নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নাহিদ পারভেজ নয়ন।

নাহিদ পারভেজ নয়ন

যা মনে আসে তাই লিখি।সব লেখা পড়ার যোগ্য নয় তবুও লিখি।

নাহিদ পারভেজ নয়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক বাটি আলুভর্তা এবং একটি ক্যান্ডেল লাইট ডিনার

০২ রা জুন, ২০১৫ দুপুর ২:৪৭

নিরার প্রতি রাগ হওয়াটা মোটেও উচিত হয়নি।হঠাৎ করেই যেন সব কিছু হয়ে গেল।নিজের প্রতি খুব খারাপ লাগতেছে।

রাগ হওয়ার ও কারণ আছে । রাগ হব না কেন??
এত বড় একটা মেয়ে কিনা আলু ভর্তা করতে পারেনা।এটাতো বাচ্চারাও পারে। অবশ্য এতে ওর কোন দোষ নাই। ও আগেই বলছে ও এসব পারেনা।কিন্তু তবুও আলুভর্তা না পারার কি আছে।

আমি এখনো খাবার টেবিলেই বসে আছি।নিরা বাথরুমে , মনে হয় কাদতেছে।কান্নার কোন শব্দ নাই কারণ ট্যাপ ছাড়া। ট্যাপের শব্দে নিরার কান্নার শব্দ ঢাকা পড়তেছে।

আমার আর নিরার বিয়ে হইছে প্রায় চার মাস।কিছুটা লাভ ম্যারেজ আর কিছুটা এরেঞ্জ ম্যারেজ।বড়লোকের মেয়ে তাই রান্না বান্না পারেনা সাভাবীক ব্যাপার।একদিন আমি নিরাকে জিজ্ঞেস করলাম,
-রান্না বান্না কিছু পারো।

ও প্রশ্ন টা শুনে কিছুটা লজ্জা পেল আর লজ্জিত মুখেই বলল,
-না আসলে আমি কখনই রান্না ঘরে যাইনি।সরি।
-পারোনা ঠিক আছে। তোমাকে তো আর রান্না বান্না করার জন্য বিয়ে করতেছিনা,কাজের মেয়ে রাখব সেই এসব করবে।

কিন্তু বিয়ের পর এসে নিরা কাজের মেয়ে ছাড়াই দিল , সংসারে কাজের মেয়ে থাকুক এটা তার ভাল লাগেনা।নিজের সংসারের কাজ সে নিজ হাতেই করবে। আমি বললাম
-তাহলে খাব কি?রানা করবে কে?
নিরা বলল,
-কয়েক দিন একটু কষ্ট কর, হোটেল থেকে এনে খাব।তারপর ব্যাবস্থা হবে।
-কয়েক দিন মানে তারপর কি ব্যাবস্থা হবে ?

নিরা হাসতে হাসতে বলল,
-আমি রান্নার স্কুলে ভর্তি হইছি এক মাসে সব রান্না শেখায় দিবে।ভাল না।
-হুম ভাল।

যেখানে এক মাসে সব রান্না শেখানোর কথা ছিল , সেখানে আজ তিন মাস চলতেছে তবুও নিরা রান্না করতে পারল না। সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরতেছি তখন নিরার ফোন।আমি ফোন ধরে বললাম,
-হ্যালো।
-আসতেছ বাবু?
-হুম,,আজ কি খাবা?
-আজ কিছু আনিও না।
-কেন?
-আমি রান্না করতেছি।

আমি নিরার কথা শুনে আকাশ থেকে পরলাম।আমি বললাম,
-সত্যি রান্না করতেছ?

ফোনের ওপাশ থেকে নিরার হাসির শব্দ শুনলাম।হাসি থামিয়ে ও বলল,
-আরে বাবা সত্যি।আমি কি তোমাকে মিথ্যা বলব।
-আচ্ছা।রান্না কি শেষ?
-না হচ্ছে, তুমি আসতে আসতে হয় যাবে।
-ও আচ্ছা,,পারলে ভাতে আলু দিও।আলু ভরতা করিও।
-আচ্ছা,বাবু।আসো তাড়াতাড়ি।

