![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোট বেলায় ফিলিপাইন নামের সাথে আমার প্রথম পরিচয়( IRRI ) ইরির মাধ্যমে। আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা কেন্দ্র কোথায় অবস্থিত? এর উত্তর জানতেই পরিচয় হয় ফিলিপাইন নামের দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির সাথে।যেখানে ১৯৬০ সালে ফোর্ড ফাউন্ডেশন, রকফেলার ফাউন্ডেশন এবং ফিলিপাইন সরকারের সহযোগিতায় ২৫২ হেক্টর জমির ওপর গড়ে ওঠে IRRI । কখনও ভাবিনী এই দেশ দেখার সুযোগ আমার হবে। কিন্তু মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের ভাবার বাইরেও অনেক কিছুই আমাদের ভাগ্যে নির্ধারণ করে রাখেন। ফিলিপাইনে কাজের সুযোগও ঠিক তেমনি । আর এই কাজের সুবাদেই সুযোগ হল ছোট বেলার সেই বইয়ে পড়া ইরি পরিদর্শনের সুযোগ।
খ্রিষ্টান সংখ্যাগরিষ্ঠের এই দেশে মসজিদের সংখ্যা হাতে গোনা , বিশেষ করে লুযন প্রদেশে। ঈদের নামাজ পড়ার জন্য জামাতের ব্যবস্থা খুঁজতে গিয়ে জানতে পারলাম আমার অফিস থেকে নিকটতম দুরত্তে লসবানিওস নামক স্থানে ইরির অবস্থান, সেখানে একটি মসজিদ আছে এবং ঈদের নামাজের জামাত হয়। সময় জেনে নিয়ে হাজির হলাম মসজিদে। খুব সুন্দর দ্বিতল ভবনের মসজিদ , নিচতলায় পুরুষ এবং দোতালায় মহিলাদের নামাজের ব্যবস্থা। বিদেশী হিসেবে সম্মানের সাথে আমাকে তাঁরা সামনের কাতারে বসার সুযোগ করে দিলেন। সামনের দেয়াল ঘেঁসে রাখা বেশকিছু বই। ভাল করে চোখ রাখতেই দেখলাম বাংলায় লেখা “ নেয়ামুল কোরআন” আশেপাশে তাকাতে শুরু করলাম জিজ্ঞাসু চোখে , এই দূর দেশে কে নিয়ে আসলো এই বাংলা কিতাব!
নামাজ শেষে ভাবনার অবসান হল, পরিচয় হল কিছু বাংলাদেশীর সাথে যারা এই ইরিতেই পড়াশুনা এবং গবেষণা করছেন। তাঁদের কাছেই শুনলাম প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে অনেকেই সরকারী বৃত্তি নিয়ে উচ্চ শিক্ষা ও গবেশনার জন্য আসেন ইরিতে। তাঁদেরই কেউ এনেছেন এই বাংলা কিতাব। তাঁরা আরও বললেন এখানে বাংলাদেশ একটি সুপরিচিত এবং সম্মানিত নাম । শুনে গর্বে বুকটা ভরে উঠলো। সেই গর্বে ভরা বুকটা উঁচু করে রওনা হলাম ইরি পরিদর্শনে।
পাহাড়ের কোল ঘেঁসে গড়ে তোলা সবুজ , স্নিগ্ধ , শান্ত পরিচ্ছন্ন ভাল লাগার মত পরিবেশ। ভাবলাম প্রবাসের এটাই আমার ঈদ আনন্দ। প্রথমেই গেলাম ইরির ক্যানটিনে। দেখলাম সেখানে আমাদের বাঙ্গালিয়ানা কিছু খাবার পাওয়া যায়, যেমনঃ ঝাল মুরগির মাংস, মুগের ডাল , ডিম রান্না ইত্যাদি, দামও নাগালের মধ্যে। কিছু খাবার নিয়ে বসতেই দেখলাম আরও কিছু বাঙ্গালী মুখ, পরিচয় হল। কথা হল কিছু ভারতীয়, শ্রীলংকান ও জার্মানি নাগরিকের সাথে। ঈদের আনন্দ সত্যিই পরিপূর্ণ হতে শুরু করল। যখন দীর্ঘদিনেও একজন বাঙ্গালিকে খুঁজে পাইনা, আর আজ মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মত বেশ কিছু বাঙ্গালির সাথে শুরু হল ঈদের আড্ডা।
