নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\" অগুছালো চিন্তা ধারায় কিছু অনভীজ্ঞ লিখা।\"

মোজাহিদ আলী

খুব সাধারণ পরিবারে জন্ম আর সাধারণভাবে বেড়ে উঠার এক আত্মজীবনি আছে আমার। লিখতে পারব...? সন্দেহ হয় ! অভীজ্ঞতা ছাড়া লিখা অনভীপ্রেত। সাধারণ জীবনের অনভীজ্ঞ লিখাগুলি পাঠকেরা পড়বে কি না সন্দেহ আছে...... তারপরেও লিখি, নিজের আত্ম সন্তুষ্টির জন্য না হয় একটু আধটু লিখবার চেষ্টা করলাম.........।।

মোজাহিদ আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুযোগ সন্ধানিদের দাংগায় আমি নিপিড়িতের পক্ষে।

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৩২



ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস গাটলে শুধুমাত্র সনাতন ধর্মাম্বলীদের সৃষ্ট ইতিহাসই খুজে পাওয়া যায়, দেখা গেছে মুসলীম শাসকরা যখন শাসন করেছিলো তখনও সনাতনীদের আধিক্যতা ছিলো, আর উনারা যে কতটুকু সহী মুসলিম ছিলো সে ব্যাপারে আমি সন্দেহাতিত। সম্রাট আকবর তার নিজের ধর্ম রেখে তার শিষ্য বিরবলের পরামর্শে, দ্বীনই-ইলাহি চালু করলেন উনার সভার প্রধান চারজনের ৩ জন সনাতনি ছিলেন, সম্রাট বাবর মদে আশক্ত ছিলো, সমকামি,তিনি আকবরের দ্বীনই- ইলাহির অনুসারী ছিলেন, নিজেকে ৭ম শিয়া ঈমাম ঈমান মূসা আল কাজিমের বংশধর হিসেবে দাবি করতেন। তথন তার নামে মূদ্রা চালূ করা হয় এবং মসজিদে খুত্‌বা পড়ার সময়ে তার নাম নিয়ে পড়া হত।হয়তো এমন কোন সম্রাট নেই যে মদ,জোয়া,নারী, আর ৯ থেকে ১০ টি বিয়ে করেনি। সম্রাট শাহজাহানের তাজমহল আজও তৎকালীন হাভাতে,নিপিড়িত, প্রজাগুলির মানুষগুলির উপর নিপিড়ন, জুলুমের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই এখানের বাহ্যিক সৌন্দর্য্য দেখে মুগ্ধ হলেও আমি প্রতিটি ইটের কোনে সেই দুর্বল মানুষগুলির ক্ষুধার আর্তচিৎকার, নিপিড়নের চিত্র কল্পনা করি।অতএব পৃথিবী বলুক আমি একজন উনাদের সহী মূসলমান বলতে পারি না মুসলমান জাতির অন্তর্ভুক্ত বলতে পারি না। ইতিহাস পড়ি ভালো লাগে নামগুলি মুসলমানের মতো এই আর কি !!!

আমি লুকুচ্ছি না সনাতনি, সেন,পাল, দ্রাবিড়, মৌর্য,আর্যীয়,ব্রাক্ষ্মিয়,ক্ষত্রীয় দের শাসনের কালে জুলুম, নিপিড়ন, নির্যাতন,বন্য জংলিদের মতো আচরণের অভাব ছিলো না।আমি একজন মুসলমান তাই নিজের আত্নসমালোচনা টাই না হয় প্রথমেই করলাম।
আমি বলি কি তৎকালীন সময় সিংহ যেভাবে শক্তিবলে বনের রাজা ঠিক তেমনি রাজা শাসক ওভাবেই নির্বাচিত হতো। সেগুলি আমাদের কালো ইতিহাস, বর্বরতার ইতিহাস, লজ্জার ইতিহাস।

