নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর উৎসবে আঁধারে আবদ্ধ ...!!!

মুচি

ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে- অবাক বিস্ময়ে ....

মুচি › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবার পাহাড়, এবার ক্রেওক্রাডং- পর্ব ১

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:১০



শিশুকালে স্কুলের বইয়ে কিংবা কোন সাধারণ জ্ঞানের সৌজন্যে জানা দেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কেওক্রাডং। পরে আমার বয়সের সাথে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশের সর্বোচ্চ বিন্দুর উচ্চতাও বেড়েছে। তবে ক্রিওক্রাডং এর নিজের উচ্চতা আর বাড়ে নি, বরং নতুন শৃঙ্গ আবিষ্কৃত হয়েছে তাজিংডন (বিজয়)। ইদানিং বেসরকারিভাবে 'সাকা হাফং 'কে সর্বোচ্চ শৃঙ্গ দাবি করা হচ্ছে। সে যাই হোক, ক্রেওক্রাডং দাঁড়িয়ে আছে তার আপন ৩,১৮২ ফুট উচ্চতায়।



এ বছরের শুরুতে নাফাখুমের দুর্গমরাজ্য ঘুরে আসার সময়ই ঠিক করা ছিল যে, ক্রেওক্রাডং জয় করতে হবে। তাজিংডং বিজয় যদিও অনেক কষ্ট সাপেক্ষ ও বর্তমানে অনুমতির অযোগ্য, তাই ক্রেওক্রাডংই সই। অতটা দুর্গমও না, আবার খানিকটা ট্রেকিং এর অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে। তাই দিনক্ষণ ঠিক করা হলো গ্রুপ সদস্যদের সুবিধাজনক মতামত নিয়ে। শুরুতে আটজন থেকে তুহিন আগেই মানা করে দেয়ায় । ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে যাত্রা শুরু করার পর জানতে পারলাম সিফাতও যাচ্ছে না। ফলে সদস্য সংখ্যা ৮ থেকে কমে ৬ জনে নেমে এলো। শেষ মুহুর্তে মাহিকে নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হলেও সে খানিক পরে তার পূর্ববর্তী রেকর্ডকে মিথ্যা প্রমাণিত করে গাবতলীতে ঠিকই আমাদের সাথে যোগ দিলো। সাড়ে দশটায় শ্যামলি পরিবহনের বাস ছাড়লো বান্দরবানের উদ্দেশ্যে।



ঢাকার ভেতরে খানিকটা জ্যাম আর বৃষ্টির কারণে রাস্তা ভেজা থাকায় বাস তার কাঙ্খিত গতি তুলতে পারে নি। ফলে কুমিল্লা পৌঁছে বিরতি দিতে দিতে তিনটা পার হয়ে গেলো। সেখানেও বাস ১৫ মিনিটের স্থলে বিরতির সময় নিল ২৫ মিনিট। ফলাফল যা হবার তাই। বান্দরবান পৌঁছতে পৌঁছতে ভোর পেরিয়ে সকাল। ৭.১৫ তে আমরা বান্দরবানে নামি। গত জানুয়ারিতে যেখানে ভোর পৌণে ৬ টায় বান্দরবানের অন্ধকারে হিম লেগেছিল, সেখানে এবার ঢাকার মতো তাপমাত্রা। এমনকি ঢাকার বৃষ্টিও নেই। যে বৃষ্টির জন্য কিনা ব্যাগের ওজন বাড়িয়ে আনা !!



