![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই পার্ক টা মুনার হল থেকে সবচেয়ে কাছে। তাই আমি বিকালে দেখা করার জন্য মুনাকে এখানেই আসতে বলি।যেন সন্ধ্যার দিকে খুব সহজেই ওকে ওর হলে পৌঁছে দিতে পারি।ওর হলে সন্ধ্যার পর ঢোকা নিষেধ। তাই এই ব্যাবস্থা।
.
প্রায় আধাঘন্টা বসে থাকার পর যখন মুনা এসে আমার পাশে বসল তখন ওকে কেমন জানি দূর্বল লাগছিল।চোখের নিচে হালকা কালি পড়েছে।চুল গুলো ঠিকভাবে আঁচড়ানো নেই।মুনা ব্রেঞ্চে বসতেই আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম,
-কেমন আছ?
.
মুনা শুকনা মুখে বলল,
-ভাল।
.
দেখেই বোঝা যাচ্ছে ও ভাল নেই।কিছু তো অবশ্যই হয়েছে।আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম,
-তুমি কি অসুস্থ?
-হুম,একটু জর।
.
আমি ওর কপালে হাত দিয়ে দেখলাম,একটু না অনেক জর।
-তোমার তো অনেক জর,এই জর নিয়ে বের হইছ কেন?
.
মুনা কথাটা শুনে আমার দিকে তাকাল কিন্তু কোন কিছুই বলল না।আমি আবার বললাম,
-জর কখন থেকে?
-কাল রাত্রে আসছে!
-ওষুধ খাইছো?
-হুম।
-রিমা কে বলিও তোমার মাথায় একটু পানি দিয়ে দিতে।
(রিমা ওর রুমমেট?
-রিমা নাই বাসায় গেছে।
-তাহলে অন্য কাওকে বলিও একটু মাথায় পানি দিয়ে দিতে।
-দেখি !
.
.
কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থাকার পর আমি মুনাকে বললাম,
-কিছু খাইছো দুপুরে?
-নাহ
-কিছু খাবা?
-নাহ।
.
মুনাকে এখন একটু বেশি অসুস্থ লাগতেছে।ওকে হলে রেখে আসাই বেস্ট হবে।
-চল তোমায় হলে নামাই দিয়ে আসি।
-আরেকটু বসি,কেবল ই তো আসলাম।
-নাহ,,হলে গিয়ে রেস্ট নাও,আর কিছু খেয়ে নিও,
-আচ্ছা চল।
.
আমি ওর হাত ধরে হাটতে লাগলাম।যখনি পার্ক শেষ করে মেইন রোডে এসে রিকশা নেব তখনি মনে হল মুনা আমার গায়ের উপর পড়ে যাচ্ছে।আমি ওকে কোন রকম ভাবে ধরে ফেললাম। মনে হয় মাথা ঘুরে পড়ে গেছে ও।ওকে ধরে রিকশায় উঠালাম।
.
রিকশায় বসে ভাবতেছি ওকে হলে নিয়ে গিয়ে কি করব?
ওকে কে দেখবে,তাহলে কোথায় নিয়ে যাব?
আমার বাসায় ? নিয়ে যাওয়া যায় কিন্তু আম্মু কি বলবে।
ওত কিছু ভাবতে পারলাম না রিকশা ওয়ালাকে আমাদের বাসার দিকেই যেতে বললাম।
.
এক দোকানে থামিয়ে একটা পমপানির বোতল কিনে নিলাম। ওর চোখে জল ছিটা দিতেই ও চোখ খুলল।আমাকে দেখেই বলল,
-কোথায় যাচ্ছি আমরা?
-আমার বাসায়।
-কেন?তুমি আমাক হলে নামাই দেও !
-হলে গিয়া কি করবা,মরবা নাকি।
-কিন্তু তোমার আম্মু কি বলবে?
-ম্যানেজ করে নেব এখন, তুমি বেশি কথা বলিও না।পানি খাবা?
.
