নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর উৎসবে আঁধারে আবদ্ধ ...!!!

মুচি

ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে- অবাক বিস্ময়ে ....

মুচি › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেওক্রাডং এর চূড়ায় ভূতের সাথে একরাত- (পর্ব ২)

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:৫৪



প্রচণ্ড শীতের দিনেও অস্বাভাবিক খাড়া পাহাড় পাড়ি দিতে দিতে মোটামুটি সবাই ঘেমে নেয়ে একাকার হচ্ছিলাম। ঢাকার বৃষ্টি বান্দরবানে এসেছে দেরদিন পর। তবে সেখানে বিকেলবেলার ঝিরঝিরে বৃষ্টি বেশ স্বস্তি দিচ্ছিলো, পাহাড়ি পথের ক্লান্তিকে বৃষ্টি মাখা পাহাড়ি বাতাস উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। আমি আর রাতুল কিছুকাল জিমে যাতায়াত করায় খানিকটা স্বাভাবিক ছিলাম। যদিও ক্লান্তির চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছিলাম বাকি সবার মতোই। তবে প্রায় শতকেজি ভরের পিয়াস বেশ বিপাকে পড়ে গিয়েছে তার বিশালকায় শরীর বাইতে বাইতে। দুরন্ত সাইফও ক্লান্তিতে পথের পাশে বসে পড়ে। চটপটে আসাদ চরম ইচ্ছাশক্তিকে সাথে নিয়ে চলছে। শুরুতে সবাইকে পেছনে ফেলা গবেষক মাহি, মাঝপথে নিজের শুরুর সে তেজ আর ধরে রাখতে পারে নি। আমি চলছিলাম সবার পেছন পেছন, নিজের শক্তিকে সংরক্ষণ করার ব্রত নিয়ে এগুচ্ছিলাম। নিজেদের শরীর বহন করার মত ধৈর্য্যই হচ্ছিল না, তার ওপর আবার পিঠে ভাড়ি ব্যাগ!



ডিসেম্বরের শীত। তার ওপর সামুদ্রিক নিম্নচাপের বৃষ্টি। আর বান্দরবানের শীতের রাত যে কি ভয়ংকর হতে পারে, সেটা আমরা গত জানুয়ারিতে নাফাখুম ভ্রমণের সময়েই টের পাই। তাই ব্যাগ ভর্তি শীতের জামা নিতে নিতে ব্যাকপ্যাক বেশ ভাড়ি করে ফেলেছি। একমাত্র গবেষক মাহি ছাড়া, মোটামুটি সবার ব্যাগই বেশ ওজনদার। গবেষণা করে সে বুঝতে পেরেছে ব্যাগ ভাড়ি করে লাভ নেই!! ব্যাগে সব নিয়ে আবার ব্যাগ খালি করার পরও মোটামুটি বেশ ওজন রয়ে গিয়েছে। আবার বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ছাতা-রেইনকোট এসবও ব্যাগে স্থান করে নিয়েছে। যদিও বান্দরবান এসে বৃষ্টির দেখা পাই নি, ফলে ব্যাগের ওজন কমানোর জন্য বৃষ্টির সামগ্রী জিপে রেখে কমলা বাজার থেকে হাঁটা শুরু করি। কিন্তু পথ বাড়ার সাথে সাথে সে ওজন বেড়েছে বৈ কমে নি।

সেই যে বগালেকের পাশ থেকে দুপুর ২ টার দিকে অল্প ভাত খেয়ে রওনা হই, এরপর পথের মাঝে খাবার বলতে বুদ্ধিদীপ্ত আসাদের আনা ৪-৫ টা খেজুর। বৃষ্টির মধ্যে আধভেজা হয়ে চলার পথে ক্যালরি শুধু বার্নই হয়েছে, কিছু ঢোকে নি।কেওক্রাডং চূড়ার ঠিক আগের পাহাড়ি পাড়ার নাম 'দার্জিলিং পাড়া'। শেষবেলায় এসে দার্জিলিং পাড়ায় খাবারের ব্যবস্থা দেখে আমরা প্রাণ ফিরে পাই। বসে যাই পাড়ার প্রধান কারবারির দোকানে। কারবারি সাহেবের মেয়ে বাচ্চা কোলে দোকান সামলাচ্ছেন। আমরা বিস্কুট,চা খেয়ে খানিকটা বিশ্রাম নেই। দোকানে পাহাড়ি পেঁপে দেখে কাটতে বলি। আমরা খাচ্ছি কিন্তু আর উঠতে চাচ্ছি না। পাহাড়ে সন্ধ্যা আগে নামে। আর সন্ধ্যা মানেই সাথে সাথে ঘুঁটঘুটে অন্ধকার। আর বিকেলের ঝিরঝিরে বৃষ্টি এখন ঝমঝমিয়ে নামে। আমি তো মত দেই আজ আর কেওক্রাডং চুড়ায় না যাই। কিন্তু গাইড ইলিয়াস ভাই আমাদের জানালো যে, আজ কেওক্রাডং আর্মি ক্যাম্পে আমাদের এন্ট্রি না করলে সমস্যা হবে। এদিকে বৃষ্টি খানিকটা কমে এলে ইলিয়াস ভাই জোড়পূর্বক আমাদের নিয়ে কাঙ্ক্ষিত চূড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কিন্তু দার্জিলিং পাড়া ছেড়ে খানিকটা এগুতেই বৃষ্টি আবার পূর্ণোদ্যমে আমাদের ভেজাতে শুরু করে। এ পথের পাশে শহরের মতো ছাওনি নেই। ভিজেই হাঁটতে থাকি। ঢাকার বৃষ্টির হাত থেকে যা এনেছিলাম, তা তো কমলা বাজার রেখে এসেছি, ওজন কমাতে। ফলে ভিজে যাচ্ছি। ব্যাগও ভিজছে ! এভাবে তো চলে না। একটা ঝোপের পাশে বড় গাছের নিচে দাঁড়ালাম বৃষ্টি যদি কমে সে আশায়। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিঁজছি।