প্রাতরাশ সেরে জীপ ৭,৩০০ টাকায় আপ-ডাউন খোকন ভাইয়ের জিপ ভাড়া করে আমাদের পরবর্তী যাত্রা শুরু হলো- রুমা উপজেলার উদ্দেশ্যে। চমৎকারভাবে চলতে শুরু করে বেশ খানিকটা পাহাড়ি পথে উপভোগ করে চলছিলাম আমরা।



কিন্তু পথিমধ্যে চাকা পাংকচার হয়ে দেরির যাত্রায় আরো দেরি। স্পেয়ার চাকা লাগানো হলে আমরা আবার চলতে শুরু করি।



বিভিন্ন স্থানে চেক পয়েন্টে এন্ট্রি করে চলছিলাম। পথে পথে নির্বাচনী হাওয়া বীর বাহাদুর আর জেরি সাহেবের লড়াই হবে। রুমা বাজারে এসে আমাদের গাইড ইলিয়াস ভাই এর সাথে সাক্ষাৎ। আর্মির কাছে এন্ট্রি ফর্ম জমা দিয়ে সিগনেচার করে এসে লেবুর শরবত খেতে বসি। বীর বাহাদুর সাহেবের পক্ষে আমাদের কাছে ভোট চাইলো একপাল বান্দরবান সরকারী কলেজের পাহাড়ি-বাঙালি ছাত্র-ছাত্রি। জানুয়ারিতে রেমাক্রি যেয়ে একযোগে সবাই লিলি ব্যোমের প্রেমে পড়লেও এবার আমরা প্রেমে পড়ি এক বাঙালি ললনার। বান্দরবান সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের বাঙালি-পাহাড়ি সুন্দরি ললনাদের ভিড়ে একটি চেহারা আমাদের সবার নজর কাড়ে!! তাহার নাম-ধাম জানতে চাওয়ার সাহস হয় নি। পাহাড়ে ঘুরতে যেয়ে ওর বাঙালি-পাহাড়ি বন্ধুদের মার খেতে চাই নি।



আমাদের গাড়ির শেষ গন্তব্য কমলাবাজার পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর হয়ে এলো। খাড়া রোদে এবার হাঁটতে শুরু করার পালা। এত খাঁড়া পথ আমাদের এজন্মে ওঠা হয় নি।



প্রায় ৬০ ডিগ্রী কোণে প্রায় কয়েক কিমি হেঁটে বগালেক পোস্টে সর্বশেষ এন্ট্রি করে বগালেকের সৌন্দর্য্য দেখতে লাগলাম। খুব আহামরি বলবো না, তবে ফেলে দেবার মতো কিছুও না।



বগালেক নিয়ে লিজেন্ড আছে, এর সাথে নাকি কোন এক সমুদ্রের সংযোগ আছে। এজন্য নাকি এর পানিতে নামলে মানুষ মারা পড়ে, লাশও খুঁজে পাওয়া যায় না !! তবে ঢাকা বিশ্ববিদয়ালয়ের এক অধ্যাপক এর গভিরতা মেপে ১৩৫ ফুট বের করেছেন। এক পাহড়ি ঘরে দুপুরের খাবার ১২০ টাকা জনপ্রতি- ভাত ডিম, বেগুনভাজি, আলু ভর্তা, মিষ্টি কুমড়া আর ডাল। এরপর খাবারের দাম বেড়েছে, আইটেম কমেছে।



বগালেক থেকে এবার শুরু আমাদের মূল লক্ষ্য কেওক্রাডং এর পথে। ২ কিমি পিচঢালা পথে চলতেই গাইড ইলিয়াস ভাই আমাদের নিয়ে উঠলেন পাহাড়ি জঙ্গলের পথে। আঁকাবাঁকা, উঁচুনিচু পথ চলছি। সরু পায়ে চলা পথ। একপাশে খাড়া ঢাল, একবার পড়ে গেলেই ভবলীলা সাঙ্গ হবে। বাঁশের ঝাড়, আর নানারকম পাহাড়ি গাছপালা। পথের ধারে পাহাড়ি বুনোলতাজুড়ে ফুলের বাহার। তবে কোন পশুর দেখা নেই!!



