![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক
আজকাল হাটাহাটি করে আগের তুলনায় যথেষ্ঠই আনন্দ পাই।কেমন হালকা হালকা লাগে।হয়ত দেহের একটা কিডনি কমে যাওয়াতেই এই আনন্দ!
তবে এই মুহুর্তে হেটে মোটেও বিনোদিত হতে পারছিনা।এক পায়ের বার্মিজ সেন্ডেলটা ছিঁড়ে যাওয়ায় ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে হাটতে হচ্ছে। দুর থেকে যে কারো আমাকে ল্যাংড়া ফকির ভেবে বসার সমূহ সম্ভাবনা।
নাহ, সেন্ডেলটা একটু বেশিই ঝামেলা করছে।এমনভাবে ছিঁড়েছে, মুচির কাছে যেতেও ভয় পাচ্ছি।কিনে ফেলা দরকার। সমস্যাটা হল পকেটে যে পরিমাণ টাকা আছে তাতে এক পাটির বেশি কেনা যাবেনা।গরীবদের জন্য এক পায়ের জুতা কেনার সিস্টেম থাকলে অনেক সুবিধা হত। আমার ছিঁড়েছে একটা, আমি কোন দুঃখে এক জোড়া সেন্ডেল কিনতে যাব? সিস্টেমটা চালু থাকলে আমাকে এখন ল্যাংড়া বাবা হতে হত না।
আরেকটা কাজ করা যায়, দুটো সেন্ডেল ভ্যানিশ করে দিয়ে হিমু হয়ে যেতে পারি।একদিনের জন্য হিমু হবার প্ল্যান খারাপ না। কিন্তু ওখানেও সমস্যা। আমার গন্তব্য এখন এমন জায়গায়, যেখানে রিক্তপদে না যাওয়াই বাঞ্ছনীয়।আমি এখন আমার, 'হলেও হতে পারে ' ছাত্রীর বাসায় যাচ্ছি।এক উড়াধুড়া টাইপ বড়লোকের বাড়িতে টিউশনির বন্দোবস্ত হবার কথা।
সেন্ডেল ছাড়া ওখানে গেলে দারোয়ান আমাকে ঢুকতে দেবে এমন সম্ভবনা কম।
পকেটে বোধহয় বিশটাকা আছে, আঠারোও হতে পারে,গুনতে ইচ্ছে করছেনা। ত্রিশ টাকা হলেও মোটামুটি ধরনের একটা সেন্ডেল কিনে ফেলা যেত।
টাকার বেশি প্রয়োজন হলে একটা উপায় অবলম্বন করেছি দু একবার।ফলদায়ক পদ্ধতি।
তবে তার. জন্য একটা গোলাপ দরকার আমার।
আজ বোধহয় সমস্যা দিবস। অন্যান্য দিন রাস্তায় ফুলওয়ালাতে গিজগিজ করলেও আজ সবগুলো মিলে ছুমন্তর হয়ে গেছে।
এদিক ওদিক তাকাতে এক পিচ্চিকে দেখতে পেলাম, হাতে রজনীগন্ধা আর গোলাপ। গোলাপের বোধহয় চাহিদা বেশি, একটাই দেখতে পাচ্ছি।বাকিগুলো সম্ভবত বিক্রি হয়ে গেছে।
ছেলেটা কাছে আসতে বললাম, 'ফুলটা তোর হাতে মানাচ্ছেনা রে,আমাকে দিয়ে দে। '
ফুলওয়ালা ছেলেটার চোখ দুটো ভীতি গ্রাস করল। ভয় চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
আমি ভূবনভোলানো একটা হাসি দিয়ে বললাম, 'ভয় পাস না, টাকা দিয়ে কিনে নিচ্ছি। '
ছেলেটার ভীতি পুরোপুরি গেলনা। আমি পকেট থেকে দশটাকার নোট বের করে পিচ্চিটার হাতে দিয়ে বললাম , 'দিয়ে দে রে ব্যাটা। '
ফুলটা আমার হাতে দিয়েই ছেলেটা এক দৌড়ে চলে গেল।
