নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সর্বদা আলহামদুলিল্লাহ

মোঃ মুজাহিদুল ইসলাম নাহিদ

মোঃ মুজাহিদুল ইসলাম নাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি গরীব দেশের ধনী হয়ে ওঠার শর্তময় রোমাঞ্চকর গল্পঃ

১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:০৩


পাথুরে পাহাড়ের বুক চিরে সোজা আকাশপাণে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ঝাউ সদৃশ বন্য চিম গাছগুলো। সকালের সোনালী রোদ্দুর প্রায়শই উঁকি দিচ্ছে ঘন চিমপাতার ফাঁক গলিয়ে । অনেকক্ষণ ধরে জানালায় বসে আছি, দেখছি আর ভাবছি; ভাবছি আর মাঝেমধ্যে দু-চার কলম লিখছি। আসলে ভাবনার সবটুকু লেখায় ব্যক্ত করার মত প্রতিভা আমার নেই। চলুন তাও একটু ভাবনার জগতে যাওয়া যাক,
প্রথমেই আলহামদুলিল্লাহ্‌ বলে মহান আল্লাহর শোকর গুজর করছি যে, দেশীয় শিক্ষাব্যবস্থায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। কিন্তু সকালে আলো ফোটার সাথে সাথে এখানে ছেলেমেয়েদের মাঝে মাদ্রাসা-স্কুলে যাবার যে উৎসাহ উদ্দীপনা আমি দেখেছি, আমার দেশে মাদরাসা-স্কুলে যাবার ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের মাঝে ঠিক ততটাই অনীহা দেখেছি। তবে এই অবস্থা সৃষ্টির জন্য দায়ী কে? আমাদের ছেলেমেয়েরা? আমাদের অভিভাবকেরা, আমাদের শিক্ষকেরা নাকি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা? আমি সোজা কথায় বলতে চাই ছেলেমেয়েরা বাদে বাকী সবাই দায়ী।

ছেলেবেলার অনেক স্মৃতিই আজো আমাদের মানসপটে জ্বলজ্বল করে ভেসে ওঠে, সুখকর মুহুর্তের পাশাপাশি অস্বাভাবিক স্মৃতিও অনেক, ফলশ্রুতিতে কষ্টের স্মৃতিগুলা আমাদেরকে প্রতিশোধ পরায়ণ একটি জাতিতে পরিণত করেছে।

অনেকেই বলে থাকে- একজন বিজ্ঞ আগন্তুকের কাছে শিক্ষাব্যবস্থা হল একটি সমাজের আয়নার মত, শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা পেলেই যেই আগন্তুক নির্দ্বিধায় বলে দিতে পারে সে সমাজের মানুষদের আচার-আচরন ও নীতি নৈতিকতার কথা। বাংলাদেশ বিগত ৫০ বছর ধরে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বমানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে কিন্তু আজও এদেশে শতাব্দ্বী পুরনো ঔপনিবেশিক ঐতিহ্যের শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। এ শিক্ষাব্যবস্থা যে স্বাধীন যুগের নতুনত্বের চাহিদা পুরনে পদে পদে ব্যর্থ হচ্ছে সেকথা বলাই বাহল্য। সাতচল্লিশের পর থেকে অদ্যাবধি শিক্ষাব্যবস্থায় কিছু কিছু সংস্কার ও পরিবর্তন সাধিত হয়েছে বটে কিন্তু তা ব্রিটিশ প্রবর্তিত শিক্ষাব্যবস্থার মূল কাঠামোর মধ্যে নিতান্তই ছিটেফোঁটার মত। ফলে স্বাধীন দেশের আকাঙ্ক্ষার শিক্ষাব্যবস্থা আজও স্বপ্নেই অধরা রয়ে গেছে।

