নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পথিক মুরাদ

পথ হাটিতেছি এক অন্তহীন পথে....

পথিক মুরাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নরম হাতের স্পর্শের অপেক্ষায়

২২ শে মে, ২০১৪ সকাল ৯:২৮



( ছবিঃ প্রথম দেখায় আমাদের সন্তান “মুগ্ধ”)

ছুটি শেষ, ফিরতে হবে আবার সেই প্রবাস জীবনে। এই ছুটি, এই চলে যাওয়া,মায়ের চোখের জল, নিজের অব্যক্ত কষ্ট ও লুকানো অশ্রু প্রবাস জীবনে নতুন কিছু নয়। কিন্তু এবার কিভাবে যে বিদায় নেব সেটা ভেবেই অস্থির হচ্ছিলাম ছুটি শেষ হবার আগেই। আমার স্ত্রীর গর্ভে বেড়ে উঠছে আমাদের প্রথম সন্তান। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে জেনেছি আমাদের অনাগত সন্তান পৃথিবীতে আশার সম্ভাব্য সময় ১১ মে , ২০১৩। আর মার্চ মাসে আমাকে বিদায় নিতে হবে স্ত্রীর কাছ থেকে। থাকতে পারব না আমার স্ত্রীর পাশে, নিজ মুখে স্বাগত জানাতে পারবনা আমাদের প্রথম সন্তান কে। ভেতরে ভেতরে কষ্টে মূষরে পড়লেও চেষ্টা করছিলাম খুবই স্বাভাবিক থাকার। পরিবারের অন্যরাও হয়তো আঁচ করছে আমার অব্যক্ত কষ্টটা, তাঁরা মাঝে মাঝে বলছেন চিন্তার কিছু নাই , আমারা তো আছি, একই কথা বলছেন শশুর বাড়ির আত্মীয়রা। অপলকে তাকানো ছাড়া কি বলা উচিৎ আমার জানা নেই। জানি তাঁরা তো অবশ্যই থাকবেন, কিন্তু আমি? আমি তো থাকতে পারছিনা, তাঁদের সকলের ভিড়েও আমার স্ত্রীর চোখ খুঁজে ফিরবে আমাকে, আমাদের সন্তান পৃথিবীর আলোয় প্রথম চোখ মেলে দেখতে পাবে না আমাকে।

সময় যখন খুব নিকটবর্তী ধীরে ধীরে স্ত্রীকে আকারে ইঙ্গিতে বোঝাতে শুরু করলাম কিভাবে সে এই সময়টা পার করবে । বোঝাচ্ছিলাম আমাদের এই ত্যাগ আমাদের অনাগত সন্তানের জন্যই, তার সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য । আমাদের পরিবারের জন্য, আমাদের দেশের জন্য। এক দিন হয়তো আমাদের আর কাউকে এই ত্যাগের প্রবাস জীবন কাটাতে হবে না। মেয়েরা খুব তাড়াতাড়ি পরিস্থিতি বুঝে নিতে পারে, সৃষ্টিকর্তা তাঁদের এই অসীম গুনটি দিয়েছেন, করেছেন পরম মমতাময়ী। আমার স্ত্রীও সহজেই বুঝল, এই সংকটকাল তাকে আমাকে ছাড়াই কাটাতে হবে। বিদায়ের সময় সবার সাথে বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়েছিল, পেছন ফিরে দেখলাম আমার দিকে তাকাতে পারছেনা, শত কষ্টে আবেগকে চেপে রাখার এক চেষ্টায় লড়াই করছে। আমার ও তো কাঁদলে চলবে না, আমার মত যাদের কে ভাগ্যের অন্বেষণে দুরদেশে ছুটে যেতে হয় সন্তান প্রসবা স্ত্রীকে ফেলে, তাঁদের চোখে পানি আসতে নেই। চোখের অশ্রু হৃদয়ে লুকিয়ে আমি পাষাণের মত চলে এলাম এই ফিলিপাইনে।

সময় যায় আর আমার উদবিগ্নতা বাড়ে। তারপর একদিন আমার স্ত্রী বলল, ডাক্তার আপা বলেছেন সময়ের আগে সন্তান হবার সম্ভাবনা আছে। তাগাদা দিলাম আবার পরীক্ষা নিরিক্ষা করার। এবার জানাগেল মে ০৫ , ২০১৩ সিজার করতে হবে। রক্তের দরকার। আমি এই পরবাসে বসে কি করবো আমি জানি না, কাজে মন দিতে পারছিলাম না । মনে হচ্ছিলো স্বামী হিসাবে, বাবা হিসাবে আমি আমার দায়িত্ত হয়তো পুরোপুরি পালন করছিনা। অনেক বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজন দের ফোন করলাম রক্তের জন্যে , পাশে থাকার জন্য।

অবশেষে এল সেই মহেন্দ্র ক্ষন মে ০৫, ২০১৩ রবিবার দুপুর দুই টা। আমার স্ত্রীর ছোটবোন সিগমা ফোন করে বলল ‘ ভাইয়া অনলাইনে আসো” -

আমার হৃদপিণ্ডে তখন রেলগাড়ির শব্দ, কম্পমান হাতে স্কাইপ ওপেন করলাম , তাঁরা হাসপাতালে ল্যাপটপ নিয়ে গিয়েছে সেটা জানতাম না। সিগমা বলল ভাইয়া তোমাদের ছেলে হয়েছে এই দেখ , বলেই ক্যামেরার সামনে ধরল সদ্য ভূমিষ্ঠ আমাদের প্রথম সন্তান “মুগ্ধ” কে। আমি কি বলব কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। বাকহীন অবস্থা আমার, দু চোখে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু।

পরম করুনাময়ের কৃপায় এবং সকলের দোয়ায় আমার স্ত্রী সন্তান ভাল আছে। আমার নামের প্রথম অক্ষরের সাথে মিলিয়ে সবাই তাকে “মুগ্ধ” নামেই ডাকে, আমি বাড়ি ফিরলে আকিকা দিয়ে পুরো নাম রাখার ইচ্ছে। গ্রামের সেই দুর্বল ইন্টারনেট নেটওয়ার্কেও তাদের কে দেখার চেষ্টা করি। অপেক্ষায় দিনগুনি বাড়ি ফেরার। কল্পনায় অনুভব করি তুলতুলে নরম হাতের স্পর্শ।





মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:৩২

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ক্যামেরার সামনে ধরল সদ্য ভূমিষ্ঠ আমাদের প্রথম সন্তান “মুগ্ধ” কে। আমি কি বলব কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। বাকহীন অবস্থা আমার, দু চোখে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু।

-আপনাদের জন্য শুভ কামনা থাকল।

২| ০১ লা জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২৮

পথিক মুরাদ বলেছেন: আমার এই গন্তব্যহীন চলার পথে আপনার শুভ কামনা সঙ্গে নিলাম। ধন্যবাদ এবং ভালো থকাবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.