলঙ্কার ও ভাস্কর্য নির্মাতা। আমি মুগ্ধ হয়ে দেখি কারিগরের বাড়ির অবস্থা! সে এক আলিশান অবস্থা। বিশাল বাড়ি, গ্যারাজে গাড়ি, বাইক, বাড়িতে সুন্দর বাগান, কাঠের ভাস্কর্য। বুঝলাম অবুঝ হাতির দাঁত ভেঙে ভালোই পয়সা কামিয়েছে এই পরিবার। দেখতে চাইলে মালিক কৌশলে আমাদের কিছুই দেখান না। বরং ভবিষ্যৎ কাস্টোমার হিসেবে আমাদের কাছে তার পণ্যের মার্কেটিং করে দেন কোন কিছু না দেখিয়েই। বন্ধু অনির্বান বেশি আগ্রহী হওয়ায় তাকে কারিগর নিজের ও ছেলে হৃত্বিক চাকমার ফোন নাম্বার দিয়ে দেয়, যাতে এরপর ফোন দিয়ে অনির্বাণ আমাদের ভবিষ্যৎ বৌদির জন্য হাতির দাঁতের অলঙ্কার গড়ে দেয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়।

এরপর অটোর ড্রাইভার আমাদেরকে পৌঁছে দেয় রাঙামাটি রাজবিহারে। বৌদ্ধ বিহারে বিশাল বুদ্ধের মূর্তি দেখার সাধ আমাদের। কিন্তু এর চেয়েও বেশ ইচ্ছা ছিল, কোন একটা মমি নাকি সংরক্ষিত আছে এই বিহারে- সেটা দেখার। আমরা বাইরের লোকজনকে জিজ্ঞেস করে জেনে নেই মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ করা যায় কি-না। মন্দিরের প্রবেশ পথের বাইরে ২/৩ জন আমাদের জানায় যে ভেতরে যাওয়া যাবে, ফলে আমরা মূল ফটকের ছোট লেখা "দর্শনার্থী প্রবেশ নিষেধ" বাণী খেয়াল করি নি আর। কিন্তু ভেতরে ঢুকতে না ঢুকতেই চাকমা গার্ড আমাদের দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। কি আশ্চর্য !!! এতে বন্ধু প্রীতম অযথাই ক্ষেপে ওঠে গার্ডের সাথে কথা কাটাকাটি শুরু করে, আমরা ওকে নিবৃত্ত করি। আরেকটু হলে অজানা-অচেনা জায়গায় উপজাতিদের হাতে মার খাওয়ার জোগাড়!



হতাশ হয়ে এরপর আমরা পাশের চাকমা রাজার কার্যালয় যাই। নৌকা পাড় হতে হয়। সেখানে "ফঁতে খা" কামান পেয়ে আমরা কিছুক্ষণ পূর্বের বিতারণের হতাশা ভুলে যাই। চাকমা রাজার বিহারের চারপাশে প্রাক্তন রাজাদের ভাস্কর্য ও বৌদ্ধ বিহার দেখে বিমোহিত হই। বুদ্ধের একটি মূর্তি বাইরে থেকেই দেখতে পাই আমরা। কিছু ছবি তুলে ফেলি। এরপর চাকমা রাজার কার্যালয়ের পাশে পাহাড়িদের তৈরি পণ্যের দোকান দেখতে যাই। আমার চার ধনী বন্ধু গামছা, গায়ে দেয়ার চাদর ও বিছানার চাদর কিনে ফেলে। আমি দরিদ্র শুধু দেখি। যদিও পাহাড়িদের পণ্যে আমার মোটেও আগ্রহ নেই।

এখানেই ৪০ টাকা করে পাহাড়ি ডাব দিয়ে তৃষ্ণা নিবারণ করে ঘড়ি দেখে আমরা সবাই অবাক! মাত্র ১০ টা বাজে। কিন্তু মনে হচ্ছিল কম করে হলেও ১-১.৩০ টা বাজে। এত ভোরে দিন শুরু হবার ফলে এমন মনে হচ্ছিল। পাহাড়ি তরমুজও খেতাম। সাড়ে তিনশ টাকা করে দাম হাঁকায় সে পাহাড়ি নারী। তাই আর খাওয়া হয় না।

