নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শালীন ভাষায় সাহসী উচ্চারণ

মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব

সম্পাদক, মাসিক আরবি ম্যাগাজিন ‘আলহেরা’

মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাহিলিয়্যাতের প্রতি পরোক্ষ আহবান

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ ভোর ৬:২৫


কোনো সাচ্ছা মুমিনকে যদি সরাসরি কুফর ও জাহিলিয়্যাতের দিকে আহবান করা হয় তাহলে সে কিছুতেই তা গ্রহণ করতে রাজি হবে না। কিন্তু আহবানের ভাষা যদি হয় আবেগনির্ভর, দেশ ও মাতৃভূমিকে জড়িয়ে তাহলে সে সহজেই নিজের অজান্তেই গ্রহণ করে নেবে। এ জায়গাটায় তার ধর্মকে বিবেচনায় রাখার হিতাহিত জ্ঞান লুপ্ত হয়ে যায়। সে তখন সব বিবেচনায় প্রচন্ড আবেগতাড়িত হয়ে পড়ে। ধর্ম যেহেতু একটি স্পর্শকাতর জায়গা তাই সরাসরি ধর্মের বিরুদ্ধে আহবান করাকে যারা ঝুঁিকপূর্ণ মনে করেন তারা দাওয়াতের জন্য আবেগগণ বিষয়কে জীবনগণিষ্ঠ করে ধর্মের ধরাছোয়ার বাইরে রেখে দাওয়াত দিয়ে থাকেন। আর এ ধরনের দাওয়াতের রাস্তা যাতে সুগম হয় তাই ধর্মকে বেশ কিছু জায়গায় সীমাবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। মসজিদের মিম্বর থেকে দেশের কথা, বিচার বিভাগের কথা, প্রশাসনের কথা ইত্যাদি উচ্চারিত হওয়া ঘোষিত অথবা অঘোষিত নিষিদ্ধ। এভাবে ধর্মকে জীবন-মৃত্যু ও কিছু সাদামাটা অনুষ্ঠানের ভেতর সীমাবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। অথচ ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। পৃথিবীর অন্যান্য ধর্মে পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা নেই আর ইসলামে আছে। তাই ইসলামের নীতি-আদর্শ জীবনের সর্বাঙ্গে পরিব্যাপ্ত। আকীদা-বিশ্বাস থেকে শুরু করে ইবাদত-বন্দেগি, লেনদেন, দাম্পত্য জীবন, সামাজিক জীবন, আচার-আচরণ, আইন-বিচার সব ক্ষেত্রেই ইসলামের শ্বাসত ও সুস্পষ্ট নীতি ও বিধান রয়েছে। সুতরাং মুসলমানের আচার-অনুষ্ঠান ও সভ্যতা-সংস্কৃতিও ইসলামের গন্ডির বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
মোগল আমল থেকেই পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে কিছু অনুষ্ঠান করা হতো। প্রজারা চৈত্রমাসের শেষ পর্যন্ত খাজনা পরিশোধ করতেন এবং পহেলা বৈশাখে জমিদারগণ প্রজাদের মিষ্টিমুখ করাতেন এবং কিছু আনন্দ উৎসব করা হতো। এছাড়া বাংলার সব ব্যবসায়ী ও দোকানদার পহেলা বৈশাখে ‘হালখাতা’ করতেন। পহেলা বৈশাখ এসব কর্মকান্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এটি মূলত রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক বিভিন্ন নিয়ম-কানুনকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে কাজ-কর্ম পরিচালনার জন্য নির্ধারিত ছিল। এ ধরনের কিছু সংঘটিত হওয়া মূলত ইসলামে নিষিদ্ধ বলার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। কারণ পৃথিবীর সব মুসলিম দেশেই মুসলিম সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে দুটি জিনিসের সমন্বয়ে। উপাদানদুটি তাদের জীবনের সঙ্গে এমনভাবে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে যেন