![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক.
.
ঘুমাচ্ছিলাম !
কনকের সাথে সারা রাত কথা বলে প্রায় ভোর চারটার দিকে বিছানায় এসে শুয়েছি।
এখন আর কত বাজবে?
হায়েস্ট আটটা।
প্রচন্ড ঘুমে মগ্ন ছিলাম ,তখনি কানের কাছে রাখা ফোন টা জোরালো শব্দে বেজে উঠে আমার কাঁচা ঘুমটা ভেঙে দিল।
.
ফোন কে করেছে অত সত দেখলাম না,এমনি প্রচন্ড রাগ উঠছিল ফোনের অপর প্রান্তের ব্যাক্তির ওপর।ফোন ধরে বললাম, -হ্যলো,
-বাবু উঠেছ?
-কে রে ভাই?
-আমি ,,,
-আমি কে,
-আমার কন্ঠ চিনতে পারতেছনা,
-না পারতেছিনা,
-সত্যি,
-সত্যি মিথ্যা জানিনা,,এই মেয়ে তুমি ঘুমাও না ক্যারে,
-মানে,
-ভোর চারটার দিকে কথা বলে শুইলাম, আর তুমি আটটার দিকে ফোন দিয়ে বল উঠছি কিনা।
-তো কি হইছে?
-ফোন রাখো !
-কেন?কি হইছে,
-কি হইছে মানে, তোমাকে না বলছি বারটার আগে ফোন দিবানা,
-সরি,
-ফোন রাখো,
-রাগ করছ?
-না করিনাই,খুশি হইছি।রাত্রেও শান্তি দেওনা,একটু সকালে যে ঘুমাবো সেটার ও ব্যাবস্থা নাই।
-সরি বাবু,
-বাবুর ক্ষেতা পুড়ি, ফোন রাখনা ক্যারে !
-বল আগে মাফ করছ !
-না বদ মাইয়া, তোরে মাফ করমুনা,অফ যা।
.
এই বলে ফোনটা বন্ধ করে রেখে আবার শুয়ে পরলাম।চোখ বন্ধ করতেই আবার ঘুম ধরে গেল। মনে হতে লাগল এই ঘুমের জন্য আমি আমার গার্ল ফ্রেন্ডকেও ত্যাগ করতে পারি।
.
ঘুম ভাঙল সকাল দশটায় সেটাও আম্মুর ডাকাডাকিতে যদিও আরো ঘন্টা খানেক ঘুমানোর ইচ্ছা ছিল।
ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে বিছানা থেকে উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলাম।
ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানার উপরে থাকা ফোন টা দেখে আমার কনকের কথা মনে পড়ল।
ফোনে ওকে কত কি উল্টা পাল্টা বলছি ! ও কি অবস্থায় আছে এখন কে জানে?
কি করবে আমার সাথে সেটাও জানিনা।
.
আমি ফোনটা অন করে দেখি একটা ম্যাসেজ। কনকের নাম্বার থেকে পাঠানো।
ম্যাসেজ অন করে দেখি কনক লিখেছে,,
"তোর সাথে দুই মাসের ব্রেকাপ।
আমাকে আর ফোন দিবিনা।
দুই মাস শুধু ঘুমাবি।"
.
এতটুকু দেখেই বোঝা যাচ্ছে ও কতটা ক্ষেপেছে, আমি সাথে সাথে ওর নাম্বারে ফোন দিলাম,ওর রাগ ভাঙাতে হবে ওকে ছাড়া আমার দু ঘন্টাও চলেনা,আর দু মাসে তো আমি মরেই যাব।
সাধারণত এ সময় যা ঘটে সেটাই ঘটল কনকের ফোন বন্ধ অর্থাৎ এ মুহূর্তে আপনার মোবাইল সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা একটু পরে আবার ডায়াল করুন ! আমি জানি আবার ডায়াল করেও কনককে পাওয়া যাবেনা। তাই আমি ওর ছোট বোন স্নেহার নাম্বারে ফোন দিলাম,
-হ্যালো স্নেহা
-নয়ন ভাইয়া,
-হুম,কনক কোথায়?
-আমার পাশেই,কিছু হয়েছে নাকি আবার আপনাদের!
-কেন?
-সকাল থেকে কাঁদতেছে আপু !
