নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নাহিদ পারভেজ নয়ন।

নাহিদ পারভেজ নয়ন

যা মনে আসে তাই লিখি।সব লেখা পড়ার যোগ্য নয় তবুও লিখি।

নাহিদ পারভেজ নয়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

অতঃপর রুটি বৃত্তান্ত

১৩ ই জুন, ২০১৫ দুপুর ২:২৮


নিরা কাল রাত্রে যখন ওর মায়ের বাসা থেকে হাসি মুখে ফিরল তখন আমার মনে কিছুটা খটকা লাগা শুরু হল , এত হাসছে কেন ও। নিরার মায়ের বাড়িতে তেমন কিছুই নেই যার কারণে মন ভাল হতে পারে।তবে মা বাবাকে দেখে হয়ত খুশি হতে পারে কিন্তু ও দু তিন দিন পরপর বাপের বাড়ী যায় তাই এত খুশি হওয়ার কোন কারণ খুজে পেলাম না।
.
কারণ টা আমি নিরা কে জিজ্ঞেস করলাম,
-ব্যাপার কি, কিছু হয়েছে নাকি?
-কেন?কি হবে।
-তোমাকে একটু বেশি হাসি খুশি লাগছে।
-না কিছু হয়নি এসো ঘুমাতে আসো।
.
কারণ টা জানা গেল সকালে।
আজ ছুটির দিন।নিরা কখনোই আমার আগে ঘুম থেকে ওঠেনা। কিন্তু আজ উঠে গেছে।আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি নিরা পাশে নেই। আমি বিছানায় উঠে বসতেই নিরা ঘরে ঢুকল।এইমাত্র গোসল করে এল মনে হয়,চুল থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে।নিরা কে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।কিন্তু খালি পেটে সৌন্দর্য বেশি ক্ষন উপভোগ করা গেলনা।আমি বললাম,
-এক কাপ চা দিতে পারবে।
-হুম,,,একটু অপেক্ষা কর, আনছি।
.
নিরা কদিন আগে চাও করতে পারতনা,,অনেক কষ্টে শিখিয়ে দিয়েছি।অফিস থেকে এসে চা বানানোর শক্তি থাকেনা তাই !
.
নিরা চা নিয়ে দ্রুতই ঘরে ঢুকল, মনে হল সব আগে থেকেই রেডি করা ছিল।আমি ওর হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে তাতে চুমুক দিলাম।অসাধারণ চা হয়েছে , পরশুদিন এর চা টাও কেমন ছিল।একদিনে অনেক পরিবতন হয়ে গেছে।
.
নিরার দিকে তাকিয়ে বললাম,
-অসাধারণ হয়েছে।
.
নিরা আমার কথা শুনে শুধু হাসল।আমি আবার বললাম,
-বল,কি নাস্তা করবে? কি নিয়ে আসবো?
-না কিছু আনতে হবে না।
-কেন?না খেয়ে থাকবা।
-না রুটি করছি !
.
আমি ওর কথা শুনে অবাক হলাম। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম,
-কি করছ?
-রুটি।
-কিভাবে?কই শিখছ?
-আম্মুর কাছে,,কাল শিখাই দিছে।
.
এখন দিয়ে বুঝলাম নিরার খুশি হওয়ার কারণ টা।আমার শাশুড়ি আম্মা গ্রামের মেয়ে, মোটামুটি অনেক রান্নাই পারে।মেয়ের চেহারা নষ্ট হবে বলে নিরা কে কখনো কিচেনে ঢুকতে দেয় নাই।নিরা যে সুন্দর তাতে ওকে কিছু রান্না শেখাই দিলে ওর চেহারার খুব একটা ক্ষতি হত না।
.
-রুটি কি দিয়ে খাব,খালি।
-না,, কাল রাত্রে আম্মুর বাসা থেকে মাংস আনছি।মাংস রান্না করা হালকা শিখছি। আরেক দিন গিয়ে পুড়াটাই শিখব।
