নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পথিক মুরাদ

পথ হাটিতেছি এক অন্তহীন পথে....

পথিক মুরাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গণহারে সিজারিয়ান

০৯ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৯:১১


( ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে নেওয়া)
আমার স্ত্রীর সন্তান হবে। সমস্ত পরিবার আনন্দে ভাসছে। এই পরিবারের শেষ সন্তান ছিল আমার ভাতিজী। তার বয়স এখন ১৪ বছর। বাড়ির ছোট ছেলের বউ এমনিতে একটু বেশী আদর পেয়ে থাকে। তার পর দীর্ঘ দিন পর পরিবারে নতুন অতিথি আসবে তাই বৌয়ের যত্ন আত্তির যেন কমতি না হয় সে দিকে সবার সযত্ন খেয়াল। শহরের সবচেয়ে নামকরা গাইনি ডাক্তারের কাছে নিয়মিত যাতায়ত শুরু হল। কিছুদিন পর পর রক্ত প্রসাব পরীক্ষা আল্ট্রাসনগ্রাম চলতে থাকলো। ডাঃ কম্পিউটারে দেখে সম্ভাব্য প্রসব তারিখ জানালেন ১৬ মে। অষ্টম মাসে গিয়ে ডাক্তার সাহেবা সুখবর দিলেন পুত্র সন্তানের। পরিবারের খুশির পালে নতুন হাওয়া লাগলো। মুখে মুখে সবাই ছেলে মেয়েকে সমান বললেও প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে অধিকাংশের অন্তরে থাকে পুত্র প্রত্যাশা, এটাই আমাদের আর্থসামাজিক ব্যবস্থার স্বাভাবিক চিত্র।
এপ্রিল মাসে ডাঃ জানালেন সম্ভাব্য তারিখের এক সপ্তাহ আগেই সিজার করতে হতে পারে। কারন হিসেবে বললেন সিজার টাই বেশী নিরাপদ, কোন টেনশন ঝক্কি ঝামেলা নাই। আমরা রাজি হয়ে গেলাম। মে মাসের ৪ তারিখ ছিল নিয়মিত চেকআপের। চেক আপ শেষে ডাঃ সাহেবা জানালেন আগামী কালকেই সিজার করতে হবে। সবার তো মুখ শুকিয়ে গেল সন্তানের অমঙ্গল চিন্তায়। ডাঃ অভয় দিয়ে বললেন, এখন পর্যন্ত কোন সমস্যা নেই, কিন্তু শিশুটি এখন সম্পূর্ণ ম্যাচিউরড, সিজার না করলে ক্ষতি হবে এবং অপেক্ষা করলে দায়িত্ব নিতে হবে নিজেদের। আমরা সবাই মুখ চাওয়া চায়ি করে রাজি হয়ে গেলাম। না রাজি হয়ে উপায় নেই। তিনি সবার নির্ভরযোগ্য ডাঃ। মে মাসের ৫ তারিখেই সিজার করা হল। পরদিন সকালে অন্য এক ডাঃ এসে দেখে গেলেন, কিন্তু আমাদের নিয়মিত সেই গাইনি সাহেবা আর এলেন না। খোঁজ নিয়ে জানা গেল সিজার শেষেই তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন তিন দিনের এক সেমিনারে যোগ দেবার জন্য। যাই হোক কোন সমশ্যা ছাড়াই সবার দোয়ায় আমার স্ত্রী সুস্থ অবস্থায় পুত্র সন্তান নিয়ে বাড়ি ফিরলেন।
প্রথম সন্তান থেকে তিন বছর পরে দ্বিতীয় সন্তান নেবার পরামর্শ দিয়েছিলেন ডাঃ সাহেবা। আমরা সেটাও মেনে চললাম। তিন বছর পর আবার আমার স্ত্রীর সন্তান হবে। গতবার সিজারের পর ডাঃ ঢাকায় চলে যাওয়ায় এবার তার প্রতি আস্থা না করে অন্য ডাঃ খোঁজ করলাম। বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজন সবাই সেই আগের গাইনির কথাই বললেন। আবার ও গেলাম তার কাছে। আগের মতই তিনি তারিখ জানালেন ১৭ জুলাই। এবারও জানালেন সম্ভাব্য তারিখের এক সপ্তাহ আগে পরে সিজার করা দরকার হতে পারে। কিন্তু জুলাইয়ের এক তারিখে বললেন আজকেই সিজার করতে হবে। আবার আমাদের আতংক। নির্ধারিত তারিখের ১৬ দিন আগে। তাহলে শিশুটিতো পরিপূর্ণ হাবে না। স্বাস্থ্য বিষয়ক বেশ কিছু ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখলাম গর্ভে শিশুর বয়স ৩৮ সপ্তাহ না হলে সিজার করা যাবে না, যদি না কোন গর্ভকালীন জটিলতা দেখা দেয়। আমার স্ত্রীর কোন সমস্যা দেখা দেয়নি। ডাঃ কোন কারন না বলে শুধু অভয় দিলেন। আমাদের আবারও রাজি হতে হল। এবার কোল আলো করে এক কন্যা সন্তান এলো। সন্তান সুস্থ থাকলেও গর্ভে যে সে পরিপক্কতা পায়নি, তা তার পাপড়িবিহিন চোখ দেখেই বলে দেওয়া যায়।
আমার এই বাস্তব অভিজ্ঞতার গল্পটা এখন আমাদের দেশের সবার পরিচিত এক দৃশ্য। একটু সবচ্ছল সচেতন পরিবারের সন্তান আর সিজার ছাড়া হয়না বললেই চলে, কারন তাঁরা ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। কয়েকদিন আগে পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে দেশের ক্লিনিক গুলতে ৮০% শিশুর জন্ম হয় সিজারিয়ানে। অথচ বিশ্বের যে দেশগুলো চিকিৎসা বিজ্ঞানে উন্নত তাঁদের শেষ চেষ্টা থাকে স্বাভাবিক প্রসবের।
স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের সে সুফল তা নিশ্চয় সকল ডাঃ জানেন, কারন এখন পর্যন্ত শুধু মেধাবীরাই ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পান এবং তাঁদের কে নিশ্চিত ভাবে সিজারিয়ান আর স্বাভাবিক প্রসবের সুবিধা অসুবিধা পড়ানো হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে এই গণহারে সিজার তাঁরা কেন করে থাকেন, শুধুই কি অতিরিক্ত আয়ের জন্য? দেশের প্রথম সারির মেধাবী উচ্চ শিক্ষিত মানুষ গুলোর কাছে জাতি নিশ্চয় বিবেক বর্জিত আয় প্রত্যাশা করেনা। এখানে ক্লিনিক গুলোর একটা ভুমিকা থাকে বলেই চিকিৎসার মত মহান পেশা কে ব্যবসা বানিয়ে চলছে দালালি, হয়রানি। কিন্তু অর্থ থাকলেই ক্লিনিক বানানো সম্ভব হলেও ডাক্তার বানানো যায়না।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:০৪

কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত) বলেছেন: সিজারিয়ান স্পেশালিস্ট ডাক্তার রা বিদেশে ব্ল্যাক লিস্টেড হয় আর আমাদের দেশে হিট লিস্টেড হয়। একটা সিজার (যদি অপ্রয়োজনে/অথবা বিলাসিতা) একটা নারীকে বিভিন্ন শারিরীক সমস্যার দিকে ঠেলে দেয়; যা দুর্ভোগ আর্থিক+মানসিকভাবে স্বামী স্ত্রী উভয়কেই বহন করতে হয়। শুধু বিশেষজ্ঞ নামধারী ডাক্তারদের পকেটের চাহিদা পুরণ করার জন্য। উন্নত বিশ্বে নামি-দামি মডেলরাও এমনকি টুইন বেবির ক্ষেত্রেও ডাক্তার রা নরমাল ডেলিভারি করেন বা করার জন্য সময় নেন। কারণ ওখানে সিজার যে ডাক্তারের হাতে বেশি হবে তত তার নেগেটিভ মার্ক তার পোর্টফলিওতে জমা হবে যা তার উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য অন্তরায়...আর বাংলাদেশে অনেক ডাক্তার আছেন সরাসরি বলেন আমি নরমাল ডেলিভারি করি না: সত্যিই সেলুকাস!

০৯ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:২২

পথিক মুরাদ বলেছেন: অথচ দেখেন এমন জনগুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে সরকার বা মিডিয়ার উল্লেখ যোগ্য সক্রিয় কোন অবস্থান চোখে পড়েনা। তথ্যপূর্ণ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

২| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:০৩

ক্ষনিকের পথিক বলেছেন: লেখাটা পরে ভালো লাগলো। আরো লেখা চাই।

০৯ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:০৬

পথিক মুরাদ বলেছেন: ক্ষনিকের পথিক, আপনার ভালো লাগায় আমারও ভালো লাগছে। আমার কল্পনা শক্তি প্রখর নয়, বাস্তববাদী মানুষ। তাই বাস্তবতা থেকে কিছু নিয়ে মাঝে মধ্যে হাজির হই। ভালো থাকবেন।

৩| ১০ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৯:৩৪

মাদিহা মৌ বলেছেন: সিজারিয়ান নারীদের ও পরবর্তীতে অনেক অসুবিধা পোহাতে হয়। যেকোন রোগ সহজেই তাদের শরীরে দানা বাঁধে। কাকে কী বোঝাবেন?

১০ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৭

পথিক মুরাদ বলেছেন: আমার মনে হয় সিজারিয়ানের এই কুফল সম্পর্কে জনমত গঠন অত্যন্ত জরুরী। সুশীল সমাজ, মিডিয়া, আমরা যারা কিছু লিখতে ও বলতে পারি, আমাদের সবার এই বিষয়ে ভুমিকা রাখা দরকার।
এখন পর্যন্ত এই লেখাটি প্রায় ৩৮০ জন পড়েছেন। এর মধ্যে যদি সামান্য কিছু মানুষ ও কিছু লেখার বা বলার চেষ্টা করেন, একদিন এই কসাইয়ের মত সিজারিয়ান দূর হতে বাধ্য।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

৪| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:৪৪

razibcse বলেছেন: সিজারিয়ান এখন আর কোন চিকিৎসা নয় ,ক্লিনিকগুলোর গলাকাটা ব্যাবসার নামান্তর ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.