নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপ পাঁপড়ি

রুদ্রনীল

নাহিদ রুদ্রনীল

লেখালেখি করার খুব ইচ্ছে আছে। নিজের ব্যক্তিজীবন থেকে শিখছি, আশেপাশ থেকে জানছি। নিজের মাঝে স্বতন্ত্র বসবাস করি। আমার বিশ্বাস-আদর্শকে ধারন করার চেষ্টায় থাকি।

নাহিদ রুদ্রনীল › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনুগল্পঃ বৃদ্ধাশ্রম

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩০

(ক) রহমতপুর বৃদ্ধাশ্রম। নীলুফা বেগম বারান্দার ইজি চেয়ারে বসে আছেন।আরিফের অপেক্ষায়।আরিফ তার একমাত্র ছেলে।আজ আরিফের আসার কথা। সে প্রতিমাসে একবারই আশে।খোঁজ-খবর নেয়,টাকা-পয়সা দিয়ে যায়। নীলুফা এখন আর ছেলের সাথে থাকেন না।তিনি থাকেন বৃদ্ধাশ্রমে। আর ছেলে থাকে গুলশানে আলিশান বাংলোয়।আরিফের বিয়ের ক'বছর বাদেই তার বাবা স্ট্রোক করে মারা যান।আরিফ প্রেম করে নিজের পছন্দ

মতো মেয়ে বিয়ে করে।মেয়ের নাম রিয়া।অনেক উচু ঘরের মেয়ে। টাকা-পয়সায় আরিফদের থেকে অনেক এগিয়ে।রিয়ার পছন্দের কথা মেনে নিয়েই তার বাবা বিয়েতে সম্মতি দেন।এখন সে রিয়ার বাবার কোম্পানিতেই চাকরি করে। ভালো পোষ্ট, ভালো বেতন, অনেক হাইফাই

জীবনযাপন।





রিয়া সাধারন বাঙাল বউদের মত না।

শাশুড়ীর সেবযত্ন, ঘরের সাধারন টুকটাক কোন কাজই সে করে না। বড়লোকের মেয়ে আগে কখনোও এসব

করেওনি তাই না পারারই কথা। নীলুফা বেগম এতে কিছু মনে করেন না। আরিফও ওকে কিছু করতে বলে না বরং বাসায় অনেকগুলো কাজের লোক রেখে দিয়েছিল। মায়ের সেবাযত্ন তারাই করত। একদিন কিছু একটা নিয়ে আরিফ-রিয়ার ঝগড়া হচ্ছিল।খুব কথা কাটাকাটি।জোরে জোরে কথা বলছিল।

নীলুফা পাশের রুম থেকে শুনতে পান

তাকে নিয়েই ঝগড়া হচ্ছে।বৃদ্ধাশ্রমে রাখা না রাখা নিয়ে। রিয়া বলছে এতো গুলো কাজের লোক ঘরে রাখার প্রয়োজন নেই।মায়ের দেখাশুনা করার মত টাকা তার কাছে নেই।আসল কথা গেষ্টদের সামনে নীলুফা বেগমের জন্য তার লজ্জাবোধ হয় তাই তাকে বিদেয়

করার পরিকল্পনা। আরিফও কড়া গলায় জবাব দিচ্ছে।সেদিন আসলে নীলুফা বুঝতে পারলেন তিনি ছেলের টাকা অপচয় করছেন। এই বুড়ো বয়সে ছেলের কাছে থেকে তার সেবাযত্ন

পাওয়া তার ভাগ্যে নেই বরং বৃদ্ধাশ্রমে যাওয়াই শ্রেয়।তাই আরিফকে বলে বৃদ্ধাশ্রমে চলে আসা।



(খ) হঠাত একটা গাড়ির হর্ন তার দৃষ্টি গোচর করল।একটি লাল গাড়ি গেটের ভিতর ঢুকছে। হয়তো আরিফেরই গাড়ি।সে প্রায়ই নতুন নতুন গাড়িতে চড়ে যাতায়াত করে।আগের গাড়ির রং সাদা ছিল। আরিফ গাড়ি থেকে নামলো।তার সাথে ড্রাইভারও।সে আরিফের পিছে পিছে হাতে একটা ব্যাগ

নিয়ে আসছে।



-আম্মা স্লামালাইকুম

-ওয়ালাইকুমসালাম।কেমন আছিস

রে বাপ?

-এইতো ভালো আছি আপনার শরীর

কেমন?

-আমার আর শরীর

-কেন আবার অসুখ করলো নাকি।প্রেসার মাপছিলেন?

-না নাহ অসুস্থ না।ঠিকই আছি।

-আপনার জন্য ওষুধপত্র নিয়ে এসেছি।



"ওই রতন দাড়িয়ে কি দেখিস।ব্যাগটা আম্মার বিছানার পাশে রেখে আয়" আরিফ ড্রাইভারকে বললো।

"জ্বি আইচ্ছা" রতন বললো।



-খালাম্ম ভালা আছেন?

