![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারকে আমরা বলি গণতান্ত্রিক সরকার, যেখানে মানুষ সুষ্ঠুভাবে তাদের মত প্রকাশ করতে পারে। যেখানে চর্চা হয় সুস্থ ও আদর্শ মূলক রাজনীতি। কিন্তু পোড়া কপাল আজ আমার প্রিয় বাংলাদেশে গণতন্ত্রের নামে হচ্ছে ব্যবসা। গণতন্ত্রে যেখানে সরকার জনগণের চাকর হওয়ার কথা, সেখানে জনগণকে বন্দী করে চাকর বানানো হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আর কতদিন এইভাবে চলবে? যা চলছে তা কি গণতন্ত্র নাকি অগণতন্ত্র?
যদিও স্বাধীনতার প্রায় ১০ বছর পর আমার জন্ম, তাই জন্ম সূত্রে কোনো ভাবে আমি মুক্তিযোদ্ধ বা রাজাকার নই। তবে বর্তমান সরকারের খপ্পরে পরে যে কেউ রাজাকার বা মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যেতে পারে। অনেকের মতে এই অগণতান্ত্রিক সরকার হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর মেশিন। যে কাউকে এই মেশিনে ঢুকালে সে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসাবে বেরিয়ে আসবে। আর কেউ এর মেশিনে ঢুকতে না চাইলে বা মেশিন থেকে বেরিয়ে গেলে, হয়ে যাবে রাজাকার। উদাহারন স্বরূপ- কাদের সিদ্দিকীকে এক সময় এই সরকার মুক্তিযোদ্ধা বললেও এখন রাজাকার বলতে মুখে রাধে না, আর প্রধানমন্ত্রীর বিয়াই সাহেব রাজাকার হলেও রাজাকার না, কারণ ওনি সরকারের আত্মীয়। এই দুই হচ্ছে বর্তমান অগণতান্ত্রিক সরকারের স্বাধীনতার পক্ষে এবং বিপক্ষের ব্যাখ্যা। দীর্ঘ ৪৩ বছর পর আওয়ামীলীগ সরকার যুদ্ধ অপরাধীর নিয়ে কেন এত ব্যস্ত হলো তা একটু জানা দরকার। আওয়ামীলীগ এবং জামায়াতের প্রেম কাহিনী প্রথম কথায় এবং কিভাবে শুরু হয় তা আমার জানা নাই। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তৎকালীন সরকার প্রধান এবং আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধ অপরাধীদের ক্ষমা করেছিলেন। এরপর ১৯৮৮ এবং ৯৬ আন্দোলনের জামায়াত এবং আওয়ামীলীগের প্রেম কাহিনী ছিল লাইলী-মজনুর চেয়েও জনপ্রিয়। একই সঙ্গে উঠা-বসা এবং কি জামায়াত নেতা গোলাম আজমের পা ছুয়ে ছালাম পর্যন্ত করতে দ্বিধা করেনি শেখ হাসিনা। তখণ তিনি যুদ্ধ অপরাধী এবং রাজাকার নিয়ে কোনো কথা বলেনি, তবে আজ কেন? শেখ হাসিনা কেন আজ জামাতের প্রতি এত উগ্র? সেই গলার বন্ধু আজ যেন গলার কাটা হয়ে গেছে। তবে কি বুঝে নিবো, জামায়াত নেতাদের ফাসির অন্যতম কারণ হচ্ছে আওয়ামীলীগের সঙ্গে জোটে না থাকায়। যদি তাই হয় তাহলে বলতে হবে “আওয়ামীলীগ যার বন্ধু, তার আর কোনো শত্রুর প্রয়োজন নাই” আর এটি হচ্ছে জাতীয় পার্টির জন্য সংবিধিবদ্ধ সর্তকীকরণ”।
বর্তমান সরকারের রাজনীতির ধরন এবং চলন হচ্ছে রাজার মত। রাজা যেমন মনে করেন রাজার ইচ্ছাই জনগণের ইচ্ছা। রাজার ইচ্ছা পালনের জন্য রাজার গৃহীত পালিত চাকর-রা একের পর এক অবিচার আর অত্যাচার করে থাকে সাধারণ জনগণের উপর। অভাগা জনগণ রাজার সবকিছু মুখবুজে সহ্য করে আর আশায় বুক বাধে একদিন স্বাধীন হবে। সেই স্বপ্ন নিয়ে যুদ্ধ করেছিল বাংলার মানুষ। খুব দুঃখ করে বলতে হয় যে, আমরা সাধারণ জনগণ এখনো পরাধীন। আজকে আমাদের স্বাধীনতা থাকার পরও আমরা নিঃস। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে ১৯৭১ সালের যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যা পেয়েছি তা হলো একটি দেশ, যার নাম হলো “বাংলাদেশ”। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশীরা স্বাধীন হইনি। যদি আমরা স্বাধীন হতাম তাহলে আজ আমাদের ভোটাধিকার থাকত। আমরা মন খুলে ভাব প্রকাশ করতে পারতাম। আমাদের সরকার আমাদের কণ্ঠস্বর মূল্যায়ন করত। তাই বাংলার মানুষের জন্য ২০১৪ সালের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, ২০১৪ সালের সংগ্রাম গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রাম, ২০১৪ সালের সংগ্রাম মুক্ত মনের ভাব প্রকাশের সংগ্রাম এবং ২০১৪ সালের সংগ্রাম আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম। ১৯৭১ সালে ২৫শে মার্চ যেভাবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙ্গালীর নিরীহ, নিরস্ত মানুষের উপর ঝাপিয়ে পড়েছিল ঠিক সেই ভাবে মতিঝিলে গত ৫ই মে বাকশাল বাহিনী রাতের অন্ধকারে ঝাপিয়ে পড়েছিল নিরীহ, নিরস্ত এবং ধর্মভিরু মানুষের উপর। কেউ কি বলতে পারেন কি পার্থক্য আছে সেই হানাদার বাহিনী এবং বাকশাল বাহিনীর মধ্যে?
মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে ৩০ লক্ষ শহীদ আর আওয়ামীলীগ সরকার শেয়ার বাজার ধ্বংশের মাধ্যমে পথে বসিয়েছে ২৭ লক্ষ পরিবারকে। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী এবং বাকশাল বাহিনীর মধ্যে মিলটা যেন পার্থক্যের চাইতে বেশি। প্রকৃত পক্ষে কোনো পার্থক্য নেই, তারপর কি আপনি বলবেন এই সরকার স্বাধীনতার পক্ষের সরকার?
বর্তমান সরকারী দল গত ৫ বছরে যতটুকু সফল তার চেয়ে বেশি সফল বিরোধী দল দমনে। প্রধান বিরোধী দলের নেত্রীকে তার ক্যান্টনমেন্ট বাড়ি থেকে বিতাড়িত করা থেকে শুরু করে গৃহবন্ধী পর্যন্ত ছিল এই সরকারের অগণতান্ত্রিক কাজক্রমের উল্লেখযোগ্য বহিঃপ্রকাশ। প্রধান বিরোধী দলের শীর্ষ ১৬ নেতাসহ প্রায় লক্ষাধি নেতা/কর্মীর হাজতবাস। শুধু তাই নয়, এই সরকার গলাচিপে রেখেছে গণমাধ্যমকেও। বিরোধী দলকে গণতান্ত্রিক কার্যক্রম করতে না দেয়ার জন্য এই অগণতান্ত্রিক সরকার ডেকেছিল অবরোধ। যার মাধ্যমে সরকার নিজেই জল এবং স্থল বন্দর রেখেছিল জনশূণ্য। অবরোধে বন্ধ রেখেছিল খাবার দোকানসমূহ। অবরোধে মোড়ে মোড়ে বসানো হইয়াছিল আওয়ামী ক্যাম্প। যাতে গণতন্ত্র বিশ্বাসী কেউ গণতন্ত্রের আন্দোলন শরিক হতে না পারে, তারপর কি আপনি বলবেন এই সরকার গণতান্ত্রিক এবং সংবিধান মোতাবেক দেশ পরিচালনা করছে?
এবার আসি গণতান্ত্রিক সরকারের মন্ত্রীদের আয়ের খাতায়। এই বিষয়ে বেশি কিছু বলে ওনাদের আয়ের ঘাটতি করার ইচ্ছে আমার নাই। শুধু এটুকু বলব যে, ওনাদের আয় দেখলে মনে হয় ওনারা এই বলে শপথ নিয়েছিল যে, “ক্ষমতায় উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, পাঁচ বছরে আমি যেন ভালো ভাবে চুরি করি”।
আমি অনুরোধ করব এই সরকারকে, আমাদের স্বাধীনতা আমাদের ফিরিয়ে দিতে। বাংলার মানুষ যেভাবে পাকিস্তানকে জবাব দিয়েছে তার পুনরাবৃত্তি আর করতে চায়না। মানুষের আহাজারি, কান্না এবং কষ্টকে অনুভব করে একটি সুন্দর এবং বহুল কাঙ্খিত নির্বাচন প্রস্তাব করবেন এই আশায় থাকলাম। আমরা আগামীর জন্য একটি সুন্দর, সফল এবং শক্তিশালী বাংলাদেশ চাই। ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.