বৃষ্টি কমে আসে বেশ খানিকটা সময় পর। খুব একটা কমে না যদিও। চারপাশ ঘুঁটঘুটে অন্ধকার। আমরা পথ চলছি। বুদ্ধিদীপ্ত আসাদ একটা ছোট টর্চ নিয়ে এসেছে। সেটা জ্বালিয়ে পথ চলছি আমরা। কিছুদূর পরপর পিচ্ছিল পথে পড়তে পড়তে বাঁচছি আমরা কেউ না কেউ। মাহি সবার পেছনে, মাহির পেছনে আমি। ফোনের টর্চ জ্বেলে বৃষ্টির মধ্যে চলছি। বুকের ভেতর ধুকপুক করে। এমন নির্জনতায় বৃষ্টিতে ভিজি নি কখনও। বেশ খানিকটা ঢাল বেয়ে, পা টিপে টিপে অবশেষে আমরা চওড়া রাস্তায় পৌঁছলাম। এখানে বড় গাছ নেই তেমন। ফুলঝাড়ুর ঘাসবন। আশেপাশে কিছু জোনাকি জ্বলছে। ওপরে ছাইরঙা মেঘলা আকাশ। পাহাড়ে চাঁদ দেখার বাসনা নিয়ে যেয়ে আমরা বৃষ্টিতে স্নান করছি।

এবার আমার আর রাতুলের স্কোয়াট মারা পায়ের খেল শুরু। চূড়া কাছে জেনে আমাদের দু'জনের পায়ের গতি বাড়ে। সবাইকে পেছনে রেখে আমরা দু'জন হাঁটছি। হাতে মোবাইলের মৃদু আলো। ওদিকে মাহিকে ওঠানোর গুরু দায়িত্ব পড়েছে গাইড ইলিয়াস ভাইয়ের কাঁধে। সে সবার পেছনে মাহিকে টেনে টেনে তুলছে। আমি সামনে থেকে হাঁক ছাড়ি, "ইলিয়াস ভাই, ডানে না বামে?" ইলিয়াস ভাই পেছন থেকে পথের নির্দেশ দেন। পাহাড়ের নিচে আগে পিয়াস উঠবে, না সাইফ উঠবে সেটা নিয়ে বেশ তর্ক চলে দু'জনার মাঝে। চুড়া দেখলে কে কাকে রেখে দৌঁড়ে উঠবে সে কথা বলছিলো। কিন্তু তাদের দু'জনের সে কম্পিটিশন আর নেই। সবার মনেই পথের শেষ দেখার বাসনা।



আমার মোটেও চূড়ায় আগে উঠবো, এমন চিন্তা আর খেলছিলো না। শুধু মনে হচ্ছিলো, এ পথ শেষ হলেই বাঁচি। আর না। জোড়ে জোরে পা ফেলে সবার বেশ অনেকটা আগেই আমরা এসে আলোর সন্ধান পাই। এক পাহাড়ি পাড়া। লোকজন ঘরের ভেতর। আমরা কিছু বাঙালি ছেলে দেখে ভেতরে ভেতরে দারুন পুলক অনুভব করি। আমি ভাইদের উদ্দেশ্যে বলি, "ভাই এটা কি কেওক্রাডং এর চূড়া?" এক ছেলে আমাকে হতাশ করে বলে ওঠে, "না ভাই, আরেকটু ওপরে।" আমি আঁৎকে উঠি। সাথে সাথেই এক ভাই আমাকে আশ্বস্ত করেন যে এটাই কেওক্রাডং, তবে চূড়া ৩০-৪০ ধাপ উপরে। আমাদের পথের শেষ এখানেই। এসেই যখন পড়েছি, তখন চূড়া বিজয়ই বা বাকি থাকবে কেন? আমি আর রাতুল দুর্দান্ত ঔৎসুক হয়ে উঠে পড়ি স্বপ্নের কেওক্রাডং চূড়ায়। আহ এখানে চারপাশে কোন বাঁধা নেই। বাতাস আর বাতাস, সাথে বৃষ্টির ঝাপটা। দু'জনে কয়েকটি ছবি তুলে পরে অন্যদের সন্ধানে নিচে নেমে আসি। ওরা কেউ আর চূড়ায় ওঠার মত শারিরীক বা মানসিক অবস্থায় নেই। এদিকে বৃষ্টি ঝড়ছেই। বাঁশগুলো যে যার মতো ফেলে ছাউনিতে বসে আছে।