ভয় ব্যাপারটাই আশ্চর্যের। একবার কোনো কারণে কাউকে পেয়ে বসলে সেটা একেবারে চৌদ্দগুষ্ঠি নিয়ে মনের মধ্যে গেড়ে বসে।
আমি ফুলটা হাতে নিয়ে সিগন্যাল পড়ার অপেক্ষায় আছি।
সময় জানাটা আবশ্যক। পাশ দিয়ে এক মাঝবয়সী ভদ্রলোককে হেটে যাচ্ছে।
আমি মুখে একগাল হাসি নিয়ে তার সামনে দাড়ালাম।
ভ্রু কুঁচকে লোকটা তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
'স্যার কিছু মনে না করলে একটা প্রশ্ন করতাম। '
আমি যদি সরাসরি প্রশ্ন করতাম, লোকটা স্বাভাবিকভাবে উত্তর দিত, কিন্তু প্রশ্নের আগের ভূমিকাটা তাকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে।
'বলুন।'
'স্যার, এখন কয়টা বাজে? '
লোকটার চোখে রাজ্যের বিরক্তি এসে জমা হল।আমার দিকে 'ছাগল নাকি 'ধরনের একটা লুক দিয়ে হাটা ধরল।
সমস্যা নাই আমি ইতোমধ্যেই তার রিস্টওয়াচ থেকে সময়টা দেখে নিয়েছি। সাড়ে পাঁচটা বাজে। এখন বোধহয় 'গুড আফটারনুন 'থেকে 'গুড ইভিনিং '-এ যাবার সময় হয়েছে ।
সিগন্যাল পড়তেই গায়ের পান্জাবীটা টেনে টুনে ঠিক করে নিলাম। আঙুল দিয়ে চুলগুলোকে একটা ভদ্র রুপ দিলাম।এরপর বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে বিসমিল্লাহ বলে নেমে এলাম রাস্তায়। আমার টার্গেট, চকলেট কালারের একটা বিএমডব্লু। আশপাশের মধ্যে এটাই সবচেয়ে দামী গাড়ি।
পেছনের জানালার সামনে এসে মৃদু টোকা দিলাম গ্লাসে। মুখে ভূবনভোলানো হাসি।এমনিতে জানালা খোলার সম্ভবনা একেবারেই নেই, তবে আমার হাতের গোলাপ আর মোটামুটি ভদ্রস্থ পরিচ্ছদ গাড়ির আরোহীদের বিভ্রান্তিতে ফেলে দেবে।
বিভ্রান্তিতে ফেলে অনেক কাজ হাসিল করা যায়, যেমনটা এখন হল। আস্তে করে জানালাটা নেমে গেল।
ভেতরে একজন মাঝবয়সী মহিলা আর এক কিশোরী বসে আছে। শুরুতেই কিশোরীর দিকে নজর দেয়াটা শোভনীয় নয় বলে ভদ্রমহিলার দিকে তাকিয়ে মুখের হাসিটাকে আরো বিস্তৃত করার চেষ্টা চালালাম, 'গুড ইভিনিং, ম্যাডাম। '
ভদ্রমহিলা চোখে প্রশ্ন নিয়ে তাকালেন আমার দিকে।
আমি হাতের গোলাপটা তার দিকে বাড়িয়ে দিতে চোখে এবার ইতস্তত সন্দেহ নিয়ে তাকালেন আমার দিকে।
আমার হাসিটা তাকে আবার বিভ্রান্ত করল।হাত বাড়িয়ে ফুলটা নিলেন তিনি।
আমি বললাম, ম্যাডাম, আমি একজন শিক্ষিত বেকার।একটা চাকরির খুব প্রয়োজন, আপনি যদি একটা ব্যবস্থা করতেন তাহলে চিরকৃতজ্ঞ থাকব।
মহিলা কেমন যেন বিব্রত হয়ে পড়লেন।রাস্তার মধ্যে চাকরির আবেদনের ব্যাপারটা নিশ্চয়ই তাঁর জন্য নতুন।তবে ফুলটা নেওয়াতে এক ধরনের দায়বদ্ধতা অনুভব করছেন। আমাকে উপেক্ষাও করতে পারছেন না, আবার চাকরিও দিতে পারছেন না। 'মাইনকার চিপা ' অবস্থা।
