![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার প্রিয় শিক্ষক কবিয়াল এস,এম, নুরুল আলম (মরহুম) বলতেন,'অখ্যাত থেক তবু কুখ্যাত হয়োনা'। আমি আমার এই সাধাসিধে জীবনে এই শিক্ষাটুকু পরম ভক্তির সাথে মেনে চলার চেষ্টা করি।
ইয়াউমে আশুরা, হিজরী সনের প্রথম মাস মহররমের দশ তারিখ, অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, ইহুদী-খৃস্টানদের অনেকেও এ দিনটি পালন করে থাকেন। এদিনে সংঘঠিত হয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এইদিনে পৃথিবী সৃষ্টি করা হয় এবং এইদিনেই পৃথিবী ধ্বংস করা হবে। এইদিনে পৃথিবীতে সর্বপ্রথম বৃষ্টিপাত হয়।
সর্বপ্রথম মানব হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করা হয় এইদিনে, এইদিনে তাকে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়, এইদিনে তার তাওবা কবুল করা হয়। আশুরার দিনে ৪০ দিন বন্যায় ভাসার পর হযরত নুহ (আঃ) জুদী পাহাড়ে অবতরণ করেন। এইদিনে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) নমরুদের অগ্নিকুন্ড হতে পরিত্রাণ লাভ করেন। এইদিনে হযরত মুসা (আঃ) ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি লাভ করেন এবং ফেরাউন সদলবলে নীলনদে ডুবে মরে। এইদিনে হযরত আইয়ুব (আঃ) দীর্ঘদিন রোগভোগের পর আরোগ্য লাভ করেন, ইউনুস (আঃ) মাছের পেট থেকে মুক্তি লাভ করেন, ইয়াকুব (আঃ) প্রিয় পুত্র ইউসুফ (আঃ) কে ফিরে পান, সোলাইমান (আঃ) রাজত্ব ফিরে পান। এইদিনে ঈসা (আঃ) কে উর্ধাকাশে তুলে নেয়া হয়। এরূপ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও আনন্দদায়ক ঘটনার সাক্ষী মহররম মাসের দশ তারিখ বা ইয়াউমে আশুরা।
হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত এক হাদীসে দেখা যায়ঃ আইয়ামে জাহেলিয়াতে কোরাঈশরাও আশুরার দিন রোযা রাখত ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও রাখতেন।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত অপর এক হাদীসে দেখা যায়, রাসুল (দঃ) মদীনায় হিজরত করার পর দেখতে পেলেন, ইহুদীরা আশুরার দিন রোযা রাখছে। তাদের কাছে কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তারা জানালো- এইদিন মুসা (আঃ) ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি লাভ করেন বলে তার শুকরিয়ায় আমরা রোযা রাখি। রাসুল (দঃ) বললেন, আমরা তো মুসা (আঃ) এর অধিক নিকটবর্তী। তিনি মুসলমানদেরও আশুরার দিন রোযা রাখতে বললেন তবে আগে বা পরে আরেকদিন যোগ করে, যাতে ইহুদীদের অনুসরণ না হয়।
হাদীস শরীফে এ রোযার অনেক ফজীলত বর্ণনা করা হয়েছে। মুসলিম বিশ্বে আশুরার দিনে ও আগে বা পরে আরেকটি মিলিয়ে দুটি রোযা রাখার প্রচলন আছে।
তবে মুসলিম বিশ্বে আশুরা কে সবচেয়ে বেশি স্মরণীয় করে রেখেছে যে ঘটনা তা হলঃ ৬১ হিজরীর ১০ মহররম কারবালার ময়দানে অভিশপ্ত ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে রাসুলে আকরাম (দঃ) এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর মর্মান্তিক শাহাদাত বরণ। এই শোকাবহ ঘটনা যেন আশুরার পূর্ববর্তী সব আনন্দদায়ক মাহাত্ন্যকে ম্লান করে দিয়ে তাকে শোকের দিনে পরিণত করেছে। রাসুলে আকরাম (দঃ) ও তাঁর আহলে বাইতের প্রতি সামান্যতম মহব্বত আছে এরূপ কেউও এ দিনকে আনন্দের বলে ভাবতে পারেনা, বরং সেই থেকে মুসলিম বিশ্বে এই দিন এক শোকাবহ পরিবেশের মধ্যদিয়ে পালিত হয়ে আসছে। এদিন ইমাম হোসাইনের স্মরণের সাথে অভিশপ্ত ইয়াজিদের প্রতি ঘৃণা মুসলিম বিশ্বের রচমে পরিণত হয়েছে।
ইহুদী-নাসারাদের পাচাঁটা কিছু ইয়াজিদী মুসলমানের সাম্প্রতিক কিছু কর্মকান্ড আমাকে এ লেখা লিখতে আগ্রহী করেছে, এবার আমি সেদিকেই ফিরে যাচ্ছি।
কিছুদিন আগে ভারতীয় চিকিৎসক জাকির নায়েক যিনি সম্প্রতি নিজেকে ইসলাম প্রচারকের আসনে বসানোর জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন এবং তার পেছনে ব্যয়িত হচ্ছে কোটি কোটি পেট্রো ডলার, তিনি ঘোষণা দিয়েছেন ইমাম হোসাইন ও ইয়াজিদের মধ্যকার কারবালার অসম যুদ্ধ ছিল তার মতে একটি ‘রাজনৈতিক যুদ্ধ’। অর্থাৎ ইমাম হোসাইন রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের অভিলাষ থেকেই কূফা রওনা দিয়েছিলেন, খিলাফতের মর্যাদা রক্ষার্থে নয়। অথচ মুসলিম মাত্রই জানে সেদিন কারবালার ময়দানে কি ঘটেছিল, শুধুমাত্র পেট্রো ডলারের মোহে ঈমান ও বিবেক হারানো কতিপয় ইয়াজিদ প্রেমিক মুসলমান ছাড়া, যারা অভিশপ্ত ইয়াজিদের নামের সাথে রহমতুল্লাহি আলাইহি (peace be upon him) লাগায়, যেটা করেছেন জাকির নায়েক স্বয়ং। যুগে যুগে ওলামায়ে কেরাম, সমগ্র মুসলিম বিশ্ব যে ইয়াজিদকে অভিশপ্ত ও লানতি বলে ঘোষনা দিয়েছেন, তার জন্য রহমত কামনাকারীরা কার দোসর, রাসুলের (দঃ) প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসাইনের খুনীর প্রতি সমবেদনা প্রকাশকারীরা কারা?
