নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পথিক মুরাদ

পথ হাটিতেছি এক অন্তহীন পথে....

পথিক মুরাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডিজিটাল বাংলাদেশের আলো ও অন্ধকার

০৬ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:২৩



বর্তমান সরকার তাঁদের ২০০৮ সালের নির্বাচনী ঘোষণায় যুবক সম্প্রদায়ের নজর কেড়েছিল ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়ে। বিশ্বজুড়ে ডিজিটালের উন্মাতাল বাতাস বাংলাদেশের তরুণদের মনে আলোড়ন তুলেছিল। কথিত আছে এই তরুন সমাজের নতুন ভোটাররাই সরকার কে ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করেছিলো। সরকার পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করে আরও পাঁচ বছরের মেয়াদ শুরু করেছে।এই বিগত বছর গুলোতে সরকার তার কথা রাখার চেষ্টা করেছে।

দারিদ্রে নিপিড়িত একটি দেশে রাতারাতি সবকিছুতে ডিজিটাল বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তবুও লক্ষ্য করলে অনেক কিছুতেই এখন আমরা ডিজিটালের ছোঁয়া দেখতে পাই। ব্যাংকিং ব্যবস্থা এদের মধ্যে অন্যতম। মোবাইলের বোতাম চেপে এখন চোখের পলকে করা যায় ব্যাংকিং লেনদেন। ছবির স্টুডিও জগতে এসছে শতভাগ ডিজিটাল জোয়ার,ম্যানুয়াল সাদাকালো ক্যামেরা বা ফিল্মের ক্যামেরা এখন জাদুঘরে যায়গা করে নিয়েছে। সিনেমা জগতেও চলছে ডিজিটাল জ্বর। যোগাযোগ ব্যবস্থায় এসেছে আমূল পরিবর্তন, জরুরী দরকারে রিক্সাওয়ালার মোবাইলে ফোন করে ডেকে নেয়া যায়। এসেছে কৃষি ও চিকিৎসা সেবায় ডিজিটালের ব্যবহার। রজনীতিতেও শুরু হয়েছে ডিজিটালের ব্যবহার, মোবাইল ফোনের এস এম এস দিয়ে শুরু হলেও আজ তা ঝকমকে ঢাউস আকারের বিলবোর্ড আর সামাজিক যোগাযোগের ওয়েব সাইটে এসে দাঁড়িয়েছে।বাড়ছে ডিজিটাল খাতে বৈদেশিক আয়। আরও অনেক কিছু…।

এই প্রয়াসগুলো সত্যিই সাধুবাদের দাবিদার। সেই সাথে আমরা যদি লক্ষ্য করি ডিজিটালের প্রকৃত সুবিধা ভোগী কারা, তাহলে দেখবো খুব অল্প সংখ্যক মানুষ এবং এর প্রায় পুরোটাই শহরবাসি। আর গ্রামে ডিজিটাল মানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনেই সীমাবদ্ধ। অথচ দেশের ৮৫ ভাগ মানুষ বাস করে গ্রামে। সেই গ্রাম কে ডিজিটালের আওতায় না আনতে পারলে দেশকে ডিজিটালে পূর্ণতা দেয়া সম্ভব নয় !

ডিজিটালের প্রথম এবং প্রধান বাহন দ্রুতগতির ইন্টারনেট। গত পাঁচ বছরে দেশে দ্রুত গতির ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করা হয়নি। ওইয়াই ম্যাক্স বা ব্রডব্যান্ড যেটুকু আছে তার শতভাগ বড় শহরে। সরকারী পর্যায়ে বারবার ইন্টারনেটের দাম কমানো হলেও গ্রাহক পর্যায়ে দাম কমেনি। কম্পিউটার কে করমুক্ত করলেও প্রান্তিক পর্যায়ের স্কুল গুলোতে কম্পিউটার শিক্ষার তেমন ব্যবস্থা করা হয়নি। মফঃস্বল আর গ্রাম পর্যায়ে কম্পিউটার শেখানো মূলত কম্পিউটারে লেখা,ছবি আর গানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। কম্পিউটারের জন্য করা হয়নি নিরিবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। দেশের একটি গ্রামেও কোন ইন্টারনেট ক্যাফে গড়ে ওঠেনি। গ্রামের সেই দুর্বল ইন্টারনেটে , ইন্টারনেট ভিত্তিক কোনও কাজই সফল ও সহজ ভাবে করা যায় না। সরকার ইউনিয়ন ভিত্তিক বিশ্ব যোগাযোগের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ গুলোতে কম্পিউটার দিয়েছিলো,কিন্তু দুর্বল ইন্টারনেটের কারনে সেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সফল হয়নি।