মহিলাকে ভ্যানিটিব্যাগে হাত ঢোকাতে দেখে উল্লাসপ্রদ হলাম।
ভদ্রমহিলা ব্যাগ থেকে একটা নোট বের করলেন।সন্ধ্যার আবছায়ায় ঠাহর করা গেলনা পরিমাণটা।বললেন, 'আই অ্যাম সরি,কিছু মনে করবেন না। চাকরি দেয়া তো আমার পক্ষে সম্ভব নয়, তবে এই সামান্য টাকাটা রাখলে খুশি হতাম।'
টাকা নেয়ার কোনো ইচ্ছাই আমার নেই, তবে না নিলে আপনি অপমানিত হবেন বলে নিচ্ছি, এমন একটা ভঙ্গি নিয়ে টাকাটার দিকে হাত বাড়ালাম।
'ভাল থাকবেন ম্যাডাম, 'বলে বিদায় নেবার আগে কিশোরীর দিকে তাকালাম এবং বুঝতে পারলাম, আগের ধারণা গলদ।মেয়েটা কিশোরী নয়, সদ্য তারুণ্য তাকে স্পর্শ করেছে। যদিও শিশুর সারল্য এখনও সম্পুর্ন মুছে যায়নি চেহারা থেকে।
যেদিন সম্পুর্নভাবে মুছে যাবে সেদিন একজন পূর্ণাঙ্গ নারীতে পরিনত হবে মায়াবতী এই মেয়েটা।
মেয়েটা বোধহয় আমার কাজকর্মে বেশ আনন্দিত। হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমি ছোট্ট একটা হাসি উপহার দিয়ে সরে এলাম ওখান থেকে।জ্যাম ছেড়ে গেছে।
ফুটপাতে এসে দাড়ালাম। বরাবরের মত আজও প্ল্যানটা কাজে দিয়েছে।আমি জানতাম,দেবে।
যে ভিক্ষুক দু পাঁচটাকা চায় তাকে উপেক্ষা করা যায়, কিন্তু যে হাতে একটা গোলাপ ধরিয়ে দিয়ে চাকরি চায় তাকে উপেক্ষা করা যায়না। কিছু একটা দিয়ে হলেও গোলাপের সম্মানটা রাখতে হয়।
মানুষের সম্মান না থাকতে পারে, গোলাপের সম্মান ঠিকই আছে! এটাও খারাপ না।
পকেট থেকে নোটটা বের করে হকচকিয়ে গেলাম।পাঁচশ টাকার একটা নোট। ও খোদা! পাঁচশ টাকা!
অকল্পনীয় ব্যাপার! এর আগে প্রতিবারই টাকার অংকটা ছিল, পঞ্চাশ থেকে একশর মধ্যে। পাঁচশ টাকা সত্যিই অভাবনীয়।
আমি যদি মহাপুরুষ হতাম তাহলে এখন খুঁজে বের করতাম সেই ফুলওয়ালাকে।জুতা কেনার পর অবশিষ্ট টাকাটা দিয়ে দিতাম ওকে, যেহেতু ওর গোলাপের বদৌলতেই টাকাটা পেয়েছি। কিন্তু আমি এসব কিছুই করলাম না। রওনা দিলাম জুতার দোকানের উদ্দেশ্যে। কারণ আমি কোনো মহাপুরুষ নই। আমি অভ্র,শুধুই অভ্র।
দুই
আমি এখন উত্তরায়, বিশাল একটা ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে দাড়িয়ে।
এই বাড়িটাতে আগে আমার এক বন্ধু টিউশনি করাতো। ওর একটা ভাল চাকরি হওয়াতে টিউশনিটা ছেড়ে দিয়েছে।ছাত্রীর মা 'কে আমার কথা বলেছে ও। শুনে আমাকে আজ আসতে বলেছেন তিনি।আমাকে পছন্দ হলে টিউশনিটা আমিই পাব। যদিও আমাকে পছন্দ হবার কোনো কারণই নেই তাঁর। আমাকে দেখার সাথে সাথে বাতিলের খাতায় নাম উঠে যাবে আমার। উঠলে উঠুক। মজা নেয়ার জন্য এখানে এসেছি, মজা নেব, চলে যাব।
