নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর উৎসবে আঁধারে আবদ্ধ ...!!!

মুচি

ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে- অবাক বিস্ময়ে ....

মুচি › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ ময়লার ট্রাক

২২ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১২:২১




এইতো সেদিন, বিরোধীদলের নেতার বাড়ির সামনে কর্পোরেশনের একটা ময়লা বোঝাই ট্রাক চাকা খুলে প্রায় ঘন্টা খানেক দাঁড়িয়ে ছিল। কেন দাঁড়িয়ে ছিল, তা নিয়ে দু’রকমের ভাষ্য শোনা যাচ্ছে। সরকার ও বিরোধীপক্ষ মেতে উঠেছে কথার লড়াইয়ে। যেকোন সময় অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে যেতে পারে।

এরমধ্যেই বিরোধিদলীয় এক নেতা সরকারের এহেন হীনকর্মের সমুচিত জবাব দেবার আহ্বান জানিয়ে এক সুবিশাল বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি তার কর্মীদের বলেছেন আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিতে। সরকার আজ যা করেছে, তা অত্যন্ত নীচ। অত্যন্ত বর্বরোচীত কাজ। এরজন্য সরকারকে চড়া মূল্য দিতে হবে। দলের সবাইকে নিয়ে শীঘ্রই সর্বাত্মক সরকার পতনের আন্দোলন হবে বলে সরকারকে তিনে হুশিয়ার করে দিয়েছেন।

জবাবে সরকার দলীয় এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর বিকেলে এক সভাশেষে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে বক্তব্য দেন, ট্রাক সে তো নষ্ট হতেই পারে। ময়লার ভারে ট্রাকের চাকা খুলে গিয়েছিল। খুলে যাওয়া সে চাকা জোড়া দিতে যে সময় লেগেছিল ততক্ষনই ট্রাক অনিচ্ছাসত্বেও সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল। দুর্ভাগ্যক্রমে সেটি বিরোধীদলের নেতার বাড়ির সামনে ঘটেছিল। এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কিছু নেই।

অন্যদিকে সন্ধ্যায় বিরোধীদলের কেন্দ্রীয় এক বড় নেতা প্রতিবাদে বলেন যে, এটা নিঃসন্দেহে সরকারের চক্রান্ত। খুলে যাওয় চাকা কোন সাধারণ ঘটনা না। আমাদের নেতাকে শ্বাসকষ্টদানের জন্যই সরকার মেয়রের মাধ্যমে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

আরেক সরকার দলীয় নেতা এক অনুষ্ঠানে বলেন যে, ট্রাকও তো মানুষ, মানে ট্রাকের তো একটা জীবন আছে। আর চাকা খুলে গেলে ট্রাকের তো কোনকিছু করার নেই। ট্রাক নষ্ট হয়েছিল, সেটা সারিয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এটাকে ইস্যু করার কিছু দেখছি না। অযথাই বিরোধীদলীয় নেতৃবৃন্দ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাচ্ছে। কিন্তু সরকার এ বিষয়ে সজাগ। যে কোন ধরনের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম রুখে দেয়া হবে।

অবস্থা বেগতিক দেখে মাননীয় মেয়র সাহেব এক প্রেস ব্রিফিং করে বলেন, এখানে কারো চক্রান্ত নেই। শহরে মানুষ সুপারসনিক বেগে বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে ময়লা। কর্পোরেশনের পর্যাপ্ত ট্রাক নেই সেই ময়লা সরাবার জন্য। মাত্রারিক্ত ময়লা বহন করতে যেয়ে বহু পুরনো ট্রাকগুলোর ত্রাহি অবস্থা। মাঝে মাঝেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে রাস্তার মধ্যে। দুঃখজনকভাবে মাননীয় বিরোধীদলের বাড়ির সামনে ঘটনাটি ঘটে যাওয়ায় কর্পোরেশন অতিশয় দুঃখ প্রকাশ করছে।

মেয়রের বক্তব্য বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের সন্তুষ্ট করতে পারে না। তারা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ঘোষনা দিয়ে দেয়। সরকারও আন্দোলন প্রতিহত করার জন্য বদ্ধ পরিকর। প্রতিদিনই চলছে দু’দলের কথার লড়াই। কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে পাড়ার দু’কড়ির পাতিনেতারাও মিটিং মিছিল সভা করে তাদের নিজ নিজ দলের বক্তব্য প্রচার করছে। অবস্থা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রনের বাইরে।

