![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনুমতি ব্যতিত কোনো লেখা বা লেখার অংশ কপি করবেন না। এই নিন্দনীয় কাজটা আমিও করি না, আশা করবো আপনিও করবেন না।
আমি দাঁড়িয়ে আছি পিরামিডের সামনে। মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে আছি পিরামিডের দিকে। অসাধারণ এই সৌন্দর্য। শেষ বিকেলের আলো আধারিতে তা আরো মোহনীয় হয়ে উঠেছে। আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে আমার স্ত্রী। ইতিহাসের ছাত্রী হওয়ার কারণে সে অনেকটা গাইডের কাজ করছে। এখানে আসার আগেই পিরামিড, মিশরের ইতিহাস সম্পর্কে একপ্রস্থ বয়ান করেছে। এখন পিরামিডের সামনে দাঁড়িয়ে পিরামিডের বিভিন্ন দিক দেখিয়ে আরেকপ্রস্থ বয়ান করছে।
আমাদের বিয়ে হয়েছে কয়েক মাস আগে। বিয়ের পর এটাই আমার সস্ত্রীক প্রথম বিদেশ ভ্রমণ। এটাকে অনেকটা হানিমুন হিসেবে চালিয়ে দেয়া গেলেও পুরোপুরি হানিমুন বলা যাচ্ছে না। কারণ আমি যতটা হানিমুনে এসেছি, তারচেয়েও বেশি আমি নিজের শ্বশুড়বাড়িতে এসেছি!
আমার স্ত্রী মিশরীয়, নাম নুবিয়া। তার সাথে আমার পরিচয় হয়েছে ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে। আমি সম্মেলনে গিয়ে চুপচাপ বসে আছি। বিভিন্ন বক্তা তাদের বক্তব্য দিচ্ছে। আমার শুনতে খুব একটা ভাল লাগছে না। আমার ঘুম পাচ্ছে। এই সেমিনারের এসিটা আরামদায়ক। অনেক জায়গায় দেখা যায় এসি চালু থাকার পরেও গরম লাগছে, দরদর করে ঘামছি। আবার কোনো কোনো জায়গায় শীতে জমে যাচ্ছি। সে তুলনায় এই জায়গার এসি না শীত না গরম। খুবই আরামদায়ক পরিবেশ। আরামে আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। আমি ঘুমিয়েই পড়েছিলাম, হঠাৎ করে কারো ডাকে ধড়মড় করে জেগে উঠলাম।
আমার পাশে একজন বিদেশিনী দাঁড়ানো। মেয়েটার বয়স পঁচিশ-ছাব্বিশের মত হবে। লম্বায় সম্ভবত আমার সমান। চেহারাও কিছুটা লম্বাটে। আমাকে মেয়েটা কিছু বলছে, কিন্তু আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। হঠাৎ ঘুম ভাঙলে আমার এই সমস্যাটা হয়। কিছুক্ষণ সময় লাগে ধাতস্থ হতে।
-ক্যান আই সিট নেক্সট টু ইউ?
এবার আমি মেয়েটার কথা বুঝলাম। আমি তাড়াতাড়ি পাশের সিট থেকে আমার ব্যাগটা সরিয়ে নিয়ে বললাম- ইয়েস ইয়েস।
মেয়েটা আমার পাশের সিটে বসল। আমি কিছুটা বিব্রত। এভাবে একটা আন্তর্জাতিক সেমিনারে এসে ঘুমিয়ে পড়াটা মোটেই কোনো কাজের কাজ নয়। আমার আশেপাশে বসা অনেকেই আমার দিকে তাকাচ্ছে। এদের সাথে চোখাচোখি হলে আরো বিব্রত হয়ে যেতে পারি। তাই আমি চুপচাপ সামনের দিকে তাকিয়ে বক্তব্য শোনার চেষ্টা করছি। যদিও বক্তব্যের মাথামুণ্ড কিছুই বুঝতে পারছি না।
-আমি কি তোমাকে বিব্রত করেছি? পাশ থেকে ঐ মেয়ে হঠাৎ প্রশ্ন করল। প্রশ্নটা শুনেই আমি আরো বিব্রত হয়ে গেলাম। তবে উত্তর দিলাম- না না, বিব্রত হব কেন?