এখন বাজে সন্ধ্যা সাতটা,দারোয়ান ব্যাটা এখনই ঝিমানো শুরু করে দিয়েছে। প্রথম মজাটা ওকে দিয়েই শুরু করা যাক।এগিয়ে গেলাম সোলেমান ভাইয়ের দিকে (বুকে নাম লেখা)
হাসিমুখে তার সামনে গিয়ে বললাম, 'কেমন আছেন সোলেমান ভাই? '
অপরিচিত মানুষের মুখে নিজের নাম শুনলে চিন্তা ভাবনা করার আগেই সবাই চমকায়।
কিন্তু সোলেমান ভাই আমাকেই চমকে দিয়ে একটা উজ্জল হাসি দিয়ে বলল, 'জ্বী স্যার, ভাল আছি।
তন্দ্রা থেকে উঠে অপরিচিত একজনের মুখে নিজের নাম শুনলে ভয়াবহভাবে চমকে যাবার কথা। যেহেতু সোলেমান ভাই চমকায়নি সেহেতু ধরে নিতে হবে লোকটা অতিমাত্রায় চালাক নয়ত অতিমাত্রায় বোকা।
'স্যার, আপনের নাম কি অভ্রু? '
না, লোকটা বোকা। বুদ্ধিমান হলে আগ বাড়িয়ে নাম বলতে যেতনা।
আমি যদি এখন বলি না, আমার নাম অভ্রু না অভ্র, তাহলে বোকা লোকটা যথেষ্ঠ ঝামেলা.পাকাবে। বললাম,'জ্বী সোলেমান ভাই, আমার নাম অভ্রু। '
লোকটার মুখে একশ ওয়াটের একটা বাতি জ্বলে উঠল যেন। বলল, 'ম্যাডাম আপনেরে পাঠায়া দিতে কইছে, ভিত্রে যান আপনে। '
সোলেমান ভাই শুধু বোকা না, অতিমাত্রায় বোকা। এমন সরল মানুষের সাথে রসিকতা করা যায়না। রসিকতা ধুর্ত মানুষদের জন্য।
আমি সোলেমান ভাইকে লম্বা করে একটা সালাম দিয়ে ঢুকে পড়লাম বাড়ির 'ভিত্রে '।
ড্রয়িং রুমটাকে আমার ফুটবল মাঠের চেয়ে কোনো অংশে ছোট মনে হচ্ছেনা। কার্পেটে গোড়ালি ডুবে যেতে চায়।মনে হচ্ছে পানির উপর দিয়ে হাটছি।
একজন ধোপদুরস্ত পোশাক পড়া লোক উদয় হল কোত্থেকে যেন।এদেরকেই বোধহয় বিলেতে বাটলার বলা হয়।'কাকে চাই? '
'জ্বী, ম্যাডাম আসতে বলেছিলেন আমাকে। '
'আপনি বসুন, আমি দেখছি। '
বাটলার বাবু চলে যাবার পর সাজানো ফুটবল মাঠটা দেখতে লাগলাম।
আমি নিতান্তই দরিদ্র একজন মানুষ, কিন্তু নিয়তি ঠিক করে রেখেছে, আমার সব কাজ কারবার হবে বড়লোকদের সাথে।এবং আমি গরীব গরীবই থেকে যাব।
বাটলার বাবু ফের উদয় হলেন।'ম্যাডাম আসছেন। '
আমি সিড়ির দিকে তাকালাম। উপরতলা থেকে এক ভদ্রমহিলাকে নেমে আসতে দেখা গেল। পুরোপুরি না, শুধু পা 'টাই দেখতে পাচ্ছি আপাতত।
হঠাৎ করেই আমার ইনট্যুশন আমাকে বলে দিল, 'সামনে বিপদ! '
এবং এইমূহুর্তে আমি আমার বিপদের চেহারাটাও দেখতে পাচ্ছি।
নাটক সিনেমায় এমন হয় বলে শুনেছি , আজকাল বাস্তবেও হয়!
একটু আগেই যে ভদ্রমহিলাকে বিভ্রান্ত করে টাকা নিয়েছি, সেই ম্যাডামকেই এখন উপর থেকে নেমে আসতে দেখছি!
