![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাদাসিধে ভাবে পুরাহাতা শার্ট পরে ক্লাসে আসতাম। এক কথায় গ্রামের মধ্যবর্তী একটি পরিবারের সন্তান বলতে যা বোঝায় তার সবকটি ব্যাপার-স্যাপার ছিল আমার মধ্যে। বাবা-মায়ের কথা মতো মেস আর ক্লাস ছাড়া অন্য কিছু ভাবার ফুসরত হত না। ভাবনার মধ্যে সবচয়ে বড় ভাবনা ছিল কিভাবে বড় হওয়া যায়? এভাবে চলতে থাকে বেশ কিছুদিন। হঠাৎ আমার পচন্ড জ্বরের কারণে কয়েক দিন ক্লাসে আসতে পারি নাই।ক্লাসে আসি প্রায় দুই সপ্তাহ পরে। প্রথম ক্লাস শেষ করে দু-টাকার বাদাম কিনে পাশ ফেরাতেই সে বলল, একা একাই বাদাম খাবা আসো একসঙ্গে বসে বাদাম খাই। সে আমার সহপাঠি, যতটুকু মনেপড়ে হাতেগোনা কয়েকবার চোখাচোখি হয়েছিল তবে তা মনে রাখার মত কিছুই ছিলনা। অনেকটা শান্ত প্রকৃতির, সুন্দর গোছানো করে কথা বলত, ব্যাগ ভর্তি প্রাচুর্য থাকলেও সাধারনতার মধ্যেই ছিল তার পৃথিবী। তার সবকিছু যেন ছেয়ে যায় কেমন একটা উষ্ণ আকর্ষণে, পথিকের পায়ে হাটা ক্লান্ত শরীর যেন মুহুর্থে জীবন ফিরিয়ে পায় তার হাসিতে। বড় বড় চোখে পৃথিবীর সবকিছু যেন তার কাছে সুন্দর লাগে। সেদিন বাদাম খেতে খেতে অনেক কথাই হলো যেন চল্লিশ মিনিটের পরিচয় মনে হচ্ছিল চল্লিশ দিনের মতো। এরপর একসঙ্গে পরের ক্লাস এভাবে একদিন, একমাস করে তিন বছর পার হয়ে গেল। তিন বছরে স্মৃতির হৃদয়ে জমা হয়েছে অসংখ্য কথা, আবেগ, ভালবাসা, সপ্ন এবং ইচ্ছা । তিন বছর পর যখন নিজের দিকে তাকালাম তখন আমি আর ফুলহাতা শার্ট পড়িনা। আমি তখন টি-শার্ট পড়ি, জিন্সের প্যান্ট, ডান হাতে ঘড়ি এবং শরীরে সুগন্ধি। তিন বছরে জীবনের রঙ, রুচি এবং ইচ্ছা বদলে গিয়েছিল আমার। বেড়ে গিয়েছিল জীবনের পাগলামি, চোখেমুখে ছিল সীমাহীন অভিমানী ভালবাসার নেশা। সবকিছু মিলে সেকেন্ডের মত যেন শেষ হয়েছিল তিনটি বছর।
হেমন্তের কোনো এক বিকেলের আড্ডায় সব বন্ধুরা মিলে চা খাচ্ছিলাম ঠিক এমনি একটি মুহুর্থে সবাই মিলে ঠিক করি এবার পিকনিকে কক্সবাজার যাবো। যেই কথা সেই কাজ, স্যার দের সঙ্গে কথা বলে সবকিছু পাকা হয়ে গেল। নির্ধারণ করা হলো দিন এবং তারিখ। প্রস্তুত সবাই এবং তার সঙ্গে আমিও। এই প্রথম সে দীর্ঘ চব্বিশ ঘন্টার ও বেশি সময় সে আমার পাশে থাকবে, ভাবতেই অবাক লাগছিল। সপ্নে বিভোর দু-চোখ, ক্লান্তহীন মন সারাক্ষণ খেলা করে মেঘের সাথে। অন্য দিকে তার কোনো প্রস্তুতি ছিল না । তার দু চোখে একটাই সপ্ন, নগ্ন পায়ে সমুদ্র তীরে হাটবে তবে এক পায়ে তার নুপুর থাকবে আর অন্য পা খালি। সবকিছু ঠিক-ঠাক ছিল, সকাল সকাল উঠে বাসের দিকে দৌড়। ভাবতেই অবাক লাগছে দীর্ঘ ভ্রমনে একসাথে, যদিও অনেক সময় একসঙ্গে কাটিয়েছি তারপরও এই পিকনিক যেন আলাদা একটা আনন্দ দিচ্ছে । বাসস্টান্ডে পৌছাতেই ওকে খুব একটা উচ্ছল না দেখে একটু অবাকেই হয়েছিলাম।