নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পথিক মুরাদ

পথ হাটিতেছি এক অন্তহীন পথে....

পথিক মুরাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সমান অধিকারের নিশ্চয়তা

২১ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৩

ফিলিপাইনে আমার দুজন বাংলাদেশী সহকর্মী বন্ধু আছে, একজন সুদীপ বড়ুয়া, অন্যজন রাজিব কান্তি রায়। নামেই হয়তো বুঝতে পারছেন প্রথমজন বৌদ্ধ ধর্ম অনুসারী পরেরজন হিন্দু। ফিলিপিনের দক্ষিন অঞ্চলে যখন মুসলমানদের সাথে সংঘাত হয়,তখন অহংকারে বুক ফুলিয়ে এদের বলতাম-“ধর্ম নিয়ে কেন হানাহানি হবে!এই আমাদের দেখ,আমরা তিন ধর্মের তিনজন কিন্তু আমরা কত ঘনিষ্ঠ। আমাদের দেশটাও ঠিক আমাদের মতই। সকল ধর্মই সমান।“তারা শুনে অবাক চোখে তাকায়।

এর কিছুদিন পরেই একদিন সকালে দেখলাম সুদীপের খুপ মন খারাপ। কারণটা আমি জানি। এক সামান্য অজুহাতে বাংলাদেশে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর হামলা শুরু হয়েছে। সুদীপের কিছু আত্মীয় স্বজনের বাড়িঘর পুড়িয়ে লুটপাট করা হয়েছে। তাদের অনেকগুলো পুরনো মন্দির পুড়িয়ে দিয়েছে। সে এখন পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমি তাকে কি ভাবে সান্তনা দেব বুঝতে পারছিনা। কারন যারা এই হামলা করেছে তারা মুসলমান, আমিও মুসলমান।খুব দ্রুতই সরকারী ভাবে,দলীয়ভাবে,রাজনৈতিক ভাবে ক্ষতি গ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করা হল।একে অন্যকে দোষারোপ করল। সরকারী ভাবে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িঘর নির্মাণ ও মন্দির নির্মাণ করা হল।

এর পরে এল রাজিবের মন খারাপের পালা। গত নির্বাচনের পর একটি বিশেষ এলাকায় হিন্দুদের উপর হামলা করা হয়েছে। লুটপাট করা হয়েছে। কিছু মানুষ প্রান ভয়ে সাঁতরিয়ে প্রানে বেঁচেছিল। এবার ও সঙ্গত কারনেই আমার সান্তনার বানী হারিয়ে গেছে। এবার ও খুব তাড়াতাড়ী করে তাদের ক্ষতে সরকারি খরচে মলম লাগানো হল।

কিন্তু এই আঘাত,হামলা,ক্ষতের সৃষ্টি আর ক্ষততে মলম লাগানো কতদিন চলবে!এই হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্মীয়দের সংখ্যা বাংলাদেশে কম হওয়ায় তারা সংখ্যালঘু।কোন অজুহাত পেলেই চলে নির্বিচারে হামলা। এর কারন কি তারা সংখ্যায় কম? নাকি অন্য কোন আক্রশ অথবা উদ্দেশ্য?

যদি এর কারন ধর্ম হয় তবে ধর্ম নিয়ে তর্ক করার মত মেধা বা সাহস কোনটাই আমার নেই। কিন্তু ধর্ম যে প্রতিটি মানুষের নিজস্ব বিশ্বাসের ব্যপার সেটা তো সুস্থ মস্তিস্কের সবারই বোঝার কথা। আমার জানা মতে কোন ধর্ম প্রচারকই জোর জুলুম করে ধর্ম পালন করতে বাধ্য করেন নি।আমাদের ইসলাম ধর্মে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে – “তোমার ধর্ম তুমি পালন কর, আর আমার ধর্ম আমি।“ তাহলে এখন কিসের জন্য এই হানাহানি? যদি কেউ নাস্তিক হয় তাহলে তাকে শাস্তি দেবার মালিক স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা। আমরা আস্তিকগন তাদের কর্মকাণ্ডে সমর্থন না যোগালেই তো হয়। তবে হ্যাঁ,নাস্তিকদের কারনে যদি ধর্মপ্রাণদের অসুবিধা হয় অথবা নাস্তিকরা ধর্মে আঘাত হানে সেটা অবশ্যই হবে গুরতর অন্যায়। সে ক্ষেত্রে আইন নিজের হাতে তুলে প্রতিবাদের নামে ধ্বংস খুন খারাপি করলে কি পুণ্য হবে? কেউ যদি কোন ধর্মের উপর আঘাত হানে তাহলে দেশে প্রচলিত আইনের আস্রয় নেওয়াই একজন ধর্ম প্রান নাগরিকের দায়িত্য ও কর্তব্য । আইনের আস্রয় না নিয়ে আইন হাতে তুলে নেওয়া কখনই কোন ধার্মিকের কাজ হতে পারে না।

বাংলাদেশে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও পৃথিবীর অনেক দেশেই মুসলিম সংখ্যা লঘু। সংখ্যা লঘু বলে যদি এদশে হিন্ধু বৌদ্ধদের অত্যাচারিত হতে হয় তাহলে অন্য দেশে সংখ্যালঘু মুসলমানদের অবস্থা কি হবে একবার ভাবুন!