মুনা আর কোন কথা না বলে পানির বোতল টা আমার হাত থেকে নিয়ে কিছু পানি পান করে আমার কাধে মাথা রেখে বসে রইল ।আমি ভাবছিলাম, বাসায় গিয়ে আম্মুকে কি বলব।বাবা এখন আসবেনা, আসতে আসতে রাত হবে তাই বাবাকে নিয়ে খুব একটা সমস্যা হবেনা।
.
বাসার কলিংবেল বাজাতে গেট খুলল আমার ছোট বোন। ও আমার পাশে মুনাকে দেখেই চেঁচাতে লাগল ভাবী এসেছে ভাবী এসেছে।দু একবার ছবি দেখিয়েছিলাম মুনার।এটাই কাল হয়ে দাড়াল আমার জন্য।
আমি ওকে হাত দিয়ে ইশারা করলাম চুপ কর। কিন্তু ও শুনলই না।ততক্ষনে ঘরে আম্মুও চলে এল।আম্মু ঘরে ঢুকেই বলল,
-কে এসেছে রে তিন্নি?
-ভাবী এসেছে আম্মু!
-কোন ভাবী,,
-দেখ কোন ভাবী,
.
আম্মু দরজার সামনে এসে দাড়াতেই দেখল আমি মুনাকে ধরে দাড়িয়ে আছি।আমি সাথে সাথে মুনাকে ছেড়ে দিলাম কিন্তু ছেড়ে দিতেই মনে হল মুনা মাটিতে পড়ে যাচ্ছে।তাই আবার ওকে ধরে ফেললাম।
.
আম্মু মুনার দিকে তাকাতেই বুঝল ও অসুস্থ, তাই ঘরে নিয়ে আসতে বলল।ঘরে ঢোকানোর সময় জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে।
আমি সব খুলে বললাম।বাসায় নিয়ে আসার কারণ ও বললাম।
আমি শুনে খুশিই হল।আর বলল,
-ভাল করেছিস।হলে থাকলে কি হত কে জানে।
.
আমি মুনাকে আমার ঘরে নিয়ে এসে শোয়ালাম।আম্মু ততক্ষনে ওর মাথায় পানি ঢালার ব্যাবস্থা করে ফেলল।তখনো মুনা ঘুমিয়ে আছে।জর মেপে দেখলাম ১০৪ ডিগ্রী।
.
আমি ডাক্তারের কথা বলতে আম্মু বলল,
-থাক আজ না। মাথায় পানি দিয়ে দেখি,উন্নতি না হলে কাল সকালে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাস।
-ঠিক আছে।
-যা তুই ঘর থেকে যা !
.
আমি ঘড় থেকে চলে আসলাম।আমি টিউশনি তে চলে গেলাম।রাত্রে যখন টিউশনি শেষে বাসায় ফিরলাম।তখন মুনার কপালে হাত দিয়ে দেখি ওর জর অনেক কমে গেছে।
বাবা যখন আসল,তখন বাবাকে অনেক বুঝিয়ে বললাম,আমার বান্ধবী। খুব অসুস্থ দেখার কেউ নেই তাই নিয়ে আসলাম।
.
বাবা আমার কথা কি বুঝল কে জানে।শুধু আচ্ছা বলে চলে গেল।আমি ঘন্টা খানেক মুনার কাছে থেকে চলে গেলাম শুতে।মা শুধু বলল,একবার ও জেগেছিল ওষুধ খেয়ে আবার শুয়ে পড়ছে।
.
তিন্নি শুধু আমাকে ক্ষেপিয়ে চলল,বলতে লাগল,
-ভাবীর জন্য এত দরদ, আর আমাদের জন্য কিছুই না।
.
আমি ওকে রিকুয়েস্ট করলাম আস্তে বল নয়ত বাবা শুনবে। অনেক কষ্টে ওকে থামানো গেল।
.
আমি ভয়ে ছিলাম আম্মুকে নিয়ে,কিন্তু এখন আম্মুকে দেখে মনে হচ্ছে উনি মুনা কে পছন্দ করেছেন। তাই আর কোন টেনশন নাই।আম্মু যেখানে হ্যা বলবে বাবা সেখানে ইয়েস বলবে তাই নো টেনশন।
.
.
দুই..
.