মনে মনে দ্রুত একটা হিসেব কষে ফেললাম। তখন ছিল সময়টা ছিল সন্ধ্যার আগ মূহুর্ত। আঁধার নেমে আসছিল। তারউপর উটকো মানুষের দিকে কেউ মনোযোগ দিয়ে তাকায়না। সে হিসেবে কিছুটা সম্ভবনা আছে, ম্যাডাম আমাকে চিনতে পারবেন না।
'আপনার নাম তো অভ্র, তাইনা? 'আমার সামনে বসত বসতে বললেন তিনি। 'নিঃসন্দেহে!' ম্যাডামের চাহনিতে এখন পর্যন্ত আমাকে চিনতে পারার লক্ষণ নেই। টিউশনিটা আমার এমনিতেই হবেনা। সেটা নিয়ে আমার কোনো টেনশন নেই।কিন্তু ম্যাডাম আমাকে চিনে ফেললে যে অপমান আমি হব, ভয় সেটার।
'আপনার বন্ধু আমাকে বলেছে আপনার কথা।
আমার মেয়ে এবার এসএসসি ক্যান্ডিডেট। পড়াশোনায় অনেক ভাল, তবে মনোযোগ কম।আপনার কাজ হল পড়ার প্রতি ওর আগ্রহ তৈরী করা। আশা করি বুঝতে পারছেন কি বলতে চাইছি আমি? '
'না পারিনি, 'সত্যি কথাই বললাম আমি।
'উমম,আচ্ছা বলছি,আফরীন, আইমিন আমার মেয়ে পড়াশোনায় খুবই ভাল। ক্লাস এইট পর্যন্ত কখনও ক্লাসে ফার্স্ট ছাড়া সেকেন্ড হয়নি, কিন্তু গত একবছর ধরে কি এক অজ্ঞাত কারণে রেজাল্ট খুবই খারাপ হচ্ছে। আমি আর ওর আব্বু অনেক চেষ্টা করেছি আসল ব্যাপারটা জানার জন্য, পারিনি। ওর তেমন কোনো বন্ধু বান্ধবও নেই যাদের কাছ থেকে ব্যাপারটা জানতে পারি। এপর্যন্ত অনেক প্রাইভেট টিউটর চেন্জ করা হয়েছে, কাজ হয়নি।
অবশ্য তাদেরকে বিষয়টা জানানোও হয়নি। তারা তাদের মত করে পড়িয়েছেন। কিন্তু আফরীনের কোনো পরিবর্তন নেই।
শেষের দিকে তোমার বন্ধু সাজ্জাদও ব্যাপারটা ধরতে পেরেছিল। একদিন আমাকে এসে বলল, "ম্যাডাম আফরীনের সমস্যাটা আমরা যা ভাবছি তার চাইতেও জটিল।আমি জানি ও সব পারে, এরপরও পরীক্ষায় খারাপ করছে,হয়ত ইচ্ছে করেই। ওর প্রাইভেট টিউটরের প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন এমন একজন বন্ধুর যে ওর মনের গভীরে গিয়ে ওর সমস্যার গতি প্রকৃতি ধরতে পারবে। অনেকটা সাইকিয়াট্রিস্টের মত। তবে আমার যদ্দুর মনে হয় এক্ষেত্রে সাইকিয়াট্রিস্টের চাইতে টিউটররুপী একজন বন্ধু বেশি উপকারী হবে। আমার একজন বন্ধু আছে অভ্র নামে। আমি তো এমনিতেই চলে যাচ্ছি, আমার জায়গায় ওকে রাখতে পারেন।আফরীনের সমস্যা যদি কেউ সমাধান করতে পারে তো ওই পারবে। "সাজ্জাদের বক্তব্যের মাধ্যমে কথা শেষ করলেন ভদ্রমহিলা।
'আপনারও কি তাই মনে হয়? 'জানতে চাইলাম আমি।
'হ্যা ব্যাপারটা নিয়ে আমরাও চিন্তা ভাবনা করছিলাম আরো আগে থেকেই। সাজ্জাদের কথায় ব্যাপারটা আরো স্পষ্ট হয়। '
'সরি ম্যাডাম, এটা না, আমি জানতে চাচ্ছিলাম, আপনারও কি মনে হয় আপনার মেয়ের সমস্যা আমিই দুর করতে পারব? '
জটিল প্রশ্ন। চিন্তায় পড়ে গেলেন ম্যাডাম।
এখনই জানা যাবে তিনি আমাকে চিনতে পেরেছেন কিনা।
বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর ভদ্রমহিলা বলে উঠলেন, 'হ্যাঁ, আমারও মনে হয় যদি কেউ পারে তো আপনিই পারবেন।এখন প্রশ্ন হল, আপনি রাজী কিনা?