মেয়েটা হেসে বলল- আসলে এই ধরণের সেমিনার আমার নিজেরও খুব একটা ভাল লাগে না। আমি মূলত এখানে এসেছি ঘুরতে।
মেয়েটার কথাবার্তা শুনে কিছুটা অবাক হলাম। আমার ধারণা ছিল বিদেশীরা সব কাজে সিরিয়াস, আর আমরা বাঙ্গালীরা আলসে টাইপ। এখন দেখা যাচ্ছে আমার ধরণায় কিছুটা গলদ আছে। কিন্তু মেয়েটা বাংলাদেশে ঘুরতে আসতে চাইবে কেন? বাংলাদেশতো পর্যটনের জন্য আদর্শ কোনো জায়গা নয়। আমি প্রশ্ন করলাম- এখানে তুমি কি দেখতে এসেছ?
-আমি ইউটিউবে একদিন বাংলাদেশ সম্পর্কে একটা ভিডিও দেখি। ভিডিওটা আমার এতই চমৎকার লাগে যে আমি ঠিক করি এই দেশ ঘুরব। তাই বাংলাদেশে আসার সুযোগ পেয়েই লুফে নিলাম।
আমি মেয়েটার কথা শুনে চমৎকৃত হলাম। কি এমন ভিডিও দেখলো সে ইউটিউবে যে একেবারে বাংলাদেশ ঘুরতে চলে এসেছে? আমি বললাম- কি ভিডিও?
মেয়েটা ব্যাগ থেকে তার মোবাইল বের করে ভিডিওটা প্লে করে করে সাউন্ড কমিয়ে দিয়ে আমার সামনে তুলে ধরল। ২০১১ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের জন্য নির্মিত “বিউটিফুল বাংলাদেশ”। আমি হাসিমুখে বললাম- ভিডিওটা দেখেছি আগেই। আসলেই দুর্দান্ত ভিডিওটা।
মেয়েটা ভিডিওটা বন্ধ করে মোবাইল ব্যাগে ঢুকাতে ঢুকাতে বলল- আমি নুবিয়া, মিশর থেকে এসেছি।
-আমি মুহিত, বাংলাদেশী।
নুবিয়া মুখটা হঠাৎ খুশিতে ঝলমল করে উঠল। বলল- তুমি বাংলাদেশী! তাহলে তো ভালই হল।
আমি বাংলাদেশী হওয়ায় ভালটা ঠিক কিভাবে হল বুঝলাম না। তবে তার পরের কথাতেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হল।
-আচ্ছা, এই কক্সবাজার জায়গাটা কোথায়?
-অনেক দূরে। যদি জ্যাম-ট্যাম না থাকে তাহলেও বাসে করে যেতে তোমার ৮-৯ ঘন্টা লাগবে।
-প্লেনে যাওয়া যায় না?
-প্লেন সার্ভিস সম্পর্কে বলতে পারছি না। তবে যাওয়া যায়।
-তুমি আমার একটা উপকার করতে পারবে?
আমি প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকালাম।
-তুমি কি আমাকে কক্সবাজার যাওয়ার টিকেটের ব্যবস্থা করে দিতে পারবে?
এ আবার কি ঝামেলায় পড়লাম! এখন আবার টিকেটের ব্যবস্থা করতে হবে? তারপর যদি বলে আমি তো একা এসেছি, তুমি কি আমার সাথে একটু কক্সবাজার যেতে পারবে? আমার হঠাৎ করে দিল চাহতা হ্যা সিনেমায় সাইফ আলী খান যেইভাবে এক বিদেশী মহিলার সাথে প্রেম করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে সেই দৃশ্যের কথা মনে পড়ল। আমি কিছুটা ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম- তুমি কি একা এসেছ?
-না, আমার সাথে আরো চারজন এসেছে। তুমি পাঁচটা টিকেটের ব্যবস্থা করতে পারবে?
আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। যদিও আমার এই পাঁচটা টিকেটের ঝামেলাও নিতে ইচ্ছা করছে না। কিন্তু একজন সুন্দরী বিদেশী মেয়ে যদি কোনো অনুরোধ করে তা উপেক্ষা করার মত হিম্মত খুব অল্প পুরুষ মানুষেরই থাকে। আর আমি সেই অল্প সংখ্যক পুরুষের দলে পরি না।
আমার এক বন্ধু এয়ারপোর্টে চাকরি করে। ওর মাধ্যমে ঐদিন বিকেলেই আমি ৫টা টিকেটের ব্যবস্থা করলাম রিটার্ন টিকেটসহ। সেমিনার আরো দুইদিন চলবে। সেমিনার শেষ করে ওরা ৫ জন মিলে কক্সবাজার যাবে। দুইদিন কক্সবাজার ঘুরে আবার ঢাকা ব্যাক করবে। তারপর ঢাকা থেকে মিশর।
পরের দুইদিন সেমিনারের শেষে আমাকে কক্সবাজারের বিস্তারিত বিবরণ দিতে হল নুবিয়াকে। ওখানে গিয়ে কি করতে হবে, কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবে সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খ জানা চাই নুবিয়ার। সে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে যাচ্ছে। আমিও জবাব দিয়ে যাচ্ছি। ঢাকা থেকেই আমি একটা হোটেল বুকিং দিয়েছি ইতিমধ্যে। হঠাৎ নুবিয়া আমাকে প্রশ্ন করে- তুমিও আমাদের সাথে চলো না?
-কোথায় কক্সবাজার? না না আমার পক্ষে সম্ভব না। তোমরা যাও। ঘুরে আসো।
নুবিয়া হেসে প্রশ্ন করল- কেন? বিদেশী কারো সাথে গেলে বউ রাগ করবে?
আমি হেসে ফেললাম। -আমি এখনো বিয়ে করিনি।
-তাহলে গার্লফ্রেন্ড রাগ করবে?
আমি হাসিমুখে উত্তর দিলাম- আসলে ব্যাপারটা তা নয়। অফিস থেকে এই মুহূর্তে ছুটি পাব না।
নুবিয়া খুব সমঝদারের মত মাথাটা নেড়ে বলল- বুঝি, সবই বুঝি। অফিস টফিস কিছুই না। গার্লফ্রেন্ডই আসল কারণ।
-তোমার কি জন্য মনে হচ্ছে আমার একজন গার্লফ্রেন্ড আছে?
-সেমিনার শেষ হয়েছে কয়টায়? নুবিয়া পাল্টা প্রশ্ন করল।
-৫টায়।
-এখন কয়টা বাজে?
-৬টা।
-এই ১ ঘন্টায় তোমার কাছে কয়টা ফোন এসেছে? ৮ থেকে ৯টা? কি ভুল বললাম?
-আর তাতেই তোমার মনে হল যে আমার গার্লফ্রেন্ড আছে?
নুবিয়া মাথা দোলাল। আমি বললাম- প্রথম তিনটা ফোন দিয়েছে আমার তিন বন্ধু। আমাদের আজকে রাতে এক জায়গায় মিট করার কথা। আমি কখন আসছি সেটা জানার জন্য ফোন দিয়েছে। পরের দুটা ফোন দিয়েছে আমার দুই আত্মীয়। আর শেষ তিনটা ফোন দিয়েছে বাবা আর মা। গার্লফ্রেন্ড ফোন দেয়নি কারণ আমার কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই।
নুবিয়া আগের মতই মাথা দোলাল। আমি আর এ ব্যাপারে কথা বাড়ালাম না। ওকে আরো কিছুক্ষণ কক্সবাজার সম্পর্কে জ্ঞান বিতরণ করে বন্ধুদের সাথে দেখা করার জন্য পা বাড়ালাম।
(চলবে)
০৩ রা জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:৩২
মুহিত আলম বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ০৩ রা জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:০০
আজীব ০০৭ বলেছেন: চালিয়ে যান, পরেরটার জন্য দাড়ালুম।
২৪ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৭
মুহিত আলম বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:১৩
ঢাকাবাসী বলেছেন: বেশ ভাল লাগছে, চালিয়ে যান, পরেরটার জন্য দাড়ালুম।