একটু পিছনে ফিরে গেলেই দেখতে পাই, সবকিছুই চলছিল ঠিকঠাক, এরপর আসলো ইংরেজদের শাসন। তাঁদের নগ্ন হস্তক্ষেপ একে একে লণ্ডভণ্ড করে দিতে থাকলো বাঙ্গালীদের এতোদিনের সম্প্রীতি। তিল তিল করে গড়ে তোলা সমাজব্যবস্থায় কেমন যেন এক অমানিশা নেমে এলো ঝড়ের গতিতে, বাঙ্গালীদের জীবনব্যবস্থার ওপর একের পর এক হানা আঘাতে ছিন্নভিন্ন করে করে দিল সবকিছু, তবে সবচেয়ে বড় যে আঘাতটি হেনেছিল সেটি ছিল শিক্ষাব্যবস্থার ওপরে,কত মলম দিলাম কিন্তু সে ক্ষত আজও সারেনি। দীর্ঘ দিনের অপশাসনে তারা আমাদের আত্নপরিচয়, আত্নসম্মানবোধ, স্বাধীনচেতা মানসিকতা, দানশীলতা, সৌহাদ্য-ভালোবাসা সবকিছু কেড়ে নিয়ে তাঁদের চিন্তা চেতনা দিয়ে গড়া নতুন ধাঁচের একটি বাক্সে বাক্সবন্দি করে আমাদের দেহ ও মননকে পরিপাটি এক দাসের জীবনে অভ্যস্ত করে গেল, এইযে আমরা হলাম নব্য দাসের জাতি, আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারিনি, অতীতে অনেক হেকিমই ক্ষতটা সারানোর চেষ্টা করেছে তবে বাক্সের মুখ বন্ধ থাকায় সব হেকমতি বিফলে গেছে। আপনাদের কাছে প্রশ্ন থাকলো হেকিমদের ভুলটা ছিল কি সেটা খুজে বের করে আপনার হেকমতিটুকু জানানোর?

আজকে এই শিক্ষাব্যবস্থার ফসল হিসেবে আমরা পাচ্ছি বিশ্ববিখ্যাত ধর্ষক, ব্যাংক লুটেরা, ত্রান চোর, ঘুষখোর, ইত্যাদি ইত্যাদি হাজারে হাজার , হাতেগোনা যদিও ভালো মানুষ কিছু বের হচ্ছে সেটাও কঠোর পারিবারিক অনুশাসনের বদৌলতে, আপনারাতো সবই জানেন আর নতুন করে বলার কিবা আছে !!!

এই শিক্ষাব্যবস্থার আরো ভয়ংকর দিক হচ্ছে, একই দেশে বহুরূপী শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন থাকা, ফলশ্রুতিতে একই বাড়িতে, একই মায়ের দুই সন্তান দুই শিক্ষাব্যবস্থায় লেখাপড়া করার দরুন তাঁদের চিন্তা চেতনায় আকাশ পাতাল ফারাক সুস্পষ্ট ভাবে লক্ষণীয় ।

অবক্ষয় স্পষ্ট লক্ষ্য করা যায় বিভিন্ন নামে বেনামে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের হরেক রকম পাঠ্যসূচি ও পাঠদান প্রক্রিয়ার অসামঞ্জস্যতা দেখে। আজকের এই শিক্ষাব্যবস্থায় লেখাপড়া করে ভুরি ভুরি ধর্মবিদ্বেষী নাস্তিক বের হবারও বড় একটা কারণ হল শিক্ষাব্যবস্থা সঠিক শিক্ষাটা ছাত্রদের কাছে তুলে ধরছেনা,বা দিতে পারছেনা। কখনো বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে, কখনো উন্নত দেশসমূহের দোহাই দিয়ে আসল সত্যকে গোপন করারও বিশাল প্রভাব এখানে লক্ষ্যনীয় এখানে। উদাহরনস্বরূপঃ মাধ্যমিকের একটা ছাত্রকে বিজ্ঞান ক্লাসে শিখানো হচ্ছে এই পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছে বিগ ব্যাঙ বা বিশাল এক বিস্ফোরণের মাধ্যমে, মানুষ বর্তমান আকৃতি লাভ করেছে ডারউইনের বিবর্তনবাদ সুত্রানুসারে ইত্যাদি ইত্যাদি এবং সেই থেকে পৃথিবীতে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরে আসতে আসতে আজকের এই অবস্থায় এসে উপনীত হয়েছে। আবার সেই ছাত্রকেই পরবর্তী ইসলাম শিক্ষা ক্লাসে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে – “মহান আল্লাহ্‌ তায়ালা নিজ হাতে হযরত আদম আঃ কে সৃষ্টি করেন এবং আসমান ও যমীনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করে আরশে সমাসীন হয়েছেন৷”