বেতন মাসে চারহাজার টাকা প্লাস যাতায়াত খরচ। আপনার কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই, যখন ইচ্ছে আসবেন, শুধু দেখবেন আমার মেয়ে যেন স্বাভাবিক হয়ে যায়।
চাকরি পাওয়ার চাইতে ভদ্রমহিলার আমাকে চিনতে না পারাটা বেশি আনন্দিত করল।
আমাকে এখন এমন কিছু বলতে হবে যাতে করে আমার প্রতি ম্যাডামের আস্থা আরো বেড়ে যায়।বললাম, ম্যাডাম আমি কতটুকু কি করতে পারব জানিনা। এক্ষেত্রে আপনাদের ভূমিকাই প্রধান। ওর বন্ধু হতে চেষ্টা করুন, দেখবেন অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। বাকিটার জন্য আমি যথাসম্ভব চেষ্টা করব। '
'তারমানে আপনি রাজি? '
আমি মাথা ঝাকালাম, রাজি।
'ওকে ফাইন, তো আপনি কাল থেকেই কাজ শুরু করে দিন। '
'জ্বী ম্যাডাম, আসি তাহলে আমি। '
চলে আসছি, এমন সময় পেছন থেকে ডাক দিলেন ম্যাডাম, 'ভাল কথা, এমাসে কিন্তু আপনি পাঁচশ টাকা কম পাবেন। যেহেতু আপনাকে একটা চাকরি দেয়া হয়েছে, সেহেতু আগের টাকাটা ফেরৎ নিতেই পারি, কি বলেন?'
আমি মনে মনে তিনবার বললাম, সর্বনাশ! সর্বনাশ!!সর্বনাশ!!!
আগে জানতাম আমিই মানুষকে হকচকিয়ে দেই, এখন দেখছি আমাকেও হকচকিয়ে দেবার মত মানুষ আছে!
চলবে. . .
উৎসর্গঃ আফরীন , সত্যিকারের আফরীন। নাইম এবং আমার নতুন আপু ফারহাকে
পুনশ্চঃ যেহেতু এটা একটা ধারাবাহিক উপন্যাস সেহেতু আপনাদের উৎসাহ পরবর্তী পর্বগুলো আর সুন্দর করবে। লাইক দিন কিংবা না দিন কমেন্ট করবেন প্লিজ।
"নাইস, ভাল লাগল, টাইপের গতানুগতিক কমেন্ট না, গঠনমূলক সমালোচনা আমার কাম্য। কোথায় ভুল হয়েছে, কিভাবে লিখলে আরেকটু ভাল হবে এগুলো জানাবেন।
আমার ফেসবুক আইডি -www.facebook.com/fatah59
২| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৪:৫২
লেজকাটা বান্দর বলেছেন: হিমুকে অনেকটাই কপি করছেন দেখি। সচেতনভাবে। হুমায়ূন আপনার প্রিয় লেখক নাকি?
পড়ে মানসিক শান্তি পেলাম। খারাপ হয় নি একদমই। পরের পর্ব পড়তে গেলাম।
৩| ০২ রা মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:২৯
খ্যাংরা কাঠি বলেছেন: খুবই ভাল্লাগলো। বিসঘেষ করে ফুল দিয়ে টাকা নেয়ার বুদ্ধিটাতো অসাধারণ!
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:০৪
স্পাইসিস্পাই001 বলেছেন: দারুন লিখেছেন ...... আমার ভাল লেগেছে.......
তবে আমার যে জিনিষটা মনে হচ্ছে হয়ত খুব একটা কমেন্টস পাবেন না ...... কারন এত বড় লেখা কেউ সহজে পড়তে চায় না ...... পরবর্তিতে এক পর্ব করে দেওয়ার চেষ্টা করবেন ......... তবে যাই হোক চলবে কিন্তু থেমে যাবেন না ......
ধন্যবাদ ... ভাল থাকবেন......