যে মানুষটি আজ ধর্মের জন্য সবচেয়ে সোচ্চার তিনিও কি বলতে পারেন যে তার জন্ম যদি কোন নাস্তিক বা অন্য কোন ধর্মের ঘরে হত তাহলে তিনি ধর্মান্তরিত হয়ে বর্তমান ধর্ম পালন করতেন? জন্মে যে কারও হাত নেই সেটা যেমন তিনি স্বীকার করবেন তেমনি প্রতিটি মানুষের ধর্মীয়ও বিশ্বাসে তার কাছে তার ধর্মই সর্বশ্রেষ্ঠ সেটাও স্বীকার করা উচিৎ। জোর করে,জুলুম করে,ধ্বংস করে হয়ত স্বার্থ হাসিল করা সম্ভব কিন্তু ধর্ম বিস্তার করা সম্ভব নয়। ধর্ম মানুষের অন্তরের বিশ্বাস,সেটা জোর করে প্রতিস্থাপন করা জায়না।

ধর্মীয় বিশ্বাস অধিকাংস ক্ষেত্রে জন্মগত এবং পরিবারগত ভাবে শুরু হয়, সামান্ন্য কিছুর পরিবর্তন হয়, ভালবাসা, বিদ্যা বুদ্ধি, লোভ প্রভৃতির কারনে।

একটি বাস্তব উদাহরন দেই, ২০০৯ সালের ঈদ উল আযহার নামাজ পড়ার জন্য ফিলিপাইনের দক্ষিন অঞ্চলের সমুদ্র তীরে একটি মসজিদ খুজে পেলাম। সব মিলিয়ে ১২ জন ঈদের নামাজ পড়লাম এবং নামায শেষে ইমাম সাহেব একটি ছাগল কোরবানি দিলেন, সেই সাথে দুপুরে খাবার জন্য আমাকে বিশেষ ভাবে দাওয়াত করলেন। আমি দায়াওতে হাজির হয়ে দেখি অনেক অতিথি, তারপর আমার গাড়ি চালক খ্রিষ্টান তাকে এক সাথে খেতে ডাকব কি না ভাবছি। বিষয় টি ইমাম সাহেবের সাথে শেয়ার করতেই তিনি নিজেই চালক কে ডেকে আনলেন এবং বললেন এই অথিতিদের অধিকাংশই খ্রিষ্টান। জানলাম ৮ বছর আগে এই ইমাম সাহেব এসেছিলেন পৌরসভার ছোট একটি চাকরি নিয়ে, কোন মুসলিম ছিলনা, কোন মসজিদও ছিলনা। ইমাম সাহেবের ভালবাসায় ৮ বছরে পাঁচটি পরিবার মুসলমান হয়েছে। একটি মসজিদ হয়েছে।

সর্বোপরি এই হামলার কারন যদি রাজনৈতিক হয়,যদি হয় কোন গোষ্ঠীর স্বার্থসম্বলিত, যদি হয় সংখ্যালঘু বলে দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার তবে তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের। সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে এই দেশ কোন বিশেষ ধর্ম অনুসারীদের নিজস্ব সম্পত্তি নয়। এদেশের স্বাধীনতার জন্য সকল ধর্মের মানুষেরই আছে অবর্ণনীয় ত্যাগ। একটি গণতান্ত্রিক দেশে সকল নাগরিকের নিরাপত্তার দায়িত্ত সরকারের। এখানে ধর্ম কোন বিশেষ সুবিধা ভোগের কারন হতে পারে না। পূর্বের হামলাগুলোর সঠিক নিরেপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের চরম শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিৎ। এই তদন্ত কমিটিতে প্রাধান্য দেওয়া দরকার ক্ষতিগ্রস্ত ধর্ম অনুসারীদের। তাহলে অপরাধী যে দল মত বা ধর্মেরই হক তার শাস্তি নিশ্চিত হবে এবং পরবর্তীতে এই ধরনের হামলা নিরুৎসাহিত হবে।

এই দেশটার উন্নয়ন করে উন্নত দেশে হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে যায়গা করে নিতে দরকার অনেক শ্রম, অর্থ আর দীর্ঘ সময়ের। কিন্তু সাম্প্রদায়িক হানাহানিহিন বন্ধুত্তপূর্ণ রাষ্ট্রের উদাহরণ হিসেবে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে দরকার শুধু একে অন্যের মতের প্রতি শ্রদ্ধা ভালবাসা এবং সকল নাগরিকের সমান নাগরিক অধিকার রক্ষার আইনের শাসন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.