আমি তো খুব খুশি নিরা রান্না করতেছে।অনেক দিন পর ভাল কিছু হয়ত খাওয়া হবে।হোটেলের খাবার আর ভাল লাগেনা।তবে ছুটির দিনে আমি কিছু রান্না করেছিলাম।মেসে থাকতে কিছু রান্না শিখেছিলাম যা বিবাহিত জীবনে অনেক কাজে লাগছে।এসবের জন্য নিরা আমার প্রতি অনেক খুশি।

বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে,, খাবার টেবিলে বসতেই মাথাটা চক্কর দিল,টেবিল পুরাই ফাকা। এক গামলা ভাত এক সাইডে আর অন্য পাশে একটা ছোট বাটি ঢাকনা দেওয়া।
আমি নিরার দিকে তাকিয়ে বললাম,
-যাও খাবার নিয়া আসো।খুব ক্ষুদা লাগছে।

নিরার মুখ এতক্ষন ফ্যাকাশে ছিল, কথাটা শুনে আরো ফ্যাকাশে হয়ে গেল।ও নিচের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল,
-আসলে বাবু সব কিছু নষ্ট হয়ে গেছে।

আমার নিরার কথাটা শুনে কেন জানি হাসি পেল।আমি হাসতে হাসতেই বললাম,
-কিভাবে।
-মানে সব উল্টাপাল্টা হয়ে গেছে।
-বাদ দাও।ওই বাটিতে কি?
-আলুভরতা ।
-আচ্ছা,তাই দাও।তাই দিয়ে খাই।

নিরা আমাকে বাটিটা এগিয়ে দিতে কেমন জানি সংকোচ করতেছে।তাই আমি নিজেই বাটিটা আমার দিকে টানলাম। ঢাকনা টা সরায়া দেখি, শুধু আলু মেখে রাখছে।পিয়াজ, তেল মরিচ, কিছুই নাই।

আমি নিরার দিকে তাকিয়ে দেখলাম,ওর অবস্থা খুব খারাপ।
আমি বললাম,
-এটা কি?
-আলুভর্তা
-এটা আলুভর্তা,, কই শিখছ?
-জানিনা।
-এত বড় হইছ এখনো আলু ভর্তা করতে পারোনা। সারাজীবন শুধু শপিং করে বেড়াইছ।

নিরা কোন জবাব দিল না,আমি ওর দিকে তাকায়া দেখি ওর চোখে পানি। আমার কেমন জানি অসহ্য লাগতেছিল,,তাই আমি বললাম,
-কাদিও না তো।কোন কিছু তো পারোনা শুধু কান্না করাই শিখছ মনে হয়।

নিরা আমার সামন থেকে চলে গেল,গিয়ে বাথরুমে ঢুকল।ঘটনা ঘটার পাচ মিনিট অতিবাহিত হয়েছে,,এখনো ও দরজা খুলে নাই।আমার কিছু করা দরকার।
আমি টেবিল থেকে উঠে বাথরুমের দরজার সামনে গিয়ে দাড়ালাম আর বললাম,
-বের হও।চলো বাইরের কোন রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে খেয়ে আসি।

কোন জবাব নাই।আমি আবার বললাম,
-কথা বলনা,,আর রাগ করে থাকিও না।বের হও তাড়াতাড়ি।খুব ক্ষুধা লাগছে।

এবার নিরা মুখ খুলল আর বলল,
-যাও এখান থেকে।তোমার সাথে কথা বলতে ভাল লাগতেছেনা।আমি কালকেই বাবার বাড়ি চলে যাব।আর আসবোনা কোন দিন।

খুব মুশকিল হল তো,কিভাবে বের করি ওকে।একটা উপায় আছে।বাড়ির মেইন সুইচ অফ করে দেখি যদি ও বের হয়।কারণ নিরা অন্ধকার ভয় পায়। তার আগে আমাকে দুটা ডিম ভেজে নিতে হবে।

ডিম ভাজা শেষ,আমি বাড়ির মেইন সুইচ অফ করে দিলাম। প্রায় পাচ মিনিট হয়ে গেল মেইন সুইচ পফ করার।তবুও নিরা বের হল না।কি যে করি কিছুই মাথায় আসতেছেনা।

আমি বাথরুমের সামনে গিয়ে বললাম,
-নিরা মরিচ কাটতে গিয়ে হাত কেটে গেছে।ডিসেপ্টিং বক্স টা কই রাখছ?

