![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুটো গল্প শোনাই। একটা সিনেমার, আরেকটা বাস্তবের। সিনেমারটা আগে বলিঃ
পাশাপাশি দুই ভদ্রলোকের বাস। দুজনেই সরকারী চাকুরী করেন। একজন সৎ পরিশ্রমী। সীমিত আয়ে সংসার চালাতে তাকে নিয়মিত হিমশিম খেতে হয়। অন্যজন পেশায় অসৎ। কর্মক্ষেত্রে নিচের পদে থাকলেও তার টাকার অভাব নেই। বাইরে থেকে খুব সহজেই তার বিত্ত বৈভব টের পাওয়া।
একবার সৎ লোকের ছেলেমেয়েরা বায়না ধরলো স্কুল থেকে তারা পিকনিকে যাবে। কিন্তু দরিদ্র বাবার পক্ষে সে আবদার মেটানো সম্ভব নয়। তিনি ছেলেমেয়েদের বুঝিয়ে বললেন “দেখ আমি যে বেতন পাই, সে টাকা দিয়ে পুরো এক মাস সংসার চালাই। তোমাদের লেখাপড়ার খরচ, কাপড় চোপড়, বুয়ার বিল, খাওয়া দাওয়ার খরচ সবই এই পরিমান টাকা দিয়েই মেটাতে হয়। এই বেতনের টাকা থেকে তোমাদের পিনিকের জন্য টাকা দিলে সংসার চালাব কি করে!”
কিন্তু ছেলেমেয়েরা তা মানতে নারাজ “পাশের বাসার ঐ আঙ্কেল তো তোমার চাইতে ছোট অফিসার। কই তাদেরতো কোনদিন টাকার অভাব হয়নি। তার ছেলে প্রতিদিন স্কুলে মজার মজার টিফিন নিয়ে আসে, নতুন নতুন জামা পরে আসে...আমরা কোন কথা শুনতে চাইনা। সামনের মাসের পিকনিকের জন্য আমাদের টাকা দিতেই হবে”
বাবা তখন এক বুদ্ধি করলেন। বললেনঃ ঠিক আছে সামনের মাসে বেতনের টাকা পেয়ে তা আমি তোমাদের হাতে তুলে দিব। তোমরা যদি সব খরচ শেষে টাকা বাচাতে পার, তাহলে তোমাদেরকে পিকনিকে পাঠানো হবে”
পরের মাসে বাবা তাই করলেন। টাকা হাতে পেয়ে হিসেব করতে বসে ছেলে মেয়েরা আর কুল পায়না। এই টাকা দিয়ে কিভাবে সব খরচ সামলানো সম্ভব! এবার তারা খরচ কমিয়ে দিল। বাস বাদ দিয়ে কুলে যাওয়া শুরু করলো পায়ে হেটে। বাসার কাজের লোকটাকে বিদেয় করে দিল। এমন কি ছোটখাট পার্ট টাইমকাজ ও শুরু করে দিল। তবুও যেন খরচ কমেনা। বাবা আড়াল থেকে তাদের ক্রিয়াকর্ম দেখে হাসেন। মাস শেষে ছেলেমেয়েরা বাবার কাছে এসে হার মানলো। বললো,” বাবা এ কাজ আমাদের দিয়ে হবেনা। আমরা বুঝতে পেরেছি তুমি কত কষ্ট করে সংসার চালাও। আমরা আর অমন আবদার করে তোমাকে কষ্ট দিবনা”
কিছুদিন পরে পাশের বাসার অসৎ লোকটিকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। তার গোটা সংসার হয়ে যায় এলোমেলো।
এবার বাস্তবের কাহিনীঃ
আমাদের পরিচিত এক পুলিশ অফিসার। তার তিন ছেলে এক মেয়ে। সবাই উচ্চশিক্ষিত। অনেকে এসে তাদের মাকে বলতেন “আপনি তো রত্নগর্ভা মা”। তিনি হাসতেন “এর পুরো কৃতিত্ব ওদের বাবার। জীবনে অভাব অনটনে কম কষ্ট করিনি। কত সময় স্বামীর উপর প্রচন্ড রাগ হয়েছে, অভিমান করেছি। তার চাইতে নিচের পোষ্টে চাকুরি করা লোকদের বাড়িতে গেলে মাথা লজ্জায় হেট হয়ে যেত। পুরোনো কাপড় চোপড় পরে কোথাও যেতে ইচ্ছে করতোনা। এত কিছুর পরেও তিনি তার আদর্শ থেকে এক চুল ও নড়েন নি। সারা জীবন সৎ থেকেছেন। আল্লাহ তার পুরুষ্কার দিয়েছেন, ছেলে মেয়েগুলো মানুষ হয়েছে”
হঠাত কেন এই গল্প বলা?
