নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবুল ফাতাহ

আবুল ফাতাহ

কৃষ্ণপক্ষের রাতে খুঁজে ফিরি চাঁদটাকে!

আবুল ফাতাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধারাবাহিক উপন্যাস, একজন অভ্র (২য় পর্ব)

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৬

তিন

ভদ্রমহিলার দেয়া ধাক্কাটা এখনও পুরোপুরি সামলে উঠতে পারছিনা।

উনি কি ইচ্ছে করেই আমাকে চমকে দেবার জন্য কাজটা করেছেন, নাকি প্রথম দিকে আসলেই চিনতে পারেননি?

বাড়িটা থেকে বেরিয়ে হাটছি আমি।এধরনের পরিস্থিতিতে মুখে একটা ক্যান্সার স্টিক ভাল মানিয়ে যায়।মানালেও কিছু করার নাই, আমি সিগারেট খাইনা। ব্যাপারটা এমন না ,আমি খুবই ভদ্র ছেলে কিংবা নিজের দারিদ্র্যতার সাথে উপহাস করা হবে ভেবে সিগারেট খাইনা। বন্ধু বান্ধবদের প্রবল উৎসাহে দু একটা টান আমিও দিয়েছি কিন্তু একটা জিনিস মাথায় ঢোকাতে ব্যার্থ হয়েছি যে, ধোঁয়া কেন টাকা দিয়ে গিলতে হবে!

হাটতে হাটতে বিদ্যুৎ চমকের মত বুঝে ফেললাম ভদ্রমহিলার ব্যাপারটা।তিনি শুরুতেই আমাকে চিনতে পেরেছিলেন, তবে তিনি আমার সাথে একটা মাইন্ড গেম খেলেছেন।শেষের দিকে আমাকে চমকে দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন কোনো ধরনের হাংকি পাংকি তাঁর সাথে চলবে না।

ওকে, সমস্যা নাই মাইন্ড গেম অভ্রও খেলতে পারে।

মধ্যবাড্ডা যাবার বাসে উঠে পড়লাম।ভয়াবহ ভীড় বাসে।

আচ্ছা,তখন গাড়ির ভেতরে দেখা মায়াবতী মেয়েটাই কী আফরীন? সেটাই তো হবার কথা। মেয়েটাকে বয়সের তুলনায় যথেষ্ঠই পরিণত মনে হয়েছে আমার কাছে।

আমাকে দেখে ওর হাসার কারণটা বুঝতে পারছিনা। ও কি আমার ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিল? অবশ্য এ বয়সী মেয়েরা সবকিছুতেই আনন্দ খুঁজে পায় কিংবা খুঁজে নেয়।

আমার ছোটবোনটাকেও দেখি, এত দারিদ্র্যতার মধ্যে থেকেও সবসময়ই চাপা একটা হাসি লেগেই থাকে ওর নিষ্পাপ মুখটাতে।

এখন কথা হল আফরীনকে আমার কী হিসেবে নেয়া উচিৎ।ছোটবোন নাকি বন্ধু নাকি অন্য কিছু?

কাল কথা বললেই আশা করি বুঝতে পারব।

আমার পাশের সিটটা কখন খালি হয়েছে টের পাইনি।তবে খালি সিটটাতে এসে যে বসল তাকে দেখে একটা ঢোক গিলে ফেললাম।

জিন্স আর কামিজ পড়া এক রমনী এসে বসল আমার পাশে। তবে সমস্যা হল রমনীর বয়স চল্লিশের উপর!

এবয়সে যারা জিন্স পড়ে তাদের ব্যাপারে সতর্ক হওয়াটাই নিয়ম। এরা সবসময়ই নিজেদের তরুণী ভাবতে পছন্দ করে।

আমি জড়সড় হয়ে মাইনকার চিপায় ঢুকে পড়লাম।

আমাদের দুজনের মাঝখানে দু'আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁক রাখার আপ্রাণ চেষ্টা সত্বেও কড়া ব্রেকের কারণে রমনীর সাথে ছোঁয়া লেগে গেল আমার।

রমনী কী ভাবল আল্লাহ মালুম, যেভাবে চোখে ভস্ম করে দেয়া দৃষ্টি নিয়ে তাকাল আমার দিকে, মনে মনে নিজেকে বললাম, আজ তোর কপালে দুঃখ আছে রে!