এরপর গন্তব্য রিজার্ভ বাজার। নৌকা ভাড়া করব। কিন্তু পথের পাড়াপাড়ের নৌকার মাঝি আমাদেরকে কিছুক্ষণ দর কষাকষির পর ২৫০০ টাকায় একটি ট্রলার ভাড়া করে দেয়। জাহাজের ক্যাপ্টেন রতন চাকমা। আমাদের পরবর্তী প্ল্যান- লেকের মাঝে পেদা টিং টিং অথবা চাঙ পাঙ রেস্টুরেন্ট দুপুরের খাবার সেড়ে নিব। আনুমানিক সাড়ে ১০ টা নাগাদ আমরা পাঁচজন রওনা হই কাপ্তাইয়ে জলপথে। চারপাশে শুধু পানি আর অসংখ্য দ্বীপের মেলা। মনে হচ্ছে যেন ঢেউহীন সাগরের দ্বীপমালায় আছি আমরা।



আমাদের মাঝির পরামর্শে ‘চাঙ পাঙ রেস্ট্যুরেন্টে’ আমরা দুপরের খাবার খেতে যাত্রাবিরতি দেই সাড়ে ১১ টার মধ্যেই। খুব বেশি সকালে দিন শুরু হওয়ায় দিন অনেক লম্বা লাগে আজ। ব্যাম্বো চিকেন, কাঁচকি ফ্রাই ও কলাপাতা রুই মাছ দিয়ে ভাত খেয়ে। রাঙামাটির ব্যাম্বো চিকেন- এক কথায় জঘন্য, কেননা আমি ইতোপূর্বে খাগড়াছড়িতে 'সিস্টেম রেস্তোরা' তে যা খেয়েছিলাম, ইহা সে অর্থে ব্যাম্বো চিকেনই না। সিস্টেমে দুপুরে অর্ডার দিয়ে রাতে খেতে হয়েছিল। তারা বাঁশের ভেতর থেকে আমাদের সামনে খুলে দিয়েছিল চিকেন। আর এখানে আগে থেকেই মুরগির তরকারি রান্না করা থাকে, শুধু একটা বাঁশ দু'ফালি করে তাতে ছড়িয়ে দেয়। এমনকি এই একই বাঁশ অনেক অনকে বার ব্যবহার করেছে ১০০ ভাগ নিশ্চিৎ। এটা আপনি-আমি ঢাকাতে আপনার বাড়িতেই রান্না করতে পারব। শুধু একটা বাঁশ দু'ফালি করে রেখে দিতে হবে, মুরগি ছোট ছোট টুকরা করে রান্না হলে বিছিয়ে দিব বাঁশের ফালিতে। তবে কাঁচকি ফ্রাইটা ভালো ছিল।



আমরা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার উঠে পড়ি আমাদের জাহাজে, কাপ্তাইয়ের জলে। এদিকে গরমে শরীর ভালই তাঁতিয়ে উঠেছে। ফলে আমরা আমাদের জাহাজের ক্যাপ্টেনকে বলি যে কোথাও থামাতে যাতে আমরা একটু লেকের পানিতে শরীরটা ধুয়ে নিতে পারি। লেকের অসংখ্য দ্বীপের একটাতে জাহাজ ভিড়িয়ে আমরা কিছুক্ষণ লেকের পানিতে গোসল সেরে নেই। বেশ কিছুক্ষণ পর আমরা রাঙামাটি সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান 'ঝুলন্ত ব্রিজ' এ পৌঁছে যাই। সেখানে নেমে কিছুক্ষন ফটোসেশন করে আর পাহাড়ি আনারস খেয়ে আবার জাহাজবাসী হই।

তারপর আবার ইঞ্জিনে ঘরঘর আওয়াজে শব্দ ও তেলে জল দূষিত করতে করতে অপরূপ প্রকৃতিতে চলতে থাকি। এর মধ্যে আমরা সবাই ভীষণ ক্লান্ত। কেউ শুয়ে, কেউ বসে বেশ খানিকক্ষণ করে ঘুমিয়ে নেই। আমারা সবাই মোটামুটি খাড়া রোদে ভীষণরকম কষ্টে। আমরা মাঝিকে জিজ্ঞেস করে জানি যে আরও ঘন্টাখানেক! কিন্তু আমরা চাই যেন তারাতারি শেষ হোক। রোদ আর ই্ঞ্জিনের শব্দে সবারই ত্রাহি অবস্থা।



