![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনুমতি ব্যতিত কোনো লেখা বা লেখার অংশ কপি করবেন না। এই নিন্দনীয় কাজটা আমিও করি না, আশা করবো আপনিও করবেন না।
ল্যাপটপের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। কি লিখব চিন্তা করছি। মাথায় কিছু আসছে না। এক জায়গায় এসে কেমন যেন সব গিট্টু লেগে গেছে। লেখা এগোচ্ছে না।
ডোর বেল বাজল। তমা জানালার ধারে একটা সোফায় বসে বই পড়ছিল। উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিল। বেয়ারা চা নিয়ে এসেছে। তমা দরজা থেকে সরে দাঁড়িয়ে বেয়ারাকে ঢুকতে দিল। বেয়ারা টেবিলের ওপর চা রেখে চলে গেল। তমা একটা কাপে চা ঢালতে ঢালতে আমাকে বলল- তোমাকে দিব চা?
আমি ল্যাপটপ থেকে চোখ না সরিয়ে বললাম- দেও। দেখি চা খেয়ে গিট্টু খোলে কিনা!
তমা আরেকটা কাপে চা ঢালতে ঢালতে বলল- কিসের গিট্টু?
-লেখা আগাচ্ছে না তমা। এক জায়গায় এসে আটকে গেছি। বুঝতে পারছি না কি করব।
তমা চায়ের কাপ আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে আমার পাশে বসে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বলল- কই দেখি? কোন জায়গায় আটকালো?
আমি তমাকে ব্যাপারটা খোলাসা করে বললাম। -আসলে আমি ফিনিশিং কি দিব তা বুঝতে পারছি না। নায়ককে কি মেরে ফেলব না জীবিত রাখব তাই সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। অলরেডি দুটো ফিনিশিংই লিখে ফেলেছি, গল্পে যেকোনো একটা ফিনিশিং যাবে। কোনটা যাবে তার উপর নির্ভর করে গল্পে কিছু পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু কোন ফিনিশিং রাখব তাই বুঝতে পারছি না।
-ফিনিশিং দুটা আমাকে দেখাও। পড়ে দেখি।
আমি ফিনিশিং দুটা বের করে দিলাম। তমা চা খেতে খেতে পড়তে লাগল। আর আমি তমার দিকে তাকিয়ে রইলাম। কি মায়াময় একটা মুখ। চোখের পাশ দিয়ে একগুচ্ছ চুল এসে পড়ছে গালে। একটু পর পর তমা চুলগুলো সরিয়ে দিচ্ছে। আবার এসে গালে পড়ছে, ও আবারো সরিয়ে দিচ্ছে। কেমন যেন ঘোরলাগা এক অপূর্ব দৃশ্য। আমি অনেকটা ঘোরের মধ্যেই চলে গিয়েছিলাম। তমার ডাকে আবার বাস্তবে ফিরলাম।
-তুমি দুটা ফিনিশিংই রাখো, বাদ দেয়ার দরকার নেই।
-তা কিভাবে হয়? আমি কিছুটা আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করলাম।
-হবে। এমনভাবে লেখ যেন পাঠক নিজেই ঠিক করে নেয় কোন ফিনিশিং সবচেয়ে কারেক্ট হবে। ফিনিশিং নিয়ে ডিসিশনটা পাঠকের ওপরে ছেড়ে দাও।
আমি একটু চিন্তা করলাম ব্যাপারটা। তারপর বললাম- তোমার বুদ্ধিটা খারাপ না। তাহলে পাঠকের রিএকশ্যনটাও ভালরকম পাওয়া যাবে। কি বল?
-হুম.........আচ্ছা তুমি তোমার চা-টা খেয়েছ?
আমার তখন হঠাৎ চায়ের কথা মনে হল। আমি চায়ে একটা চুমুকও দেইনি। এতক্ষণে চা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে।
তমা ভ্রূ নাচিয়ে বলল- আমি তোমাকে চা দিয়ে নিজে চা খেতে খেতে তোমার দু-দুটো ফিনিশিং পড়ে শেষ করলাম আর তুমি এতক্ষণ কি করলে?
আমি হাসতে হাসতে বললাম- তোমার চুল সরানো দেখতে দেখতে একটু ভাবের জগতে হারিয়ে গিয়েছিলাম।
-মানে?