'মা রে,এই বাসের নাম তুরাগ, চুড়ান্ত পর্যায়ের লোকাল,এয়ারফোর্স ওয়ান না। একটু ধাক্কা লাগলেই ওভাবে তাকাতে হবে? 'বললাম রমনীকে (অবশ্যই মনে মনে)।

সিট ছেড়ে দন্ডায়মান হয়ে যাত্রা করব কিনা ভাবছি, এমন সময় বদ ড্রাইভারটা আবার কড়া ব্রেক করল।আবার স্পর্শ!

এবার সরাসরি আক্রমণ রমনীর, 'ভাই আপনার সমস্যা কী। '

ওমা! এই মহিলা দেখি আমাকে ভাই বলে! এর বয়স আমার মা'র মত না হলেও আমার খালার সমান হবে নিশ্চিত। কোন হিসেবে এই বুড়ির ভাই হই আমি!

তটস্থ হয়ে বসে রইলাম সিটের চিপায়। যা শোনার,শুনে ফেলেছি, এখন আর সিট ছাড়ার প্রয়োজন নেই।

সামনে তাকিয়ে আছি,হঠাৎ গায়ে কিসের যেন স্পর্শ।সেদিকে তাকিয়ে উল্লসিত হয়ে পড়লাম।

রমনী ভ্যানিটিব্যাগ থেকে কি যেন বের করতে গিয়ে তার হাত কনুইসহ আমার গায়ের উপর উঠিয়ে দিয়েছে।

আমি ওদিকে তাকাতেই মহিলা চট করে তার হাতটা সরিয়ে ফেলল।

আমি হাসি হাসি মুখ করে বললাম, 'খালাম্মা, আপনার সমস্যা কী? '

খালাম্মাকে ভ্যাবাচ্যাকা অবস্থায় রেখে নেমে এলাম বাস থেকে।

রমনীকে খালাম্মা ডাকার পর আর বাসে থাকতে সাহস হয়নি। হতভম্ব অবস্থার প্রাথমিক ধাক্কা কেটে যেতেই রমনীর মুখ চালু হয়ে যাবার সমূহ সম্ভবনা ছিল। সহ্য করতে পারতাম না। তাই এক স্টপেজ আগেই নেমে পড়েছি।নো প্রবলেম, এক স্টপেজ হাটতে আমার কোনো আপত্তি নেই।

এই প্রথম উপলব্ধি হল আমি একটা চাকরি পেয়েছি। মাসে চার হাজার টাকা বেতন, সঙ্গে যাতায়াত খরচ।আমি যেহেতু লোকাল বাসে যাতায়াত করব, সেখানেও কিছু টাকা বাঁচবে।তারপরও এইসময়ের জন্য এটা নিতান্তই নগন্য।

কিন্তু এই নগন্য টাকাটাই যখন আমি তুলে দেব আমার মা 'র হাতে তখন তার চোখে জল আসবে।

বাবার জন্য যখন একটা সুতি পান্জাবী কিনে নিয়ে যাব এ সামান্য টাকা থেকে তখন তিনি হয়ত জড়িয়ে ধরবেন আমাকে, যেটা শেষবারের মত করেছিলেন আজ থেকে আট বছর আগে,আমার এসএসসির রেজাল্টের পর।সেই মূহুর্তটাতে হয়ত তার চোখেও জল আসবে।

এই সামান্য টাকা দিয়েই টুম্পার জন্য একটা স্কুলব্যাগ নিয়ে যাব, যে ব্যাগটার জন্য আমার বোনটা গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

ব্যাগটা পেয়ে টুম্পা হয়ত কাঁদবেনা, কিন্তু ওর আনন্দের প্রাবল্যে আমিই কেঁদে ফেলব।

এখনই বাসায় চাকরির ব্যাপারটা জানাব না। একবারে বেতনের টাকাটা হাতে তুলে দিয়ে সবাইকে হকচকিয়ে দেব।

এতদিন সস্তা রসিকতায় সবাইকে হকচকিয়ে দিয়েছি, হাতে টাকা তুলে দিয়ে হকচকিয়ে দিতে কেমন লাগে আমি জানিনা।জানার খুব ইচ্ছা।



চার

এখন সবেমাত্র বিকেল,এখনই ঝিমানো শুরু করে দিয়েছে সোলেমান ভাই।সমস্যা কী লোকটার? সারাদিনই ঘুমায় নাকি?