পত্র-পত্রিকায় সপ্তাহজুড়ে ময়লার ট্রাক নিয়ে নিউজ ছাপা হচ্ছে। কলামিস্টরা তাদের মতামত প্রকাশ করছেন। টিভি মিডিয়াও মেতে আছে ময়লার ট্রাকে। প্রতিঘন্টার সংবাদের সাথে সাথে প্রতি রাতে টক-শো নামক সার্কাসে বুদ্ধিজীবি শ্রেণীর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তাদের মতামত দিয়ে যাচ্ছেন। ফলে সাধারণ জনতার জীবনেও ময়লার ট্রাক ঢুকে গেছে।

সর্বত্রই ময়লার ট্রাক। সবক্ষেত্রে দু’টো পক্ষ দাঁড়িয়ে গিয়েছে। একদল এটাকে একটি তুচ্ছ ঘটনা হিসেবেই দেখছে। আরেকদল পুরোটাই ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজে পাচ্ছে। আর এর মধ্যে আগুনে ঘি ঢেলে দেয়ার মত সরকারী দলের রাঘব-বোয়াল নেতা থেকে পাড়ার পাতি নেতা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোন দোষ খুঁজে পাচ্ছে না বলে দিনরাত স্টেটমেন্ট দিচ্ছে। অন্যদিকে বিরোধীদলের সব নেতা-কর্মী এটাকে সরকারের চক্রান্ত হিসেবে প্রতিবাদের জোয়ার তুলেছে। আর জনতাও দু’ভাগে ভাগ হয়ে পাড়ায়-মহল্লায়, অফিস-মার্কেট আর চায়ের দোকানে ধোঁয়া তুলছে। ফেসবুকের নিউজ ফিডে শুধু ময়লার ট্রাক। অনেকের কাভার ফটো বা প্রোফাইল ফটোতেও ময়লার ট্রাক স্থান করে নিয়েছে। এখন টক অব দ্যা কান্ট্রি হল এই ময়লার ট্রাক।

সরকার সমর্থক লোকজন সরকারের নেতাদের কথা অন্ধভাবে বলে যাচ্ছে। বিরোধী সমর্খকরা বরাবরই চক্রান্তের তত্ব আওড়ে যাচ্ছে। কথা কাটাকাটি কোথাও কোথাও হাতাহাতিতে রূপ নিয়েছে। দু’এক জায়গায় ছোটখাটো সংঘর্ষ থেকে হাসপাতাল অব্দি যেতে হয়েছে কাওকে কাওকে। এরা কেউই সরাসরি কোন দলের সদস্য নয়। তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ থাকছে না আরকি।

পুলিস থেকে জানানো হয়েছে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না। জনজীবনের নিছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে কোন মূল্যে করবে। সবাইকে শান্ত থাকার জন্য অনুরোধও করেছে তারা। কিন্তু কে শুনবে সে কথা। তাদের বয়েই গেছে বাকি সব বিষয় নিয়ে চিন্তা করার কথা। বাঙালি পেয়েছে মেতে থাকার মত এক বিষয়। দলবেঁধে তারা নিজেদের বিচার-বুদ্ধির প্রকাশ করে যাচ্ছে। আর সরকার ও বিরোধীদল একে অন্যের বিরুদ্ধে মন্তব্য-পাল্টা মন্তব্য দিয়ে যাচ্ছে।

অবস্থার ভয়াবহতা দেখে বিশ্বমিডিয়াও বাংলাদেশের ময়লার ট্রাকের দিকে নজর দেয়া শুরু করেছে। নিজেদের মধ্যে বিবাদ ভুলে ট্রাম্প-কিম বাংলাদেশের ময়লার ট্রাক নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে কথা বলছেন। বৈঠক শেষে তারা এক যৌথ বিবৃতে জানিয়েছেন তারা চান যে উভয় পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা হোক। এ মুহুর্তে তাঁরা কোরিয়া উপদ্বীপের থেকে বাংলাদেশের ময়লার ট্রাক ইস্যুকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন। বাংলাদেশের ময়লার ট্রাক সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তারা নিজেদের মধ্যে বিবাদকে দূরে সরিয়ে রাখতে সম্মত হয়েছেন।

পাশের দেশ থেকে মোদিজি পরামর্শ দিচ্ছেন যেন দু’পক্ষ ঠান্ডা হয়। তিনি বলেন তার “শুদ্ধ ভারত” অভিযানে বাংলাদেশকেও পাশে চান। ঘনিষ্ট প্রতিবেশীকে পাশে রেখে তিনি এগিয়ে যেতে পারবেন না। এজন্য তিনি তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে রাজানাথ সিংকে বাংলাদেশে পাঠাতে চান বলে জানিয়েছেন।।
ওদিকে পুতিন জানিয়েছেন তার দেশ বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা চায়। ১৯৭১ সালে রাশিয়া বাংলাদেশের সাথে ছিল, ২০১৮ তেও রাশিয়া বাংলাদেশের সাথে থাকবে বলে তিনে এক ঘোষনায় জানান।

