![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার এক ফিলিপিনো বন্ধু বাংলাদেশে বেড়াতে গিয়েছিল।ফিরে আসার পর জানতে চাইলাম, ক্যামন লাগলো বাংলাদেশ? খুব ভাল,মানুষগুলো বেশ অথিতিপরায়ণ,তবে তোমাদের ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থা… বলে কথা থামিয়ে একটু পরে বলল,জানো তোমাদের চালকদের মধ্যে বেশ সম্প্রিতি আছে। সেটা ক্যামন? বলতেই মুচকি হেঁসে বলল, দেখো ওরা তো সারাদিন ব্যস্ত থাকে,নিজেদের মধ্যে আলাপ করার তেমন সুযোগ পায় না। তাই রাস্তায় শুভেচ্ছা বিনিময়ের কাজটি সেরে নেয়। তাই, কিভাবে? এই যেমন দেখলাম রাস্তায় এক চালক তার গাড়ী দিয়ে অন্য চালকের গড়ীর পেছনে ধাক্কা দেয়। সামনের চালক তার সামনের গাড়ীকে অনুরুপ ধাক্কা দেয়।তারপর গাড়ীর কাঁচ খুলে সামনে পেছনে তাকিয়ে চেঁচিয়ে কিছু বলে। বিষয়টা যেন হাই ,হ্যালো ক্যামন আছিস এরকম। এ নিয়ে ট্রাফিক পুলিশ ও কিছু বলছে না। এবং এটাই যেন রিতি এবং সবাই সবার সাথে এভাবেই শুভেচ্ছা বিনিময়ে অভ্যস্ত তা অধিকাংশ গাড়ীর রঙ আর কোঁচকানো চেহারা দেখলেই বোঝা যায়।বলেই এক গাল হেসে দিল। আমি কষ্টের সাথে দাঁত বেরকরলেও হাঁসতে পারলাম না। তার কৌতুকপূর্ণ কথা আমার দেশপ্রেমকে আঘাত করেছে।
কিন্তু আমার এই বিদেশি বন্ধুর বর্ণনাতো সত্য। আমাদের শহরের রাস্তার এটা খুব পরিচিত দৃশ্য।রাস্তায় নেমেই শুরু করে কার আগে কে যাবে সেই প্রতিযোগিতা। সামনের গাড়িটার গতি একটু কমলেই পাশকাটানোর চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে পেছনের জন। শুরু হয় এক গাড়ির সাথে অন্য গাড়ীর ধাক্কা ধাক্কি আর বিনা কারনেই উচ্চ শব্দে হর্নের মহড়া। কোনভাবে নিজের গাড়ীটাকে সামনে নেবার জন্য প্রাণপণ চেষ্টায় পাশকাটাতে গিয়ে বেধে যায় অন্য গাড়ির সাথে। দুই গাড়ির চালক নেমে এসে শুরু করে তর্ক, গালাগালি, কখনও কখনও সেটা হাতাহাতি লাঠালাঠি পর্যায়ে গড়ায়। পুরো রাস্তা জুড়ে জ্যাম বেঁধে যায়। তাড়াহুড় করে একটি মিনিট বাঁচানো চেষ্টার চালককে বসে থাকতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা।
কষ্ট চেপে জানতে চাইলাম , আর কি দেখলে? আবারও স্বভাবসুলভ হেঁসে বলল, তোমাদের সময়নিষ্ঠা দেখেও খুব ভাল লেগেছে। এবার হেঁসে বললাম হ্যাঁ আমরা আসলেই সময়ের মুল্য দিতে চেষ্টা করি। তো তুমি কি করে এটা বুঝলে? দেখলাম অনেক দৌড়ে প্রতিযোগিতা করে বাসে ওঠার চেষ্টা করছে । অনেকে দাঁড়িয়ে , ঝুলে, ছাদে চেপেও সময়মত গন্তব্যে যাবার চেষ্টা করছে। সিগ্ন্যাল বাতি লাল টকটকে আগুনের মত জ্বলে থকালেও , সেটাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলে যাবার চেষ্টা করছে । আবার এই হুড়োহুড়ি ঠেলাঠেলি, অধিক বোঝাই, সিগ্ন্যালের নিয়ম না মানায় সৃষ্ট জ্যাম, আর পদে পদে থামার জন্য বাসটি সময়মত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেনা।
