নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বাংলায় কথা কই

আমি অতি সাধারণ মানুষ

মুহিত আলম

অনুমতি ব্যতিত কোনো লেখা বা লেখার অংশ কপি করবেন না। এই নিন্দনীয় কাজটা আমিও করি না, আশা করবো আপনিও করবেন না।

মুহিত আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিষ

০৮ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৬

(গল্পের ঘটনা ও চরিত্র কাল্পনিক। কারো সাথে মিলে গেলে তা নিতান্তই কাকতালীয় ঘটনা)





সফিকের সাথে আমার পরিচয় ভার্সিটির একটা অনুষ্ঠানে।

আমি তখন ফাইনাল ইয়ারে পড়ি। সফিক পড়ে সেকেন্ড ইয়ারে। সাধারণত ভার্সিটির কোনো অনুষ্ঠানেই আমি অংশগ্রহণ করি না। পোলাপান কিছু গান গায়, নাটক করে, ফ্যাশন শো করে –আমি এতে খুব একটা আগ্রহ বোধ করি না। যদিও পুরো অডিটোরিয়ামই কানায় কানায় ভর্তি হয়ে যায় এই সব অনুষ্ঠানে। কিন্তু আমি এসবের মধ্যে নাই। বাসায় গিয়ে পিসিতে ফিফা খেলা, কিংবা রাস্তার মোড়ে বসে পাড়ার কিছু বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া –এ সবের মাঝেই আমি আনন্দ খুঁজে পাই।

আমাদের দেশে আজকাল বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করতে দেখা যায়। পহেলা ফাল্গুন, পহেলা বৈশাখ, ভালোবাসা দিবস, বাবা দিবস, মা দিবস, নারী দিবস, শিশু দিবস, এইডস দিবস, হেন দিবস, তেন দিবস। আবার বিভিন্ন উৎসবও দেখা যায়। যেমন পিঠা উৎসব, নবান্ন উৎসব। এইসব দিবস আর উৎসবের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এর মধ্যে নতুন একটা সংযোজন হচ্ছে বর্ষা বরণ টাইপ একটা অনুষ্ঠান।

অনেক ছেলেমেয়ের প্রিয় ঋতু হচ্ছে বর্ষা। বর্ষার সাথে রোমান্টিসিজমের কিছুটা যোগাযোগ আছে। প্রেমিক প্রেমিকা হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজবে, রিকশায় হুড উঠিয়ে পর্দা টানিয়ে ঘুরাঘুরি করবে -এর মাঝে দারুণ রোমান্টিক ব্যাপার স্যাপার আছে। আমার মাঝে রোমান্টিসিজম খুব একটা নেই। যতটুকু আছে তা না থাকার মতই। আমার কাছে বর্ষা হচ্ছে অত্যন্ত বিরক্তিকর একটা সময়। ঢাকা শহরের রাস্তাঘাটের অসাধারণ পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার কারণে এসময় প্যান্টে কাদা না লাগিয়ে রাস্তাঘাটে চলাচল করা রীতিমত চ্যালাঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। আর যখন তখন বৃষ্টি এসে আপনার সাথে টম এন্ড জেরি খেলবে। আপনি ছাতা মাথায়, কিংবা রেইনকোট পরে –যত প্রোটেকশন নিয়েই বাসা থেকে বের হন না কেন, আপনাকে ভিজতেই হবে। সুতরাং আমার কাছে বর্ষা হচ্ছে এক নাম্বার অপছন্দের ঋতু।

অথচ আমি এই বর্ষা বরণ উৎসবেই এসেছি! কারণ আর কিছুই নয়, জম্পেশ একটা খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা আছে অনুষ্ঠান শেষে। এই প্রোগ্রাম কিছুতেই মিস করা যায় না!

