![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিরাপত্তা নেই, বাক-স্বাধীনতা নেই, গণতন্ত্র নেই, ভোটাধিকার নেই, বিচার বিভাগের আইন প্রয়োগ নেই, উন্নয়ন নেই, প্রবৃদ্ধি নেই, পরিকল্পনা নেই --এত সব বাদ দিয়ে আমরা আছি বাজেট নিয়ে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র কে যেমন গণতন্ত্রের ভাষায় ব্যাখ্যা করা যায় না, তেমনি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে অর্থনীতির ভাষায় ব্যাখ্যা করা সম্ভব না। আর আমাদের বাজেটকে ও অর্থনীতির ভাষায় বাজেট বলা যাবে না। আমাদের বাজেটকে রাজনীতির ভাষায় বাজেট বলতে হবে কারণ বাজেট তৈরী হয়েছে রাজনৈতিক লক্ষ্য মাত্ত্রায় পৌছানের জন্য। বাজেট কোন খাতে বেশি আর কোন খাতে কম তা অর্থনৈতিক অবস্থা বুঝে নির্ধারণ না করে নির্ধারণ হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায়। প্রধানমন্ত্রী ভালো করেই জানেন কে বা করা বা কোন গ্রুপ ওনাকে ওই গদিতে বসিয়ে রেখেছে আর তাদের কে খুশি করার জন্য তার কি করা প্রয়োজন।
দেশের অন্যতম প্রয়োজনীয় বস্তু হলো জালানি তেল। বিশ্ব বাজারে যখন তেলের মুল্য নিম্ন গতি তখন আমরা সেই আগের মূল্যে তেল কিনে যাচ্ছি। সরকার কি তেলের মূল্যে কমিয়ে গাড়ির উপর "কর"টা বেশি করতে পারতেন না ? কিন্তু তিনি তা করেন নি কারণ তেল এবং গ্যাসের সঙ্গে "জয়"-এর পুরনো বন্ধুত্বের কারণে তা করা সম্ভব হয়নি। জয় কে খুশি রাখতে গেলে তেলের দাম কমানো সম্ভব নয় আর তাই কমেনি। একটু ভাবুন তো , সরকার যদি খাদ্য বহির্ভূত নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহিত সামগ্রীহির উপর মুদ্রাস্ফীতির হার না কমায় তাহলে এই বাজেট কার জন্য ?
এবার দুর্নীতি দমনের বাজেট কমানো হয়েছে কারণ হিসাবে মনে করা হচ্ছে দেশে কোনো দুর্নীতি নাই। প্রধানমন্ত্রী সব সময় বলেন দেশে কোনো অভাব নেই এবং দুর্নীতি নাই। আমাদের আসে-পাশে আমরা যা দেখছি তা দুর্নীতি নয়, তা হচ্ছে আওমীলীগ নীতি। এই রাজনৈতিক দলটির কাছে শেয়ার বাজার লুট, ব্যাঙ্ক লুট , প্রশ্নপত্র ফাস এবং টেন্ডার বাজির মত কাজগুলো এদের দলীয় সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু মজার ব্যপার হচ্ছে, বাজেটে প্রায় দিগুন করা হয়ছে "নির্বাচন কমিশনের" অর্থের পরিমান। নির্বাচন কমিশন কে বাজেট দিগুন দেয়া হয়েছে কারণ তারা সিটি নির্বাচনে সব কয়টিতে লক্ষ্য মাত্রা অর্জন করতে পেরেছে। যদিও এর পিছনে কারণ দেখানো হচ্ছে ইউনিয়ন পর্যায়ের নির্বাচনের জন্য বাজেট বেশি করে ধরা হয়েছে। শাখ দিয়ে কি আর মাছ ঢাকা যায়? এবারের বাজেট বহুল আলোচিত বিষয় হলো "ব্যাংক" এবং "লোন"। রাষ্টায়ত্ত ব্যাঙ্ক গুলো কে লোন দেয়া নিয়ে প্রথম আলোর বিশাল প্রতিবেদনে শিরোনাম হচ্ছে " করের টাকায় ব্যাংক বাচানো" . পৃথিবীর সব দেশেই "বেইল আউট " শব্দটা-র ব্যবহার আছে। সরকার রাষ্টয়্ত্ত ব্যাংকগুলো কে লোন দিবে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধমে এবং কিছু জোরালো শর্তের উপর ভিত্তি করে। সেই সব শর্ত পূরণে সরকার ব্যাংকগুলোর "স্ট্রেস টেস্ট" নামে এক ধরনের পরীক্ষা নেওয়া হয় যেখানে পাস এবং ফেল ফলাফলের উপর নির্ভর করবে বাংকের ভবিষ্যত। গতবছর এবং এই অর্থবছরে কোন শর্তের উপর রাষ্ট্রয়াত্ত ব্যাংকগুলোকে লোন দেয়া হয়েছে তার কোন বিবরণ কোথাও উল্লেখ করা হয়নাই। উল্টো গত অর্থ বছরে লোন নিয়ে ব্যাংকার অগ্রগতি কোনো পর্যায়ে সেই বিষয় গুলোর কোনো উল্লেখ নাই। এই অর্থহীন ভাবে লোন দেয়াটা অর্থনীতির কোন পর্যায়ে পরে তা আমার জানা নাই তবে রাষ্টায়ত্ত ব্যাংকগুলো কে লোন দেয়ার পিছনে কারণ টা পরিষ্কার। রাষ্টায়ত্ত ব্যাংকগুলো কে লোন দিতে হবে কারণ এখান থেকে ছাত্রলীগ, আমলা এবং দলীয় ব্যক্তি-বর্গ লোন নিতে পারবে যা হয়ত আর কোনদিন জনগনের অর্থ ভান্ডারে ফিরে আসবেনা আর তাই সরকার ব্যাংকগুলো কে লোন দিইয়ে যায়, ব্যাংকার অগ্রগতি জনগনের সামনে প্রকাশ পায় না।
সরকার বাজেট ব্যবসা এখানেই শেষ করেনি এবারের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার প্রক্রিয়াটি ও রেখেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, দেশে যদি দুর্নীতি না হয় তাহলে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ার প্রয়োজন কি ? এই সুযোগের মাধ্যমে সরকার পরোক্ষ ভাবে স্বীকার করলো যে দেশে দুর্নীতি হয়েছে এবং হচ্ছে। অতিরিক্ত মাত্ত্রায় দুর্নীতি হওয়ায় সরকার প্রক্রিয়াটি রেখেছেন যাতে সবাই পাপ মুক্ত হয়ে যায়। একদিকে যেমন দুর্নীতি হচ্ছে যা থামানো যাচ্ছে না অন্যদিকে দুর্নীতি দমনের বাজেট কম করে কমিশন কে অকার্যকর করা হচ্ছে। এক কথায় লুট-পাট চলতে থাকবে। এরকম শতাধিক বিষয় এই বাজেটে আছে যা রাজনৈতিক লক্ষে বাস্তবায়ন কাজকার ভুমিকা পালন করেবে। এবার এই বাজেটের বড় সমালোচক যুক্তরাষ্ট্র নিজেই বাজেটের সচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বাজেটে জনগণ কতটুকু উপকৃতি হবে এবং কোন কোন খাতে সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করা হয়েছে তার বড় অভাব ছিল অর্থ-মন্ত্রীর বক্তবে। দেশের সরকারি এবং বে-সরকারি প্রতিষ্ঠানের সম্মনয়ে কোনো উন্নয়ন মূলক পদক্ষেপ বা প্রকল্প অর্থমন্ত্রীর বক্তবে বা বাজেটে উল্লেখ নাই। সরকার কোন কোন খাতে বিনিয়োগ করবে এবং তা কিভাবে জনগনের দার প্রান্তে পৌছবে তার কোনো পরিস্কার রূপ-রেখা বাজেট -এ নাই। সরকার কে মনে রাখতে হবে শুধু মাত্র পদ্মা সেতুই দেশ কে মধ্যম আয়ের দেশে পরিনিত করতে পারবে না। এই বাজেটের সঙ্গে জনগনের সম্পর্ক তৈরী অত্যাবশকীয়। এ কথা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে, প্রতিবছরের মত এই বাজেট ও জনগনের আশা-আখাংকা পূরণে ব্যর্থ হবে তবে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে নিশ্চিত ভাবে সফল।
এইচ, কে, হীরা
একজন সচেতন নাগরিক এবং কর্পোরেট ব্যাংকার, নিউ ইয়র্ক
©somewhere in net ltd.