-এইতো আছি।তোর শরীর কেমন। বউ-বাচ্চা ভালো আছো তো?

-জ্বী খালাম্মা আপনাগো দোয়ায় ভালোই আছে।আমাগো লইগা একটু দোয়া কইরেন।

-আমি সবার জন্যই দোয়া করি।



রতন ব্যাগটা বিছানার পাশে রেখে বাহিরে এসে দাড়ালো।পাশে আড়ালে গিয়ে একটা সিগারেট ধরালো। আরিফ লোকটাকে তারভালো লাগে না।শিক্ষিত লোক কিন্তু ব্যবহার একদম থার্ড ক্লাস।

এতো টাকা,এতো বড়ো বাংলো বাড়ি

তাও নিজের মা'কে নিজেদের সাথে রাখে না বরং রাখে বৃদ্ধাশ্রমে। মাসে একবারই আসে দেখতে।রতন নিজেই বা কত মাসে ইনকাম করে।কিন্তু নিজের মাকে তো অন্য কারও কাছে রাখেনি।নিজের কাছেই রেখেছে।যতটুকু সাধ্য এর মধ্যেই সেবাযত্ন করে।আর অন্যদিকে আরিফ সাহেব!



-আম্মা এখানে আপনার কোন সমস্যা হচ্ছে না তো?

-না সমস্যা কোথায়।আমি ভালোই

আছি।

-হুম।প্রতিমাসে অনেকগুলো টাকা দেই

সমস্যা হওয়ার কথা না।

-তুই কি কোথাও যাচ্ছিস?

-হুম একটা দাওয়াত আছে সেখানে যাবো।

-বউ মাও যাবে? রিয়া মা কেমন

আছে?

-হুম যাবে।তাড়াহুড়োর ভিতর আছি তো তাই গাড়ি থেকে আর নামল না।





রিয়া গাড়িতে বসে আছে। ভ্যানিটি ব্যাগ

থেকে মেকআপ বক্স বের করে মেকআপ করছিল।বৃদ্ধাশ্রমে ঢুকতে তার ভাল লাগে না। কি খ্যাত পরিবেশ, কেমন

বুড়ো বুড়ো গন্ধ।তাই সে গাড়িতে বসে।

উফফ আরিফটাও যে এখনো আসছে না।দাওয়াতে যে দেরি হয়ে যাচ্ছে।এসব

দাওয়াতে টাইম মেইনটেইন করতে হয়।

মোবাইলে চার্জ টাও নেই,অন্যদিকে রতন টাকেও দেখছে না। তাই বাধ্য হয়েই

সে নিজেই গাড়ি থেকে নামলো।নাকে টিস্যু পেপার চেপে আশ্রমের ভিতর প্রবেশ করলো। উহহহ এখনো কি গন্ধ!



-বাবুরা কেমন আছে? ওদের আনলি না যে।

-ওদের সামনে এক্সাম।বাসায় টিউটর

এসেছে।তাই আর আনি নি।

-ওহ নাহ ভালো করেছিস।পড়ালেখা করে মানুষ হোক এই দোয়া করি।

-আম্মা একটা কথা ছিল।

-বল বাবা

-আগামী মাসে একটা বিজনেস ট্রিপে সিঙ্গাপুর যাচ্ছি।তাই ভাবলাম একটু বিদেশ থেকে ঘুরে আসি।তাই একটা ফ্যামিলি ট্রিপ করবো।

-ও, মাশাল্লাহ বাবা।শুনে খুব

খুশি হলাম।

-আপনিও চলেন না আমাদের সাথে। ঘুরে আসবেন।

-না নাহ আমি গিয়ে কি করবো।আমি এখানেই ঠিক আছি।তোমরা ঘুরে আসো।



হঠাত হিলের শব্দ শুনে আরিফ দরজার দিকে তাকালো।রিয়া এসে দাড়িয়েছে।

"এই তুমি যাবে না।আর কতক্ষন লেট

করবে?" রিয়া রাগত কন্ঠে বললো।



রিয়ার দিকে তাকিয়ে নীলুফা বললেন,

"মা ভালো আছো?"

-জ্বি ভালো আছি। আপনি?

-এইতো মা আছি আল্লাহর কৃপায়।তোমাদের যাবার সময় হয়ে গেছে তাই না?