খানিক বাদে আবার বিজ্ঞান ক্লাসে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে পৃথিবীর গতিসহ মহাকর্ষ-অভিকর্ষের জনক নিউটন, আলোক-তড়িৎ ক্রিয়া ও আপেক্ষিকতার জনক আইনস্টাইন, অমুকের জনক তমুক ইত্যাদি ইত্যাদি। এতে করে পরবর্তীতে ছাত্রদের অবচেতন মনে এসব অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের স্রষ্টা হিসেবে নামকরা এসব বিজ্ঞানীদের কথা ভেসে ওঠে । আর এভাবেই একই সময়ে একই বিষয়ে বিপরীতমুখী শিক্ষাদান শিশুমনে ধর্ম ও বিজ্ঞানের কোনটি সঠিক এটা নিয়ে একটা ধোঁয়াশার সৃষ্টি হচ্ছে, সেখানে যদি সঠিক প্রক্রিয়ায় তথ্য উপস্থাপন করে তাঁদের এভাবে বুঝানো হয়ঃ মহান আল্লাহ্‌ তায়ালা মানুষে্র জন্য এই পৃথিবীতে অসংখ্য নিয়ামতরাজি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখার পাশাপাশি সমগ্র সৃষ্টিজগতের মধ্যে শুধুমাত্র মানুষকেই জ্ঞান বুদ্ধি ও বিবেক দান করেছে যাতে করে এ সমস্ত নিয়ামত সমূহ খুঁজে বের করে নিজেদের কল্যাণের কাজে লাগাতে পারে এবং আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করে, তারই ধারাবাহিকতায় জগদ্বিখ্যাত এই সমস্ত বিজ্ঞানী দীর্ঘদিনের মেধা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রকৃতি থেকে অনেক নিয়ামত মানুষের কল্যানের জন্য খুঁজে বের করেছেন, ঠিক তোমাদেরোও তেমনি অনেক বড় হতে হবে, তাঁদের চেয়েও বেশি পরিশ্রম করে প্রকৃতিতে আল্লাহ্‌র আরো যেসব নেয়ামত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সেগুলোকে মানুষের কল্যানে কিভাবে কাজে লাগানো যায় এগুলো খুজে বের করতে হবে , তাহলে দেখা যাবে তাঁদের শিশুমনে মনস্তাত্ত্বিক যে দ্বন্ধ তৈরি হচ্ছিলো সেটা থেকে তাদেরও মুক্তি দেওয়া যাবে, পাশাপাশি চিন্তাশীল ও পরিশ্রমী একটা জাতি তৈরির ভিত্তি স্থাপন করা সম্ভব হবে।

শিক্ষাব্যবস্থায় আমার কিছু প্রস্তাবনাঃ

১। জরুরী ভিত্তিতে মাধ্যমিক পর্যন্ত বাংলাদেশের সমস্ত ছাত্র- ছাত্রীর জন্য একই পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করে তা পাঠদানের ব্যবস্থা করা। যা জাতিগতভাবে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে সহায়ক হবে, বর্তমানে হরেক রকম শিক্ষাব্যবস্থা আর হরেক রকম পাঠ্যক্রমের প্রচলন শিশুকাল থেকেই বিভক্ত চিন্তাধারার জন্ম দিচ্ছে, অতিসত্বর এই বিশৃঙ্খল ব্যবস্থার বিলোপ করে নৈতিকতাসমৃদ্ধ অভিন্ন পাঠ্যসূচির প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।

২। শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় কিতাবসমুহ যেমন মুসলিম ছাত্রদের জন্য কোরআন ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থের পাঠদান পাঠ্যসূচিতে বাধ্যতামূলক করা, কোন জাতিকে ধর্ম ছাড়া কখনোই নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়া সম্ভব না না এবং না।তাই রাষ্ট্রীয়ভাবে কল্যাণমুখী সমাজ পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ধর্মীয় কিতাবসমুহের গুরুত্ব অনুধাবন করে জরুরী ভিত্তিতে এর বাস্তবায়ন সময়ের দাবী।