-হুম,একটু খারাপ ব্যাবহার করে ফেলছি।
-ও, বারবার এসব করেন কেন? কথা বলবেন ওর সাথে?
-হুম,বুঝাই সুজাই একটু ব্যাবস্থা করে দাও,
-আচ্ছা দেখি কিছু করা যায় কিনা !
.
কিছুক্ষন পর এবার স্নেহা ফোন দিল,
-হুম বল স্নেহা,
-ভাইয়া আপু তো আপনার সাথে একটুও কথা বলবে না।
-ওকে বল, অফিশিয়ালি ব্রেক আপের ব্যাপারে কিছু কথা ছিল ওর সাথে,
-আপনি ব্রেকাপ করবেন !
-আরে না,যেটা বলছি ওটা কর,
-আচ্ছা,,,
.
কিছুক্ষন বাদে আবার আমার ফোন বেজে উঠল, কনকের নাম্বার থেকে কল আসছে।আমি ফোন ধরে বললাম,
-হ্যালো, পাখি কেমন আছ?
.
কনক ওর গরম কন্ঠেই বলল,
-অফিশিয়ালি ব্রেকাপ কি?
.
আমি কথা ঘোরানোর জন্য বললাম,
-বাদ দাও এসব,কেমন আছ?
-ইয়ারকি রাখো,অফিশিয়ালি ব্রেকাপ মানে কি বোঝাইছ?
-মানে সরাসরি কথা বলে চিন্তা ভাবনা করতাম কি করা যায়।
-না,দুই মাস তোমার মুখ দেখব না।
-তুমি বোঝনা কেন?
-কি বুঝব? সকাল বেলা যে ব্যাবহার করছ!
তুই তুই করেও বলছ !
-সরি,
-কোন সরি নাই,তুই আর ফোন দিবিনা আমাকে,,,
-তুমিও তুই বললা শোধ বোধ,,
তুই তুই কাটাকাটি।
-চুপ।
-শোন ব্যাপারটা ঠান্ডা মাথায় চিন্তা কর,দুই মাসের ব্রেকাপের মধ্য আমি এক মাসের লাশ হয়ে যাব।তখন তুমি আমার লাশের সাথে বসে রিলেশন জোড়া লাগাইও,
-দরকার হলে তাই করব ! তবু তোমার শিক্ষা হওয়া দরকার।
.
ভালই মুশকিল হল।এই মেয়ে তো বোঝার চেষ্টাই করতেছেনা। সকালে এমন একটা ভুল করলাম কিভাবে??
-শোন কনক,ব্রেকাপের বদলে যা করতে বলবা তাই করব,তবু ব্রেকাপ না।
-না,তোমাকে কিচ্ছু করতে হবেনা,তুমি শুধু ঘুমাবা।
-আহা,অন্য বিকল্প কিছু করা যায়না,এক জিনিষ নিয়ে পড়ে আছ।
-না,
-ভেবে বল,এখনো নাস্তা করিনাই। এমন করলে সারাদিন কিন্তু কিছুই খাবনা।
-নাস্তা কেন করোনাই।নাস্তা করে নাও।এমনিতে হ্যাংলা তুমি,
ফুক মারলে কবে যে উড়ে যাও কে জানে !
-না খাবনা কিছু।
-খাও না হইলে ফোন রাখব,
-আচ্ছা,খাবো।তার আগে ব্রেকাপের বিকল্প কিছু বল।
-হুম,একটা উপায় আছে?
-কি?
-ভেবে বল,করবা কি না?
.
কি বলতে পারে কনক,যেটাতে আমাকে ভাবতে হবে।আমি আর কিছু ভাবলাম না,ডাইরেক্ট বলে দিলাম,
-আচ্ছা,যেটাই বলবা করব।
-আজ রাত থেকে টানা দুই মাস আমার সাথে রাত জাগবা।রাত বারটা থেকে সকাল ছটা।
-কি বল??
-হুম,যেদিন আমি ঘুমাবো ওইদিন প্রতি ঘন্টায় ম্যাসেজ করে জানান দিবা তুমি জেগে আছ,,
-মাথা খারাপ হইছে তোমার""
-না মাথা খারাপ হয়নাই।
-এটা কেউ পারে,
-জানিনা,,করলে করবা।নয়ত আগের সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।
-আচ্ছা।
-যাও এখন নাস্তা করে নাও। পরে কথা হবে।
-হুম,
.