অনুষ্ঠানের শুরুতেই রবীন্দ্র সংগীত। কবিগুরুর সাথে বর্ষার এক গভীর সম্পর্ক। বর্ষা নিয়ে তার রচিত গানই এখন পরিবেশিত হচ্ছে। তিনি আবার এই বর্ষাতেই (২২শে শ্রাবণ) পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিয়েছেন।

আমার কিছুটা ঘুম পাচ্ছে। পরিবেশটা অবশ্য ঘুমানোর জন্য উপযুক্ত। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। অডিটরিয়ামের এসি ছাড়া। ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশ। এর মাঝে আবার রবীন্দ্র সঙ্গীত। আমি চোখ বন্ধ করে গান শুনছি।

পোলাপান অবশ্য উশখুশ করছে। এ ধরণের অনুষ্ঠানে কেউ রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনতে আসে না। “ফাইট্টা যায়” টাইপ গান না হলে এসব প্রোগ্রাম ঠিক জমে না।

দীর্ঘ চার ঘন্টার অনুষ্ঠান ধৈর্য্য সহকারে দেখলাম। খুব একটা খারাপ লাগেনি। বিশেষ করে ফ্যাশন শোটা দারুণ হয়েছে। জুনিয়র দুইটা মেয়ের পারফরম্যান্সে আমি রীতিমত মুগ্ধ।

অনুষ্ঠান শেষে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, যার কারণে এই চার ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করছি। কাচ্চিটা অসাধারণ লাগল। খাবার শেষে দেখি ফলের সালাদ! একটা জুনিয়র ছেলে আমাদের সার্ভ করছে। আমি ছেলেটাকে ডাক দিলাম।

-এই, শোনতো একটু।

ছেলেটা আমার দিকে এগিয়ে আসল। -জ্বী ভাইয়া।

-আরেকটু সালাদ দেয়া যাবে? নাকি এটাও বিরিয়ানির মত পার হেড এক বাটি?

ছেলেটা হেসে জবাব দেয় –জ্বী ভাইয়া, এটাও বিরিয়ানির মত পার হেড এক বাটি। কেন ভাইয়া, দারুণ টেস্ট হয়েছে নাকি?

-ফ্যান্টাসটিক হয়েছে। এরকম স্বাদের ফলের সালাদ আগে খাই নি।

-তাইলে ভাইয়া আপনাকে আমার ভাগেরটা এনে দিচ্ছি।

আমি হাঁ হাঁ করে উঠলাম। -আরে আরে করো কি, করো কি! তোমার ভাগেরটা আমাকে দিবে কেন? না না, কোনো দরকার নাই।

-ভাইয়া, আমি ফল খাই না। তাই আমারটা কেউ না কেউ তো খাবেই। আপনার যেহেতু ভাল লেগেছে, আপনি না হয় খান।

আমি অবাক হলাম। -ফল খাও না মানে?

-মানে আমি ফল খাই না।

-কেন?

-খাই না আর কি! ভাল লাগে না।

আমি চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম -ভাল লাগে না?

-জ্বী ভাইয়া। আপনি বসেন। আমি আপনার জন্য আরেক বাটি ফলের সালাদ নিয়ে আসছি।

আমাকে হতভম্ব অবস্থায় বসিয়ে রেখে ছেলেটা ফলের সালাদ আনতে গেল।

এই ছেলেটাই সফিক।









সফিকের সাথে এর পরে আমার আবার দেখা হয় আমাদের এলাকায়। আমি দোকানে এসেছি নাস্তা কেনার জন্য। সন্ধ্যা সাতটা বাজে। আমি নাস্তা কিনে বাসায় ফিরে যাচ্ছি, হঠাৎ দেখি সফিক রাস্তার উল্টাদিক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।

-এই সফিক, এই!

সফিক আমাকে দেখে দাঁড়াল। আমি হাত ইশারায় ওকে ডাকলাম।

সফিক এসে আমার সামনে দাঁড়াল। সালাম দিয়ে বলল –কেমন আছেন ভাইয়া?

আমি বললাম -আমি আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভাল আছি। তুমি এদিকে?

-একটা টিউশনি করি এদিকে।

-কোথায়?