৩। ছাত্রদের মাঝে সালামের প্রচলন বাধ্যতামূলক করা। যে হিংসার আগুন সমাজের দিকে দিকে দাউ দাউ করে জ্বলছে তাঁর প্রতিকার মানবসৃষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করে সম্ভব নয়, বরং রাসুল সাঃ এর শেখানো পদ্ধতি হল: ভ্রাতৃত্ববন্ধন সুদৃঢ় ও অটুট রাখার পাশাপাশি পারস্পারিক ভালোবাসা সৃষ্টির চাবিকাঠি হল সমাজে সালামের ব্যাপক প্রচলন ঘটানো, সালামের মাধ্যমেই মানুষের আচরণ ও উত্তম স্বভাবের প্রতিফলন ঘটে ।

৪। পাঠ্যসূচিতে নতুন লেখকদের গুণগত মানসম্পন্ন লেখা অন্তভুক্তকরণের মাধ্যমে নতুন প্রতিভাগুলোর যথাযথ মূল্যায়ন করা, এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয়, আমাদের গর্ব পল্লীকবি জসিম উদ্দীনের মত কবির জন্মও কিন্তু ছাত্রাবস্থায় পাঠ্যসূচিতে তার কবিতা অন্তভুক্তকরনের মাধ্যমে, সেই সময়ের হিসেব করলে আমরা যুগের সাথে তাল না মিলিয়ে বরং পিছিয়ে পড়ছি, কারণ সেই সময়েও একজন ইন্টারমিডিয়েট ছাত্রের কবিতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে অন্তভুক্ত করা হলেও এখন এগুলি চিন্তা করা আকাশকুসুম কল্পনা ছাড়া আর কিছু না, তাই অবিলম্বে এই বিষয়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করা ।

৫। যুগের চাহিদা অনুযায়ী নিজস্ব প্রযুক্তিতে পণ্য উৎপাদনের গুরুত্বের কথা বলাই বাহল্য, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জোরপূর্বক রক্তখেকো রাজনীতির সাথে যুক্ত করে নিজস্ব প্রযুক্তিতে উৎপাদনের চিন্তা করা অনেকটা- বকরি দিয়ে হাল চাষের মতই। তাই অতিসত্বর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরগুলোতে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির মিছিল, মিটিং, সভা, সমাবেশ সহ সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে ছাত্রদের সুশিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করে জ্ঞানার্জনের সুষ্ঠু প্রবাহ বজায় রাখা, পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সরকারী গেজেট পাশ করে সকল ধরনের রাজনীতি থেকে দূরে রাখার ব্যবস্থা করে জ্ঞানবিজ্ঞান ও গবেষণায় নিয়োজিত রাখা।

৬। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশাপাশি দেশব্যাপী খাতভিত্তিক সম্ভাবনাময় জেলাসমুহে অত্যাধুনিক বিশেষায়িত গবেষণাগার গড়ে তোলা, যাতে করে দেশের গবেষকদের দেশেই ধরে রেখে উচুমানের গবেষণার দ্বার উন্মোচন করা সম্ভব হয়, এই কথাগুলি শুধুমাত্র বলার জন্যই বলা নয়, আমার দেশ যখন বাইরে থেকে প্রযুক্তি পণ্য আমদানি করে তখন প্রতিটি পন্যের বিপরীতে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে থাকে, তা দিয়ে শতগুণ কম খরচে খুব সহজেই দেশের কাঁচামাল ব্যবহার করেই উৎপাদন করা সম্ভব, কিন্তু দক্ষ গবেষক ও আধুনিক গবেষণাগার না থাকায় এটা দীর্ঘমেয়াদীভাবে অধরাই থেকে যাচ্ছে। পাশাপাশি শুধুমাত্র সমালোচনা না করে ভালো সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশী বিজ্ঞানীদের দেশে কাজ করার আমন্ত্রণ জানানো, প্রতিটি বাংলাদেশীর অন্তিম ইচ্ছা থাকে দেশের তরে জান-প্রান দিয়ে কাজ করার, কিন্তু কাজের উপযুক্ত গবেষণাগার না থাকা, রাজনৈতিক ছ্যাঁচড়ামো, ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তাজনিত ঘাটতি তাঁদের ইচ্ছার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। উপরে বর্ণিত চাহিদাগুলো একজন গবেষকের বিলাসিতা নয়, বরং তাঁর উপযুক্ত প্রাপ্য-এটা সর্বদা মাথায় রাখতে হবে।