ইলিয়াস ভাই আমাদের ঘরে নিয়ে গেলেন। আমরা খানিকটা ফ্রেশ হয়ে, ঘরে ঢুকে ভেজা জামাকাপড় ছেড়ে লেপের নিচে ঢুকলাম। ইলিয়াস ভাই এন্ট্রি খাতা রুমে নিয়ে এলেন। আমরা নাম-স্বাক্ষর করে খাবারের অর্ডার করে শুয়ে রইলাম। সন্ধ্যায়ই আমরা ৬ জনের সবাই শোবার সাথে সাথে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম। ৮ টার দিকে ইলিয়াস ভাই এসে ডাকাডাকি জুড়ে দিলো। খেতে হবে। পাহাড়ে রাত বাড়ছে। সবাই শুয়ে পড়বে। তাই খাবার তাড়া, জেনারেটর বন্ধ করে দিবে। অগত্যা ইচ্ছের বিরুদ্ধে মাচার ঘর থেকে নিচে নেমে আসলাম। খেয়েদেয়ে আর হালকা ঘুম দিয়ে সবাই মোটামুটি তরতাজা। এবার সবাই চূড়ায় উঠবে। আমরা এবার দলবেঁধে উঠলাম। ওঠার সময় খেয়াল করলাম, আমাদের বাঁশগুলোর হদিস নেই। ইলিয়াস ভাইকে জানালাম সঙ্গে সঙ্গেই। ভাই খানিকটা বিরক্ত হলো। তবে পাহাড়ে যেহেতু বাঁশের অভাব নেই, একটা ব্যবস্থা তিনি করবেন বলে আশ্বস্ত করলেন।

৬ জন কেওক্রাডং এর চূড়ায়। ভীষণ বাতাস। আমার জীবনে এত তীব্র বাতাস আর দেখি নি। মনে হচ্ছিলো এ বাতাস বুঝি উড়িয়ে নিয়ে ফেলবে কেওক্রাডং চূড়া থেকে পাশের গিরিখাতে। রাতুল আর আসাদ লুঙ্গি পড়ে ওঠায় ওদের বিপদ আরো বেশি। বাতাসে সব উড়িয়ে নিয়ে যায় যায় অবস্থা। কি এক অদ্ভূৎ দৃশ্য না দেখলে কল্পনা করা সম্ভব না। চারপাশে অসংখ্য পাহাড়ের চূড়া। দিকবিদিক বাতাস আসছে। একবার সামনে থেকে তো পরক্ষণেই ডান-বাম কিংবা পেছন থেকে দমকা বাতাস আসছে। ঝিরঝিরে বৃষ্টি সেখানে আধোভৌতিক পরিবেশের অবতারণা করে। বেশ উপভোগ করছিলাম। কিন্তু খানিক পর এমন ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো যে সেখানে থাকা দায়। ছাওনির ভেতরও নিরাপদ নই। উল্টা-পাল্টা বাতাসে বৃষ্টির ঝাপটা আসছে সবদিক থেকে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। বৃষ্টির ঝাপ কিছুটা কমে আসে। কোনমতে আমরা নিচে নেমে আসি। ঘরে ঢুকে সাথে সাথে লেপের নিচে স্থান করে নেই। ঘরে সোলারের মৃদু বাল্ব জ্বলতে থাকে।

মোটা মোটা খাটের কাঠামো। বেশ শক্ত। টিন দিয়ে ঘেড়া। মেঝেতে কাঠের পাটাতন। উপরে চৌচালা টিন। কিন্তু সিলিং নেই। রাত বাড়ে, বাতাসও যেন তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিলো ঘর বুঝি উপরে নিয়ে পাহাড়ের ঢালে পড়ে যায়। নাহ, কাঠগুলো বেশ শক্তপোক্তই। বাইরে প্রচণ্ড বাতাসের সাথে প্রচণ্ড বৃষ্টি, ঠিক যেন কালবৈশাখি। ক্লান্তিতে দু'চোখের পাতা বুঁজে আসে। কিন্তু এরমধ্যে উটকো ঝামেলা শুরু হলো। পাশের কক্ষে একদল বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে। গল্প জুড়ে দেয়। উপরে সিলিং না থাকায় সব ঘর যেন এক। কিছুক্ষণ পর নাকে এলো গাঁজার বোঁটকা গন্ধ। বোঝা গেল তাহারা গঞ্জিকা সেবন করছেন। এদিকে শুয়ে শুয়ে বিরক্ত হচ্ছি। গাঁজা টেনে তাদের গল্প যেন বেড়ে যায় দ্বিগুন উদ্যোমে। আরও কয়েক দফা চলে তাদের গাঁজা সেবন পর্ব। রাত আনুমানিক ১০ টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ার কথা। সেখানে আমি কিছুক্ষণ পর পর ঘড়ি দেখি। রাত প্রায় ১২ টা বেঁজে আসে।