কয়েক জায়গায় বাঁশকাঠের সাঁকো, পাহাড়ি ঝিড়ি ডিঙিয়ে আমরা চলছি। হাঁটার গতি স্লথ হয়ে আসে। পাহাড়ি পথে হাঁটা তো আর সহজ নয়। মাঝপথে পিয়াস হাঁপিয়ে ওঠে। এদিকে মাহি বকতে শুরু করে- আর না। খানিক পরপরই স্থানে স্থানে আমরা থেমে জিরিয়ে নেই। পা আর চলতে চায় না। বুঝতে পারলাম সারারাত জার্নি করে বান্দরবান, সেখান থেকে বগালেক। ফ্রেশ লেগ না হওয়ায় আমাদের সবার অবস্থাই করুন। একটা রাত বগালেক কাটিয়ে কেওক্রাডং রওনা হলে অনেক সহজ হতো। কিন্তু হাতে সময় কম- কি আর করবো। এদিকে ব্যাগও অস্বাভাবিক ভারি। এত ভারি করে নিয়ে আসা উচিৎ হয় নি। যে শীতের ভয়ে, বৃষ্টির ভয়ে ব্যাগ ভারি করা, অতটা শীত বা বৃষ্টির দেখা তখনও নেই।



চলতে চলতে আবার কাঁচা রাস্তা পাওয়া গেলো। বিকেল হয়ে আসে। আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে সেই কাঁচা রাস্তায় কিছু মালবোঝাই ট্রাক চলতে দেখে আমরা তো অবাক। রাস্তায় স্কিডমার্কস। কি অসম্ভব দক্ষ ড্রাইভার তারা। বাঁক ঘুরছে, কাঁচা লাল মাটি দিয়ে চলছে। এদিকে ইলিয়াস ভাই আমাদের আশ্বাস দেন- আর অল্প দূরত্ব, আর অল্প সময় চলতে হবে। চলতে চলতে বুঝি সব আমাদের সাহস দেবার জন্য বলা। দূরত্ব আর ফুরায় না। উঁচু-নিচু পথ, পাশে খাড়া পাহাড়ের ঢাল, ঝিড়ি ডিঙিয়ে, জঙ্গল ধরে পায়ে চলা ট্রেইল ধরে আমরা এগুতে থাকি।



এর মাঝে খাড়া রোদ যেয়ে মেঘ এসে পাহাড়ে ভিড় জমায়। অপূর্ব লাগে দেখতে। ঝিড় ঝিড়ে বৃষ্টি পড়তে শুরু করে। আমরা কোনোমতে একটা ছাওনিতে এসে বসি। আবার বৃষ্টির তেজ কমলে আবার চলতে শুরু করি। এভাবে চলতে চলতে ইলিয়াস ভাই আমাদের এক অপূর্ব দৃশ্য দেখান দূর হতে। ঐ দূরে দেখা যায় প্রকৃতির মাঝে দু'টি পাকা স্থাপণা- কেওক্রাডং এর চূড়া !! আমরা আমাদের লক্ষ্য থেকে খুব বেশি দূরে নেই। প্রায় চলে এসেছি।



তবে সে চূড়াও যে বেশ দূরে !! সন্ধ্যা নেমে আসে, আমরা দার্জিলিং পাড়ায় এসে থামি। এখান থেকে নাস্তা করি হালকা। পাহাড়ি পেঁপে, চা আর বিস্কুট। তারপর এদিকে সূর্য ডুবে আসে। এবার বের হবার পালা। কিন্তু বৃষ্টি ঝমঝম করে নেমে আসে। বৃষ্টির মধ্যেই চলতে শুরু করি। শরীর ভিজে, কিন্তু পিঠের ব্যাগ নিয়ে দুঃচিন্তা। ওটা ভিজলে শেষ। গাছের নিচে দাঁড়িয়ে পড়ি। সময় চলে যায়। পাহাড়ের শেষ আলোটুকুও হারিয়ে যায়। কাঁচা রাস্তার ট্রেইল ধরে টর্চ আর মোবাইল ফোনের আলোয় চলছি। ওপর থেকে ঝিড়িঝিড়ি বৃষ্টি পড়ে। পথ পিচ্ছিল। একটু এদিক-সেদিক হলেই পড়ে যেতে পারি একেবারে খাঁদে। আমি আর রাতুল দাঁতে দাঁত চেপে চলতে শুরু করি। এবার সবাই পিছিয়ে পড়ে। চলতে চলতে পৌঁছে যাই কেওক্রাডং এর চূড়ার পাড়াতে। সন্ধ্যা ৬.১০ তখন। কিন্তু মেঘলা আবহাওয়ায় অন্যরকম দৃশ্য। সূর্যাস্ত দেখার সৌভাগ্য হয় না। এদিকে বৃষ্টি কমে আসে, কিন্তু পাহাড়ের চূড়ায় দৈত্যাকার বাতাস। মনে হয় উড়িয়ে নেবে। আমি আর রাতুল সবার আগে ৪০-৫০ ধাপের পাঁকা সিঁড়ি বেয়ে সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠে কয়েকটি ছবি তুলে ফেলি। বাকিদের আর এটুকু আসার শক্তি বা ধৈর্য্য নেই। নিচে নেমে থাকার ঘর ঠিক করে নেই।