সবাই মিলে আড্ডার সাথে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম কেমন করে গ্রীন হাউজ ইফেক্ট তৈরি করে বিভিন্ন পরিবেশে ধান চাষের পরীক্ষা চলছে। গবেষণায় উৎপাদিত চারা রোপণ করা হয়েছে সামনের মাঠ জুড়ে। দেখলাম শতবর্ষ পুরনো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের হাজারো রকম ধানের জীন ব্যাংক। তারপর গেলাম ইরির জাদুঘরে। ধান চালের হরেক রকম ব্যবহার। শুধু খাদ্য হিসাবেই নয় , ধান দিয়ে তৈরি কারা হয়েছে ঘর সাজানোর মত চিত্র ও পণ্য। রাখা আছে চাল থেকে তৈরি মদ, কৃষি কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সময়ের কৃষি যন্ত্রপাতি। একটি কম্পিউটার রাখা আছে যেখানে দেখা যাচ্ছে এই মুহূর্তে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা কত, চালের চাহিদা কত, উৎপাদিত চালের পরিমান কত , ঘাটতি কত … ইত্যাদি। দেয়াল জুড়ে সাজানো আছে কৃষি প্রধান কিছু দেশের কৃষি চিত্র। বাংলাদেশের কৃষি চিত্রে চোখ পড়তেই বুকের মধ্যে হাতুড়ির আঘাতের মত কষ্ট অনুভব করলাম।
“ এক হাড় জিরজিরে বৃদ্ধ , খালি গায়ে , নেংটি পরে, কাঁধে লাঙ্গল তুলে , হাড্ডিসার দুটি বলদ নিয়ে খালি পায়ে হেঁটে চলেছে মাঠের পানে”
এই চিত্র বাংলাদেশের কৃষির প্রতীক চিত্র এটা আমি মানতে পারছিলাম না। একটা সময় সেটাই ছিল আমাদের কৃষির চিত্র এটা সত্য, কিন্তু আজ আমাদের কৃষি অনেক দূর এগিয়েছে। দু একটি উদাহরণ ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যবহার হয় কলের লাঙ্গল। ফিলিপাইনে যখন এখনও মাত্র দুইটি মৌসুমে ধান চাষ হয়, সেখানে আমরা করি বছরে তিন মৌসুমে ধান চাষ। শত প্রতিকুলতা সত্ত্বেও আমরা আজ খাদ্দ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ । সেখানে এই চিত্র আমাদের দেশপ্রেমকে আঘাত করে। সেখানে তাঁদের বলেছিলাম আমাদের বর্তমান চিত্রটা বেশ উন্নত সেটাও তোমাদের রাখা উচিৎ।
২৪ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১০:৫৭
পথিক মুরাদ বলেছেন: আরে প্রবাসী ভাই! কেমন আছেন? পথিকের বয়স হচ্ছে ভাই, আর আগের মত হাঁটতে পারিনা। তারপরও দেখা হয়ে যেতে পারে। কোন জাহাজ সারাই হলে, একবার ঘুরে যান, ভালো লাগবে। আর আপনার দূরত্ব কমিয়ে ১১ সংখ্যায় নামিয়ে আনলাম #০৯২৯৫৭১৯১২৪। ভালো থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ২:৪১
জাহাজ মিস্ত্রী বলেছেন: আমি থাকি অলংগাপো (Olongapo) শহরে। ১ বছরের জন্য এলাম। ম্যাপ এ ইরির অবস্থান দেখলাম, আমার বাসা থেকে প্রায় ৩০০ কিমি দক্ষিনে। কখনো এ দিকে আসলে আওয়াজ দিয়েন। আমার ই মেইল [email protected]