বিরক্তির চরম সীমায় পৌঁছে গেছি আমরা। গল্পগুলোও খুব অদ্ভুৎ কিসিমের। ভূতের গল্প। কয়েকজন নিজের এক্সপেরিয়েন্স বলছে। কার রুমে ভূত আসে। কে অদ্ভূৎ কিছু উপলব্ধি করে। কেউ কেউ শিশুকালে শোনা গল্পগুলো বলছে। তাদের রিলেটিভ এর এক্সপেরিয়েন্স, বা পরিচিত কারোও। আমার কোনো রিলেটিভ, বা আশেপাশের গ্রামের কারও অভিজ্ঞতা। প্রাচীন গাছ কেটে কেউ বিপদে পড়েছে। কাওকে কোনো জ্বিন বাঁচিয়েছে। কারো পরিবারে জ্বিনের অভিশাপে নির্বংশ সে গল্প। পুকুর থেকে অলৌকিকভাবে ডেকোরেটর
এর থালা-বাটি উঠে আসার গল্প, লোভি মানুষের সেখান থেকে দু'একটি থালা-বাটি মেরে দেবার গল্প। কার কাজিনের ভূত দর্শন। স্বর্ণের মোহর চুরির গল্প। এর বেশ কয়েকটি আমিও শিশুকালে শুনেছি। সব গল্পেই ভুতদের একাকার অবস্থা। পাহাড় চূড়ায় শুয়ে শুয়ে ভূতের ভয় বাড়ছিল আমার।

দু'টি নতুন তথ্য জেনেছি। একটি হচ্ছে, কেউ যদি বেশ কিছুদিন নিজের কক্ষ খালি রেখে যায়, তবে নাকি তার সে বিছানা জ্বিনে দখল করে নেয়। শুনে তো আমার আত্মারাম খাঁচাছাড়া হবার জোগাড়। আমি ৩ রাত্রির জন্য আমার বিছানা একা ফেলে এসেছি। আমি বাসায় ফিরে কি আমার বিছানা আর আমার করে পাবো???? ভাইদের একজন নাকি হল থেকে বাড়ি ফিরে আর নিজের বিছানায় ঘুমাতে পারেন না !!!! যাই হোক সমাধানও সাথে সাথে বাতলে দেন সে ভাই। বিছানাকে একা ফেলে এলে নাকি বিছানায় তোষকের কোণা খানিকটা উল্টে রাখতে হয়। কে জানে কি আছে কপালে।

দ্বিতীয় তথ্যটি অবশ্য ভূতের নয়। বগালেক বিষয়ক। বগালেক আসলে যেনতেন লেক না। এর নাকি কোন তল নেই। এর তলদেশের সাথে নাকি কোন সাগরের সংযোগ রয়েছে। যার ফলে এর মধ্যে নেমে কেউ ডুবে গেলে সে লাশ নাকি আর পাওয়া যায় না। সে লাশ সোজা সাগরের টানে চলে যায়। (বি.দ্র. ফেরার সময় বগালেকে বসে চা খেতে খেতে দেখলাম, বগালেকের সর্বোচ্চ গভীরতা ১৩৭ ফুটের মত।)

পাশের রুমের গাজা আর ভূত আমাদের জ্বালাচ্ছিল। পিয়াস আর সাইফ শুধু মরার মতো ঘুমায়। ওদের গল্পের আগে ঘুমাতে পেরেছে বলেই এমন। ওদের গল্পের শেষেই আমার ঘুমাতে হলো। ১২ টার দিকে ওদের গল্পের তেজ কমে এলে আমি ঘুমাই। সারারাত বাতাসের শো শো শব্দে বেশ ক'বার ঘুম ভাঙে আবার আমার। নাফাখুমে ছিলাম নদীর ধারে। আর ঘর ছিল বাঁশের বেঁড়ার। ফলে শীত বেশ লেগেছে। এখানে টিনের ঘরে অতটা শীত লাগে নি। বরং উষ্ণতা ভালোই ছিল। ক্লান্তিময় দিনের শেষে ঘুমটা খুব দরকার ছিলো। ভূত আসবে ভেবে শুরুতে মনে খানিকটা খচখচানি ছিলো যদিও।প্রচণ্ড শীতের দিনেও অস্বাভাবিক খাড়া পাহাড় পাড়ি দিতে দিতে মোটামুটি সবাই ঘেমে নেয়ে একাকার হচ্ছিলাম। ঢাকার বৃষ্টি বান্দরবানে এসেছে দেরদিন পর। তবে সেখানে বিকেলবেলার ঝিরঝিরে বৃষ্টি বেশ স্বস্তি দিচ্ছিলো, পাহাড়ি পথের ক্লান্তিকে বৃষ্টি মাখা পাহাড়ি বাতাস উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। আমি আর রাতুল কিছুকাল জিমে যাতায়াত করায় খানিকটা স্বাভাবিক ছিলাম। যদিও ক্লান্তির চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছিলাম বাকি সবার মতোই। তবে প্রায় শতকেজি ভরের পিয়াস বেশ বিপাকে পড়ে গিয়েছে তার বিশালকায় শরীর বইতে বইতে। দুরন্ত সাইফও ক্লান্তিতে পথের পাশে বসে পড়ে। চটপটে আসাদ চরম ইচ্ছাশক্তিকে সাথে নিয়ে চলছে। শুরুতে সবাইকে পেছনে ফেলা গবেষক মাহি, মাঝপথে নিজের শুরুর সে তেজ আর ধরে রাখতে পারে নি। আমি চলছিলাম সবার পেছন পেছন, নিজের শক্তিকে সংরক্ষণ করার ব্রত নিয়ে এগুচ্ছিলাম। নিজেদের শরীর বহন করার মত ধৈর্য্যই হচ্ছিল না, তার ওপর আবার পিঠে ভাড়ি ব্যাগ!

