নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পথিক মুরাদ

পথ হাটিতেছি এক অন্তহীন পথে....

পথিক মুরাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাটির নিচে নদীঃ

২৮ শে মে, ২০১৪ দুপুর ২:৪০



(ছবিঃ আমি আমার সহকর্মীদের সাথে ভূগর্ভস্থ নদির মুখে)

পৃথিবী জুড়ে প্রকৃতির নতুন সপ্তম আশ্চর্যের একটির অবস্থান এই ফিলিপাইনে। ২০১১ সালে যখন চূড়ান্ত নির্বাচনের জন্য ইন্টারনেটে ভোট গ্রহণ চলছিল তখন আমাদের সুন্দরবন অনেক এগিয়েছিল। নিজে ভোট দেবার পাশাপাশি ভোট চেয়েছি সহকর্মীদের কাছে, প্রচার করেছি ফেসবুকের পাতায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুন্দরবন ভোটের লড়াইয়ে টিকে থাকতে পারেনি। তথ্য প্রযুক্তিতে অনুন্যত আমাদের দেশের খুব কম সংখ্যক মানুষই ভোট দিতে পেরেছিল , পরাজয়ের এটাই হয়তো মুখ্য কারন।

সেই নির্বাচনের সময় আমার কিছু ফিলিপিনো সহকর্মী বলেছিল – “ তুমি আমাদের পুয়ের্তো প্রিন্সেসা ভুগরভস্থ নদীকে ভোট দাও , আমি তোমাদের সুন্দরবন কে ভোট দেব।“ তাদের এই প্রস্তাবেই তাদের কাছ থেকে জানতে পারি এই “পুয়ের্তো প্রিন্সেসা ভুগরভস্থ নদী” সম্পর্কে। পরে এই ভুগরভস্থ নদী চূড়ান্ত নির্বাচনে জয়ী হয়। তখন থেকে মনের মাঝে সুপ্ত বাসনা দেখতে হবে প্রকৃতির আশ্চর্যতম সৃষ্টি মাটির নিচের এই নদীকে।

অবশেষে সুযোগ এলো অফিসের এক প্রস্তাবে। “পুয়ের্তো প্রিন্সেসা ভুগরভস্থ নদী” টি পালওয়ান প্রদেশে অবস্থিত । আমাদের কিছু অফিস আছে এই প্রদেশে এবং আমাকে এক মাসের জন্য যেতে হবে পালওয়ানের অফিসগুলো পরিদর্শনে।

রাজধানী শহর ম্যানিলা থেকে ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটের বিমান যাত্রা পালওয়ানের “পুয়ের্তো প্রিন্সেসা বিমানবন্দর” পর্যন্ত। সেখান থেকে ৫০কিমি উত্তরে মহান সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি করেছেন পৃথিবীর আশ্চর্যতম এই নদী।

মনের মাঝে এক উদ্গ্রিবতা কখন যেতে পারব মাটির নিচের সেই নদী দেখতে যে কিনা সমস্ত পৃথিবীর মাত্র ৭ টি আশ্চর্যতম প্রাকৃতিক সৃষ্টির একটি! সহকর্মীদের জিজ্ঞাসা করি নানা প্রশ্ন, কি ভাবে সেখানে যেতে হয়, কত সময় লাগে, নিরাপদ কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। শেষে এক বন্ধের দিন কিছু সহকর্মীসহ রওনা দিলাম নদীর উদ্দেশ্যে। শহর থেকে অফিসের গাড়ীতে সমুদ্র তীরে, সেখানে থেমে কিছু খেয়ে নিলাম, সবাই মিলে ঘুরলাম সাদা চকচকে বালির সমুদ্র তীরে, এর মধ্যে একজন একটি যন্ত্র চালিত নৌকা ভাড়া করলো, কারন এরপর আর গাড়ী যাবে না, স্থলপথ এখানেই শেষ। তারপর যন্ত্র চালিত নৌকায় ভূগর্ভস্থ নদীর মুখের পার্ক পর্যন্ত গেলাম, সেখানে অবস্থিত অফিস থেকে নদীতে যাবার পাস নিয়ে, সেখান থেকে একজন গাইড সহ নিরাপত্তা জ্যাকেট, হেলমেট পরে , একটি বড় ব্যাটারির সাহায্যে প্রজ্জ্যলিত আলো নিয়ে বৈঠার নৌকায় রওনা দিলাম নদীর পথে।

সামনে এক উঁচু পাহাড় আর আমাদের নৌকা এক সুড়ঙ্গ নদী দিয়ে এগিয়ে চলছে পাহাড়ের পেটের মধ্যে। একটু পরেই ঘন অন্ধকার সম্বল আমাদের আলো টুকু, গাইড এই আলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখচ্ছেন চারপাশ। আমরা সবাই চুপচাপ, হয়তো সবার মধ্যেই ভয় বিরাজ করছে, মাথার উপর বিশাল পাহাড় আর তার নিচে অন্ধকারে পানির মধ্যে একটু ভয় পাওয়া অস্বাভাবিক কিছু না অথবা মুগ্ধ হয়ে দেখছে সৃষ্টিকর্তার অসীম সৃষ্টি। বৈঠার শব্দ আর গাইডের কথার মাঝে হটাৎ শব্দ করে উড়ে যায় কিছু বাদুড়, সে দিকে আলো ফেলতেই দেখলাম অসংখ্য বাদুড় ঝুলে আছে চারপাশে। মাঝেমাঝে কিছু ছোট সাপও দেখা যাচ্ছে। কিছু যায়গায় সুড়ঙ্গ অনেক চওড়া। পাথরের বিভিন্ন আকৃতি আর রঙে কল্পনায় ভেসে ওঠে বিভিন্ন পরিচিত দৃশ্য। দেখতে দেখতে আমরা ২ কিমি পার হয়ে এসেছি। গাইড বললেন এই নদীর দৈর্ঘ্য ৮.২ কিমি, নৌকা চলার নাব্যতা আছে ৪ কিমি পর্যন্ত, আর সুরঙ্গটি প্রায় ২৪ কিমি দীর্ঘ। কিন্তু আমরা যেতে পারব ২.৫ কিমি পর্যন্ত, কারন আমাদের কাছে অক্সিজেন মাস্ক নেই। এর পরে বাতাসের স্বল্পতা আছে। তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আর এগুতে পারলাম না, সবাই ফিরে আসলাম কিছু চির অম্লান স্মৃতি নিয়ে।





( এই ফিচার টি ২৯-৬-২০১৩ তে প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়েছিল, যারা পড়ার সুযোগ পাননি, তাদের সুবিধার্তে ব্লগে পোস্ট করলাম। )

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.