ট্যাক্সির অবস্থাতো ভীষণ ঐতিহ্যপূর্ণ। এসি তো দুরের কথা অধিকাংস ট্যাক্সিতে জানালার কাঁচও নেই। চালক তার পছন্দের গন্তব্য আর কাঙ্ক্ষিত ভাড়া না পেলে যেতে চায় না। মিটার থাকলেও তার কোন ব্যবহার নেই। অনেক কষ্টে চালককে রাজি করিয়ে ভেতরে চড়ে বশতেই এক দম বন্ধ করা দুর্গন্ধ আর ধুলবালিতে মাখামাখি।
সি এন জি নামের যে যানবাহন দেখলাম। বেশ পরিবেশ বান্ধব। কিন্তু চালক আর গাড়ির অবস্থা অনেকটা ট্যাক্সির মতই। তবে বাড়তি সুবিধা ছিন্তাই থেকে রক্ষা পেতে দরজায় লোহার খাঁচা লাগানো আছে। কিন্তু ভেতরে বসলে নিজেকে চিড়িয়াখানার জন্তু মনে হয়। আর খাঁচা লাগানো গাড়িটা যেন এক ভ্রম্যমান চিড়িয়াখানা। মনে হচ্ছিল এই ব্যস্ত মানুষদের চিড়িয়াখানায় যাবার সময় নেই। তাই এই ভ্রাম্যমান ব্যবস্থা।
ভাল লেগেছে রিক্সায় চড়ে। কোন শব্দ নেই। বাতাস খেতে খেতে চারদিকে দেখতে দেখতে গন্ত্যবে যাওয়া যায়। কিন্তু ঘর্মক্লান্ত রিক্সা চালককে দেখে বেশ মায়া লাগছিলো। তার উপর নিরক্ষর রিক্সা চালক সাইন বোর্ড না পড়ে ভুল পথে প্রবেশ করায় তার পিঠে ট্রাফিক পুলিশের লাঠির আঘাত আমার চোখে পানি নামিয়ে ছিল।
তার কথা শুনতে শুনতে আমার চোখ ও আদ্র হয়েছিল, সেই রিক্সাওয়ালার জন্য, আমাদের পরিবহণ ব্যবস্থার দুর্গতির জন্য।আমার এই বিদেশী বন্ধুটি কৌতুকের সাথে আমাদের ঢাকার পরিবহনের যে চিত্র তুলে ধরেছে তা অত্যন্ত সত্য পরিস্কার এক চিত্র। এই চিত্র বিদেশীদের কাছে আমাদের মাথা নিচু করে দেয়। অথচ আমাদের এই স্বল্প সক্ষমতা ও অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও একটু ধৈর্যশীলতা , মানবিকতা আর ট্রাফিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থার আলোকিত পরিবর্তন আনতে সক্ষম।
২| ০১ লা জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৩
মাথা ঠান্ডা বলেছেন: হুম।
৩| ০১ লা জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:০৩
গোধুলী রঙ বলেছেন: আমি মায়ানমার আসছি ২০ দিনের মত হলো। এরা অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হইছে খুব বেশিদিন না হলেও, এদের ট্রাফিক ব্যবস্থা আমাকে অবাক করে দিয়েছে।
শহরে মোটামুটি তিন ধরনের বাহন চলে, প্রাইভেট কার, ট্যাক্সি(প্রাইভেট কারের সাথে তফাত নাই, উপরের ট্যাক্সি লেখাটা ছাড়া) আর স্বল্প সংখ্যায় বাস।
প্রতিদিন ১৩ কিমি এ ট্যাক্সির ভাড়া দেই ৩০০০-৩৫০০ চ্যাট মানে প্রায় ২৪০-২৮০ টাকা, যা ঢাকায় চিন্তাও করা যায় না। মিটারের বালাই নাই, ভাড়া মোটামুটি কিলোমিটার অনুযায়ী চায় ড্রাইভার রা। সন্ধে বেলা একটু জ্যাম লাগে তাও ডেডলক হয় না, ট্রাফিক পুলিশ দেখা যায় কদাচিত, একটা গাড়ি আরেকটার পিছনে লাগিয়ে দেয় না, অনেক জায়গায় সগনাল বাতিতে টাইমার লাগানো। মেইন রোড গুলো অসাধারন পরিষ্কার। রাস্তায় তিন(১-১-১) সারি গাছ লাগানো সত্বেও ৩-৩ ছয় লেনের রাস্তা প্রায় সব গুলোই, সাথে ১-১ দুই লেন চওড়া ফুটপাত।
আমার বড্ড হিংসা লাগে আবার একই সাথে আফসোস লাগে, আমরা কবে সভ্য হব!!!!
