নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাস্তবতাই সত্য

হাসানুজ্জামান খান (হীরা)

হাসানুজ্জামান খান (হীরা) › বিস্তারিত পোস্টঃ

জনগনের অর্থ সরকারের নীতিতে পিষ্ট

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:২১

সাদাকালো চুল, লাল-সবুজের পাঞ্জাবি, পেশায় উপদেষ্টা এবং সুশীল সমাজের একজন হিসাবে পরিচয় করে দিলেন টকশো-র উপস্থাপক । তারপর সম্মানিত বুদ্ধিজীবি ঝড়ের মত দেশের অর্থনীতি ব্যাখা দেওয়া শুরু করলেন । ব্যাখা শুনে কত অবাক হলাম তা লিখে বোঝানো সম্ভব নয়। শুধু তাই নয়, বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবির অর্থনীতির উপর যা দখল, তা দেখে সত্যি অবাক হওয়ার মতো। আনন্দের বিষয় হলো বুদ্ধিজীবির এই ব্যাখা শোনার আগে এডাম স্মিথ পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন নয়তো লজ্জায় তার মাথা কাটা যেত। জনাব বুদ্ধিজীবির মতে, বর্তমান সরকার দেশের অর্থনীতি কে অনেক সচল রেখেছেন, দেশে কোনো সংকট নেই, এবং এবার প্রবৃদ্ধির হার লক্ষ্য মাত্রায় পৌছাতে কোনো বাধা নেই। উদাহরণ স্বরূপ, উনি উল্লেখ করেন যখন বিশ্বের বড় বড় ব্যাংকগুলোর অবকাঠামো একের পর এক ভেঙ্গে পড়ছিল, তখন বাংলাদেশ সরকার নতুন নতুন ব্যাংক খোলার অনুমোদন দিচ্ছিলেন। তারমতে, ব্যাংকিং সেক্টরে বাংলাদেশের অবস্থা ভালো কারণ কোনো ব্যাংক এখন পযন্ত আর্থিক সংকটে বন্ধ হয় নাই। সর্বশেষে তিনি জোরালো ভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকে রিজার্ভের পরিমান কে সরকারের অন্যতম সাফ্যল বলে মনে করেন।
যে কোনো দেশের অর্থনীতি সচল হয় সে দেশের সরকারি এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের যৌথ প্রয়াসে, তবে বেসরকারী বিনিয়োগটাই প্রধান। একটু ভাবুন তো, বিসমিল্লাহ, হলমার্ক, ডেসটিনি-র মতো প্রতিষ্ঠান যখন হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে এবং শেয়ার মার্কেটের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে যখন কোটি টাকা লুট হয় বা লুট করা হয় তখন দেশের অর্থনীতি কিভাবে সচল থাকে? বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবির কাছে প্রশ্ন, আপনি কি জানেন, বাংলাদেশর অর্থনীতি কিসের উপর নির্ভর করে ? বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রধানত নির্ভর করে- পোশাক শিল্প (গার্মেন্টস ), বৈদেশিক মুদ্রা আয়(রেমিটেন্স), বৈদেশিক বিনিয়োগ (ফরেন ইনভেস্টমেন্ট ) এবং রাজস্ব আদায় (রেভিনিউ )। এই চারটি ছাড়া আরো অনেক বিষয়ের উপর অর্থনীতি নির্ভর করে তবে এই চারটি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান স্তম্ব। এই চারটির সঙ্গে জড়িত আছে ডলার রিজার্ভ, লেনদেনের ভারসম্য, মুদ্রা বিনিময়, আমদানি এবং রপ্তানির মতো অনেক কিছু। তবে এখানে বলে রাখা ভালো যে, বাংলাদেশ প্রচুর পরিমান বৈদেশিক সাহায্য পায় এবং অর্থ ধার (লোন) করে যা প্রতি বছর বাজেটে অন্তভুক্ত থাকে।
বর্তমান পোশাক শিল্পের অবস্থা কেমন তা সরকার বাদে সবাই জানে। একজন পোশাক ব্যবসায়ী-র তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশে ৫০ লক্ষের বেশি মানুষ পোশাক শিল্পের উপর নির্ভরশীল। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের চাহিদা কমে যাওয়ায় কত ক্ষতি হচ্ছে তা তাত্ক্ষনিকভাবে হয়তো বোঝা যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি যেমন কমেছে, তেমনি কমেছে দাম ও। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পরও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ শতাংশ কিন্তু বিশ্ববিখ্যাত কোম্পানিগুলো মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় প্রবৃদ্ধির হার কমে যায়। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিযোগী দেশ হিসাবে ভিয়েতনামের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১৫ তে উপনীত হয়েছে। অথাৎ ক্রেতারা বাংলাদেশের পরিবর্তে ভিয়েতনাম এবং ভারত কে বেছে নিচ্ছে। ভাবুন তো আমাদের অর্থনীতি কোথায় যাচ্ছে?