৭। সারাদেশের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রদের আবাসন নিশ্চিত করা এবং বিশ্ববিদ্যালয় হলগুলো আলাদা একটি প্রশাসনিক দপ্তর দ্বারা পরিচালনা করা, যেখানে হলগুলোর সাথে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের কোন ধরনের সংশ্লিষ্টতা থাকবেনা, যাতে করে হল-সংশ্লিষ্ট যেকোন অনভিপ্রেত ঘটনার প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ না থাকে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্রদের হলকার্ড প্রদর্শনের মাধ্যমে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে সাময়িকভাবে গেস্ট রুমে থাকার সুবিধা প্রদান করা, যাতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নিজেকে স্বাধীনভাবে মেলে ধরার ক্ষেত্রে আবাসনজনিত সমস্যার মুখোমুখি না হয়, একইসাথে এই ধরনের উদ্যেগ ছাত্রদের মাঝে আত্নবিশ্বাস ও উদ্দীপনার সৃষ্টি করে যা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের সৃজনশীলতাকে বহুগুণে বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। এই পদ্ধতির সরাসরি প্রয়োগের কথা জানতে হলে পড়ুন: (Click This Link)

৮। ছাত্রদের প্রজেক্ট বেইজড কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গবেষণাগার ব্যবহারের পাশাপাশি সফলদের ছাত্রদের উৎসাহ প্রদানের জন্য বিভিন্ন পুরষ্কার ও আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করে গবেষণা কাজে সহায়তা করা, এতে করে ছোট ছোট বিনিয়োগ দেশকে দীর্ঘমেয়াদী সুফল এনে দিবে ইনশাআল্লাহ।

৯। সারাবছর ব্যাপী ছোট খাটো ছুটির মধ্যে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ক্লাস পরীক্ষা চলতে থাকে, এতে করে ছাত্রদের না হয় ভালো লেখাপড়া না পারে একটি নিদ্দিষ্ট সময় বের করে নিজেদের দক্ষ্তা উন্নয়ন করতে, ফলে শুনতে খারাপ লাগলেও দেখা যায়, গড়পরতা সব ছাত্র ছাত্রী একই মানের, অধিকাংশরই বিশেষ কোন দক্ষতা নেই। এজন্য বছরব্যাপী ছোট খাটো ছুটির বদলে একটানা ক্লাস পরীক্ষা নিয়ে বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে প্রায় ৩ মাসের মত লম্বা ছুটির ব্যবস্থা করা যেতে পারে, এতেকরে ছাত্ররা বিভিন্ন খাতে নিজেদের দক্ষতা অর্জন সহ নানাবিধ কর্মে ছাপ রাখতে পারবে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের পরীক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার করা এখন অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষার লম্বা সময়সূচী ছাত্রদের মাঝে এঁকঘেয়েমিপনা তৈরির পাশাপাশি দীর্ঘ সময়ব্যাপী পরীক্ষার চাপ ছাত্রদের সামগ্রিক কর্মচাঞ্চল্যে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তাই যথাযথ উপায়ে পাঠ্যসূচির বিষয়বস্তু ছাত্রদের বুঝতে পারা ও সেই বিষয়ে জ্ঞানের গভীরতা যাচাই করার জন্য - "লম্বা করে খাতাভর্তি উত্তর লেখার পরিবর্তে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর পদ্ধতির প্রনয়ন করে ২ সপ্তাহের মধ্যে সমস্ত পরীক্ষা কার্যক্রম সমাপ্ত করা।

১০। দেশব্যাপী সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহযোগিতায় কেন্দ্রীয়ভাবে একটা ভলান্টিয়ার সংস্থা তৈরি করা - যেখানে সমস্ত কার্যক্রম পরিচালিত হবে ছাত্রদের দ্বারা যাতে করে প্রতিটি ছাত্র দেশের বিভিন্ন ক্রান্তিকালে সুসংগঠিতভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারবে। এই সংস্থার পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা পড়তে পরবর্তী লেখায় চোখ রাখুন।

