![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি তোমাদের মাঝে খুজিয়া ফিরি আমার বিশ্বলোক; নরকে গেলেও হাসিয়া বলিব আমি তোমাদেরই লোক।
একটি ঘোষণাপত্র পাঠ করা হলো। তা-ও বছরের এই দিনে—যেদিন ঠিক এক বছর আগে খুনি স্বৈরাচার হাসিনার পতন ঘটেছিল। মানুষ জীবন বাজি রেখে রাস্তায় নেমেছিল স্বাধীনতার দাবি নিয়ে। স্বপ্ন দেখেছিল বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের। আজকের এই ঘোষণাপত্র সেই স্মৃতি ফিরিয়ে আনে। সেই আন্দোলনের দাবি, সেই রক্ত, সেই ত্যাগ—all of it. But does it deliver? Does it chart the way forward? উত্তর খুঁজলে দেখা যায়, এটি গৌরবময় অতীত স্মরণ করে ঠিকই, কিন্তু ভবিষ্যতের রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য কোন রূপরেখা হাজির করতে পারে না।
২৮টি অনুচ্ছেদের প্রায় সবই অতীত নিয়ে লেখা—শহীদদের স্মরণ, দমন-পীড়নের বিবরণ, গণঅভ্যুত্থানের বৈধতা, জনগণের সার্বভৌমত্বের ঘোষণা। ভাষাগতভাবে এটি একটি গৌরবগাঁথা। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে এটি এক ধরনের আত্মপক্ষ সমর্থন। এতে কোনো ভবিষ্যতমুখী পরিকল্পনা নেই।
জনগণের হাতে কীভাবে ক্ষমতা ফিরবে? ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামো কীভাবে বিনির্মান হবে? নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে? সংবিধান তথা রাষ্ট্রযন্ত্রের সংস্কার কীভাবে হবে? আর সংস্কার বাস্তবায়নই বা হবে কোন পদ্ধতিতে—ঘোষণাপত্রে এসব প্রশ্নের কোন সুনির্দিষ্ট উত্তর নেই।
একটি গণআন্দোলন কেবল সরকারের পতন ঘটিয়ে থেমে গেলে, তা রাষ্ট্রের কাঠামোগত রূপান্তর আনতে পারে না। নেলসন ম্যান্ডেলা অ্যাপারথেইড পতনের পর থেমে যাননি। তিনি গণপরিষদ গঠন করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন। নেপাল রাজতন্ত্র পতনের পর পুরনো সংসদ বাতিল করে নতুন সংবিধান সভার মাধ্যমে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। এই ঘোষণাপত্রের কোথাও এমন কোনও কিছু করার পরিকল্পনা নেই।
এই ঘোষণাপত্রের কাঠামোগত কিছু দুর্বলতাও লক্ষ্য করা যায়—
১. সংবিধান সংস্কার নিয়ে স্পষ্টতা নেই। ৭২-এর সংবিধান প্রণয়নের পদ্ধতি নিয়ে আপত্তি থাকলেও পরবর্তী সংস্কার নিয়ে কোনও সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই।
২. গণপরিষদ গঠনের প্রস্তাব নেই। নতুন সংবিধান লেখা বা সংস্কার করার জন্য আলাদা গণপরিষদ প্রয়োজন—যেমনটা হয়েছিল ভারত, নেপাল ও দক্ষিণ আফ্রিকায়।
৩. নির্বাচন পদ্ধতি সম্পর্কে কোন উল্লেখ নেই । বর্তমান FPTP পদ্ধতির বদলে
অনুপাতিক বা মিশ্র পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
৪. সুনির্দিষ্ট কোনো রোডম্যাপ নেই। কীভাবে, কার মাধ্যমে, কতদিনে, কোন পর্যায়ে—সংস্কার হবে তা নির্ধারণ করা হয়নি।
৫. রাষ্ট্রযন্ত্র সংস্কারে নীরবতা দৃশ্যমান হয়েছে। বিচারব্যবস্থা, আমলাতন্ত্র, নিরাপত্তা বাহিনী—এই তিনটি মূল অঙ্গ নিয়ে কোনও আলোচনা করা হয়নি।
ঘোষণাপত্রের ভাষা হৃদয় ছোঁয়,কিন্তু রাষ্ট্র কাঠামো ছুঁতে পারে না। রাষ্ট্র পুনর্গঠনের জন্য দরকার আরও কিছু আর তা হলো—সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ও সাংবিধানিক রূপকল্প।
ঘোষণাপত্রের ভাষাগত সৌন্দর্যের বাইরে গিয়ে যদি কাঠামোগত বাস্তবতার দিকে তাকাই, তবে একটি কার্যকর রূপান্তরের জন্য প্রয়োজন:
১. একটি গণপরিষদ নির্বাচন— একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র নির্বাচন কমিশনের অধীনে, অনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক ভিত্তিতে, সংখ্যালঘু, নারী, আদিবাসী ও শ্রমজীবী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে একটি সংবিধান সভা গঠন করা।
২. এই সংবিধান সভার মাধ্যমে ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে একটি খসড়া সংবিধান রচনার বাধ্যবাধকতা করা।
৩. জাতীয় নির্বাচন ও সংবিধানসভা নির্বাচন একসাথে আয়োজন করা। এতে খরচ বাঁচবে, জনগণের অংশগ্রহণ বাড়বে এবং দুই ধরনের ম্যান্ডেট—সরকার গঠনের ও সংবিধান লেখার—ভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
৪.সংবিধান সংস্কারের মাধ্যমে ক্ষমতার ভারসাম্য, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ, স্থানীয় সরকারে শক্তি বৃদ্ধি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং নাগরিক অধিকারের সুনির্দিষ্ট নিশ্চয়তা প্রদান করা।
এই ঘোষণাপত্র ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় এক গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক দলিল। কিন্তু শুধু অতীতের গৌরব স্মরণ যথেষ্ট নয়—রাষ্ট্র পুনর্গঠনের জন্য দরকার একটি রাজনৈতিক কাঠামো, গণতান্ত্রিক রোডম্যাপ ও সংবিধানিক রূপকল্প।
এখন সময়— একটি গণপরিষদ গঠন, সংবিধান সংস্কার এবং ক্ষমতার কাঠামোর আমূল পুনর্বিন্যাসের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতের পথ নির্মাণ করার। এই পথই একমাত্র পথ।
এখন এই সরকারের শেষ অস্ত্র 'জুলাই সনদ' যদি সংস্কার বাস্তবয়নের পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা হয়ে উঠতে পারে তবে ঘোষণাপত্রের অসম্পূর্ণতা ঘুচবে বলে মনে করি।
২| ০৬ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১০:২৪
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: সবকাজ সবাই কে দিয়ে হয় না।
৩| ০৬ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১:২৪
রবিন.হুড বলেছেন: দেশের কথা কেউ ভাবে না, ভাবে শুধু পাগলে। সোনার বাংলা গিলে খাইলো দুই টাকার ছাগলে।
৪| ০৬ ই আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৩
মেঠোপথ২৩ বলেছেন: ডক্টর ইউনুসের যে জুলাই ঘোষনাপত্র পাঠ করেছেন তা এই সরকারের তৈরী করা নয় কোণমতেই। ইন্টারিম সরকার পরাজিত হয়েছে। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এক মিটিং এ বলেছে যে, ইন্টারিমের এখন সেফ এক্সিট প্ল্যান নিয়ে ভাবা উচিত !! সামনে ভয়ঙ্কর সময় অপেক্ষা করছে দেশের জন্য ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ৯:০৬
রাজীব নুর বলেছেন: জুলাই সনদ হলো- একটা তামাশা।