গত ২০০৮ সালে যখন বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলো তখন বাংলাদেশের অর্থনীতি দাড়িয়ে ছিল প্রবাসী বাঙালিদের পাঠানো বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রার কারণে। প্রকৃত পক্ষে, ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পযন্ত প্রবাসীরা যে কোনো সময়ের চাইতে বেশি অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। প্রবাসী বাংলাদেশী-রা দেশের অর্থনীতি কে ধরে রেখেছে আর তাই আপনাদের সরকার দ্ধিধাহীনভাবে নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দিতে পেরেছেন। তাই আমাদের মনে রাখা উচিত, সরকার নয় সাধারণ মানুষেই অর্থনীতি কে জড়িয়ে রেখেছে যা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রলায়ের মাধ্যমে লুট হচ্ছে। শ্রদ্ধেয় বুদ্ধিজীবী প্রবাসে খেটে খাওয়া মানুষের প্রতি তাদের প্রাপ সম্মান টুকু না দেখিয়ে সরকারের মিথ্যা প্রসংসায় ব্যস্ত ছিলেন।
ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার শেষ সময়ে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশের বেশি এবং জিডিপি-বিনিয়োগ অনুপাত ৩২ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু প্রবৃদ্ধি ৬ ও বিনিয়োগ ২৬ শতাংশেই আটকে রয়েছে। অবাস্তব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করায় রাজস্ব সংগ্রহে এ বছরও ২৫ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হবে বলে উঠে আসে সি পি ডি’র পর্যালোচনায় (প্রথম আলো)। শুধু তাই নয়, বর্তমানে খেলাপি ঋণের হার ১২ দশমিক ৭৯ শতাংশ থেকে কমে ১১ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এলেও পরিমাণ আগের বছরের ৪৩ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৭,২৯০ (২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর পযন্ত) কোটি টাকা। আবার খেলাপি ঋণের হারের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ঋণ খেলাপির হার দ্বিগুণ অর্থাৎ ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ যা সম্পূর্ণ জনগনের টাকা। জনাব বুদ্দিজীবী দয়া করে কি একটু হিসাব করে বলবেন, শেয়ার বাজার এবং ঋণ খেলাপির মধ্যদিয়ে বর্তমান সরকারের আমলা এবং শুভাকাঙ্খী কত টাকা হাতিয়ে নিয়েছে? ভাবতেও অবাক লাগে, মাত্র ২০ জনের কাছে ঋণের পরিমান হচ্ছে ৫৬ হাজার কোটি টাকা, আর ৫০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ আছে এমন উদ্যোক্তার ও শিল্প মালিকের সংখ্যা ৩০ জনের মতো। আপনারা কি মনে করেন জনগণ কি বোঝে না,কারা এই সুবিধাভোগী গোষ্ঠী ? সি.পি.ডি’র দেবপ্রিয় বলেন “২০১২ সালে পাচার হয়েছে ১৮০ কোটি ডলার, যা বৈদেশিক সাহায্যের চেয়েও বেশি। এই অর্থই আবার বৈদেশিক বিনিয়োগ হিসেবে দেশে ফিরে আসছে বলে মনে হয়।” অথাৎ, সরকার রীতিমতো কালোটাকা সাদা করে নিজেকে নিরাপদ রাখতে ভুলে যায়নি।এই হাতিয়ে নেওয়া হাজার হাজার কোটি টাকা সাধারণ মানুষের টাকা। এরপরও কি আপনি বলবেন সরকার অর্থনীতি কে সচল রেখেছেন?
সরকারের বিলাস বহুল বাজেট যে বরাবরই ব্যর্থ তা নিয়ে সরকারের মাথাব্যথা নেই। গত ২০১০-২০১১ অর্থ বছরে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৬ দশমিক ৭ যা আজও অর্জন করা সম্ভব হয় নাই, এবার ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৩ জানিনা তা কবে অর্জন সম্ভব হবে। অন্যদিকে সরকার ডলার রিজার্ভের ক্ষেত্রে একটি ভালো অবস্থানে আসে একথা স্বীকার করতে হবে। তবে ডলার রিজার্ভ যে সবসময় কল্যাণ বয়ে আনেনা তাও আমাদের মনে রাখতে হবে। লেনদেন এবং বিনিয়োগের অভাবে অলস ডলার কতটুকু কল্যাণ বয়ে আনবে তা আমার জানা নাই।
পৃথিবীর এই দুটি নীতি; অর্থনীতি এবং রাজনীতি যা একটি ছাড়া অন্যটি প্রায় মূল্যহীন। আজ আমরা রাজনীতি করতে এসে অর্থনীতি কে ধংশ করছি। একদিন হয়ত আমরা একটি নির্ভরযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনতিক সমস্যা সমাধান করতে পারব, কিন্তু অর্থনৈতিক ভাবে অনেক পিছিয়ে পড়বো। আমরা হয়তো পোশাক শিল্পের মতো বড় কোনো বিনিয়োগের সুযোগ হারাব। তাই আসুন অর্থনীতি কে নিয়ে আমরা রাজনীতি থেকে বিরত থাকি। দেশের সার্বিক অর্থনীতি নিয়ে আমরা কোনো মিথ্যা তথ্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্তি না করি । ধন্যবাদ

লেখক : এইচ, কে হীরা (একজন সচেতন নাগরিক )
কর্পোরেট ব্যাংকার, নিউ ইয়র্ক থেকে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.