১১। সর্বোপরি মাতৃভাষায় উচ্চ শিক্ষার দ্বার উন্মোচন করা, আমাদের দেশের ছাত্রদের একটা বড় অংশ পাঠ্য বইসমূহ ইংরেজিতে পড়ে অনার্স মাষ্টার্স পাশ করেও ভালোমত ইংরেজি রপ্ত করতে পারেনা, সেখানে ব্যাপক পরিসরে গবেষণা করা সুদূরপরাহত, এজন্য অবশ্য ছাত্রদের দোষ দেওয়া অন্যায়, উচ্চ শিক্ষায় জোর করে অন্য ভাষা চাপিয়ে দেওয়াটাও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একজন ছাত্রের অধিকার খর্ব করার শামিল বলেই মনে করি, অবশ্য এখানেও উপনিবেশিক তার একটা প্রভাব বিদ্যমান, আজকে পৃথিবীর সমস্ত উন্নত জাতিগুলোর দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই তাদের সবাই নিজ নিজ ভাষায় উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে সারাবিশ্বে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে, উদাহরণস্বরূপ আমরা চীন, জাপান, কোরিয়া, জার্মানীর কথা বলতে পারি। অথচ শোষণের শিকার আফ্রিকার শিক্ষিত জনগণ ৪-৫ টি করে বিদেশী ভাষা জানা সত্ত্বেও তাদের সামগ্রিক উন্নতির কোন চিহ্ন নেই বললেই চলে। তাই আমাদের শিক্ষিত সমাজকেও আগে নিজের ভাষায় বুঝতে দিতে হবে সে কি পড়ে কি বুঝলো, তবেই না তার কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করতে পারি। এজন্য গুণগতমান সম্পন্ন বিষয়ভিত্তিক বিদেশী বই সমূহের বাংলা ভাষায় অনুবাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাশাপাশি ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় বিশেষ পারদর্শী ব্যাক্তিদের কাজে লাগানো যেতে পারে।

এসব কিছু বাস্তবায়নের জন্য একটি দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রয়োজন, আমরা জানি এমন শিক্ষাব্যবস্থার স্বপ্ন অনেকেই দেখেন, কিন্তু স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে চাইলে সূত্রটা একটু আলাদা, আর সবার জানা : "একতাই বল।" স্বপ্নচারী বিচ্ছিন্ন হাতগুলি ধরে ঐক্যের ভীত প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থা যদি সঠিক ধারায় অগ্রসর হয় তবেই সমাজব্যবস্থা সঠিক ধারায় গড়ে তোলা সম্ভব, আর সমাজব্যবস্থা যদি সঠিক পথে চলে তবেই ইনসাফের সাথে বণ্টন ব্যবস্থা ধরে রাখা সম্ভব, আর আমাদের দেশের সম্পদগুলো ইনসাফের সাথে বণ্টন করা হলে আগামী ৫ বছরেই দারিদ্র্যকে নির্বাসনে পাঠিয়ে সব কিছুর আমূল পরিবর্তন করে ফেলা সম্ভব।

বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার নৈতিকতার ভিত্তিতে সংস্কারই পারে সত্যিকার কল্যাণমুখী নতুন প্রজন্ম উপহার দিতে, আপনার সন্তানের জন্য কাঙ্খিত বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে আপনারও হাতটি এগিয়ে দিতে হবে তাহলেই পূর্ণ হবে শর্ত, আর এভাবেই একদিন গরিব দেশটি হয়ে উঠবে ধনী ইনশাআল্লাহ ।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: সমাজে খারাপ কাজ গু্লি শিক্ষিত মানূষেরাই করে।
আমাদের মনে হয় শিক্ষায় গলদ আছে।

২| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৫১

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ১। মাদ্রাসা, বাংলা মাধ্যম স্কুল, ইংলিশ ভার্শন স্কুল এবং ব্রিটিশ কারিকুলাম স্কুলে মূলত যে পার্থক্য সেটা সাংস্কৃতিক পার্থক্য। এই তিন ধরণের প্রতিষ্ঠানের বাচ্চাদের আচার আচরণ, চিন্তা ভাবনা এক রকম নয়।
২।ব্রিটিশরা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষতি করে নাই বরং একে আর উন্নত করেছে।
৩। একই বিদ্যালয় থেক পাশ করে কেউ ধর্ষক বা ত্রাণ চোর হয়েছে আবার কেউ বড় বিজ্ঞানী হয়েছে। এতে শিক্ষা ব্যবস্থার কি ভুমিকা?
৪। শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য কেউ নাস্তিক হয় না। সৃষ্টি কর্তায় বিশ্বাস/ অবিশ্বাস আসে প্রাথমিকভাবে পরিবার থেকে।
৫। পাশ্চাত্য দেশেও স্কুলেও ডারউইনের থিওরি, বিগ ব্যাং থিওরি, নিউটন, আইনেসটাইন ইত্যাদি পড়ান হয়। পাশাপাশি বাচ্চারা চার্চ থেকে আদম (আঃ) এর কথা জানে এবং বিশ্ব সৃষ্টির বাইবেলীয় বর্ণনা পড়ে, স্বর্গ, নরক, ফেরেশতা, নবী ইত্যাদি সম্পর্কে জানে। তাদের ক্ষেত্রে কি বলবেন?
৬। ক্লাস টেন পর্যন্ত কমন শিক্ষার ব্যাপারে সম্ভবত সরকার চিন্তা করছে। এখন মাদ্রাসা, বাংলা মাধ্যম স্কুল, ইংলিশ ভার্শন স্কুল এর সিলাবাসে খুব বেশী পার্থক্য নেই (ব্রিটিশ কারিকুলাম স্কুল গুলি ছাড়া)। মাদ্রাসার ছেলেমেয়েরাও বিজ্ঞান, ইতিহাস, গণিত ইত্যাদি পড়ছে। মাদ্রাসার অনেক ছেলেমেয়ে পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে পড়াশুনা করছে ও ভালো ফলাফল করছে।
৭। পাঠ্য সূচিতে নৈতিকতা বিষয়ক গল্প প্রবন্ধ বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
৮। দেশের স্কুল, মাদ্রাসায় নির্দিষ্ট ক্লাস পর্যন্ত ধর্মীও শিক্ষার ব্যবস্থা আছে। তবে স্কুল গুলিতে পূর্ণাঙ্গভাবে নাই।
৯। মুসলমান ছাত্র/ ছাত্রীদের ইসলামি আদব কায়দা শেখানতে গুরুত্ব আরোপ করা যেতে পারে।
১০। সাহিত্যের ক্ষেত্রে আগের যুগের কবি/ লেখকদের টপকে যাওয়ার মত মেধা এখন দেখা যাচ্ছে না। শিশুদের মানুষিক বিকাশের অনুকুল যেকোনো সাহিত্য কর্ম, হোক আগের যুগের বা বর্তমান যুগের, পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
১১। ছাত্র ও শিক্ষকদের যে রাজনীতি আমাদের দেশে চলছে তা আমাদের পাশের দেশ ভারতেও নেই।
১২। গবেষণায় এত কম অর্থ বরাদ্দ পৃথিবীর আর কোনও দেশে আছে কিনা সন্দেহ। এদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মৌলিক গবেষণা খুব একটা আছে কি না সন্দেহ। বেশীর ভাগ এখন ইন্টারনেটের সহায়তায় উন্নত বিশ্বকে কৌশলে নকল করে।
১৩। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র/ ছাত্রীদের আমেরিকার মত সহজ শর্তে শিক্ষা ঋণের ব্যবস্থা করা উচিত। ফলে হলে থাকার যন্ত্রণা থেকে অনেকে বাচতে পারবে।
১৪। উচ্চ শিক্ষা ইংরেজিতেই হওয়া উচিত। আমরা জার্মানি, জাপান, চীন বা কোরিয়ার চেয়ে জ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অনেক পিছিয়ে। ক্লাসে আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা বুঝানোর জন্য বাংলাই ব্যবহার করেন আশা করি। বাংলায় পড়লে পরে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে সমস্যা হবে। শুধু ইংরেজিতে ভালো হওয়ার জন্য ভারতীয়রা আমাদের চেয়ে প্রবাসে চাকরীর ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা। বাংলার প্রতি অতি আবেগ ছাড়তে হবে।

১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:১৬

মোঃ মুজাহিদুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন: সাড়ে চুয়াত্তর ভাই আপনার দীর্ঘ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.