ডিসেম্বরের শীত। তার ওপর সামুদ্রিক নিম্নচাপের বৃষ্টি। আর বান্দরবানের শীতের রাত যে কি ভয়ংকর হতে পারে, সেটা আমরা গত জানুয়ারিতে নাফাখুম ভ্রমণের সময়েই টের পাই। তাই ব্যাগ ভর্তি শীতের জামা নিতে নিতে ব্যাকপ্যাক বেশ ভাড়ি করে ফেলেছি। একমাত্র গবেষক মাহি ছাড়া, মোটামুটি সবার ব্যাগই বেশ ওজনদার। গবেষণা করে সে বুঝতে পেরেছে ব্যাগ ভাড়ি করে লাভ নেই!! ব্যাগে সব নিয়ে আবার ব্যাগ খালি করার পরও মোটামুটি বেশ ওজন রয়ে গিয়েছে। আবার বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ছাতা-রেইনকোট এসবও ব্যাগে স্থান করে নিয়েছে। যদিও বান্দরবান এসে বৃষ্টির দেখা পাই নি, ফলে ব্যাগের ওজন কমানোর জন্য বৃষ্টির সামগ্রী জিপে রেখে কমলা বাজার থেকে হাঁটা শুরু করি। কিন্তু পথ বাড়ার সাথে সাথে সে ওজন বেড়েছে বৈ কমে নি।

সেই যে বগালেকের পাশ থেকে দুপুর ২ টার দিকে অল্প ভাত খেয়ে রওনা হই, এরপর পথের মাঝে খাবার বলতে বুদ্ধিদীপ্ত আসাদের আনা ৪-৫ টা খেজুর। বৃষ্টির মধ্যে আধভেজা হয়ে চলার পথে ক্যালরি শুধু বার্নই হয়েছে, কিছু ঢোকে নি।কেওক্রাডং চূড়ার ঠিক আগের পাহাড়ি পাড়ার নাম 'দার্জিলিং পাড়া'। শেষবেলায় এসে দার্জিলিং পাড়ায় খাবারের ব্যবস্থা দেখে আমরা প্রাণ ফিরে পাই। বসে যাই পাড়ার প্রধান কারবারির দোকানে। কারবারি সাহেবের মেয়ে বাচ্চা কোলে দোকান সামলাচ্ছেন। আমরা বিস্কুট,চা খেয়ে খানিকটা বিশ্রাম নেই। দোকানে পাহাড়ি পেঁপে দেখে কাটতে বলি। আমরা খাচ্ছি কিন্তু আর উঠতে চাচ্ছি না। পাহাড়ে সন্ধ্যা আগে নামে। আর সন্ধ্যা মানেই সাথে সাথে ঘুঁটঘুটে অন্ধকার। আর বিকেলের ঝিরঝিরে বৃষ্টি এখন ঝমঝমিয়ে নামে। আমি তো মত দেই আজ আর কেওক্রাডং চুড়ায় না যাই। কিন্তু গাইড ইলিয়াস ভাই আমাদের জানালো যে, আজ কেওক্রাডং আর্মি ক্যাম্পে আমাদের এন্ট্রি না করলে সমস্যা হবে। এদিকে বৃষ্টি খানিকটা কমে এলে ইলিয়াস ভাই জোড়পূর্বক আমাদের নিয়ে কাঙ্ক্ষিত চূড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কিন্তু দার্জিলিং পাড়া ছেড়ে খানিকটা এগুতেই বৃষ্টি আবার পূর্ণোদ্যমে আমাদের ভেজাতে শুরু করে। এ পথের পাশে শহরের মতো ছাওনি নেই। ভিজেই হাঁটতে থাকি। ঢাকার বৃষ্টির হাত থেকে যা এনেছিলাম, তা তো কমলা বাজার রেখে এসেছি, ওজন কমাতে। ফলে ভিজে যাচ্ছি। ব্যাগও ভিজছে ! এভাবে তো চলে না। একটা ঝোপের পাশে বড় গাছের নিচে দাঁড়ালাম বৃষ্টি যদি কমে সে আশায়। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিঁজছি।