সাথে সাথেই বাথরুমের গেট টা খুলে গেল।যা চাচ্ছিলাম তাই হল।নিরা বের হয়ে এসে বলল,
-কই দেখি।কতদূর কাটছ?
-এই অন্ধকারে কিভাবে দেখবা কতদূর কাটছে। চল ডাইনিং রুমে চল।

নিরা ডাইনিং রুমে ঢুকে অবাক হল,কঠিন রকম অবাক।যা বিয়ের পর ও কোন দিন হয়নি।আমি প্রায় ১৫ টা মোমবাতি সারা ঘরে জালিয়ে রাখছি আর খাবার টেবিলে ৫ টা। নিরা আমার দিকে রাগ হয়েই বলল,
-তাহলে ঢং করলা এতক্ষন।
-হুম,চল ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করি।

নিরা আমার কথা শুনে হাসল।আমি ওর হাত ধরে এনে খাবার টেবিলের চেয়ারে বসালাম।আমি ওর মুখোমুখি চেয়ারে বসালাম।

আমি বললাম,
-সময় কম তাই খাবারের আইটেম দুইটা।

ডিম ভাজি সামনে থাকার কারণে নিরা শুধু ডিম ভাজি দেখেছিল।ও জিজ্ঞেস করল,
-আর কি আইটেম ? এখানে তো একটাই !

আমি ওই ভরতার বাটিটা বের করে টেবিলে রেখে বললাম,
-এই যে আরেকটা আইটেম।

আমার স্ত্রী আমার জন্য এই প্রথম রান্না করছে সেটা যেমনই হোক আমার জন্য অবশ্যই ভাল।

নিরা আমার কথা শুনে হাসল,শুধু হাসলই বললনা কিছুই।


-নাহিদ পারভেজ নয়ন

মন্তব্য ২৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:১৮

আল-শাহ্‌রিয়ার বলেছেন: গল্পটি চমৎকার তবে বাস্তব জীবনে এমন একটি বৌ পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার।

০২ রা জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:৫১

নাহিদ পারভেজ নয়ন বলেছেন: ভাল বউ পাওয়া সব সময় ভাগ্যর ব্যাপার।
তবে গল্পের ব্যাপার আলাদা,,সেখানে বেশির ভাগ স্ত্রী ভাল হয়।
তবে এমন স্ত্রী বাস্তবেও পাওয়া যায় শুধু একটু ধৈর্য র প্রয়োজন।
ধন্যাবাদ

২| ০২ রা জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৭

যাযাবরমন বলেছেন: সহধর্মীর হাত কেটেছে শুনে সামনে আসবে না এমন সহধর্মীনী পাওয়া শক্ত।
ভালবাসতে জানলে বৌকে সবসময়ই ভাল লাগে, তা সে যত খারাপই হোক।
আবার ভালবাসতে না জানলে বৌকে সবসময়ই খারাপ লাগে, তা সে যত ভালই হোক। আর যত প্রেম করেই বিয়ে করেন না কেন।

০২ রা জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৩

নাহিদ পারভেজ নয়ন বলেছেন: তা ঠিক বলেছেন।
তবে বাস্তবতা একটু আলাদা সবসময় সব কিছু সম্ভব হয়না।মাঝে মাঝে একটু অভিমান সৃষ্টি হয় আর এটা দরকার ও

৩| ০২ রা জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:১৮

নীলনীলপরী বলেছেন: আমি হইলে বলতাম কাটছে , ভালো হইসে যা মর বেটা। সামান্য আলু ভরতার জন্য আমারে এইসব বলিস? যা কাজের মাইয়াই বিয়া কর তার থেকে। X((
আপনে আবার অন্যভাবে নিয়েন না ভাই, জাস্ট নিজের মনের কথাটা বললাম।

০২ রা জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৮

নাহিদ পারভেজ নয়ন বলেছেন: হা হা হা,,
আচ্ছা, আপনি আলুভর্তা করতে পারেন তো??
আপনার হ্যাসবেন্ড কে অবস্যই আগে ভাগে বলে রাখবেন কি পারেন আর কি পারেন না।
নয়ত এ রকম সমস্যা হতেই পারে।

৪| ০২ রা জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৮

সুমন কর বলেছেন: হালকা প্রেমের গল্প। রোমান্টিক।

০২ রা জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩২

নাহিদ পারভেজ নয়ন বলেছেন: হুম অনেক টাই প্রেমের গল্প,, আর কিছুটা রোমান্টিক।
ধন্যবাদ