যাই হোক ভারতীয় উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটে আমাদের কারোই গৌরবের কোন ইতিহাস নেই। সুতরাং আমরা ভারতীয়রা ধর্মের ইতিহাসের ভিত্তিতে লাফালাফি করে লাভ নেই। এতো কিছু বলার পরে একটি ব্যাপার পরিষ্কার সে সময়গুলিতে হিন্দু/সনাতন/মুসলমানদের সম্প্রিতির কোন ঘাটতি ছিলো না, যার জন্যে আমরা আকবরের সভাসদের ৪ জনের ৩ জনকেই হিন্দু/সনাতনি খুজে পাই, পরবর্তি প্রেক্ষাপটেও মুসলমান হিন্দুদের কোন দাংগা, অসাম্প্রদায়ীকতা খুজে পাই না, মানবতার যতই বিপর্যয় ঘটুক না কেনো এমন এক সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশ চালিত হয়েছিলো যেখানে হিন্দু মুসলমান এক ও অভিন্ন ছিলো,পরিচয় ছিলো মানুষ।সে কারনেই সনাতনি বুদ্ধিজীবিদের মুখে এসব কথা মানিয়েছিলো.....

বিবেকানন্দ তার স্বরচিত বইতে লিখেছে,
“দেখা যাবে ইসলাম যেথায় গিয়েছে, সেথায়ই আদিম নিবাসীদের রক্ষা করেছে। সেসব জাত সেথায় বর্তমান। তাদের ভাষা, জাতীয়ত্ব আজও বর্তমান।” (প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য, পৃষ্ঠা ১১৫)

ডক্টর তেজ বাহাদুর সাপ্রু বলেছে- “হিন্দুদিগকে রক্ষা করিবার একমাত্র উপায় ইসলাম ধর্মের কতিপয় মূলনীতি- আল্লাহর একত্ববাদ ও মানবের বিশ্বজনীননত্ব।”
আচার্য প্রফুল্ল রায় বলেছে, “জগতের বুকে ইসলাম সর্বোৎকৃষ্ট ধর্ম। প্রশান্ত মহাসাগর হতে আরম্ভ করে আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূল পর্যন্ত সমস্ত মানবম-লীকে উদারনীতির একসূত্রে আবদ্ধ করে ইসলাম পার্থিব উন্নতির চরম উৎকর্ষ লাভ করেছে।”

আমাদের মাঝে এই বিষবৃক্ষটি কৌশলে রোপন করে গিয়েছিলো বৃটিশেরা। যখন আমরা ধীরে ধীরে নিজের অধীকার বুঝতে শিখলাম,ভদ্র মার্জিত ব্যাবহার শিখলাম,যখন নিজেদের দায়িত্ত্ব্যটা নিজে নিতে শিখলাম তখনি বাধ সাধল তারা। কৌশলে আমাদের মাঝে হিন্দু-মুসলমান শব্দগুলি আনলো তারাই প্রথম। দ্বীজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতবর্ষ ভাগ করে দাংগা বাদিয়ে দিলো। আবেগি জাতী শুরু করলো জনম জনমের শত্রুতা।উল্লেখ্য যে ভারতীয় অনেক সংগঠন তখন দ্বীজাতি তত্ত্বকে অনুপ্রেরনার উৎস হিসেবে দেখেছেন, তখন অনেক বড় বড় হিন্দু নেতা বুদ্ধিজীবি স্বাগত জানিয়েছেন এমন দাংগাকে...