আমার কিছুই করার ছিলনা কনকের কথা মেনে নেওয়া ছাড়া।
জানিনা কত দিন রাত জাগতে পারব।দু একদিনের ব্যাপার হলে কোন ব্যাপার ছিলনা,কিন্তু দু মাস কেমনে কি??
.
.
দুই,,
.
এখন বাজে দুটা , কনকের কথা অনুযায়ী আমি জেগে আছি।
এতক্ষন মানে ১২-২ টা এই দুই ঘন্টা খেজুরে আলাপ করলাম, বাট সব আলাপ ফুরিয়ে যাওয়ার কারণে আমি এখন বই পড়ছি। হেডফোন কানে লাগিয়ে বই পড়ে কনক কে শোনাচ্ছি।
পড়ছি হুমায়ূন আহমেদের বই-"পাখি আমার একলা পাখি"।
খুব একটা বিরক্ত লাগছেনা কারণ আমার পছন্দের বই এটা।
.
আমি পড়ছি আর কনক শুধু মাঝে মাঝে শুধু হু হ্যাঁ করছে।
একটু আগে যখন কনকের হু হ্যা বন্ধ হল।ভাবলাম ও ঘুমিয়ে পড়েছে।তখনি কল কেটে দিয়ে বই বন্ধ করে চোখ বন্ধ করলাম, কিন্তু লাভ হলনা এক মিনিট বাদেই কনকের কলে চোখ খুলে গেল।কল রিসিভ করতেই কনক রাগ হয়ে বলল,
-কল কাটছ কেন?
-টয়লেটে গেছিলাম।
-মিথ্যা বলছ?
-না,
-কি হল,পড়ছনা কেন?
-পড়তেছি বই টা খুলি আগে,
-হুম,শুরু কর।
-তুমি ঘুমাওনা কেন?
-ঘুমাবনা,তোমাক পাহাড়া দেব।
-না ঘুমালে তোমার চোখের নিচ কালো হয়ে যাবে।
-হোক,
-খারাপ লাগবে দেখতে !
-দেখতে খারাপ লাগলে বিয়ে করবানা?
-এটা কেমন কথা?
-কেমন কথা আবার ! বিয়ে করবানা?
-হুম,অবশ্যই করব।
-তাহলে রাত জাগলে তো সমস্যা নাই।
-হুম জাগো।
.
এই রকম আরো দু একবার ঘটল,বাট কোন লাভ হল না। কনক ৬ টার আগে আমাকে ঘুমাতে দিলনা।
৬টা বাজতেই কনক বলল,
-বাবু ঘুমাও,
-হুম,আরো কিছুক্ষন জাগি,
-না, আর জাগতে হবেনা।
-আচ্ছা,
-আর শোন,আজ বিকেল পাঁচটায় দেখা হবে,তোমার জন্য একটা উপহার আছে।
-কি?
-বিকালে এলেই জানতে পারবে,
-আচ্ছা।
-ঘুমাও।
.
ফোন টা কেটে দিয়ে চোখ বন্ধ করতেই ঘুম ধরে গেল।প্রথমে ঘুম ভাঙল ১০ টায় আম্মুর চিল্লা হাল্লাতে, উঠে আবার ঘুম গেলাম।
পরের বার ঘুম ভাঙল কনকের ফোনে,প্রায় বারটার দিকে।
ফোন ধরতেই ও বলল,
-বাবু উঠেছ?
-হুম,
-নাস্তা করেছ?
-না,মাত্র উঠেছি।
-আচ্ছা,ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নাও।
-আচ্ছা।
-একটু পর ফোন দিচ্ছি।
-হুম,
.
নাস্তা করে আবার বিছানায় আসলাম।সরকারী ছুটির দিন ছিল তাই ভার্সিটি বন্ধ তাই কোন ব্যাস্ততাও নেই।
বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই আবার ঘুম ধরে গেল।
ঘুম ভাঙল বিকেল চারটায়, এবারো আম্মুর ডাকে।
-কিরে সারাদিন মরার মত ঘুমাস কেন?
-উম,
-কোন জায়গায় চুরি করতে গেছিলি,
-কি বল এসব।
-তাহলে এত ঘুম কই থাকি আসে?
.