দুধ ও চিনি। উপাদানদুটি হলো ইসলামি আদর্শ ও আঞ্চলিক অনুষঙ্গ। এই দুটিকে বাস্তব জীবনে আলাদা করে দেখানো যায় না। আলাদা করে ভাবা যায় না। যেন দুটি সত্তার মিশ্রণ অবিমিশ্রণের মাধ্যমে একটি সত্তায় পরিণত হয়ে গেছে। তবে বাঙালী মুসলিম সংস্কৃতির আদর্শিক উপাদানগুলোকে যদি আলাদা করে উল্লেখ করা হয় তাহলে তা হলো আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস, কোরআন-সুন্নাহর প্রতি ভালোবাসা, রাসুলপ্রেম, ওলামা-মাশায়েখ ও পীর-আওলিয়াদের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা এবং জাত-পাতের ব্যবধানহীন মানবীয় সাম্য। কিন্তু শয়তান ও মানুষের কুপ্রবৃত্তি মানুষকে ইসলামের মহান আদর্শ থেকে বিচ্যুত করে বিজাতীয় অপসংস্কৃতির গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করার জন্য নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে যাচ্ছে। নগ্নতা, বেহায়াপনা, পাপাচার আর অশ্লীলতার সয়লাবকে আজ সংস্কৃতি ভাবা হচ্ছে। বিজাতীয় সংস্কৃতির অন্ধ অনুসরণকেই শ্রেষ্ঠত্বের পারিচায়ক মনে করা হচ্ছে। ইসলামের সুন্দর ও মহান আদর্শকে বর্জন করে সেখানে মূর্খতা ও পৌত্তলিক সংস্কৃতি স্থাপন করার কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা কারও কাছে থাকার কথা নয়। ‘আধুনিক প্রগতিবাদী’ সাজার বাহানায় ও পাশ্চাত্য স্বীকৃতি আদায়ে জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেক সবকিছুর জলাঞ্জলী দিয়ে যে সংস্কৃতি আমরা গ্রহণ করছি তাকে অপসংস্কৃতি বলতে কোনো বিবেকবান মানুষের কুন্ঠাবোধ করা উচিত নয়।
আজ আমাদের দেশে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে এমন কিছু কর্মকান্ড করা হচ্ছে যা কখনোই পূর্ববর্তী সময়ের বাঙালীরা করেননি; বরং এর অধিকাংশই বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে প্রচন্ড সাংঘর্ষিক। পহেলা বৈশাখের নামে বা নববর্ষ উদযাপনের নামে যুবক-যুবতী, কিশোর-কিশোরীদেরকে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। আজ থেকে কয়েক বছর আগেও এদেশের মানুষেরা যা জানত না এখন নববর্ষের নামে তা আমাদের সংস্কৃতির অংশ বানানো হচ্ছে। যেমন পান্তা-ইলিস, মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে যা হচ্ছে তা কখনো বাঙ্গালীদের সংস্কৃতি ছিল না। মঙ্গল শোভাযাত্রা, প্রদীপ জ্বালানো হলো হিন্দুদের সংস্কৃতি। অথচ তাকে বাঙালী সংস্কৃতির নামে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে।
প্রশ্ন হচ্ছে হিন্দুদের দেবদেবীর পূজার অনুকরণে বাদ্য বাজানো, তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানকে মুসলমানদের দেশজ সংস্কৃতি বলে চালিয়ে দেয়া, নানা ধরনের মূর্তি ও মুখোশ বহন করা, দলে দলে যুবক-যুবতী মিলে পথে-ঘাটে নৃত্য করা, এসব কি এ দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠির সংস্কৃতি? এর মানে কি অসাম্প্রদায়িকতা? এ অপসংস্কৃতি প্রতিরোধ করা কি আমাদের ঈমানী দায়িত্ব নয়? তাই বেহায়াপনা বাদ দিয়ে সুস্থ সংস্কৃতি বিকাশে এগিয়ে আসুন।

সম্পাদক, মাসিক আরবি ম্যাগাজিন ‘আলহেরা’

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.