-মানে হচ্ছে এই............আমি এগিয়ে গিয়ে তমার একগুচ্ছ চুল গালে ফেলে আবার তা নিজেই হাত দিয়ে সরিয়ে দিলাম।
তমা মুচকি হেসে বলল- ঢং রাখো। চা খাবা? কাপেরটা তো ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। দিবো আরেক কাপ?
-দাও।
তমা হাত বাড়িয়ে বলল- কাপটা দাও।
-কাপ দিতে হবে কেন? তোমারটাতে দাও।
-মনে আজ খুব ফুর্তি লেগেছে নাকি? দিনে দিনে রংঢং দেখি বেড়েই যাচ্ছে।
আমি মুখ হাসি হাসি করে বললাম-আরে বয়স এখনো তিরিশও হয় নাই। সত্তর বছর পর্যন্তও যদি বাঁচি তাহলেও তোমার সাথে রংঢং করা ছাড়বো না। রংঢংয়ের দেখছো কি!
তমা উঠে গিয়ে আবার কাপে চা ঢালতে ঢালতে বলল- আমাদের তাইলে এখানে আসা সার্থক, তাই না?
আমি তমার কথাটা বুঝলাম না। প্রশ্ন করলাম- সার্থক মানে?
-এই যে দশদিন ছুটি নিয়ে এখানে আসলাম তোমার উপন্যাসটা যেন তুমি নিড়িবিলিতে লিখে শেষ করতে পারো।
-তা নাহয় শেষ হল, কিন্তু তমা আমার এই বইটা কি চলবে? না আগেরগুলোর মতই স্টলে আর বইয়ের দোকানের শেলফেই শোভা পাবে?
তমা চায়ের কাপ আমার দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বলল- আচ্ছা তুমি এত অল্পতেই হতাশ হয়ে যাচ্ছা কেন?
-অল্প কই দেখলে? এ পর্যন্ত তিনটা বই বের করলাম। কোনোটাইতো খুব একটা বিক্রি হয়নি।
-লস হয়েছে?
আমি চায়ে চুমুক দিলাম। -তা প্রকাশকের লস হয়নি, কিন্তু লাভ তো কিছুই হয়নি বলতে গেলে। এত কষ্ট করে বই প্রকাশ করে যদি লাভই না হয় তো কিভাবে হবে বলো?
-সাইদ ভাই কি কখনো বই বিক্রি না হওয়ার জন্য কিছু বলেছে?
-আরে না, সাইদ অন্যরকম মানুষ। ওর জন্যই তো আমি বই বের করতে পারলাম। যা টুকটাক বিক্রি হয়েছে তাও ওরই কৃতিত্ব।
তমা কিছুটা রেগে গেল মনে হয় কথাটা শুনে। বলল- তারমানে তুমি বলতে চাচ্ছ ছাইপাশ যা খুশি একটা তুমি লিখলেই সাইদ ভাই ওটা বিক্রি করতে পারবে?
-আরে না না। আমি তো তা বলিনি।
-তুমি যা বলেছ তার অর্থ ওটাই দাঁড়ায়। আচ্ছা নিজের ওপর তোমার আত্মবিশ্বাস এত কম কেন?
আমি কিছুটা হতাশায় মাথা নাড়লাম। -কি করব বল তমা! এত কষ্ট করে বই লিখে যদি দেখি খুব একটা বিক্রি হয় না তখন খুব কষ্ট লাগে। রবীন্দ্র, নজরুল, শ্রীকান্ত এরা মরে ভূত হয়ে গেছে সেই কবে, কিন্তু প্রতি বইমেলাতেই এদের বই এখনো দেদারসে বিক্রি হচ্ছে। সারা বছরই মানুষ এদের বই কেনে। কিন্তু আমার মতো নবীনদের বই কেউ কেনে না।
-তোমার লেখা পড়ে কেউ বলেছে তুমি খারাপ লেখ?