অথচ কুরআন মজীদ ঘোষণা দিচ্ছেঃ “ নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের ইহকাল ও পরকালে লা’নত বা অভিসম্পাত করেন আর তাদের জন্য রেখেছেন লাঞ্চনাদায়ক শাস্তি”। (সুরা আহযাব, আয়াত-৫৬)
কারবালার বিয়োগান্তক ঘটনা রাসুল (দঃ) এর জন্য কত বেদনাদায়ক ছিল, তা উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালমা’র (রাঃ) এই বর্ণনা থেকে বুঝা যায়ঃ ইমাম হোসাইন (রাঃ) যখন কারবালার ময়দানে শাহাদাত বরণ করছিলেন, তখন উম্মে সালমা (রা স্বপ্নে দেখেন, আল্লাহর রাসুল (দঃ) আগমন করেছেন, তিনি অত্যন্ত পেরেশান, তাঁর চুল ও দাড়ি মোবারক ধুলা-বালি মাখা। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ (দঃ), আপনার এ অবস্থা কেন? তিনি (দঃ) বললেন, আমি হোসাইনের হত্যাস্থান থেকে আসছি। চোখ খুলে উম্মে সালমা কেঁদে ফেললেন, বললেন, ইরাকবাসীরা হোসাইনকে হত্যা করেছে। তাদের উপর আল্লাহ্র লা’নত।(মুসনাদে আহমদ)
এরপর তিনি তার কাছে রাসুল (দঃ) গচ্ছিত জিব্রাঈল (আঃ) প্রদত্ত কারবালার মাটি দেখলেন, তা রক্তে রঞ্জিত হয়ে আছে।
কী বুঝা যায়, ইমাম হোসাইনের শাহাদাত কি রাসুল (দঃ) এর জন্য কষ্টের নয়? আর যে রাসুল (দঃ) কে কষ্ট দেয়, তার প্রতি আল্লাহ স্বয়ং লা’নত বা অভিসম্পাত দিয়েছেন।
‘বাঁশের কেল্লা’নামের জামায়াতীদের ফেসবুক পেজেও এ নিয়ে আক্ষেপ জানানো হয়েছে। লেখা হয়েছেঃ ‘এ মহররম মাসে মুসলিম জাতির ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত রয়েছে অগণিত সুখকর ও বেদনাময় ঐতিহাসিক ঘটনাবলি।তবে আমরা কেন শুধু একটাকেই মেনে চলি।’
মানে আমরা কেন ইমাম হোসাইনের শাহাদাতে মর্মাহত হই, মুসলিম জাহান কেন এইদিনে শোকাচ্ছন্ন হয়। হায়রে মুসলিম নামধারীরা, যদি ক্ষমতার লোভ বা পেট্রো ডলারের চেয়ে তোমাদের কাছে আল্লাহ্র রাসুল ও আহলে বাইতের মুহব্বত বেশী হতো তাহলে তোমরাও শোকাচ্ছন্ন হতে, এ প্রশ্ন তোমাদের মুখ থেকে বের হতোনা। আচ্ছা তোমরা কী তোমাদের মা-বাবার মৃত্যুর দিনে নিজে জন্মদিন পালন করবে? একজন মুমিনের কাছে আল্লাহ্র রাসুল ও আহলে বাইত মা-বাবার চেয়েও প্রিয় নয়? কেন তোমরা বুঝতে পারনা, একটি শোকার্ত ঘটনা শত আনন্দকেও ম্লান করে দিতে পারে, যেমন হয়েছে আশুরার ক্ষেত্রে।
আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে সঠিক পথে চলার তাওফিক দান করুন।
©somewhere in net ltd.