![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
খুব সকালে ঘুম ভাংলো কান্নাকাটিতে। মেয়েটা কান্নাকাটি করছে। মা বাবা বইলা কান্নাকাটি। মায়ের কাছে যাইবো, বাবার কাছে যাইবো। আমি দৌড়াইয়া বাইরে গেলাম। দোকান খুলে নাই। এত সকালে দোকান খুলে না। দুইটা লজেন পাইলে কান্না থামানো যাইতো মনে হয়। কিন্তু লজেন কই পাই। সকালে পাসের বস্তি ঘরের হালিমা আইলো। ভোরে কান্নার আওয়াজ শুনতে পাইছে। মর্জিনারে জিগায়-বিয়ানে কান্নাকাটির আওয়াজ শুনলাম। কে কানলো? মর্জিনা ঘটনা খুইলা বললো। এক কান দুই কান হইয়া এই কথা চাউড় হইয়া গেলো । তারপর সবাই জাইনা গেলো।
বস্তির অনেকে অনেক কথা কইলো। কিন্তু কেউ কইলো না-ভালো হইছে। তোমার তো বাচ্চা কাচ্চা নাই। পাইলা বড় কর নিজের মাইয়ার মত।
সবাই খালি ভয় দেখায়। পুলিশে ধইরা নিয়া যাইবো, সারা জীবন জেল খাটতে হইবো, আরো কত ভয়! আমার কলিজায়ও ভয় ঢুকতে থাকে। হাসেম আলি পরামর্শ দেয়- এই মাইয়া রাইখনা মিয়া। থানায় নিয়া দিয়া আস, যদি বাঁচবার চাও। কথাটা আমার পছন্দ হয়। মর্জিনার কথা মনে পড়ে। ওর বুকটা আবার খালি হইবো। কিন্তু কিছু করার নাই। জেল খাটার ভয় আছে মনে। সন্ধ্যা বেলায় আমি আর হাসেম আলি মাইয়াডারে লইয়া থানার দিকে রওয়ানা দেই। চারটা চকলেট কিনা লই। কান্না শুরু হইলে থামানো যাইবো।
রিক্সা থানার দিকে রওয়ানা দেয়। বুক দুরুদুরু করতে থাকে। রাজ্যের ভয় বুকের ভিতরে জমা হয়। রিক্সা যত থানার কাছাকাছি যায়, আমার ভয় ততো বাড়তে থাকে। একসময় আমার হাত পা কাঁপতে থাকে। হাসেম মিয়াকে বুঝতে দেই না। থানায় ঢুকি। মাইয়াডা আমার কোলে। লজেন খায়। একজন পুলিশ একটা বেঞ্চে বসতে বলে। একটু পরে দারোগার রুমে ডাক পড়ে। তিনজন দারোগার রুমে যাই। কি সমস্যা জানতে চায়। দারোগাকে সব খুইলা বলি। দারোগার ঠোটের কোনে বাঁকা হাসি দেইখা আমার কলিজায় পানি থাকে না। জিগায়-কতদিন?
-কি, স্যার?
-এই ব্যবসা কতদিন যাবত।
-কিসের ব্যবসা স্যার?
-মানুষ পাচারের ব্যবসা?
-আমি স্যার ট্রাক চালাই। বস্তিতে থাকি। এমন ব্যবসা করি না স্যার।
-সত্য কথা কও।
-স্যার এক বিন্দু মিথ্যা কথা কই নাই স্যার।
এইপর যা কইলো তা আমি কইতে পারুম না। আমি অশিক্ষিত মানুষ। এত খারাপ কথা আমি জিবনেও শুনিনাই। আমার বাচ্চা হয় না, এইডা লইয়াও আমারে আকথা কুকথা শুনাইলো। আমার বউডারে লইয়া খারাপ কথা কইলো। তারপর ডান্ডার বাড়ি। মনে হইলো হাড়গোড় সব ভাইঙ্গা গেলো। মনে হইছিলো ট্রাকটা দিয়া যদি চাপা দিতে পারতাম এই থানাটারে!
হাসেম আলি এতক্ষন চুপ কইরা আছিলো। এখন কইলো-স্যার আমরা অশিক্ষিত মানুষ। বুঝতে পারি নাই। ভুল হইয়া গেছে। আমাগো মাফ কইরা দেন।
এইবার, দারোগা সাব তেলে বাগুনে জ্বইলা উঠলো।
-সবকয়টারে জেলে ঢুকাইলেই কথা বাইর হইবো।
তারপর দুইজনে মিলা কত কান্নাকাটি করলাম। দারোগা সাবের দিলে দয়া হইলো না। সাফ জানাইয়া দিলো –দশ হাজারের নিচে তগো ছাড়ন যাইবো না। আর শোন, কাইল সকালে কোর্টে চালান কইরা দিমু। যা করবার আইজ রাইতেই করতে হইবো।
হাসেমের বউয়ের কাছে একটা মোবাইল ফোন আছে। আমার মোবাইল বাইর করি । মর্জিনারে জানাইতে হইবো।
দারোগা জিগায়- কারে ফোন দাও।
-আমার পরিবাররে জানাই। টাকা পয়সা জোগার করন লাগবো তো।
আমার ফোন পাইয়া মর্জিনা কান্না কাটি জুইরা দেয়। কান্নাকাটি শুননের সময় আমার নাই। আমি কান বন্ধ কইরা খালি তারে কই- আমার পকেটে হাজার খানি টাকা আছে। বাকি টাকা জোগাড় কর।
ফোন রাইখা দেই। ঘন্টা দুয়েক পরে মর্জিনা আসে। সাথে হাসেম আলির বউ। তারপর আসে আরো চারজন-কুতুব, সগির, মজা আর আবুল।
দারোগা সাব সবাইরে ভিতরে ডাকে। মর্জিনা কান্নাকাটি থামায় না। সবাই মিলা দারোগার হাতে পায়ে ধরে। দারোগা তারপরও ভয় দেখাইতে থাকে। কোর্টে চালান কইরা দিবো কয়। শেষ পর্যন্ত পাঁচ হাজার টাকায় রফা হয়। আমাগো ছাইড়া দেয় দারোগা সাব।
মাইয়াডারে রাখে না। এতটুক মাইয়া থানায় কই রাখবো, কে পালবো, কি খাওয়াবো।
দারোগা সাব বইলা দেয়- এই বাচ্চা তোমার কাছেই থাকুবো। ভালো মত আদরযত্ন করবা। যখন ডাকবো থানায় হাজিরা দিবা। আর এই বাচ্চা যদি হারাইয়া যায়, তাইলে তার দায় দায়িত্ব তোমার। তখন আর টাকা দিয়া কাজ হইব না। সোজা জেল। মনে থাকবো?
-হ, থাকবো স্যার।
আমি থানা থাইকা বাইর হই। চিন্তা বাড়ে। এই মাইয়া নিয়া আমি এখন কই যামু। বস্তি থিকা কয়দিন পরপরই বাচ্চা হারায়। কারো কিছু হয়না। এই মাইয়া হারাই গেলে আমার জেল হইবো? আজব দুনিয়া! নিজের বাচ্চা হারাইলে কিছু হয়না, আর কুড়াইয়া পাওয়া বাচ্চা হারাইলে জেল?
চলবে........................
©somewhere in net ltd.