চা শেষ হয়েছে। কাপটা বেডসাইড টেবিলে নামিয়ে রাখলাম। তারপর তমার দিকে ফিরে বললাম -তা কেউ বলেনি। মানুষজন প্রশংসাই করেছে। কিন্তু মুখের প্রশংসায় আর চিড়া ভিজবে না। এখন বই বিক্রি হওয়া দরকার।
-বই বিক্রি নিয়ে তুমি এত পাগল হচ্ছ কেন? বই বিক্রির টাকায় কি তোমার সংসার চলে?
-তা চলে না, কিন্তু তারপরেও বই বিক্রি হওয়া দরকার। এটাকে বলতে পারো একটা স্বীকৃতি। ভাল লেখকের স্বীকৃতি।
-তোমার এই ধারণা ভুল। কিছুদিন আগে ব্লগে একটা গল্প পড়েছিলাম। এত চমৎকার একটা গল্প অথচ মাত্র ৩০ বার গল্পটা পড়া হয়েছে। কমেন্ট করেছে তিনজন। সুতরাং ভাল লেখক মানেই যে খুব ভাল লাইক কমেন্ট পাবে, ভাল বিক্রি হবে এমন কোনো কথা নেই।
-আমি একটা ডিসিশন নিয়েছি।
-কি?
-যদি এই বইটা ভালরকম বিক্রি না হয় তো আমি বই লেখাই ছেড়ে দিব। দরকার নাই আর লেখার। অনেক পরিশ্রম হয়। অনেক সময় নষ্ট হয়। এই বইটা আমার সেরা বই। এটা লিখতে অনেক খাটাখাটনি করতে হয়েছে। তাও যদি বিক্রি না হয় তো লেখালেখিকে আসসালামুয়ালাইকুম।
তমা হঠাৎ আমার দিকে একটু এগিয়ে আসল। বলল- তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি।
-কি কথা?
-তোমার বইগুলো আমি কয়বার পড়েছি জানো?
আমি একটু অবাক হলাম প্রশ্নটা শুনে। জিজ্ঞেস করলাম- কয়বার?
-তোমার প্রতিটা বই আমি প্রায় ৮-১০ বার করে পড়েছি।
খুবই আশ্চর্য হলাম। -বল কি!
তমা মাথা নাড়ল। -মাঝে মধ্যেই তোমার বই পড়ি আমি। এমনকি বিয়ের আগেও তোমার বই পড়েছি।
এই তথ্যটা জানা ছিল না। -বিয়ের আগে পড়েছ মানে? বিয়ের আগে আমার বইয়ের খবর পেলে কই?
-এক বন্ধুর কাছ থেকে। তোমার প্রথম বইটা পড়েই মুগ্ধ হয়েছিলাম।
আমি মুখ টিপে হেসে বললাম- এবং আমার প্রেমে পরেছিলে?
তমা এক হাতে আমার নাকটা ধরে দুদিকে নাড়িয়ে বলল- জী না জনাব। প্রেমে পরি নাই। ভাল লেগেছিল বইটা।
-তা এতদিন বলো নাই কেন কথাটা?
-তাহলে তোমার ভাবের ঠেলায় টেকাইতো দায় হয়ে যেত! তাই ইচ্ছা করেই জানাইনি।
আমি হা হা করে হাসলাম। তারপর বললাম- এখন তাহলে ভাব নিতে হচ্ছে দেখা যায়।
তমা কপট শাসানোর ভঙ্গিতে আমার দিকে আঙুল তাক করে বলে- এই খবরদার ভাব ধরবা না। ভাব ধরা আমি একদম পছন্দ করি না। আর আল্লাহর ওয়াস্তে লেখালেখি ছেড়ো না। অন্তত আমার জন্য লিখো, ঠিকাছে?
আমি তমার কথাটার জবাব না দিয়ে ওকে একটু কাছে টেনে নিয়ে বললাম- চল আজ একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি। এ কয়দিনতো লেখালেখির যন্ত্রণায় বাইরেই বেড়োতে পারিনি।
তমা হাসিমুখে বলল- চল।
[এক বছর পর]
অফিস থেকে আজকে একটু সকাল সকাল বের হয়েছি। তমাকে নিয়ে বাইরে ডিনার করব। তমাকে বলেছি রেডি হয়ে থাকতে। আমি এসেই ওকে নিয়ে বের হবো।
আমার শেষ বইটাও খুব একটা বিক্রি হয়নি। লেখালেখি তাই ছেড়ে দিয়েছি। তমা বেশ কিছুদিন জোড়াজুড়ি করেছিল। কিন্তু আমার আর লিখতে ভাল লাগছিল না। কোনো মোটিভেশন পাচ্ছিলাম না। মানুষজন যদি বই নাই পড়ল তবে লিখে আর কি লাভ?