রোজ সকালে আম্মু এসে দু তিনবার ডেকে যায়। তারপর ঘুম ভাঙে আমার।কিন্তু আজ কোন ডাকাডাকি নেই।ঘুম ভাংলো আমার প্রায় ১০ টার দিকে।আমি তড়িঘরি করে উঠে আমার রুমে গেলাম,গিয়ে দেখি মুনা রুমে নাই।কিচেন থেকে হাসির শব্দ আসছে।
আমি কিচেনে উকি দিতেই দেখি মুনা আর মা মিলে রান্না করছে। আমি তো দেখে অবাক।
আম্মু আমাকে দেখে বলল,
-এই তোর ওঠার সময়?
.
মুনাও ঘুরে তাকাল।মুনাকে দেখে আমি হাসার চেষ্টা করলাম। একদিনে এত মোহাব্বত তৈরি হয়ে গেল মুনা আর আম্মুর মধ্য।
আম্মু আবার বলল,
-তোর নাস্তা টেবিলে রাখা আছে।
-হুম,
এই বলে আমি মুখ ধুতে চলে গেলাম।এসে যখন টেবিলের পাশে দাড়ালাম তখন দেখি মুনা খাবার বেড়ে দিচ্ছে।ব্যাপার টা দেখার মত।বিয়ে করা বউও এত ভাল হয়না।আমি বসে পড়লাম।মুনাকে জিজ্ঞেস করলাম,
-তোমার জরের কি অবস্থা?
-ভাল।
.
আমার মনে হল মুনা লজ্জা পাচ্ছে,এখানে লজ্জা পাওয়ার কি আছে।কালকেও খুব সহজ ছিল ও।আমি অত কিছু না ভেবে খেতে লাগলাম।
.
দুপুরে যখন বের হব তখন আম্মু আমার হাতে ৫ হাজার টাকা দিয়ে বলল,
-ভাল দেখে একটা শাড়ি নিয়াসবি।
-হুম,কেন?
-মুনার জন্য।কিছুই তো দিলাম না মেয়েটাকে।আর শোন সন্ধ্যার আগেই চলে আসবি।
-হুম।
.
হঠাৎ কি হল আম্মুর কিছুই বুঝলাম না।বিকালে যখন শাড়ি কিনে বাসায় ফিরলাম তখন মনে হল বাসায় অনেক লোক এসেছে।
ঘরে ঢুকে ঠিক কাওকে চিনলাম না।আমি ওনাদের সালাম দিয়ে সোজা ভেতরে চলে গেলাম।
.
ভেতরে ঢুকতেই তিন্নির দেখা পেলাম,তিন্নির কাছে যা জানতে পারলাম তা হল-
মা বাবা ভেবেছেন আমার আর মুনার বিয়ে হয়ে গেছে।তাই ওকে বাসায় নিয়ে এসেছি।আর মুনাকে আম্মুর ও খুব পছন্দ হয়েছে।তাই আম্মু চান তার বৌমা যেন আর হলে না থাকে, আমাদের বাসাতেই যেন থাকে।তাই সকালে বাবা মুনার কাছ থেকে মুনার বাবার ফোন নাম্বার নিয়ে মুনার বাবাকে ডাকেন আমাদের বিয়ের ব্যাবস্থার জন্য।
.
আমি তো এসব শুনে অবাক। আমি সোজা মুনার কাছে গেলাম।ওকে দেখে হাসি খুশিই মনে হল।আমি ওকে এসব বলাতে ও বলল,
-ও আচ্ছা।
.
শুধু ও আচ্ছা,আমি ওকে শাড়িটা দিলাম।ততক্ষনে আম্মু চলে এল। ঘরে ঢুকেই শাড়িটা হাতে নিয়ে বলল,
-কি শাড়ি কিনেছিস এটা?
-কেন?
-এটা কোন কাপড় হল।আমাকেই যেতে হত।রান্না বান্না না থাকলে আমি যেতাম।
-কিন্তু এটা তো ভালই।
-এটা ভাল?আমার মনে হয় তুই সব টাকা দিয়ে শাড়ি কিনিস নি।কিছু টাকা রেখে দিয়েছিস।
.
কি বলছে এসব আম্মু মুনার সামনে।আমি কিছু বলতে যাব তখনি মুনা মুখ খুলল বলল,
-সমস্যা নেই আন্টি,,আমার ভাল লেগেছে।
.