বৃষ্টি কমে আসে বেশ খানিকটা সময় পর। খুব একটা কমে না যদিও। চারপাশ ঘুঁটঘুটে অন্ধকার। আমরা পথ চলছি। বুদ্ধিদীপ্ত আসাদ একটা ছোট টর্চ নিয়ে এসেছে। সেটা জ্বালিয়ে পথ চলছি আমরা। কিছুদূর পরপর পিচ্ছিল পথে পড়তে পড়তে বাঁচছি আমরা কেউ না কেউ। মাহি সবার পেছনে, মাহির পেছনে আমি। ফোনের টর্চ জ্বেলে বৃষ্টির মধ্যে চলছি। বুকের ভেতর ধুকপুক করে। এমন নির্জনতায় বৃষ্টিতে ভিজি নি কখনও। বেশ খানিকটা ঢাল বেয়ে, পা টিপে টিপে অবশেষে আমরা চওড়া রাস্তায় পৌঁছলাম। এখানে বড় গাছ নেই তেমন। ফুলঝাড়ুর ঘাসবন। আশেপাশে কিছু জোনাকি জ্বলছে। ওপরে ছাইরঙা মেঘলা আকাশ। পাহাড়ে চাঁদ দেখার বাসনা নিয়ে যেয়ে আমরা বৃষ্টিতে স্নান করছি।

এবার আমার আর রাতুলের স্কোয়াট মারা পায়ের খেল শুরু। চূড়া কাছে জেনে আমাদের দু'জনের পায়ের গতি বাড়ে। সবাইকে পেছনে রেখে আমরা দু'জন হাঁটছি। হাতে মোবাইলের মৃদু আলো। ওদিকে মাহিকে ওঠানোর গুরু দায়িত্ব পড়েছে গাইড ইলিয়াস ভাইয়ের কাঁধে। সে সবার পেছনে মাহিকে টেনে টেনে তুলছে। আমি সামনে থেকে হাঁক ছাড়ি, "ইলিয়াস ভাই, ডানে না বামে?" ইলিয়াস ভাই পেছন থেকে পথের নির্দেশ দেন। পাহাড়ের নিচে আগে পিয়াস উঠবে, না সাইফ উঠবে সেটা নিয়ে বেশ তর্ক চলে দু'জনার মাঝে। চুড়া দেখলে কে কাকে রেখে দৌঁড়ে উঠবে সে কথা বলছিলো। কিন্তু তাদের দু'জনের সে কম্পিটিশন আর নেই। সবার মনেই পথের শেষ দেখার বাসনা।



আমার মোটেও চূড়ায় আগে উঠবো, এমন চিন্তা আর খেলছিলো না। শুধু মনে হচ্ছিলো, এ পথ শেষ হলেই বাঁচি। আর না। জোড়ে জোরে পা ফেলে সবার বেশ অনেকটা আগেই আমরা এসে আলোর সন্ধান পাই। এক পাহাড়ি পাড়া। লোকজন ঘরের ভেতর। আমরা কিছু বাঙালি ছেলে দেখে ভেতরে ভেতরে দারুন পুলক অনুভব করি। আমি ভাইদের উদ্দেশ্যে বলি, "ভাই এটা কি কেওক্রাডং এর চূড়া?" এক ছেলে আমাকে হতাশ করে বলে ওঠে, "না ভাই, আরেকটু ওপরে।" আমি আঁৎকে উঠি। সাথে সাথেই এক ভাই আমাকে আশ্বস্ত করেন যে এটাই কেওক্রাডং, তবে চূড়া ৩০-৪০ ধাপ উপরে। আমাদের পথের শেষ এখানেই। এসেই যখন পড়েছি, তখন চূড়া বিজয়ই বা বাকি থাকবে কেন? আমি আর রাতুল দুর্দান্ত ঔৎসুক হয়ে উঠে পড়ি স্বপ্নের কেওক্রাডং চূড়ায়। আহ এখানে চারপাশে কোন বাঁধা নেই। বাতাস আর বাতাস, সাথে বৃষ্টির ঝাপটা। দু'জনে কয়েকটি ছবি তুলে পরে অন্যদের সন্ধানে নিচে নেমে আসি। ওরা কেউ আর চূড়ায় ওঠার মত শারিরীক বা মানসিক অবস্থায় নেই। এদিকে বৃষ্টি ঝড়ছেই। বাঁশগুলো যে যার মতো ফেলে ছাউনিতে বসে আছে।