লেখালেখি বাদ দেয়ার পরে এখন আমার হাতে অনেক অবসর। অফিসের পরে আর কোনো কাজ থাকে না। তমাকেও অনেক সময় দিতে পারছি, আগে লেখালেখির জন্য যা কিছুতেই সম্ভব হত না। ছুটির দিনগুলোতে বলতে গেলে সারাদিন ল্যাপটপের সামনে বসে থাকতাম। আর এখন তমাকে নিয়ে এখানে ওখানে ঘুরতে যাই। তমাও আর বই লেখার কথা বলে না।
কলিংবেল চাপ দিলাম। তমা দরজা খুলে দিলো হাসিমুখে। আমি ভিতরে ঢুকে বললাম- রেডি?
তমা মাথা নাড়ল। -হ্যাঁ।
আমি জুতা খুলতে খুলতে বললাম- দশটা মিনিট অপেক্ষা করো। আমি একটু ফ্রেস হই। আজ অনেক গরম পরেছে।
-তোমার নামে একটা চিঠি এসেছে।
আমি জুতা থেকে মুখ তুলে তমার দিকে তাকালাম। তমা হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। -কিসের চিঠি?
টেবিল থেকে তমা একটা সাদা খাম এগিয়ে দিলো। -খুলেই দেখ।
আমি চিঠিটা হাতে নিলাম। প্রেরক ফ্যাল্কন সাহিত্য পুরস্কার। আমি মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝলাম না। -কি এটা?
-খামটা খুলে চিঠিটা বের করে পড়ে দেখতে কি খুব কষ্ট হচ্ছে? তমা পাল্টা প্রশ্ন করল।
আমি খামটা খুলতে গিয়ে দেখলাম খামটা ছিড়া। তারমানে তমা চিঠিটা অলরেডি পড়েছে। চিঠিটা বের করে আমি চোখের সামনে মেলে ধরলাম।
চিঠিটা পড়তে খুব বেশিক্ষণ সময় লাগলো না। ছোট্ট একটা চিঠি। আমি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেলাম চিঠিটা পড়ে। -এটা কিভাবে হলো?
তমা বলল- আমি করেছি।
-তুমি কি করেছ?
-তোমার বইটা ওদের কাছে পাঠিয়েছি।
-কবে?
-এইতো মাস দুই আগে।
-আমাকে জানালে না কেন?
-যদি তোমাকে না ডাকত তাহলে আবার মন খারাপ করতে। তাই তোমাকে জানাইনি। সেরা দশটা বইয়ের মাঝে তোমারটা আছে। আগামী ২৫ তারিখে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই দশজন থেকে সেরা তিন লেখককে পুরস্কৃত করা হবে।
-আমারতো বিশ্বাসই হচ্ছে না।
-সাইদ ভাইও ব্যাপারটা জানে। যদিও এটাই প্রথম ফ্যাল্কন সাহিত্য পুরস্কার, কিন্তু উনিই বলল এটা নাকি খুব প্রেস্টিজিয়াস পুরস্কার হবে। বিচারক প্যানেলে অনেক রথী মহারথী আছে। তারাই সিলেক্ট করবেন কোন তিনজন এ বছরের সেরা লেখক। এরপর থেকে প্রতি বছরই নাকি তারা বছরের সেরা তিনটা বইকে পুরস্কৃত করবে। এরকমই প্ল্যান।
আমি মুগ্ধ হয়ে তমার কথা শুনছি। অনেকদিন পর আজকে খুব ভাল লাগছে। মাঝখানে মনমরা হয়ে গিয়েছিলাম। যদিও আমার অনেক ব্যস্ততা কমে গিয়েছিল, তমাকে নিয়ে অনেক ঘুরাঘুরি করতে পেরেছি, তবুও মনের কোণে একটা চিনচিনে ব্যথা অনুভব করতাম। আজকে আমার লেখার একটা স্বীকৃতি পেয়েছি। সারা বছরের সেরা দশটা বইয়ের মধ্যে আমার বইটাও আছে। এ এক অন্যরকম অনুভূতি।
আমি উঠে দাঁড়িয়ে তমার হাত ধরে বললাম- আজকে তাহলে একটা জম্পেশ ডিনার হবে। চল।
তমা হাসতে হাসতে বলল- ফ্রেস হওয়ার কথা কি ভুলে গেছো?
