![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি আমির আলি। ট্রাক চালাই। সপ্তাহে তিন-চার দিন পরিবার ছাড়া থাকতে হয় ট্রাকে ট্রাকে। ট্রাক চালানো যত সহজ মনে হয় আসলে কাজটা অনেক কঠিন। পাঁচ টনের পরিবর্তে মাল টানতে হয় দশ-বার টন। মালিকের ইচ্ছা। না করার কোন উপায় নাই। চাকরী থাকবো না। এত বোঝা টানতে গিয়া বিপদেও পড়তে হয় মাঝে মধ্যে। কখনো নিয়ন্ত্রন হারানো, কখনো অন্য গাড়ীকে ধাক্কা দেয়া, ছোট খাট ঠেস, ঘষা, ধাক্কা তো লাগেই। যত দোষ, নন্দ ঘোষের মত সব দোষ তখন ট্রাক চালকের ঘাড়ে আইসা পড়ে। ট্রাকের ইস্টিয়ারিং ধরলে খালি চিন্তা আর চিন্তা। না জানি কখন এক্সিডেন কইরা ফালাই, কোন সময় বেরেক ফেল করি।
খেপ শেষ হইলেও কাজ শেষ হয় না। গাড়ী ধুইয়া পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কইরা মালিক রে বুঝাইয়া দিতে হইবো। যদিও কাজটা আমি করি না, করে আমার দুই শিষ্য । আমার শিষ্য দুইটাও ওস্তাদ বলতে জান দিয়া দেয়। একসময় আমিও দিতাম।
গত শনি বার আমার দুই শিষ্য গাড়ী ধুইতেছিলো। আমি দূরে বইসা বইসা দেখতেছিলাম। দেখতেছি আর বকা ঝকা করতেছি। মা বাপ তুইলাই গালাগালি করি। আমার ওস্তাদও তাই করতো। যত গালি খাইছি, তা ফিরত দিয়া মনের জ্বালা মিটানোর চেষ্টা করি। তাই কারনে অকারনে গালি দেই। একটা নেভি সিগারেট ধরাই। দুই আঙ্গুলের মাঝখানে সিগারেট ধইরা আরামছে টানি। এই একটা জিনিস খাইয়া আমি সবচাইতে বেশী মজা পাই। এত আরাম কইরা কোন কিছু খাওয়া যায়, সিগারেট খাওয়া শিখার আগে আমি জানতাম না। সিগারেট টানতে টানতে হঠাত কানে আসে ছোট্ট একটা বাচ্চার কান্নার আওয়াজ। পিছন দিকে তাকাইয়া দেখি বছর দুই বয়স হইবো মাইয়াটার। কানতে কানতে আমার দিকেই আইতাছে। আমার সিগারেট প্রায় শেষ। ফালাইয়া দিলাম। মাইয়াডা আমার কাছে আইসা দাড়াইলো। মাইয়াডা সুন্দর। জামা কাপড়ও আমাগো বস্তির পোলাপাইনের মত না। অনেক ভাল। চোখ থাইকা পানি না যেন মায়া ঝরতাছে। কানতাছে তো কানতাছে। চোখ লাল হইয়া গেছে। আমার মায়া লাগলো। আমি কিছুক্ষন তাকাইয়া থাকলাম তার দিকে।
জিগাইলাম- কান্দো ক্যান?
কোন কথা নাই। আমারে মনে হয় একটু ভয় পাইছিল। গলাডা নরম কইরা আবার জিগাই-তুমার মায় কই? আবারও নিচ্চুপ। কথা কয় না। পাশের টং থিকা এক টাকা দামের একটা লজেন কিনা মাইয়াটার হাতে দিলাম। মাইয়াটা ভয়ে ভয়ে নিল। ভয় মনে হয় কাটতাছে। তাও দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া কানতাছে।
জিগাইলাম- আরেকটা লজেন নিবা?
মাইয়াডা কানতে কানতে মাথা নাড়াইলো। আরেকটা নিবো। আরেকটা লজেন কিনা মাইয়াডার হাতে দিলাম। কান্না থামলো। আস্তে আস্তে তার নাম জানতে পারলাম –সুমি। আর কিছু বলতে পারে না। বাপের নাম, দাদার নাম, ভাই বোন মায়ের নাম কিছুই বলতে পারে না। বাড়ি কই জানে না। ঝামেলায় পড়লাম।
কালু, আমার ছোট শিষ্য, তারে কইলাম-এই মাইয়াডারে চিনস?
কালু কইলো- না, ওস্তাদ। চিনি না। কেডা?
গালি দিয়া কইলাম-হালারপুত, আমি চিনলে কি তরে জিগাইতাম?
-তয় যে লজেন কিনা দিলেন?
-হালায় কয় কি? এত্তটুক মাইয়া কানতাছে, লজেন দিমু না কি কাঁচা মরিচ দিমু নি? না চিনলে চুপ থাক, এত কতা কছ ক্যান?
কালু চুপ মারে।
সেন্টুরে জিগাই। হেও না করে। আমি গাড়ী ধোঁয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত দেখি কেউ তালাশ করতে আসে কি না। আমি সুমির সাথে কথা কইতে থাকি। বুঝতে পারি ভাই বোন মনে হয় নাই। থাকলে তো নাম কইতে পারার কথা। তয় মা বাবার নাম জানে না। এই বয়সের বাচ্চারা মা বাবার নাম নাও জানতে পারে।
(চলবে......)
©somewhere in net ltd.