ইলিয়াস ভাই আমাদের ঘরে নিয়ে গেলেন। আমরা খানিকটা ফ্রেশ হয়ে, ঘরে ঢুকে ভেজা জামাকাপড় ছেড়ে লেপের নিচে ঢুকলাম। ইলিয়াস ভাই এন্ট্রি খাতা রুমে নিয়ে এলেন। আমরা নাম-স্বাক্ষর করে খাবারের অর্ডার করে শুয়ে রইলাম। সন্ধ্যায়ই আমরা ৬ জনের সবাই শোবার সাথে সাথে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম। ৮ টার দিকে ইলিয়াস ভাই এসে ডাকাডাকি জুড়ে দিলো। খেতে হবে। পাহাড়ে রাত বাড়ছে। সবাই শুয়ে পড়বে। তাই খাবার তাড়া, জেনারেটর বন্ধ করে দিবে। অগত্যা ইচ্ছের বিরুদ্ধে মাচার ঘর থেকে নিচে নেমে আসলাম। খেয়েদেয়ে আর হালকা ঘুম দিয়ে সবাই মোটামুটি তরতাজা। এবার সবাই চূড়ায় উঠবে। আমরা এবার দলবেঁধে উঠলাম। ওঠার সময় খেয়াল করলাম, আমাদের বাঁশগুলোর হদিস নেই। ইলিয়াস ভাইকে জানালাম সঙ্গে সঙ্গেই। ভাই খানিকটা বিরক্ত হলো। তবে পাহাড়ে যেহেতু বাঁশের অভাব নেই, একটা ব্যবস্থা তিনি করবেন বলে আশ্বস্ত করলেন।

৬ জন কেওক্রাডং এর চূড়ায়। ভীষণ বাতাস। আমার জীবনে এত তীব্র বাতাস আর দেখি নি। মনে হচ্ছিলো এ বাতাস বুঝি উড়িয়ে নিয়ে ফেলবে কেওক্রাডং চূড়া থেকে পাশের গিরিখাতে। রাতুল আর আসাদ লুঙ্গি পড়ে ওঠায় ওদের বিপদ আরো বেশি। বাতাসে সব উড়িয়ে নিয়ে যায় যায় অবস্থা। কি এক অদ্ভূৎ দৃশ্য না দেখলে কল্পনা করা সম্ভব না। চারপাশে অসংখ্য পাহাড়ের চূড়া। দিকবিদিক বাতাস আসছে। একবার সামনে থেকে তো পরক্ষণেই ডান-বাম কিংবা পেছন থেকে দমকা বাতাস আসছে। ঝিরঝিরে বৃষ্টি সেখানে আধোভৌতিক পরিবেশের অবতারণা করে। বেশ উপভোগ করছিলাম। কিন্তু খানিক পর এমন ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো যে সেখানে থাকা দায়। ছাওনির ভেতরও নিরাপদ নই। উল্টা-পাল্টা বাতাসে বৃষ্টির ঝাপটা আসছে সবদিক থেকে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। বৃষ্টির ঝাপ কিছুটা কমে আসে। কোনমতে আমরা নিচে নেমে আসি। ঘরে ঢুকে সাথে সাথে লেপের নিচে স্থান করে নেই। ঘরে সোলারের মৃদু বাল্ব জ্বলতে থাকে।

মোটা মোটা খাটের কাঠামো। বেশ শক্ত। টিন দিয়ে ঘেড়া। মেঝেতে কাঠের পাটাতন। উপরে চৌচালা টিন। কিন্তু সিলিং নেই। রাত বাড়ে, বাতাসও যেন তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিলো ঘর বুঝি উপরে নিয়ে পাহাড়ের ঢালে পড়ে যায়। নাহ, কাঠগুলো বেশ শক্তপোক্তই। বাইরে প্রচণ্ড বাতাসের সাথে প্রচণ্ড বৃষ্টি, ঠিক যেন কালবৈশাখি। ক্লান্তিতে দু'চোখের পাতা বুঁজে আসে। কিন্তু এরমধ্যে উটকো ঝামেলা শুরু হলো। পাশের কক্ষে একদল বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে। গল্প জুড়ে দেয়। উপরে সিলিং না থাকায় সব ঘর যেন এক। কিছুক্ষণ পর নাকে এলো গাঁজার বোঁটকা গন্ধ। বোঝা গেল তাহারা গঞ্জিকা সেবন করছেন। এদিকে শুয়ে শুয়ে বিরক্ত হচ্ছি। গাঁজা টেনে তাদের গল্প যেন বেড়ে যায় দ্বিগুন উদ্যোমে। আরও কয়েক দফা চলে তাদের গাঁজা সেবন পর্ব। রাত আনুমানিক ১০ টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ার কথা। সেখানে আমি কিছুক্ষণ পর পর ঘড়ি দেখি। রাত প্রায় ১২ টা বেঁজে আসে।