৪| ০১ লা জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৩
পথিক মুরাদ বলেছেন: @ হেডস্যার ঃ আপনার প্রশংসা আমার ব্লগ পথের সঙ্গী হবে। অসংখ্য ধন্যবাদ।
৫| ০১ লা জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৪
পথিক মুরাদ বলেছেন: @ মাথা ঠান্ডাঃ ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
৬| ০১ লা জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৭
পথিক মুরাদ বলেছেন: @ গোধুলি রঙঃ আমারও জানতে ইচ্ছে করে " আমরা কবে সভ্য হবো?" আমার ব্লগের সর্ববৃহৎ মন্তব্যের জন্য আপনাকেও সর্ববৃহৎ ধ ন্য বা দ । শুভ কামনা রইলো।
৭| ০১ লা জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫
হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
বাংলাদেশের সাথে অন্য কোন দেশের তুলনা চলে না।
দুর্বল অবকাঠামো নিয়ে এদেশ পৃথিবীর সবচাইতে ঘনবসতি দেশ।
জানজট নিয়ে একটি লেখা
Click This Link
০১ লা জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৮
পথিক মুরাদ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। স্বপ্ন দেখি একদিন আমরাও পারবো।
৮| ০১ লা জুন, ২০১৪ রাত ৯:২৭
বাংলাদেশী দালাল বলেছেন: ভালো লিখেছেন +++++ সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায়
০২ রা জুন, ২০১৪ ভোর ৬:১৪
পথিক মুরাদ বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনার প্রশংসাই আমার ব্লগ পথের পাথেয়।
৯| ০১ লা জুন, ২০১৪ রাত ৯:৩৮
একজন ঘূণপোকা বলেছেন:
ভুল কিছু বলে নাই
০২ রা জুন, ২০১৪ ভোর ৬:১৬
পথিক মুরাদ বলেছেন: ধন্যবাদ । শুভ কামনা রইলো।
১০| ০১ লা জুন, ২০১৪ রাত ৯:৫৮
গোধুলী রঙ বলেছেন: হাসান কালবৈশাখী ভাইয়ের সাথে সহমত, আসলেই তুলনা চলেনা অবকাঠামোর বিষয়ে, কিন্তু মানসিকতার উন্নতি না দেখলে কি এই বিষয়টা ধোপে টিকে?
আমারতো মনে হয়, কোনভাবে যদি ঢাকার ড্রাইভারদের ট্রাফিক আইন মানানো যেতো তাহলে জ্যাম কিছুটা হলেও কমে যেত।
যেমন, আমি থাকি শাহজাদপুরে, এখানে সবসময় দেখা যায় কোন একটা বাস রাস্তার মোড়ে আড় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, আর পিছন থেকে অন্য গাড়িগুলো দেদারছে হর্ন বাজাতে থাকে। চালক এতটুকু সভ্য হলে কি এইটা হয়?
ছাত্রের গরীবি তখনই মানা যায়, যখন সে লেখাপড়ায় এবং স্বভাবে ভালো।
০২ রা জুন, ২০১৪ ভোর ৬:২১
পথিক মুরাদ বলেছেন: "ছাত্রের গরীবি তখনই মানা যায়, যখন সে লেখাপড়ায় এবং স্বভাবে ভালো।" মনটা ভালো হয়ে গেল আপনার মন্তব্য পড়ে।আশা করি স ভালোর পাশেই দেখব আপনাকে। শুভ কামনা রইলো।
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:১৬
হেডস্যার বলেছেন:
সুন্দর লেখা হইছে।