সফিক সামনের গলিটার দিকে নির্দেশ করে বলল –ঐ গলিটায়।

আমি হেসে বললাম –কোন ক্লাস? ছাত্র না স্টুডেন্ট?

সফিকও হেসে ফেলল। বলল -স্টুডেন্ট। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার। নাম মালিহা।

আমি নড়েচড়ে দাঁড়ালাম। মালিহা মেয়েটাকে আমি একটু একটু পছন্দ করি। আমার মাঝে যেটুকু ছিটেফোঁটা রোমান্টিকতা আছে তা এই মালিহা নামের মেয়েটার জন্য বরাদ্দ। কিন্তু কথা বলতে সাহসে কুলায় না। এত পুচকি একটা মেয়ের সাথে আমার মত দামড়া একটা ছেলে কথা বলতে পারে না এটা কোনো কাজের কথা না। এখন সফিক ভরসা। সফিকের সাহায্য আমার দরকার। ওকে আমি বাসায় নিয়ে গেলাম।

বাসায় আমার রুমে ঢুকে সফিক খাটে বসল। আমি দরজা লাগিয়ে দিলাম।

সফিক বুক শেলফের দিকে তাকিয়ে বলল –ভাইয়া, আপনি তো অনেক বই পড়েন। আজকে কিন্তু আমি দুটা বই নিয়ে যাবো।

আমি সাধারণত কাউকে বই দেই না। কিন্তু মালিহার ব্যাপারটার কারণে সফিককে বই দেয়া যায়। অন্তত ঘুষ হিসেবে হলেও ওকে আমি বই দিবো।

-হ্যাঁ হ্যাঁ নিয়ে যেও। সমস্যা নাই। কি বই পড় তুমি? কার বই পড়?

-সব ধরণের বই-ই পড়ি। তবে উপন্যাস বেশি পড়া হয়। বিশেষ করে থ্রীলার।

-আমার কাছে বাতিঘরের কিছু থ্রীলার আছে। ফ্রেডরিক ফরসাইথের বই পড়েছ?

-না। কেমন লেখে?

-দারুণ লেখে। তার ডে অব দ্যা জ্যাকেল আর ডগস অব ওয়ার বই দুইটা অসাধারণ।

-আছে আপনার কাছে?

-হ্যাঁ আছে।

-তাইলে এই বই দুইটাই নিবো।

-ঠিক আছে। নিও। এখন মালিহার কাহিনী বল।

-কি কাহিনী বলব?

-কি রকম মেয়ে? প্রেম টেম করে?

-মেয়ে খুবই চঞ্চল। প্রেম করে কিনা জানি না। তবে খুব খুব চঞ্চল। আমাকে গুলিস্তানে নিয়ে দশ বার বিক্রি করে আসতে পারবে।

আমি চোখ কপালে তুলে বললাম -বল কি!

সফিক মাথা নাড়তে নাড়তে বলল -জ্বী ভাইয়া। খুবই চঞ্চল মেয়ে।

-তাও তুমি একটু দেখো। মানে যদি কিছু করতে পারো আর কি আমার জন্য। আগে শিওর হবা ওর কোনো এফেয়ার আছে কিনা। যদি দেখো যে নাই, তাইলে পরের স্টেপ নেওয়া যাবে।

সফিক বিজ্ঞের মত মাথা নেড়ে বলল –হুঁ।

আম্মা দরজা ধাক্কা দিয়ে বললেন –এই মুহিত, নাস্তা নিয়ে যা।

আমি দরজা খুলে নাস্তা নিয়ে আসলাম। সফিকের সামনে খাটের উপর নাস্তার ট্রে রেখে বললাম –নেও খাও।

সফিক নাস্তার ট্রের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলল –ভাইয়া, আমি তো ফল খাই না।

আমি নাস্তার ট্রের দিকে তাকালাম। পেয়ারা, আমের জুস, আপেল কেটে দেওয়া হয়েছে। আমি সফিকের দিকে তাকিয়ে বললাম –তুমি ফল খাওনা কেন?

-খাই না আর কি!