তারপর আবার ইঞ্জিনে ঘরঘর আওয়াজে শব্দ ও তেলে জল দূষিত করতে করতে অপরূপ প্রকৃতিতে চলতে থাকি। এর মধ্যে আমরা সবাই ভীষণ ক্লান্ত। কেউ শুয়ে, কেউ বসে বেশ খানিকক্ষণ করে ঘুমিয়ে নেই। আমারা সবাই মোটামুটি খাড়া রোদে ভীষণরকম কষ্টে। আমরা মাঝিকে জিজ্ঞেস করে জানি যে আরও ঘন্টাখানেক! কিন্তু আমরা চাই যেন তারাতারি শেষ হোক। রোদ আর ই্ঞ্জিনের শব্দে সবারই ত্রাহি অবস্থা।

অবশেষে দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে আমরা কাপ্তাই জেটিঘাটে পৌঁছাই। সেখান থেকে বাজারে ঠান্ডা কোমল পানীয়তে তৃষ্ণা নিবারণ করে আবার জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পৌঁছাই। এবার আমাদের আর্মি বড় ভাই ফোন ধরেন এবং কিছুক্ষণ অনেক কাহিণী করে আমাদের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিতরে ঢোকার অনুমতি নিয়ে দেন। আমরা অটো নিয়ে কিছুক্ষণ বাঁধ ও এর চারপাশ ঘুরে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বের হয়ে আসি। নাহ, আশা ফুড়ালো না। তেমন কিছুর দেখা পাওয়া যায় নি। ঐ ভাইয়ের বর্তমান পোস্টিং কাপ্তাইয়ে থাকলে ভেতরটা ভালমত ঘুরে দেখা যেত।

এবার উদ্দেশ্য কাপ্তাই কায়াক ক্লাব। অটোতে করে পৌঁছে যাই জুম রেস্তোরা। এখানে আমরা কায়াকি নৌকায় ঘুরব। আমি অনির্বাণের ভরসায় কায়াকিং করতে রাজি হই। পরিবেশ। আমি এবং নৌকা চালানোয় অভিজ্ঞ অনির্বান একটা কায়াক নিয়ে নেমে পড়ি জলে। ঘন্টায় ২০০ টাকা। আমাদের ট্যুরের বাকি সদস্যগণ নৌকায় না উঠে কর্ণফুলি নদীর ধারে বসে থাকবে বলে ঠিক করে।



বিকাল ৫ টার দিকে রোদ নেমে আসায় এখন লেকের ও নদীর চারপাশ আর কষ্টকর লাগে না। খুবই দৃষ্টিসুখকর ও মোহনীয় আমরা পানিতে ভাসতে ভাসতে অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে থাকি। প্রায় মিনিট চল্লিশের মতো আমরা জলে ভাসি আর সেল্ফি তুলি। মাঝে ভাসতে ভাসতে নিষিদ্ধ অঞ্চলে চলে যাই আমরা কায়াক নিয়ে। আমাদের ফিরিয়ে নিতে বিরক্ত কায়াক ক্লাবের এক কর্মী একটা কায়াক নিয়ে ঝরের বেগে চলে আসে। আমরা বুঝতে পারি নি, কেননা আমরা কায়াকিং করার আগের দিক-নির্দেশনা শুনি নি ভালো করে। নদীর জলে হালকা নৌকায় ভাসার অভিজ্ঞতাটা আমার রাঙামাটিতে সবচেয়ে ভাল লেগেছি।



সন্ধ্যা পৌণে ৬ টার দিকে আমরা ২০ টাকা টিকেট কেটে 'জুম রেস্তোরা' তে ঢুকে নদীর ধারে বসে থাকি। বাস কাপ্তাই থেকে ছাড়বে রাত ৮ টায়। আমরা জুম রেস্তোরায় বার-বি-কিউ চিকেন ও নান দিয়ে রাতের খাবার সেড়ে ফেলি সাতটার মধ্যে। গ্রীলটা ভাল ছিল, কিন্ত নান দেখে আমরা ৫ জনই অবাক। নান বলতে ওরা যা বুঝিয়েছে, উহা আসলে নান ছিল না। অতি মাত্রায় তেলে ভাজা না পরোটা, না লুচি, না নান- এক অদ্ভুৎ খাবার। খিদে পেটে খারাপ লাগে না অতোটা। বাসের কাউন্টারে ফোন করে জানিয়ে দেই আমাদের যেন জুম রেস্তোরার সামনে থেকে তুলে নেয়। আড্ডা দিতে দিতে সময় পাড় করে রাত ৮ টার কিছু পর আমরা ফেরার বাস শ্যামলিতে উঠে পড়ি, ঢাকার উদ্দেশ্যে। ফেরার পথে সবাই ক্লান্ত। সবাই ঘুম। পথে পুলিসের রুটিন চেক, জ্যাম, এটাসেটা তেমন একটা বোঝাই যায় নি। মোটামুটি ঘুমিয়েই পৌঁছে যাই চিরচেনা শহরে। ভোরের সূর্য দেখি ঢাকার রাস্তায়।