বিরক্তির চরম সীমায় পৌঁছে গেছি আমরা। গল্পগুলোও খুব অদ্ভুৎ কিসিমের। ভূতের গল্প। কয়েকজন নিজের এক্সপেরিয়েন্স বলছে। কার রুমে ভূত আসে। কে অদ্ভূৎ কিছু উপলব্ধি করে। কেউ কেউ শিশুকালে শোনা গল্পগুলো বলছে। তাদের রিলেটিভ এর এক্সপেরিয়েন্স, বা পরিচিত কারোও। আমার কোনো রিলেটিভ, বা আশেপাশের গ্রামের কারও অভিজ্ঞতা। প্রাচীন গাছ কেটে কেউ বিপদে পড়েছে। কাওকে কোনো জ্বিন বাঁচিয়েছে। কারো পরিবারে জ্বিনের অভিশাপে নির্বংশ সে গল্প। পুকুর থেকে অলৌকিকভাবে ডেকোরেটর
এর থালা-বাটি উঠে আসার গল্প, লোভি মানুষের সেখান থেকে দু'একটি থালা-বাটি মেরে দেবার গল্প। কার কাজিনের ভূত দর্শন। স্বর্ণের মোহর চুরির গল্প। এর বেশ কয়েকটি আমিও শিশুকালে শুনেছি। সব গল্পেই ভুতদের একাকার অবস্থা। পাহাড় চূড়ায় শুয়ে শুয়ে ভূতের ভয় বাড়ছিল আমার।



গাঞ্জা ভাইদের কাছ থেকে সেরাতে আমি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দু'টি নতুন তথ্য জেনেছি। একটি হচ্ছে, কেউ যদি বেশ কিছুদিন নিজের কক্ষ খালি রেখে যায়, তবে নাকি তার সে বিছানা জ্বিনে দখল করে নেয়। শুনে তো আমার আত্মারাম খাঁচাছাড়া হবার জোগাড়। আমি ৩ রাত্রির জন্য আমার বিছানা একা ফেলে এসেছি। আমি বাসায় ফিরে কি আমার বিছানা আর আমার করে পাবো???? ভাইদের একজন নাকি হল থেকে বাড়ি ফিরে আর নিজের বিছানায় ঘুমাতে পারেন না !!!! যাই হোক সমাধানও সাথে সাথে বাতলে দেন সে ভাই। বিছানাকে একা ফেলে এলে নাকি বিছানায় তোষকের কোণা খানিকটা উল্টে রাখতে হয়। কে জানে কি আছে কপালে।

দ্বিতীয় তথ্যটি অবশ্য ভূতের নয়। বগালেক বিষয়ক। বগালেক আসলে যেনতেন লেক না। এর নাকি কোন তল নেই। এর তলদেশের সাথে নাকি কোন সাগরের সংযোগ রয়েছে। যার ফলে এর মধ্যে নেমে কেউ ডুবে গেলে সে লাশ নাকি আর পাওয়া যায় না। সে লাশ সোজা সাগরের টানে চলে যায়। (বি.দ্র. ফেরার সময় বগালেকে বসে চা খেতে খেতে দেখলাম, বগালেকের সর্বোচ্চ গভীরতা ১৩৭ ফুটের মত।)

পাশের রুমের গাজা আর ভূত আমাদের জ্বালাচ্ছিল। পিয়াস আর সাইফ শুধু মরার মতো ঘুমায়। ওদের গল্পের আগে ঘুমাতে পেরেছে বলেই এমন। ওদের গল্পের শেষেই আমার ঘুমাতে হলো। ১২ টার দিকে ওদের গল্পের তেজ কমে এলে আমি ঘুমাই। সারারাত বাতাসের শো শো শব্দে বেশ ক'বার ঘুম ভাঙে আবার আমার। নাফাখুমে ছিলাম নদীর ধারে। আর ঘর ছিল বাঁশের বেঁড়ার। ফলে শীত বেশ লেগেছে। এখানে টিনের ঘরে অতটা শীত লাগে নি। বরং উষ্ণতা ভালোই ছিল। ক্লান্তিময় দিনের শেষে ঘুমটা খুব দরকার ছিলো। ভূত আসবে ভেবে শুরুতে মনে খানিকটা খচখচানি ছিলো যদিও।



কোন ভূতের উপদ্রপ ছাড়াই সকাল ৬ টার আগেই ঘুম ভাঙে আসাদের। সেই সাথে আমি আর রাতুলও উঠে পড়ি- "কি আছে কপালে?" এই উক্তির মাধ্যমে আমরা ৩ জন বাকিদের ঘুমে রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ি। সারা রাতের বর্ষার শেষে প্রকৃতি বেশ শান্ত। ঘন কুয়াশায় চমৎকার কেওক্রাডংসহ আশপাশের সব উঁচু গিরিশৃঙ্গের।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:১৪

আবু মুছা আল আজাদ বলেছেন: ছবিগুলো দেখতে ভাল লাগল।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:৪৫

মুচি বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:১৪

নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: বিশাল অভিজ্ঞতা উপস্থাপন করেছেন ভাই, ভালো লাগলো প্রকৃতির সাথে পরিচিত হতে পেরে।


শুভ সকাল

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:০৪

মুচি বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনাকে শুভ অপরাহ্ণ।

৩| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: পাহাড়ে ভূত থাকে না।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:০২

মুচি বলেছেন: পাহাড়ে ভূত থাকে না, কিন্তু শহর থেকে গঞ্জিকা সেবি ভূতেরা ঘুরতে যায় ঠিকই।

৪| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:২৮

হাবিব বলেছেন: ভূত বলে কিছু নেই

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:০৩

মুচি বলেছেন: গঞ্জিকা সেবন করে ছেলেপেলে ভূত হয়ে যায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.