চিন থেকে শি চিনপিং জানিয়েছেন যে কোন ইস্যুতে তার আগেও বাংলাদেশের সাথে ছিলেন। তেমনি ময়লার ট্রাক ইস্যু সমঝোতা করতে তারা বাংলাদেশকে পূর্ণ সহায়তা দিতে প্রস্তুত। তার সরকার বাংলাদেশের ময়লার ট্রাক ইস্যু সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখছে। উভয় পক্ষের জন্য শান্তিপূর্ণ সমাধানের রাস্তাও তার তৈরি করে দিতে ইচ্ছুক।
এরমধ্যে শিনজো আবে জানিয়েছেন জাপান বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তির ময়লার ট্রাক সরবরাহ করতে প্রস্তুত। এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই জাইকার মাধ্যমে সহায়তা চুক্তির খসড়া করে ফেলেছেন তারা। তারপরও দু’পক্ষ ময়লার ট্রাক ইস্যুতে নতুন আবর্জনার সৃষ্টি না করেন।

বিশ্বব্যাংক ও আই.এম.এফ. বাংলাদেশকে স্বল্পসুদে নতুন ময়লার ট্রাক কেনার প্রস্তাব দিয়েছে। মনে হচ্ছে পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিরোধ ভুলে নতুন করে সম্পর্ক শুরুর ধান্দায় আছে তারা।

বাংলাদেশ সরকার বিশ্ববাসীর তৎপরতায় মুগ্ধ। কৃতজ্ঞতার নিদর্শনস্বরূপ এরমধ্যের বেশকিছু মেগাপ্রকল্পের জন্য সরকার দেনদরবার শুরু করে দিয়েছে বলে জানা গিয়েছ। তবে ময়লার ট্রাক ইস্যুতে বিরোধীদলকে একচুলও ছাড় দিতে সরকার নারাজ।

বিরোধীদলও বিশ্বনেতাদের সাথে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। সেই সাথে পরবর্তী নির্বাচনে ক্ষমতায় এলে তাদের সরকার বহির্বিশ্বের সাথে সম্পর্কোন্নয়ন করবে বলে জানিয়েছে। সরকারের কাছে কোন ছাড় না পেয়ে আগামী তিনদিন বিরোধীদল দেশব্যপী হরতালের ডাক দিয়েছে। এমনকি সরকার পতনের আগ পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে বলেও হুশিয়ারি করে দিয়েছে।

এক পক্ষ আনন্দ মিছিল ডাকে তো অন্য পক্ষ প্রতিরোধ মিছিল। এক পক্ষ সংবর্ধনা সভা ডাকলে অন্য পক্ষ প্রতিবাদ সভা ডেকেই চলেছে। যানজটে প্রায় অচল শহরটি পুরোপুরি অচল হয়ে যাওয়ার অবস্থা। এমন পাল্টা-পাল্টি আয়োজনে এখন শুধু আমজনতার ম্যাংগো জুসে রূপান্তরের অপেক্ষা।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১:১৯

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: শুরুটা বেশ ভাল হয়েছিল৷ কিন্তু একটু পড়েই স্বাদ হারালাম৷ ব্যাপারটা যেন টেনে বড় করা হলো বলে মন্র হলো

২২ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১:৪১

মুচি বলেছেন: সময়ের অভাব। ধন্যবাদ। চেষ্টা থাকবে ভালো করার।

২| ২২ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১:৫১

Shihab4p72 বলেছেন: নিচের ভিডিওটি দেখে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০$ ইনকাম করুন-
https://youtu.be/1JBohfx8NeQ

৩| ২২ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ৮:২৩

অক্পটে বলেছেন: পুরোটা পড়া গেলনা। তবে সরকার নিরুপদ্রব দেশ চালাচ্ছে। দেশে বিরোধীদল নেই। ভোটে নেই। দখল আছে গুম খুন আছে, মামলা হামলা আছে।

২২ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:০৩

মুচি বলেছেন: রাজার নীতি আমরা কি বুঝি?

৪| ২২ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: ইলিয়াস কাঞ্চনের মতো বলতে ইচ্ছে করছে- আমি বেঁচে থাকতে বস্তি দখল করতে পারবি না!

২২ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:০৩

মুচি বলেছেন: কেন ভাই?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.