জনপ্রতি ২০০ টাকায় এদিকে আরেকবার এন্ট্রি খাতায় নাম দিয়ে খাবার অর্ডার করি। তখন সন্ধ্যা ৭ টা বেজে যায়। আমরা এক ঘরে ৬ জন ঢুকে শুয়ে পড়ি লেপের নিচে। ক্লান্ত সবাই ঘুমিয়ে পড়ি সাথে সাথে। রাত ৮ টায় ইলিয়াস ভাই আমাদের ডেকে নিয়ে যান, জেনারেটর বন্ধ হয়ে যাবে। দ্রুত খেয়ে নিতে হবে। ডিম, ডাল, আলু ভর্তা দিয়ে ভাত ১৩০ টাকা করে। তাই খেয়ে সবাই মিলে এবার চূড়া বিজয়ে যাই আবার। ওপরে রবির নেটওয়ার্ক বেশ ভালো। নেটওয়ার্ক পেয়ে ইন্টারনেটে ঢুকে চেকইন দিতে ভুলি না। বাকিরা নেমে গেলেও আমি আর রাতুল থেকে যাই। ভীষণ ঠান্ডা বাতাস হঠাৎ ই ঝড়ে রূপ নেয়। ছেলে লুঙ্গি পরে গিয়েছিল, অবস্থা এমন হয় যে, কঠিন বাতাসে লুঙ্গি আকাশে।



দমকা বাতাসের সাথে বৃষ্টি শুরু হয়। রাতুল আর আমি আটকা পড়ি। চূড়ায় ঘরটির ভেতর দাঁড়িয়েও সর্বস্ব ভিজে যায় যায় অবস্থা। কিছুক্ষণ পর সে বৃষ্টি খানিকটা কমে এলে দ্রুত নেমে আসি। আবার না আঁটকা পড়ি এই ভয়ে। তবে এর মধ্যেই আমরা ৬ জনই আমাদের যাত্রাসঙ্গী বাঁশগুলো হারিয়ে ফেলি। কি বিপদ !! ফেরার দুর্গম পথ পাড়ি দিব কি হাতে?






মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৩২

যোখার সারনায়েভ বলেছেন: ছবিগুলো ভালো তুলেছেন।

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:০৫

মুচি বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: বাহ!!
দারুন।

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:০৫

মুচি বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:১৯

মাহের ইসলাম বলেছেন: বর্ণনা শুনে যেতে ইচ্ছে করছে।
লেখা সুন্দর হয়েছে। ছবিগুলো পুরো লেখায় প্রাণ নিয়ে এসেছে।

বগা লেকে বড়শি দিয়ে মাছ ধরা যাবে ?

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৫৯

মুচি বলেছেন: ধন্যবাদ। সে স্থান আরও প্রাণময়।

বগালেক ভুলেও স্পর্শ করবেন না। সে দূর হতে দেখতেই সুন্দর। অতি গভির, প্রাণঘাতি জলাশয়। ভ্রমণে সাবধান থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.