রাতের শিফটের জন্য অন্য এক দারোয়ান আছে। কাল এবাড়ি থেকে বের হবার সময় সোলেমান ভাইকে দেখিনি।অন্য এক লোক ছিল গেটে।

সোলেমান ভাই তাহলে রাতে বাড়িতে গিয়ে ঘুমায় আর দিনে গেটে বসে ঝিমায়!

একদিন সকালে এসে দেখতে হবে লোকটা তখনও ঘুমায় কিনা।

আমি কাছে যেতেই উঠে দাড়াল সোলেমান ভাই। 'সালাম অভ্রু ভাই। 'মুখে একটা সরল হাসি লেগে আছে।

'ওয়ালাইকুম আসসালাম, কেমন আছেন সোলেমান ভাই, 'কথাটা বলার পর একটা ব্যাপার মাথায় বাড়ি দিল। সোলেমান ভাই নিশ্চয়ই সব গেস্টকে স্যার বলে সম্বোধন করে, তাহলে আমাকে ভাই বলল কেন? নাকি আমার চেহারাটাই ভাই ভাই?

জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করল না। প্রশ্নটা অন্য কোনোদিনের জন্য তোলা থাক।

গেট দিয়ে ঢুকে কয়েক পা এগিয়েছি, তখন আরেকটা ব্যাপার মাথায় এল। সোলেমান ভাইকে জানাতে হবে,আমার নাম অভ্রু না অভ্র।

পেছন ফিরে তাকালাম। সোলেমান ভাই ফের ঝিমুনিতে লেগে গেছে।

থাক তবে, এটাও অন্য কোনোদিনের জন্য তুলে রাখলাম।ডাকুক না অভ্রু, ক্ষতি কী?

বাটলার বাবুকে বাগানে মালীর কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। বাগান দেখাশোনা করা কি তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে নাকি শখের বশে কাজটা করছে বুঝতে পারলাম না।

আমাকে দেখে হাতের খুরপিটা রেখে এগিয়ে আসতে লাগল।

আমি দাড়ালাম।

'আপনার নামই তো অভ্র সাহেব, তাইনা? '

'জ্বী না,আমার নাম অভ্র সাহেব না, অভ্র। 'বাটলার বাবুকে খানিকটা ঘোল খাইয়ে দিলাম।

বাটলার বাবুর মুখের তৈলাক্ত হাসিটা দপ্ করে নিভে গেল। 'ও আচ্ছা, সরি।

স্যার, ম্যাডাম কেউ বাসায় নেই। আপনি এলে আপনাকে দোতলায় আপুমনির রুমে দিয়ে আসতে বলেছে আমাকে। '

আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে বললাম, 'তা কিসে করে দিয়ে আসবেন, ঝুড়ি টুড়ি তো কিছু দেখছিনা। '

রসিকতাটা বেশি স্থুল হয়ে গেল,কিছু করার নাই। বাটলার বাবুকে আমার অতি ধুর্ত বলে মনে হচ্ছে। রসিকতা ধুর্ত মানুষের জন্য।

আরে বাবা তুই তো কাল আমাকে দেখেছিসই, এরপরও নাম জানতে চাওয়া কেন? জানতে চেয়েছিস, ভাল কথা। তো এত প্যাচাল না পেড়ে সোজা আপুমনির রুমে দিয়ে আসলেই তো হয়।বদের হাড্ডি!