বর্তমানে টক অফ দ্যা কান্ট্রি, পুলিশ অফিসারের মেয়ে ঐশী কতৃক তার বাবা মাকে হত্যা। ঘটনার পুরো রহস্য উদ্ঘাটনে সময় লাগবে। তবে এখন পর্যন্ত জানা গেল, মাদকাসক্তি আর অনিয়ন্ত্রিত জীবনে বাধা দেয়াই এই হত্যাকান্ডের অন্যতম মোটিভ।
কিছুটা চমকে দেয়ার মত খবর হলেও অস্বাভাবিক নয়। নীতি-নৈতিকতা, আদর্শ আর মুল্যবোধ হারিয়ে আজ আমরা তিলে তিলে ধুকছি। আজ যারা তরুণ, তাদের সামনে কোন আদর্শ স্থাপন করতে ব্যর্থ হচ্চি আমরা। তাদের কাছে জীবন মানে বয়ফ্রেণ্ড, গার্লফ্রেন্ড, দামী মোবাইল সেট ল্যাপটপ, কিংবা দামী রেষ্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করা আর দুহাত ভর্তি অঢেল টাকা। তারা দেখছে এই পৃথিবী ভোগের রাজ্য। যে যত ভোগ করতে পারে, যার বিত্ত বৈভব যত বেশী সমাজে তার ষ্ট্যাটাস তত উচু, তার দাম তত বেশী। এখানে ভালমানুষি, সততা এক ধরনের দুর্বলতা, যেনতেন প্রকারে জীবন যৌবন উপভোগ করার মাঝেই জীবনের স্বার্থকতা।
অপরিসীম ভোগের বাসনা মানুষের ভেতরকার মানবিক বোধ নষ্ট করে দেয়, মনের পবিত্রতা, শান্তি ধংস করে। তখন কেউবা শান্তি খোজার চেষ্টা করে নেশার জগতে বুদ হয়ে, আবার কেউবা আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে চির শান্তির পথ বেছে নেয়। আমাদের আশেপাশে হর হামেশাইতো এমন ঘটনা ঘটে চলেছে। কে জানে আগামী দিনে পরিস্থিতি হয়তো হবে এর চাইতেও ভয়াবহ।
মানুষ যত বেশী তার স্রষ্টাকে ভুলে যাবে, যত দূরে সরে যাবে ধর্মীয় শিক্ষা আর নীতি নৈতিকতা থেকে, তত বেশী এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি চলতে থাকবে।
আপনি আমি কি তাই চাই?
১৮ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:৫০
মুক্ত আকাশ বলেছেন: দিনকাল বদলে যাচ্ছে।সেই সাথে বাবা মায়েরাও বদলে যাচ্ছে। আর তাই বদলে যাচ্ছে আমাদের চেনা পরিবেশ।
আপনার সাথে একমত। সন্ত্যানের বিপথগামীতার জন্য কিছু ক্ষেত্রে বাবা মায়েরাও দায় এড়াতে পারেন না।
২| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৩১
নিষ্কর্মা বলেছেন: ধর্ম মানুষের কিছুটা ব্যাপার গড়ে দেয়। কিন্তু তারপরেও অঙ্কে কিছু আছে যা মানুষ তার নিজস্ব জ্ঞান থেকে জানে-শোনে-করে। ইসলাম তো কখোনোই ভোগ করা থেকে বিরত থাকতে বলে নাই। কিন্তু সীমার ভেতরে থাকতে বলেছে। সেইটাই আমাদের সমাজে এখন আর অনুশীলন করা হয় না।
১৮ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:৫৪
মুক্ত আকাশ বলেছেন: আমরাতো এখন ধর্মকে সেকেলে বলে ভাবি। কারন ধর্ম মানতে গেলে কিছু বিধি নিষেধ ও মানতে হয়।তাতে ইন্দ্রীয় সুখে যে বড় অসুবিধে।
ধর্মের সঠিক শিক্ষাই মানুষকে সামঞ্জস্যপুর্ন জীবন গড়তে সাহায্য করে। এর অন্যথা হলে জীবনে অশান্তি নেমে আসে
৩| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৩৭
বদিউজ্জামান মিলন বলেছেন: ভালো কথা বলেছেন। আমি একমত আপনার সঙ্গে।
৪| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৩৯
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: মানুষ যত বেশী তার স্রষ্টাকে ভুলে যাবে, যত দূরে সরে যাবে ধর্মীয় শিক্ষা আর নীতি নৈতিকতা থেকে, তত বেশী এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি চলতে থাকবে।
++++++++++++
৫| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৫১
গরম কফি বলেছেন: মানুষ যত বেশী তার স্রষ্টাকে ভুলে যাবে, যত দূরে সরে যাবে ধর্মীয় শিক্ষা আর নীতি নৈতিকতা থেকে, তত বেশী এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি চলতে থাকবে।
শত ভাগ সহমত ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:১৯
মনিরুল হাসান বলেছেন: এখনকার এই পরিস্থিতির জন্যে কিন্তু অভিভাবকেরাও দায়ী। একটা সময় ছিলো যখন ছেলেমেয়েদের গার্ল ফ্রেন্ড/বয় ফ্রেন্ড হয়েছে শুনলে বাবা মায়েরা বকা দিতো, শাসন করতো।
আর এখনকার অভিভাবকেরা উল্টো বকা দেয়, "তোর সব বন্ধুরা গার্ল ফ্রেন্ড/বয় ফ্রেন্ড যোগাড় করে ফেললো, আর তুই এখনও যোগাড় করতে পারলি না।"