১৯৩৭ সালে হিন্দু মহাসভার অধিবেশনে তার সভাপতি সাভারকার পরিস্কারভাবে ঘোষণা করলেন, ‘‘ভারতবর্ষকে আজ আর এক অবিভাজ্য ও সুসংহত জাতি মনে করা যায় না। এদেশে প্রধানত দু'টি জাতি হিন্দু ও মুসলমান।’’ (রাম গোপাল, সমগ্রন্থ, ২৬৪ পৃঃ)।
শরৎ বাবু ১৯১৬ সালে সামতা বেড়িয়া থেকে কাজী জাহান আরাকে লিখে পাঠান: ‘‘ভারতের হিন্দু-মুসলমান দুই বৃহৎ জাতি বহুদিন যাবত পাশাপাশি বাস করছে। তাদের মধ্যে বাইরে লেনদেন অনেক হয়েছে কিন্তু অন্তরের লেনদেন হয়নি। সেই লেনদেনের সুযোগ সৃষ্টির দায়িত্ব আমার ও তোমার।’’
শরৎ বাবু সে সময় ছিলেন একজন উল্লেখযোগ্য প্রতিনিধিত্বশীল হিন্দু নেতা। তাই তার মতামতকে সমগ্র শিক্ষিত হিন্দু সম্প্রদায়ের মতামত বলে ধরে নেয়া যায়। শুধু শিক্ষিত হিন্দু সম্প্রদায়ের মতামত বলে ধরে নেয়া যায়। শুধু কাজী জাহান আরার নিকট চিঠিতেই যে শরৎ বাবু এই উক্তি করেছিলেন তা নয়। ১৯১২ সালে নোবেল প্রাইজ পাওয়ার পর কলকাতায় রবীন্দ্রনাথকে যে নাগরিক সংবর্ধনা দেয়া হয়েছিল সে সভার সভাপতি হিসেবে শরৎ বাবু রবীন্দ্রনাথকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘‘আমি আপনাকে ভারতের মহান হিন্দু জাতির পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।’’ এ থেকে তখনকার হিন্দু সমাজের অধিকাংশ নেতাই যে মুসলমানদের আলাদা জাতি মনে করতেন তা পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত হয়।

আমাদের হাজার বছরের চলে আসা সংস্কৃতি,অভিন্নতা,আন্তরিকতা নিমিষেই শেষ করে দিল বৃটিশ চক্রান্ত। যদিও বলা হয় দ্বিজাতিতত্তের প্রবক্তা আলি জিন্নাহ, স্যার সৈয়দ ইকবাল সহ অন্যান্যরা কিন্তু উনারা যে বৃটিশের হয়েই কাজ করেছিলেন তা বলার উপেক্ষা রাখে না।
স্বার্থবাদিরা সবসময় স্বার্থের পেছনে দৌড়ায় ৭২ প্রেক্ষাপটে আমাদেরকে সেই আলী জিন্নাহ তার উত্তরসুরিরা হিন্ধু বলে বঃহিবিশ্বে পরিচয় দিয়ে মুসলমান দেশ থেকে অনেক স্বার্থ কুড়িয়েছিলেন একসময় যাদের মুসলমান ভাই বলে সাথে নিয়ে পৃথক হয়েছিলেন।

আমরা শোষিত জাতি, এক হাত থেকে আরেক হাতে কপালের লিখন। বৃটিশ থেকে ভারত সেখান থেকে পাকিস্তান শেষ প্রচেষ্টা বাংলাদেশ। সোনার দেশের স্বপ্ন দেখেছিলো ৭২ প্রজন্ম। নিঃশর্তে প্রাণও দিয়েছিলো, এতোটুকু শান্তির প্রত্যাশায়,নিজের দেশে,নির্জন গ্রামে, মায়ের বুকে,নিজের ভিটেয়, একটা ভাংগা ঘর,খুব বেশি হলে কাচা দালান,একটু শান্তিতে ঘুমানোর আশায়। শুরু থেকে শেষ অব্দি আমাদের পরিচয় ছিল বাংগালী, আমাদের নিজস্ব স্বকীয়তা, সংস্কৃতি আমাদের আলাদা করে রেখেছিলো পরিচয় একটাই আমরা বাংগালী।যেখানে মুসলিম,হিন্দু,বৌদ্ধ,খ্রিষ্টান, কোন বিভাজন নেই। বাংগালী জাতীয়তাবাদ,অসাম্প্রদায়ীক চেতনা,গণতন্ত্র, এই চারটি মূলনিতি নিয়ে আমার স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্টা পেয়েছিলো। আমার কাছে মনে হয় মুসলমান হলে আপনাকে কলিমা পড়তে হবে, হিন্দু হলে মন্ত্র পড়তে হবে ঠিক তেমনি এই চারটি মুলনিতী মন থেকে বিশ্বাস করে এদেশের জনগণ দেশ স্বাধিন করেছিল।জিন্নাহের সাম্প্রদায়ীক আগ্রাসন তখন ও চালিয়ে গেছেন।যেখানে আমাদের স্বাধীনতার মুলমন্ত্রে সাম্প্রদায়ীকতার কোন ছোয়াও নেই।