'আপনার কষ্ট করে দিয়ে আসতে হবেনা।আপনি বৃক্ষ পরিচর্যা করুন। আমি যেতে পারব। '

বাটলার বাবু চোখমুখ শক্ত করে বলল, 'ম্যাডাম আমাকে দিয়ে আসতে বলেছে। '

তর্ক করে লাভ নাই।বললাম,'চলেন, দিয়ে আসেন। '

বাটলার বাবু একটু আমতা আমতা করে বলল, 'আচ্ছা ঠিকআছে, আপনি একাই যান। দোতলার বাম দিকের দ্বিতীয় রুম।'

অনেকে ভাবে আমি রাগ করতে জানিনা, কিন্তু এইমূহুর্তে চড়াৎ করে রক্ত চড়ে গেল আমার মাথায়।

বদের হাড্ডিটা এতক্ষণ গাঁইগুঁই করে এখন বলছে যাবেনা।ওর উদ্দেশ্য পরিষ্কার বুঝতে পারছি আমি।ব্যাটা আমার কথা শুনবেনা,নিজের কথায় অটল থাকবে। ঠিকআছে অটল থাকার ব্যবস্থা নিচ্ছি।বললাম,'সেটা তো হবেনা বাটলার সাহেব। আপনি এত আগ্রহ করে আমাকে দিয়ে আসতে চাচ্ছেন, একা একা কিভাবে যাই? '

"বাটলার সাহেব "সম্বোধনটা নিশ্চয়ই নতুন লোকটার জন্য। হাঁ করে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, 'না না, আপনি যান সমস্যা নেই। '

আমি হাসিমুখে বললাম, 'অবশ্যই সমস্যা আছে। '

আমার হাসিমুখ দেখে লোকটা ইতস্তত করতে লাগল। রাগতেও পারছেনা। বলল, 'ইয়ে. . .মানে. . .আসলে আমার পায়ে মাটি লেগেছে তো, ভেতরে ঢুকতে হলে পা ধুতে হবে। এদিকে বাগানের কাজ এখনও শেষ হয়নি। '

'সমস্যা নাই, আপনি পা ধুয়ে আসেন,আমি দাড়াচ্ছি এখানে।'

বাটলার বাবু চোখে আগুন নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।অবশ্য সে আগুন আমার কোন ক্ষতি করতে পারল না।কারণ আমি এখন আকাশে উড়ে চলা নাম না জানা এক পাখি পর্যবেক্ষনে ব্যাস্ত। অগ্নিঝরা দৃষ্টি দেখার আমার কি প্রয়োজন!

আমার পাখি পর্যবেক্ষণ শেষ হচ্ছেনা দেখে হাল ছেড়ে দিল বাটলার বাবু। গ্যারেজের উদ্দেশ্যে চলে গেল পা ধুতে। লোকটার তেল কমানোর প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয় নাই।

বাটলার সাহেব গ্যারেজে ঢুকতেই আমিও বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়লাম। আমার গন্তব্য,দোতলার বামদিকের দ্বিতীয় কামরা।



চলবে. . .



উৎসর্গঃ 'খাঁটি কন্যা 'উম্মে সাবেরা গিনিকে।



পুনশ্চঃউপন্যাসটা পরিকল্পনাহীন লিখতে শুরু করাতেই হয়ত আমার জীবনের কিছু সত্যি ঘটনা,কিছু বাস্তব চরিত্র চলে আসছে লেখায়। সামনেও আসবে। কোনটা সত্যি আর কোনটা গল্প সেটা পার্থক্য করার দায়িত্ব পাঠকের।

আর অনেকেই প্রশ্ন করছেন উপন্যাসটা কত পর্বের?

সত্যি বলছি, আমি জানিনা।যতদিন আপনাদের ভাল লাগবে ততদিন চলবে। একঘেয়ে হয়ে পড়লে জানাবেন, বন্ধ করে দেব।

আশা করছি সপ্তাহে কমপক্ষে তিনদিন পোস্ট করতে পারব। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।

আর আগের অনুরোধটা থাকল, কমেন্ট প্লিজ।



৩১/১/১৩ তারিখ রাত নটায় আমার ফেসবুক আইডিতে উপন্যাসের ৩য় পর্ব প্রকাশিত হবে ।আমণ্ত্রণ রইল।



আমার ফেসবুক আইডি-www.facebook.com/fatah59



মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৪:৫৫

লেজকাটা বান্দর বলেছেন: ৩য় পর্ব কই? ব্লগে দেন।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৪৯

আবুল ফাতাহ বলেছেন: দেব

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.