-কেন? নাকি এই ফলগুলা খাও না?

-আমি কোনো ফলই খাই না।

-কোনো মানুষ ফল খায় না এইটা প্রথম শুনলাম। আজব ব্যাপার।

সফিক চুপচাপ বসে রইল। আমি জিজ্ঞেস করলাম -কেন খাওনা? কারণটা কি?

-এমনি। খেতে ইচ্ছা করে না।

-তুমি মনে হয় আমাকে বলতে চাচ্ছ না। আচ্ছা ঠিক আছে। বলার দরকার নাই। তুমি বস। আমি অন্য নাস্তা নিয়ে আসছি।

সফিক খুব ব্যস্ত ভঙ্গীতে বলল –ভাইয়া, কিছু আনার দরকার নাই। শুধু শুধু আবার হাঙ্গামা করবেন। আর আমার এমনিতেও পেট ভর্তি। মালিহাদের বাসায় নাস্তা করেছি।

আমি নাস্তার ট্রে নিয়ে দরজার দিকে যেতে যেতে বললাম –তুমি বস তো। এত ফরমালিটির কি আছে! তুমি সিনিয়র ভাইয়ের বাসায় এসেছ। পোলাপান সিনিয়রদের কাছ থেকে কতকিছু খায়, আর তোমাকে সাধলেও কিছু খেতে চাও না। আমি আমার সিনিয়র অনেক ভাইয়া আপুর মানিব্যাগ খালি করেছি আর তুমি কেমন মুখচোরার মত বসে থাক। চুপচাপ বসো। আমি আসছি।

সফিক আমার কথাবার্তায় একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল বোধহয়। আমি ওকে ওভাবেই বসিয়ে ট্রে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম।









-ভাই, ফজলি আম কত করে?

দোকানদার অন্য কাস্টমারকে আম গুছিয়ে দিতে দিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল -১৪০ টাকা।

-আর ল্যাংড়া আম?

-ঐটা ১৫০।

-দিবেন কত?

-আপনি নিবেন কতটুক?

-২ কেজি করে নিবো।

-১০ টাকা কম দিয়েন।

-১২০ করে দেন দুইটাই।

দোকানদার আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল –এত কমে পারুম না ভাই।

-১৩০ করে দিবো। দিবেন?

-আচ্ছা ঠিক আছে।

দোকানদার আম প্যাকেট করে ওজন করতে থাকে। আমি আম বেছে বেছে দিতে থাকি। হঠাৎ আমার পিঠে কেউ একজন হাত রাখে। আমি ঘুরে তাকাই। আমার পিছনে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে সফিক।

-আরে তুমি! তোমার তো কোনো খবরই নাই। কেমন আছো?

সফিক বলল –আছি ভাইয়া আলহামদুলিল্লাহ্‌। আপনার খবর কি?

-আছি আল্লাহ্‌র রহমতে ভালই। তুমি এখানে কি করো?

-খালার বাসায় এসেছিলাম। এখন বাসায় যাচ্ছি। আপনি এখানে? ফল কিনছেন দেখছি। কারো বাসায় বেড়াতে যাচ্ছেন নাকি?

-আরে না। আমি তো এখন এখানেই থাকি। এইতো সামনেই আমার বাসা। মালিহা আম নিয়ে যেতে বলল। তাই নিয়ে যাচ্ছি।

-তা আপনার সংসার জীবন কেমন চলে?

আমি হেসে জবাব দিলাম –আর কিছুদিন অপেক্ষা করো। নিজেই টের পাবা। তোমাদের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ না?

সফিক হাসল। হাসতে হাসতেই বলল –জী ভাইয়া, ফাইনাল শেষ। এখন ইন্টার্নি চলছে। সামনের মাসে ইন্টার্নিও শেষ। তারপর পরিপূর্ণ বেকার হবো।

দোকানদার ফল মাপা শেষ করে আমার দিকে প্যাকেট এগিয়ে দিল। আমি মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে দিলাম। ফলের প্যাকেট হাতে নিয়ে সফিকের দিকে তাকিয়ে বললাম –বাসায় চল। সামনেই আমার বাসা।

সফিক মাথা নেড়ে বলল –না না ভাইয়া। আরেকদিন যাব। আজকে বাসায় যাই।

-আরেকদিন আবার আসবা। আজকে চল। মালিহা পরশুদিন তোমার কথা বলছিল। তোমার ফোনের কি সমস্যা? ফোন বন্ধ কেন?