জিন্নাহ তার উত্তরসুরিদের এদেশের মানুষ মন থেকে ঘৃণা করেছিলো,দুঃখের বিষয় আজ যখন এদেশে সাম্প্রদায়িকতার ছোয়া দেখি তখন তাদের মাঝেই আমি বৃটিশ আর জিন্নাহদের অস্তিত্ত্ব খুজে পাই।জিন্নাহরা সবসময় সুযোগ সন্ধানি তারা পরিবর্তনশিল, স্বার্থমতো আপনাকে মুসলমান বানিয়ে দেবে অথবা সাচ্চা মালাউন বানিয়ে দেবে।আমি আশ্চর্য হই হিন্দু/মুসলমান তত্ত্বটি যেখানে একটি চাপিয়ে দেয়া চাক্রান্ত সেখানে আজও কেনো সেই অভিশাপ বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি আমরা।হে সেই অভিশাপ বয়ে নিয়ে বেড়ানোর মানে হচ্ছে সুযোগ সন্ধানী মানসিকথা।

কষ্ট হয়, আফসোস লাগে ৪৬/৪৭ এর খন্ডচিত্র আজও যখন দেখতে পাই। একজন মা,একজন বোন,একজন বৃদ্ধ বাবাকে যখন নিজের দেশে বুক চাপড় দিয়ে কাদতে দেখি সে হিন্দু বলে। এদেশ তো মুসলমানের লিখা না,কোন হিন্দুর নামেও লিখা না, এদেশ লিখা হয়েছিলো অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নামে।যেখানে সকল ধর্ম,বর্ণের মানুষের সমান অধিকার একজন মানুষ শুধু মানুষ হিসেবেই পরিচিত হবে সেখানে।আমি দ্বী-জাতিতত্ত,সংবিধান,আইন,কানুন ওসবের কথা বলছিনা।আমি একজন মানুষকে স্রেফ মানুষ হিসেবে সম্মান করার কথা বলছি নচেৎ খুব দূরে নয় আমি রাজপতে গলিত লাশ, হঠাৎ করে জ্বলে উঠা ঘরবাড়ি,লুঠ, ওসবের স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছি। ভারত থেকে বিশাল এক মুসলমান জাতির ধেয়ে আসার ছবি দেখছি যার ভার বাংলাদেশ কখনো বইতে পারবেনা, যেখানে আমার দেশের চলে যাওয়া হিন্দুদের পরিমাণ অতি নগন্য।ভারতের মুসলমানদের নির্যাতন করলে ভারত সরকার এর জবাবদিহি করুক,সেই অজুহাতে আমার দেশের হিন্দুদের নির্যাতন করার কোন প্রশ্নই উঠে না।

আমার দেশের হিন্দুরা ভেসে আসে নি,ওরা রিফিউজি নয়, এখানেই ওদের বাপ দাদার ভিটা, বসতি, হাজার বছর ধরে চলে আসা আমার, ঐতিহ্য,সংস্কৃতির অংশিদার তারাও।দেশের উপর আমার যতটুকু অধিকার তার এর চেয়ে একটুও কম নয় তাদের।
আমরা কি ফিরে যেতে চাই সেই কালো, লজ্জার ইতিহাসের যুগে? কখনো না।
এক কথায় যারা আজ এসব কর্মকান্ড করছে নিঃসন্দেহে তারা জাতিকে ঘোর বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
তাদের অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত পুরু জাতিকে বয়ে বেড়াতে হবে।আবারও বলি কোন সম্প্রদায়ের এককভাবে নেয়ার মতো কোন ক্রেডিট নেই যার দরুণ একজন আরেকজনকে অপদস্ত করতে পারে।
অতএব আসুন আমরা মিলে মিশে অসাম্প্রদায়িক, সম্প্রিতির এক বাংলাদেশ কল্পনা করি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.