-জ্বি মা। আধঘন্টা লেটও হয়ে গেছে।

আপনার ছেলের তো আজও

সময়জ্ঞান হলো না।



আরিফ বললো, "আহা মায়ের সামনে এসব কি বলছো।তুমি গাড়িতে গিয়ে বসো আমি আসছি"

-ঠিক আছে যাও তাহলে তোমরা।

-আম্মা আমরা সিঙ্গাপুর গেলে রতনকে এখানে প্রতিদিন আসতে বলে যাবো।

আপনার সমস্যা হবে না।

-না নাহ আসতে হবে না। আমি ঠিক

আছি।দোয়া করি তোমরা সুখে থাকো।

-আসি মা।



মায়ের পা ছুয়ে সালাম করে আরিফ উঠে দাড়ালো।রিয়া আগেই রাগে গজগজ করতে করতে বের হয়েছে।মা'কে ট্রিপে যাওয়া জন্য বলায় তার রাগ হচ্ছে।বুড়ো মানুষ বিদেশ গিয়ে করবে টা কি? ম্যানেজারের হাতে খরচপাতির

টাকা ধরিয়ে আরিফও বের হয়ে গেল।

স্যারকে দেখে রতনও আড়াল থেকে দ্রুত বের হয়ে আসে। রিয়া ম্যাডামকে আশ্রমে ঢুকানোর জন্যই ইচ্ছে করে তার ডাকে সাড়া দেই নি, ঝোপে লুকিয়ে ছিল।



নীলুফা বেগম মূল বারান্দায় এসে দাড়ালেন।আরিফদের গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছে।গাড়িটি দৃষ্টিসীমায় থেকে দূরে চলে যাচ্ছে।হঠাত কিছু চোঁখের পানি নীলুফা বেগমের কুচকে যাওয়া নোংরা শাড়ির আঁচলে এসে পড়লো।তিনি চোঁখটা মুছতে চাইছেন না।তার ইচ্ছে করছে তার ছেলে ফিরে এসে নিজ হাতে চোঁখ মুছে দিয়ে বলুক, "মা তোমায় বড় ভালবাসি, বড় ভালবাসি"

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৫

সুমন কর বলেছেন: কিছু মনে করবেন না, গল্পটি কি আপনার? কেন জানি মনে হচ্ছে, এ গল্পটি আমি সামুতেই কিছুদিন আগে দেখেছি! আমি একটু ব্যস্ত, না হলে সার্জ দিতাম।

২| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:১৮

নাহিদ রুদ্রনীল বলেছেন: জ্বি গল্পটা আমার। আমি সামুতে নতুন। কারও গল্পের সাথে মিল হয়ে থাকলে অবশ্যই জানাবেন :-)

৩| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:২৯

মতিন রহমান বলেছেন: নাহিদ ভাই, অনেক ভালোভাবে উপস্থাপন করেছেন, আশাকরি আরোও ভালো লেখবেন ।
@@সুমন কর ভাই আপনার সময় থাকলে সার্চের উপর একটা কোর্স করে নেবেন , আপনার কমেন্ট লিখতে ৫মি. এর মত লাগছে,সার্চের কোর্স করলে ৫ সে. সোর্স বের করতে পারবেন ।

৪| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:০৪

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: আপনার ব্লগে শিরোনামটি বেশ সুন্দর। ''একজন ব্যক্তিগত হিমু"
যাই হোক, গল্পের মোরালটি অবশ্যই ভালো। তবে এই ধরনের প্লটগুলো বেশ কমন বিধায় পাঠকের প্রত্যাশা পূরন সব সময় হয় না।

তারপরও আপনি ভালোই লিখেছেন তবে আমার মনে হয়েছে আরো ভালো করার সু্যোগ ছিল।

যাই হোক, আশা করি নিয়মিত লিখবেন। নিয়মিত পড়বেন। অনেক শুভ কামনা রইল। ধন্যবাদ। :)

৫| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:১৭

নাহিদ রুদ্রনীল বলেছেন: ধন্যবাদ মতিন রহমান ভাই। দোয়া করবেন যাতে আরও ভাল লিখতে পারি।

৬| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:২০

নাহিদ রুদ্রনীল বলেছেন: ধন্যবাদ কাল্পনিক ভাই। আমি এই লেখালেখিতে নতুন।লেখার চেষ্টা করছি। পরবর্তীতে আপনার কথাগুলো অবশ্যই মাথায় রাখবো। ধন্যবাদ :-)

৭| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:১০

মামুন রশিদ বলেছেন: কোন মা-বাবাকেই যেন বৃদ্ধাশ্রমে না যেতে হয় ।


সুন্দর লিখেছেন । ভালো লেগেছে গল্প ।

৮| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫১

নাহিদ রুদ্রনীল বলেছেন: মা-বাবার স্থান বৃদ্ধাশ্রমে নয় আপন গৃহে। হোক সেটা কুড়েঘর, হোক আলিশান বাংলোয়। পড়ার জন্য ধন্যবাদ শুভকামনা জানবেন।

৯| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:৪২

ক্যাটালিয়া বলেছেন: :(

১০| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৬

নাহিদ রুদ্রনীল বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ ক্যাটালিয়া।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.