আমি মনে পরে গেছে এই ভঙ্গিতে বললাম- ও আচ্ছা, তাইতো। দশ মিনিট, ওকে?
-ওকে।
**********************
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ফ্যাল্কন সাহিত্য পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। আমি তমাকে নিয়ে মাঝামাঝি সারির এক জায়গায় বসে আছি। বিশাল আয়োজন। বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী, দেশ বরেণ্য বিভিন্ন কবি-ঔপন্যাসিক, শিল্পীরা এসেছেন। আরো অনেক মান্যগণ্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত আছেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বিভিন্নজন বক্তব্য রেখেছেন। মাননীয় মন্ত্রীর বক্ত্যবের মাধ্যমে এই বিরক্তিকর অধ্যায়ের সমাপ্তি হয়েছে। এখন সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত- পুরস্কার বিতরণ। উপস্থাপক তৃতীয় পুরস্কার দেয়ার জন্য মঞ্চে আমন্ত্রণ জানালেন নন্দিত কথা সাহিত্যিক বদরুল আমিনকে।
বদরুল আমিন মঞ্চে উঠলেন। চারিদিকে পিনপতন নীরবতা, শুধু উপস্থাপকের গলার গমগম আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। উপস্থাপক অনেকভাবেই নাটকীয়তা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। বদরুল আমিনের দিকে একটা খাম এগিয়ে দেয়া হল। খামে লেখা ৩য় পুরস্কার বড় পর্দায় দেখা যাচ্ছে। বদরুল আমিন খামটা ছিড়ে ভিতরের কাগজটা বের করে ক্যামেরার সামনে ধরলেন। বড় পর্দায় নামটা জ্বল জ্বল করে উঠল- ইফতিখার হাসান।
হলের ডানদিকের কর্নার থেকে একজন লোক মঞ্চের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন আস্তে আস্তে। পুরা হল জুড়ে কড়তালির আওয়াজ। বড় পর্দায় তার লেখা বইটি ভেসে উঠল-বিন্দু। ইফতিখার হাসান বদরুল আমিনের কাছ থেকে পুরস্কার নিলেন। উপস্থাপক তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করছেন। ইফতিখার উত্তর দিচ্ছেন। আমার মাথায় কথাগুলো ঢুকছে না। মাথায় শুধু একটা জিনিসই ঘুরছে- আর মাত্র দুটা চান্স বাকি।
ইফতিখার আর বদরুল আমিন মঞ্চ থেকে নেমে গেছেন। উপস্থাপক ২য় পুরস্কার দেয়ার জন্য বিশিষ্ট কবি সরাফাত হুসেনকে আমন্ত্রণ জানালেন। কবি মঞ্চে ওঠার পর তার হাতে একটি খাম ধরিয়ে দেয়া হল। খামে লেখা ২য় পুরস্কার। উপস্থাপক যথারীতি নাটকীয়তা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন।
কবি খামটি ছিড়লেন। ভিতরের কাগজটি বের করে ক্যামেরার সামনে ধরলেন। ইকবাল আহমেদ- বড় পর্দায় নামটি দেখাচ্ছে। পিছনের দিক থেকে একজন লোককে উঠে আসতে দেখা যাচ্ছে। ভদ্রলোকের বয়স পঁয়ত্রিশ থেকে চল্লিশের ভিতরে। তার লেখা বইটি এখন বড় পর্দায় দেখাচ্ছে-রক্তজবা।
কবির কাছ থেকে পুরস্কার নেয়ার পর ইকবাল আহমেদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করছেন উপস্থাপক। আমার কিছুই মাথায় ঢুকছে না। মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে-শেষ সুযোগ।
ইকবাল আহমেদ আর কবি একসাথে মঞ্চ থেকে নেমে এলেন। আমি বুঝতে পারলাম আমার হার্টবিট বেড়ে গেছে। উপস্থাপক এবার মঞ্চে ডাকলেন জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক খসরু জামানকে। খসরু জামান আস্তে আস্তে মঞ্চের দিকে হেঁটে যাচ্ছেন। মঞ্চে উঠার পর তার হাতে একটি খাম ধরিয়ে দেয়া হল। তাতে লেখা ১ম পুরস্কার।