সে তার সবকিছু আমার হাতে দিয়ে বাসে গিয়ে উঠলো। বাসে উঠে আরো অবাক হলাম যখন দেখলাম তার পাশে অন্য কেউ। আকাশে উড়ো মনটা ধপাস করে মাটির পৃথিবীতে ফিরে এলো। নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, তেমনি সবার সামনে কিছু বলতেও পারছিলাম না।এই প্রথম বুকের ভিতর একটা চিন চিন শব্দ শুনতে পারলাম। চোখ বন্ধ করে ফাকা একটা সিটে বসে পরলাম। সারা রাস্তায় চোখ খুলিনি, কিছুই খাইনি কারো সঙ্গে কথাও বলিনি। কক্সবাজারে নেমে তার দিকে তাকালাম, দেখে বুজতে দেরী হয়নি তার মনের অবস্থা। দীর্ঘক্ষণ এক অপরের দিকে তাকিয়ে থাকলাম কিন্তু কোনো কথা হয়নি। সবাই মিলে ফ্রেশ হয়ে ডিনার করে, হাটতে গেলাম। ভরা জোসনায়, হালকা কুয়াশায় দু-জনে পাশাপাশি হাটছিলাম। রাস্তার দু ধারে বড় বড় গাছ, আশে-পাশে ঝি ঝি পোকার ডাক।চাদের আলোতে আর তীরের বাতাসে গাছের পাতাগুলোর নৃত্য ছিল মনোমুগ্ধকর। হঠাৎ সে দাড়িয়ে বলল, আমাকে বুঝতে আর কত বছর লাগবে তোমার ? আমি বোকার মতো তাকিয়ে ছিলাম। কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে বোকার মতো আবার জিজ্ঞাস করলাম, তুমি কি আমায় ….? কথাটি শেষ করতে না করতেই দেখলাম তার কান্না ভরা দু চোখ। ঝল ঝল করে ঝরছে চোখের পানি। তার কান্না দেখে অবাক হতে না হতেই ধপাস করে একটি থাপ্পর এসে পরে আমার গালে। নিশ্বাসের খুব কাছে এসে বলল আমি তোমাকে ঘৃনা করি আর এই যে দেখছো আমি কাদছি এর চেয়ে বেশি কাদবে তুমি আর সেদিন বুজবে ভালবাসি কি-না । সে দৌড়ে চলে গেল হোটেলের দিকে, সারারাত আর কথা হয়নি তার ফোন বন্ধছিল। পরের দিন সকালে উঠে নাস্তা করে সবাই বেরিয়ে পরলাম সমুদ্র স্লানে। রাতের ঘটনার কারণে সমুদ্রে নামার কোনো ইচ্ছাই আমার ছিলনা। আমার দু চোখ ভরে শুধু সে আর তার কান্না ভেজা চোখ। সারাটি রাত অপেক্ষায় ছিলাম কখন সকাল হবে, কখন তার সঙ্গে দেখা করে ক্ষমা চেয়ে নিবো আর বলব যে কথাটি গত তিন বছরে বলা হয়নি। সকালে তাকে দেখে মনে হচ্ছিল সে রাতের কথা ভুলে গিয়েছে। আমি তার পিছে পিছে হাটছিলাম আর ভাবছিলাম সবার সামনে চিৎকার বলি আমি তোমাকে ভালবাসি। ইচ্ছা থাকলেও সাহস হয়নি। অন্য সবার সঙ্গে সেও সমুদ্রের স্লানে। তার আনন্দ দেখে আমার মনটা ভলো