-ফোন চুরি হয়ে গেছে বাসে। গতকাল সিম উঠালাম।

-ও। চল বাসায়।

-না ভাইয়া। আজকে না। আরেকদিন যাব।

-আরে চল।

সফিক আরো কিছুক্ষণ গাঁইগুই করল না যাওয়ার জন্য। কিন্তু আমি ওকে ছাড়লাম না। বাসায় নিয়েই আসলাম।

মালিহা সফিককে দেখে অনেক খুশি হল। সফিককে আমরা দুজনই খুব পছন্দ করি। আমাদের দুজনের সম্পর্ক এবং পরে বিয়ের ক্ষেত্রে সফিকের খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

মালিহা আমার সদ্য কেনা আম দিয়ে জুস বানিয়ে আর কিছু আম কেটে আমাদের সামনে টেবিলে রেখে বলল –নেন সফিক ভাইয়া, খান।

সফিক মালিহার দিকে তাকিয়ে বলল –আমি যে ফল খাই না তা ভুলে গেছ?

আমি বললাম –আচ্ছা তোমার কাহিনী কি বল তো সফিক! তুমি ফল খাও না কেন?

-খাই না আর কি!

-দেখ, এইসব পাশ কাটানো উত্তর দিলে চলবে না। আজকে বলতেই হবে কেন তুমি ফল খাও না। বল, কেন তুমি ফল খাও না।

সফিক কিছুক্ষণ চুপচাপ মাটির দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর বলে –ভাইয়া, আমার বাবার কয়েক ধরণের ব্যবসা আছে। ফলের বিজনেস তার মধ্যে একটি। তাই আমি ফল খাই না। আমাদের বাসায় কেউই বলতে গেলে খায় না!

-মানে? তোমার বাবা ফলের বিজনেস করে বলে তোমাদের বাসায় সবসময় বস্তা ভর্তি ফল থাকে, তাই ফল খেতে খেতে কি অরুচি ধরে গেছে সবার?

সফিক আরো কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর আস্তে আস্তে করে বলল –বাবা ফলের বিজনেস করে বলে আমরা জানি ফলে কি কি ক্যামিকেল দেয়া হয়। তাই আমরা কেউ ফল খাই না।

আমি হতবুদ্ধির মত সফিকের দিকে তাকিয়ে থাকি। আমার ছেলেবেলার কথা মনে পরে যায়। আমাদের বাসার সামনেই এক বেকারি ছিল। ওখান থেকে আমরা পাউরুটি, বিস্কুট, কেক মাঝে মাঝেই কিনে বাসায় নিয়ে এসে খাওয়া দওয়া করতাম। একদিন বাবা ঐ বেকারির ভিতরে কোনো কারণে ঢুকে পরে। তারপর এই সুস্বাদু পাউরুটি, বিস্কুট তৈরির পদ্ধতি দেখে আর জীবনেও কোনো বেকারির পাউরুটি, বিস্কুট কিনেন নাই। অলিম্পিয়া, ফু-ওয়াং এসব ব্র্যান্ডের পাউরুটি ছাড়া অন্য কোনো বেকারির পাউরুটি আর কিনেন নি।

সফিক কেমন যেন অপরাধীর মত মুখ করে বসে আছে। সামনের টেবিলে রাখা আমের জুসটাকে এখন মনে হচ্ছে যেন একটা বিষ ভর্তি গ্লাস। যে বিষ স্লো পয়জনিং এর মাধ্যমে আমাদের ভিতরটা ধ্বংস করে দিচ্ছে।



©Muhit Alam



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.