-ও আচ্ছা।আটা আছে বাসায়।
-ওটাও আনছি।
-খুব ভাল করেছ।রুটি করে ফেল।
-হুম।
.
নিরার মুখ দেখতে খুব ভাল লাগল।ও যদি রুটি করতে পারে তবে আজ অনেক কিছু হবে বাসায়।কি হবে সেটা গোপন থাক।
.
আমি বসার ঘরে পেপার নিয়ে বসলাম।প্রায় আধাঘন্টা হয়ে গেছে নিরা রুটি বানাচ্ছে।আমি দু একবার কিচেনের দিকে উকি দিয়েছিলাম কিন্তু নিরা রাগ হয়েছে এবং সতর্ক করে দিয়েছে নেক্সট টাইম এমন করলে আমার মাথায় আটা ঢালা হবে তাই আমি সেফে আছি।
.
আমি পেপারের পাতা উল্টাতে যাব তখনই আমার সামনে নিরা এসে দাড়াল।কাচুমাচু হয়ে দাঁড়ানো যাকে বলে সেরকম ভাবে।ওকে খুব সুন্দর লাগছে। হাতে আর মুখে আটা লাগানো। আমি হাত থেকে পেপার নামিয়ে রেখে বললাম,
-কি হয়েছে? কিছু বলবে?
-আচ্ছা,,রুটি গোল ছাড়া অন্য রকম হয়না।
.
আমি ওর কথা শুনে অবাক হলাম,কি বলে এই মেয়ে।রুটি কি লম্বা বা চ্যাপ্টা হয়।আমি নিরার দিকে তাকালাম,ওর চোখে পানি টলমল করছে।উত্তর যদি না বলি শিউর কাদবে।আমি ওর কান্না দেখতে চাচ্ছিনা।তাই আমি বললাম,
-না তো,যে কোন রকম হলেই হয়।কোন খানে লেখা নাই যে রুটি গোল হতে হবে।
.
কথাটা শোনা মাত্রই নিরার মুখে হাসি ফুটল।ও হাসতে হাসতে বলল,
-আমিও তো তাই বলি।কিন্তু মা শুনলই না।
-আম্মাকে কখন বললা ?
-একটু আগে।
-ওহ আচ্ছা।কটা রুটি বানালে?
-দুটা।তোমার একটা আমার একটা।
-এত কম কেন?
-বেশি বানালে সবাই আমার সিক্রেট সেপ গুলা শিখে যাবে তো তাই !
-কে শিখবে ? আমি আর তুমি তো শুধু।
-না,, দেয়ালেরও চোখ আছে।
-দেয়ালের কান আছে শুনেছি,, চোখ আছে শুনিনি।
-যার কান আছে তার চোখ থাকা সাভাবীক ব্যপার,,এতে শোনার কি আছে।
.
আমার নিরার কথাটা শুনে হাসি বের হল আমি বললাম,
- হুম, ভাল ভেবেছো।মাঝে মধ্য দুই একটা সেপ সবার মাঝে আনবা।তাহলে সবাই শিখতে পারবে।
-হুম,,তাই ভাবছি।সবার আগে মাকে শেখাব।
-তুমি একটা যাদুঘরও খুলতে পারো।নাম হবে নিরার রুটি যাদুঘর।তোমার রুটি গুলোই সেখানে থাকবে।
.
নিরা আমার কথা শুনে হাসল।আর বলল,
-পরে ভাববো।আগে সব রেডী করি।খুব ক্ষুদা লাগছে।
-হুম,,যাও রুটি নিয়ে আস।আমি টেবিল ঠিক করি।
.
নিরার রুটি দেখে আমার খুব পছন্দ হল, দুটা রুটি দুরকম। একটা পুরা লম্বা আরেকটা পুরা চেপ্টা।
আমি লম্বাটা আমার প্লেটা নিলাম,এটা দেখতে অন্যটার থেকে ভাল।মোটা টা নিরার প্লেটে তুলে দিলাম।
.
নিরা আমার খুশি দেখে নিজেও অনেক খুশি হয়েছে।আমি রুটি টা মুখে দিলাম।
আগের বারের আলুভর্তা র চাইতে ভাল।রুটির আটা আরেকটু সিদ্ধ হত।বাট খেতে ভালই লাগছে।
.
নিরা জিজ্ঞেস করল,
-কেমন লাগছে?
-দারুন,,আরো কটা করলে ভাল হত।
-হুম,,কাল আরো করবো।
-আচ্ছা।
.
২য় বার যখন রুটি মুখে দেব। তখনই কলিংবেল বেজে উঠল।নিরা উঠতে ধরল,আমি ওকে বসে থাকতে বলে নিজে উঠে গেলাম দরজা খুলতে।