হয়ে গিয়েছিল, তাই আমি অন্যদের সঙ্গে ভলিবল খেলতে গেলাম। খেলার নেশায় ভুলেই গিয়েছিলাম জীবনের প্রিয় মানুষটার কথা আর তাই হারাতে হলো সারাজীবনের জন্য। খেলার মাঝখানে হঠাৎ দেখি অনেক লোকের গ্যান্জাম। দৌড়ে যাই, আমার সব বন্ধুরা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে, কান্নায় ভারী হয়ে যায় বাতাস। বেশ কয়েকটা জাহাজ এবং নৌকা দিয়ে খোজাখুজি করা হয় কিন্তু তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। নিমিষেই ঘটে যাওয়া ঘটনাটি ধংস করে দেয় জীবনের সব সপ্নকে। খুব কষ্ট হয় কারণ তাকে বলতে পারিনি যা সে শুনতে চেয়েছিল, পারিনি তাকে নিয়ে নগ্ন পায়ে সমুদ্রের তীর বেয়ে হাটতে। কখনো ভাবিনি সে এমন ভাবে ঘৃণা করে চলে যাবে। যার হাত ধরে আমি ভালবাসা শিখলাম, যাকে ভালোবেসে ভালবাসা বুঝলাম, যার চোখে আমি আমার পৃথিবী দেখতাম আজ আমি সে বিহীন এক মৃত জীবন। পড়াশুনা শেষ করে বিদেশী একটি জাহাজ কোম্পানিতে যোগ দিয়েছি। আমার জাহাজ যখন সাগরের বুকে ভাসে তখন আমি ভাবি আমি তার বুকের মাঝে দুলছি কিন্তু পরক্ষনেই ভুল ভেঙ্গে যায়। আমি বঙ্গোপসাগর থেকে ভারত সাগর আর প্রশান্ত মহাসাগর থেকে আটলান্টিক মহাসাগর আমার দু চোখ শুধু তাকে খোজে। বহুবার তার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। মনেহয়েছে সাগরের পানিও আমাকে ঘৃনা করে। তার বলে যাওয়া ঘৃনা শব্দটি আমার জীবনের এক অন্যরকম ভালবাসা।আজ প্রায় তিন বছর হয়ে গেল। একটি দিন ও তাকে ভুলে থাকতে পারিনি আর কোনদিন পারব কিনা জানিনা। তবুও সমাজের কথা চিন্তা করে কিছু একটা করতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে, বাবা। আমাদের সমাজে সন্তানদের স্বাধীনতা কতটুকু তা তো সবারই জানা। আগামী মাসে ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছি তাই মা ফোন দিয়ে বলল আর দেরী করা চলবে না, ওনি সবকিছু ঠিক করে রেখেছেন।
লেখক: এইচ, কে হীরা
(এই লেখার কোনো অংশ যদি কারো জীবনের সঙ্গে মিলে যায় তার জন্য আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। লেখাটি কাউকে কষ্ট বা আঘাত করার জন্য নয়।) ধন্যবাদ।
২| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:১৩
আবু শাকিল বলেছেন:
৩| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৫১
কলমের কালি শেষ বলেছেন: দুঃখনীয় সুন্দর ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:০৮
শঙ্খচিল_শঙ্খচিল বলেছেন:
!
শেষে এসে খারাপ লাগল
তয় বাদাম খাইতেও মুঞ্ছায়