আমি হঠাৎ আমার কব্জিতে একটা চাপ অনুভব করলাম। তাকিয়ে দেখি তমা আমার বামহাতটা খামচে ধরেছে। প্রচণ্ড উত্তেজনায় এ শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশেও তার মুখটা ঘেমে গেছে। সে একদৃষ্টিতে মঞ্চের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্য কোনোদিকে তার খেয়াল নেই।
তমার জন্য আমার হঠাৎ খুব মায়া হল। মেয়েটা আমার জন্য অনেক কিছু করেছে। বিয়ের পরে যখন মেয়েরা স্বামীদের নিয়ে একান্তে সময় কাটাতে চায়, তাদের নিয়ে ঘুড়ে বেড়াতে চায়, তখন এই মেয়ে আমার জন্য কত শুক্র-শনিবার চুপচাপ ঘরের কোণে কাটিয়ে দিয়েছে! হয়ত নাস্তা অথবা চা-কফি বানিয়ে আমার টেবিলে রেখে গেছে, মাঝে মধ্যে এসে জিজ্ঞেস করেছে লেখার কি অবস্থা। আর কোনো কথা নয়, আমার লেখায় ব্যাঘাত ঘটে এমন কোনো কাজ সে কখনো করেনি। এমনকি এই বইটা লেখার সময় ওকে নিয়ে প্রায় দশদিনের মত সিলেট থেকে ঘুড়ে এসেছি। প্রথম আটদিন এই বইটা শেষ করতেই কেটে গেছে। শুধু শেষ দিনটা ঘুড়েছি। এই পুরস্কার নিতে আজকে এখানে আসাও তো ওর জন্যই।
আমি মনে মনে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলাম যেন এই পুরস্কারটা আমি পাই, শুধু তমার জন্য এই পুরস্কারটা আমার দরকার..................
-তোমার হয়েছে? এখন খেতে আসবা? তমা পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল।
আমি ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে তমার দিকে তাকিয়ে বললাম- আরেকটু, আর আধা ঘন্টা। একটা ইন্টারেস্টিং জায়গায় আছি। টানটান উত্তেজনা। এটা শেষ করেই আসছি।
তমা কপট রাগের ভান করে বলল- উফ, তুমি যে কি যন্ত্রণা করো। মাঝখানে কয়েকদিন ভালই ছিলাম। এই পুরস্কার পাওয়ার পর থেকে আবার অত্যাচার শুরু হয়েছে। কোন কুক্ষণে যে ঐ পুরস্কারের জন্য বইটা পাঠিয়েছিলাম!
তমা কথাটা বলে ডাইনিং রুমে চলে গেল। আমি মুচকি হেসে আমার টেবিলের সামনে রাখা ক্রেস্টের দিকে তাকালাম। ওখানে বড় বড় করে লেখা-
ফ্যাল্কন সাহিত্য পুরস্কার ২০১৩
সেরা লেখক
মুহিত আলম ।
©Muhit Alam
১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬
মুহিত আলম বলেছেন: Thnx
২| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৪৮
আমিনুর রহমান বলেছেন:
আপনার লেখনী ভালো। গল্পটার চিত্রনাট্য ভালো হবে
১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৭
মুহিত আলম বলেছেন: Thnx
৩| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৪৭
কলমের কালি শেষ বলেছেন: সুন্দর লেখনী । +++
১৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:১৯
মুহিত আলম বলেছেন: Thnq
৪| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:১৮
হাসান মাহবুব বলেছেন: বেশ লাগলো।
১৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:২০
মুহিত আলম বলেছেন: Thnq
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:২২
সকাল হাসান বলেছেন: ভাল লেখনী!

এগিয়ে যান!
শুভকামনা রইলো!