গেট খুলেই দেখি,,নিরার মা মানে আমার শাশুড়ি আম্মা দাড়ানো।
-আসসালামু আলাইকুম,আম্মা।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।
-কেমন আছেন?
-ভাল,নিরা কই?
-ঘরে !
-কি করতেছিলা তোমরা?
-নাস্তা করি।আসেন ভেতরে।
-এত দেরী করে।
.
আমি জবাবে কিছুই বললাম না।
নিরার মা অপেক্ষা না করেই ভিতরে ঢুকল।আমি ও পিছে পিছে গেলাম।
.
নিরা ওর মাকে দেখেই বলল,
-আম্মু,তুমি।
-হুম,,কি দিয়ে নাস্তা কর।
.
আমি বললাম,
-রুটি আম্মা।বসুন আপনিও নাস্তা করুন আমাদের সাথে।
.
কথাটা বলে মনে হয় ভুল করলাম।রূটি তো দুই টাই শুধু।যদি উনি বসে পরেন তাহলে কি হবে।
.
উনি আমাকে বাচিয়ে দিয়ে বললেন,
-আমি নাস্তা করে এসেছি।
নিরা বলল,
-চা খাবে আম্মু।
-আনতে পার এক কাপ।
.
নিরা চা বানাতে চলে গেল।নিরার আম্মা আমার প্লেটের দিকে তাকিয়ে বলল,
-রুটি কেমন হয়েছে।
-ভাল।
-সত্যি বলছ না মিথ্যা !
-জি আম্মা,,সত্যি বলছি।
.
আমি নিরার রূটি টা এগিয়ে দিলাম ওনার দিকে, নিরা এখনো ওর রুটি খাওয়া শুরু করেনি।
-খেয়ে দেখুন।
.
উনি রুটিটা মুখে দিলেন। আমার ভয় ছিল উনি ফেলে দেন নাকি। রুটিটা দেখতেই বাজে,,খেতে আর কেমন হবে।কিন্তু আমাকে অবাক করে চুপচাপ করে খেয়ে নিলেন।
.
আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,
-আমি একটু নিরাকে নিয়ে যাব।
-কোথায় যাবেন।
-বাসায়।
-ও আচ্ছা।
মহিলার ওপর কিছু বলা যাচ্ছেনা। যেহেতু শাশুড়ি আম্মা।অন্য কেউ হলে অনেক কথাই বলতাম।কাল রাত্রেই বাসায় আসল আজ আবার যাবে কেন?
.
উনি কিচেনে গিয়ে নিরাকে কি যেন বলল,নীরা ঘরে গিয়ে খুব তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বেরিয়ে আসল।আমার সামনে এসে বলল,
-আমি দুপুরেই আসব।তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসব।ভাল থেকো।
-আচ্ছা।
.
নিধি ওর মায়ের সাথে চলে গেল। হঠাৎ কেন ওর মা আসলো? মাথায় এখনো ঢুকছেনা।
রুটি টা খেয়ে পানি খেয়ে আবার একটা ঘুম দিলাম।
.
ঘুম ভাংলো বিকালের দিকে।পাশে তাকিয়ে দেখি নিরা শুয়ে আছে। ওকে কেমন যেন অসুস্থ লাগছে। আমি ডাকলাম,
-নিরা।
-
-এই নিরা।
.
দুবার ডাকতেই ও চোখ খুলল।
ওর চোখ দেখে মনে হল কিছুক্ষন আগে ও কাদতেছিল।
আমি বললাম,
-কি হিয়েছ?কাদতেছ কেন?
-কিছুনা।
-তোমার আম্মু কিছু বলছে?
-নাহ,তাহলে কি ব্যাপার?
-তোমার জন্য।
-কেন আমি কি করেছি?
-মিথ্যা বল সবসময়।
-কখন বললাম?
-সকালে,, রুটি গুলো খেতে বাজে হয়েছে তবুও তুমি একটা পুরো রুটি খেয়ে ফেললে।
-কে বলছে তোমাকে যে বাজে হয়েছে।
-প্রথমে মা বলছিল। বিলিভ করিনি কিন্তু বাসায় এসে খেয়ে দেখলাম।এর চাইতে জঘন্য কিছু হতেই পারেনা।
-না নিরা এরকম কিছুই হয়নি। আমার টা ভাল ছিল।
.
আমার কথা শুনে নিরা আবার কেদে ফেলল,বলল
-তুমি আর আমার সাথে কথা বলবা না ,মিথ্যাবাদী কোথাকার।
-কি বলতেছ এসব।আমার খুব ক্ষুদা পাইছে।চল কিছু খাই।
-ক্ষুদা পাইলে আমি কি করব। আমি কিছুই পারিনা। আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাব।তুমি ভাল রাধুনি মেয়ে দেখে বিয়ে করে নিও।
-কি বলতেছ এসব।তুমি মনে হয় পাগলী হয়ে গেছ।
-হুম।
-ওঠ তো।চল বাহিরে থেকে ঘুরে আসি।
-না তোমার সাথে আর কথা নাই।যাও তুমি, আমি একলা থাকব।
.
আমি ফ্রেশ হওয়ার জন্য বাত্রুমে ঢুকলাম।কিছুক্ষনের মধ্য আমাকে ভেবে নিতে হবে কি করে নিরার মন ভাল করা যায়।খুব সহজেই নিরার মন ভাল হয়না।তাই অন্য রকম কিছু করতে হবে।কোন কিছুই মাথায় আসছেনা।আমি আবার ঘরে গেলাম।গিয়ে দেখি এখনো ও কাঁদছে।