রাঙামাটি সুন্দর। প্রকৃতিও সুন্দর। কিন্তু আমার কাছে বান্দরবান সেরা। রাঙামাটি অনেক আধুনিক এক শহর। অনেক সুযোগ-সুবিধায় এখানে বিশুদ্ধতা কম। বান্দরবানের বিশাল বিশাল পাহাড়ে হারিয়ে যাওয়া যায়। থাঞ্চির নির্মল পরিবেশ, নেটওয়ার্কের বাইরে বসে উপভোগ করা যায়। হয়তো বর্ষায় কিংবা শীতে- যখন গরম আবহাওয়া থাকবে না, তখন রাঙামাটি ভ্রমণ আরেকটু উপভোগ্য হবে। তবে আমাকে বান্দরবান ও রাঙামাটির মধ্যে যে কোন একটিকে বেঁছে নিতে বললে আমি বান্দরবানকেই বেঁছে নিব।



তবে এখনও আমার চোখে ভাসে বান্দরবান- আহ থাঞ্চি! আহ রেমাক্রি! আহ লিলি ব্যোম!!

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৭

ওমেরা বলেছেন: ছবি ও বর্ণনা সব মিলিয়ে সুন্দর পোষ্ট ।

২৭ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:৫২

মুচি বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

২| ২৭ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৬

নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: সুন্দর বর্ণনা করেছেন নিজের ভ্রমণ গল্প। ভালো লাগলো।
ছবিগুলো সুন্দর তুলেছেন ভাই।

২৭ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:৫৪

মুচি বলেছেন: ধন্যবাদ। সব ছবি আমার তোলা নয়। কিছু বন্ধু অনির্বাণের তোলা, কিছু আমার তোলা।

৩| ২৭ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:০৭

সুমন কর বলেছেন: ছবি আর বর্ণনা মিলিয়ে পোস্ট ভালো লাগল।

২৭ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:৫৪

মুচি বলেছেন: ধন্যবাদ।

৪| ২৭ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:১৪

প্রবাসী দেশী বলেছেন: ভালো লিখেছেন। পরেরবার ভ্রমণ কাহিনী লেখার সময় আরেকটু ডিটেইলস এ যাবেন পড়তে আরো ভালো লাগবে। ভালো থাকুন সবসময়।

২৭ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:৫৭

মুচি বলেছেন: শর্ট ট্যুর, শর্ট সময় নিয়ে লেখা। পরের কাহিণী আরেকটু ডিটেইলস লিখব তবে।

একটু কষ্ট করে ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখে নামলে আমার বান্দরবান ট্যুরের গল্প পাবেন। ওটা একটু ডিটেইলস ছিল। আশা করি আপনার ভালো লাগবে।

ধন্যবাদ।

৫| ২৭ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:৪৫

তারেক ফাহিম বলেছেন: ভ্রমন পোষ্টগুলো আমার নিকট ভালো লাগে,
আরও বেশি আকর্ষন লাগে যখন প্রতিটি ছবিতে ছোটকারে ক্যাপশান থাকে।

মুগ্ধকার ভ্রমন পোষ্টে++
অনেক মজা করলেন মেয়া ভাই।

২৭ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:৫৯

মুচি বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

গরমে মজা সব শরীর থেকে কাপ্তাই লেকের জলে পড়েছে। একটু শীত অথবা কিছুটা বৃষ্টি বৃষ্টি আবহাওয়া হলে মজটা সম্পূর্ণ হতো।

৬| ২৭ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: ছবি ও লেখা সুন্দর।

আপনি বেকার কেন? চাকরি পাচ্ছেন না? না ইচ্ছা করেই চাকরি করছেন না?

২৭ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:২০

মুচি বলেছেন: চাকরি করতাম। প্যারা লাগায় ছেড়ে দিয়ে এম.বি.এ করছি আর সরকারি চাকরির আশায় আছি। :|

দোয়া রাখবেন ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.