মুনার কথা শুনে আমার মুখেও হাসি ফুটল।আমার দাত কেলানো দেখে আম্মু বললল,
-কি করছিস এখানে ? যা তোর ঘরে যা।
.
আমি বের হয়ে আসলাম।সোজা ঘরে চলে গেলাম।আমার পাশের বাসার এক দুলাভাই এসেছিলেন বাসায়, উনি আমার ঘরে এসে বললেন,
-শালা,আজ তো তোমার বিয়ে হয়েই যাবে।
-মানে?
-মানে কি, রেডি হও,কাজী আসল বলে।
.
সারমর্ম থেকে যতটুকু জানতে পারলাম তা হল,,আগে কি করেছি করেছি। পরিবারের সবার সামনে আমাদের আবার বিয়ে হবে।কিছুদিন পর ধুমধাম করে অনুষ্ঠান হবে।
আবার বিয়ে কিন্তু এটা তো আমাদের প্রথম বার।সব তিন্নির দোষ ওই কিছু বলেছে বাড়িতে।এমন কিছু বলেছে যাতে বাবা মা দুজনেই বিলিভ করে যে আমার আর মুনার বিয়ে হয়েছে।
.
আমি রেডি হলে দুলভাই আমাকে বসার ঘরে নিয়ে গেল।একে একে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।মুনার বাবাকে দেখে মনে হল উনি আমাকে ভালই পছন্দ করেছেন। আর আমাকে অপছন্দ করার কোন কারণ নেই,ডাক্তারি পরিক্ষা দিয়ে রেজাল্ট এর জন্য অপেক্ষা করছি।তাই পাত্র হিসেবে আমি যথেষ্ট উত্তম।
.
যে শাড়িটা এনেছিলাম ওটা মায়ের পছন্দ না হলেও মুনার হয়েছে।তাই মুনা ওই শাড়ি পড়েই সেজেছে বিয়ের জন্য।ওকে দেখে ভালই লাগছে।এটা ভেবে ভাল লাগছে, কাল থেকে আর নাস্তা নিজের হাতে বেড়ে নিতে হবেনা।
.
যথা সময়ে আমার আর মুনার বিয়ে হয়ে গেল।কিন্তু এখনো বাড়ি মানুষে গিজ গিজ করছে।
আমি বসে আছি আর অপেক্ষা করছি কখন বাসা ফাকা হবে আর কখন আমি মুনার কাছে যাব।
০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:৩২
নাহিদ পারভেজ নয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:৪১
মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেছেন: Heart touching writing. Must carry on brother.. Monta khub valo lagae vore gelo
০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৪
নাহিদ পারভেজ নয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:৪১
সুমন কর বলেছেন: মিষ্টি প্রেমের গল্প। বাস্তবে এমন হলে ভালো হতো !!!
০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:৪৪
নাহিদ পারভেজ নয়ন বলেছেন: হয় বাস্তবেও।
ধন্যবাদ
৪| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:৪৬
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: বাস্তবে এমন হোক বা না হোক, পড়তে ভাল লাগছিল| এই বা কম কিসে?
০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:২৯
নাহিদ পারভেজ নয়ন বলেছেন: হু,ধন্যবাদ।
৫| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:৫৬
কি করি আজ ভেবে না পাই বলেছেন: বাহ, বেশ লেগেছে
চালিয়ে যান মশাই
০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:৩০
নাহিদ পারভেজ নয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ
৬| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:৩৯
হামিদ আহসান বলেছেন: বেশ ভাল লেগেছে গল্পটি৷
৭| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:১০
রাফীদ চৌধুরী বলেছেন: সাবলিল একটা গল্প। ভালো লাগলো।
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:০০
দূরের পথযাত্রী বলেছেন: পজিটিভ রাইটার। পড়তে পড়তে ভাবছিলাম এই বুঝি অঘটন ঘটলো। কিন্তু এ কি!! সব দেখি লেখকের অনূকুলে। স্বপ্নেও তো মানুষ এতো সহজভাবে সব দেখেনা। এগিয়ে যান ভাই।