.
নিরাকে বললাম,
-প্লিজ নিরা,,কান্না থামাও।তুমি মিথ্যা বলার জন্য যা শাস্তি দিবে তাই আমি মেনে নেব।
-সত্যি।
-হুম।বল কি করতে হবে?
-আমি রুটি বানাব,, তুমি সব গুলো খাবে।
-আচ্ছা,,এটা কোন ব্যাপার।
-চল,,এখনই শুরু করব।
-আচ্ছা,চল।
.
নিরা শুরু করে দিয়েছে রুটি করা। আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে,,আমি ওর সাথে থাকব আর কথা বলব।আমি বলে যাচ্ছি। একটা গল্প বলছি। এক ছেলে ছিল আর এক মেয়ে ছিল,,,এভাবে আমার গল্প চলছে।মাঝে মাঝে নিরা হু হা করছে।রুটি বানানো শুরু হয়ে গেছে, রুটি দেখে ভালই লাগছে।নিরা পুরো ১২ টা রুটি বানালো।আমার জন্য ১০ টা ওর জন্য দুটা।
.
সারাদিন না খেয়ে ছিলাম, খুব ক্ষুদা লেগেছে।মনে হল ১০ টা রুটি দিয়েও কিছু হবেনা।রুটি গুলি খুব সুন্দর লাগছে আর ভাল ব্যাপার সব গুলি গোল।
.
আমি টেবিলে বসে বললাম,
-বাসায় গিয়ে,, রুটি গোল করা শিখে আসলে।
-হুম।
-আম্মু কি বলল?
-তাড়াতাড়ি রান্না শিখতে বলল।
.
আমি রুটি মুখে দিয়ে বললাম,,
-তাড়াতাড়ি না আস্তে আস্তেই শিখিও।তোমার রুটি খেয়েই আমি সব সময় থাকতে পারব।
-ভাল হয়েছে।
-অসম্ভব সুন্দর হয়েছে।ঠিক তোমার মত।
.
নিরা আমার কথায় লজ্জা পেল।আমি আবার বললাম,
-তোমার জন্য উপহার আছে।
-কি?
-সারপ্রাইজ !
-কখন দিবে।
-রাত্রে।
-তোমাকে দিতে হবে না,,ওই উপহার আমি তোমাকে দিব।
.
আমি নিরার চোখের দিকে তাকালাম, এবং দেখলাম সেখানে এক রাশ লজ্জা।
.
.
.
-নাহিদ পারভেজ নয়ন।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:৩২

নীলনীলপরী বলেছেন: নীরার মতই সুন্দর?

রুটিগুলি নীরার মতই সুন্দর?

তবে কি এমন?



নাকি এমন ?

নীরার মতই সুন্দর?

রুটিগুলি নীরার মতই সুন্দর?

তবে কি এমন?



নাকি এমন ? মানে আপনার মত






১৩ ই জুন, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৫

নাহিদ পারভেজ নয়ন বলেছেন: আপনার মতোও হতে পারে।
তবে পিক গুলো সুন্দর,,ধন্যবাদ।

২| ১৩ ই জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৪

যাযাবরমন বলেছেন: গোলরুটি না মানে গল্প খুব ভাল হয়েছে।

১৩ ই জুন, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৬

নাহিদ পারভেজ নয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.