দেশের একমাত্র সরকারী মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক 3G সেবা শুরু করলেও সেটা সামান্য কিছু শহর জুড়ে বিস্তার করতে পেরেছে। গত বছরের শেষ দিকে দেশের চারটি বেসরকারী মোবাইল ফোন অপারেটর নিলামের মাধ্যমে 3G লাইসেন্স পেয়েছে। পেয়েই তাঁদের ঘোষণা বড় শহর তাঁদের প্রথম টার্গেট। সেই অনুযায়ী তারা তাদের ব্যবসা সফল শহর গুলোতে 3G বিস্তারের কাজ শুরু করেছে।এই 3G ইন্টারনেটের মুল্য ও সেবা সম্বন্ধে নাই বা বলি,কারন কিছু প্রবাসী যারা দীর্ঘদিন দেশে যাননি তারা ছাড়া সকল ব্লগারই এ বিষয়ে অবগত আছেন।আর 3G বিস্তার করতে গিয়ে কিছু অপারেটরের সিগন্যাল অবস্থা এত শোচনীয় হয়েছে যে শহরতলীতে/গ্রামে বসবাসরত গ্রাহক যারা সিগন্যাল টাওয়ার থেকে একটু দূরে তাদের ইন্টেরনেট তো দুরের কথা পাঁচ মিনিট কথা বললে তার মধ্যে তিন বার কেটে যায় অবস্থা।এখানে অপারেটররা তাঁদের মুনাফা আগে দেখবে সেটাই স্বাভাবিক।কিন্তু সরকারত তাঁর নিজের প্রতিষ্ঠান দিয়ে গ্রামকে প্রাধান্য দিতে পারতেন। কারন সরকারী সেবাতেই সাধারণের প্রধান আশ্রয়।

দেশকে পরিপূর্ণ ডিজিটালে রূপান্তরিত করতে চাইলে প্রাধান্য দিতে হবে গ্রামকে। গ্রাম থাকবে এনালগ আর দেশ হবে ডিজিটাল এটা কখনই সম্ভব নয়। তাই সর্বপ্রথম সকল গ্রামে পৌঁছে দিতে হবে বিদ্যুৎ, করতে হবে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। সরকারি ভাবে দ্রুত গতির ইন্টারনেট পোঁছে দিতে হবে গ্রাম পর্যন্ত। আর বেসরকারি অপারেটররা তখন স্বেচ্ছায় গ্রামে যেতে বাধ্য হবে প্রতিযোগিতার খাতিরে। সকল ইউনিয়ন পর্যায়ে, সম্ভব হলে প্রতিটি ওয়ার্ডে অন্তত একটি করে সরকারী অনুদানে ছোট আকারে হলেও ইন্টারনেট ক্যাফে গড়ে তুলতে হবে,যেখান থেকে গ্রামের মানুষ সহজেই প্রবাসে যোগাযোগ করতে পারবে,পাবে ডিজিটালের দ্রুত গতির অন্যান্য সেবা সমূহ। দেশের প্রীতিটি স্কুলে কম্পিউটার শিক্ষকদের কে প্রশিক্ষনের মাধ্যমে অভিজ্ঞ ও যুগউপযোগী করে তুলতে হবে। করতে হবে কম্পিউটার শিক্ষাকে বাধ্যতা মূলক। সমস্ত হাইস্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে ফ্রি ওইয়াই ফাই এর ব্যবস্থা করতে হবে। এবং সর্বোপরি ইন্টারনেটের দাম সাধারনের নাগালের মধ্যে রাখতে হবে। তাহলেই একদিন এই দেশ হবে সত্যিকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.