৫| ০২ রা জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: অবশ্যই ভালো।

গল্প ভাল্লাগছে। সবার জীবন আনন্দের হোক হালকা খোচাখুচির মধ্যে দিয়ে।। :)

০২ রা জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৫

নাহিদ পারভেজ নয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ।

ভালবাসার মধ্য কিছু খোঁচাখুঁচির প্রয়োজন আছে।

৬| ০২ রা জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৩

শুকনোপাতা০০৭ বলেছেন: চমৎকার গল্প,এন্ডিং টা সুন্দর :)

০২ রা জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৮

নাহিদ পারভেজ নয়ন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
এন্ডিং চমৎকার না হলে গল্প ভাল হয়না,,তাই এন্ডিং এর উপর জোর দিতে হয়।

৭| ০২ রা জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৪

অপু তানভীর বলেছেন: চমৎকার গল্প !
:):)

০২ রা জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৮

নাহিদ পারভেজ নয়ন বলেছেন: আমার গল্পে অপু তানভীর এর কমেন্ট অবিশ্বাস্য ব্যাপার।

তবুও বিশ্বাস্ করে ধন্যবাদ দিলাম।

৮| ০২ রা জুন, ২০১৫ রাত ৯:১৪

তামান্না তাবাসসুম বলেছেন: এত্ত মিষ্টি একটা গল্প পড়ে মনটা ভাল হয়ে গেল :)

০২ রা জুন, ২০১৫ রাত ৯:৪০

নাহিদ পারভেজ নয়ন বলেছেন: কারো মন ভাল করা অনেক বড় ব্যাপার,,আর তা যদি আমার লেখা গল্প পড়ে সেটা আরো বড় ব্যাপার

অনেক ধন্যবাদ

৯| ০২ রা জুন, ২০১৫ রাত ১১:১২

নীলনীলপরী বলেছেন: লেখক বলেছেন: হা হা হা,,
আচ্ছা, আপনি আলুভর্তা করতে পারেন তো??
আপনার হ্যাসবেন্ড কে অবস্যই আগে ভাগে বলে রাখবেন কি পারেন আর কি পারেন না।
নয়ত এ রকম সমস্যা হতেই পারে।

কি বলেন ভাই? আলুভর্তা একটা ব্যাপার হইলো? দুনিয়ার সব ভরতাই আমি পারি। আলু, পটল, সিম, বেগুন, কাচাকলা, পাকাকলা, আম জাম কাঠাল কোনটা জানতে চান?

০৩ রা জুন, ২০১৫ বিকাল ৫:০৭

নাহিদ পারভেজ নয়ন বলেছেন: আপনার হ্যাসবেন্ড অবশ্যই ভাগ্যবান হবে।ভাবুন যার স্ত্রী পারেনা তার কি হবে।
সেই হতবাগা হ্যাসবেন্ড এর কি রাগ হওয়ার ও অধিকার নেই।

১০| ০৩ রা জুন, ২০১৫ দুপুর ১:৩৯

রাবেয়া রাবু বলেছেন: একটা মেয়ে আলুভর্তা করতে পারেনা, এটা খুবই অবাক হবার মত একটা কথা ।
যাই হোক, ভাল লেগেছে গল্পটি।

০৩ রা জুন, ২০১৫ বিকাল ৫:০৮

নাহিদ পারভেজ নয়ন বলেছেন: অনেক মেয়েই পারেনা।যেমন, গল্পের নিরা।

ধন্যবাদ।

১১| ০৩ রা জুন, ২০১৫ দুপুর ১:৫৭

মনিরা সুলতানা বলেছেন: হুম দারুন টক মিস্টি গল্প
শুভ কামনা :)

০৩ রা জুন, ২০১৫ বিকাল ৫:০৯

নাহিদ পারভেজ নয়ন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ

১২| ০৩ রা জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৩

জহিরুল ইসলাম কক্স বলেছেন: :-

১৩| ০৩ রা জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৪

জহিরুল ইসলাম কক্স বলেছেন: দারুণ লেগেছে ভাই

০৩ রা জুন, ২০১৫ বিকাল ৫:১০

নাহিদ পারভেজ নয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.