তুমি যদি জানতা আম্মু কি প্যারার মধ্য আছি তাহলে এ কথা বলতা না।
-এমনি ঘুমাইছিলাম
-কনক ফোন দিছিল আমাকে, তোর মোবাইল বন্ধ কেন?
-এমনি বন্ধ,কি বলছে?
-বিকেলে নাকি কোথায় যাবি তোরা,,
-হুম,
.
কনক আর আমার ব্যাপার ওর ফ্যামিলি আর আমার ফ্যামিলির সবাই জানে তাই খুব একটা প্রবলেম হয়না।
.
ঘড়ি দেখে মাথায় হাত পরল, চারটা বেজে গেছে। মাত্র একঘন্টা আছে আর হাতে।লেট করলে আবার কনক কি শাস্তি দিবে কে জানে?
দ্রুত ফ্রেশ হয়ে না খেয়েই বেড়িয়ে পড়লাম বাসা থেকে।
টি.এস.সি যেতে আধাঘন্টা লাগবে আর রাস্তায় জ্যাম থাকলে তো কোন কথাই নাই, ঘন্টা খানেক।
কনক আমার মাথায় ঠাডা ফেলাবে।
.
টি.এস.সি তে পৌছালাম সাড়ে ৫ টায়,আধাঘন্টা লেট।
ভয়ে ভয়ে কনকের কাছে যেতে লাগলা, ওর কাছে যেতেই ও বলল,
-কেমন আছ বাবু?
-ভাল,
-তোমার ফোন অফ ছিল কেন?
-এমনি?
-এত দেরী হল কেন?
-রাস্তায় জ্যাম ছিল।
-আচ্ছা, বস।
.
আমি অবাক হয়ে গেলাম কনকের ব্যাবহার দেখে,আমি ভেবেছিলাম প্রচন্ড রাগ হবে ও!
ওর পাশে বসতেও দিবেনা হয়ত,কিন্তু এখানে এসে পুরো উল্টো পরিস্থিতির সম্মূক্ষীন হলাম।
.
আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,
-কনক দুমাস সময় টা একটু কম করা যায়না?
-আচ্ছা,, মওকুফ করলাম সব।
-পুরো দুমাস।
-হুম,
-ধন্যবাদ।
.
তখনি আমার উপহারের কথা মনে হল।আমি বললাম,
-আমার জন্য কোন উপহার আনার কথা ছিল?
-হুম,এনেছি।
-দাও।
-চোখ বন্ধ কর।
-আচ্ছা।
-দেখবানা কিন্তু
-আচ্ছা,,
-প্রমিস,
-প্রমিস।
.
আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম,
জানিনা কনক কি উপহার দিবে।
বাট এটা বুঝতে পারলাম কনকের নিঃশাষ আমার মুখের উপর পড়ছে।
জানিনা কি হচ্ছে,ও টুপ করে আমার দু চোখে দুটো চুমু খেল।
মনে হল কিছুক্ষনের জন্য দুনিয়া স্তব্ধ শুধু কনকের ঠোট দুটো সচল।
.
তন্দ্রা ভাঙল কনকের ডাকে,
-এই,
.
আমি চোখ খুললাম,
-হুম,বল।
-তুমি আমার জন্য সারারাত জাগছ তাই এই উপহার।
.
আমি বললাম,
-শাস্তি মওকুফ করার দরকার নাই,ওটা দুই মাস থেকে দু বছর কর।
এ উপহার পেলে দু বছর জেগে থাকলেও ক্লান্ত হব না।
.
কনক আমার কথা শুনে কিছু বলল না,শুধু হাসল।
কি দারুণ হাসি,এ হাসি দেখে সারা জীবন না ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিতে পারব।
.
.
.
-নাহিদ পারভেজ নয়ন
১০ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:২৪
নাহিদ পারভেজ নয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ১০ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:০১
ডরোথী সুমী বলেছেন: খুব ভালো লেগেছে। মিষ্টি গল্প।শুভ কামনা রইলো।
১১ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:৫৪
নাহিদ পারভেজ নয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ১০ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:১৫
ইঞ্জিনিয়ার বলেছেন:
১১ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৩৭
নাহিদ পারভেজ নয়ন বলেছেন: হুম,,ধন্যবাদ
৪| ১০ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:৩১
সুমন কর বলেছেন: শেষের পার্টটুকু মিষ্টি প্রেমের গল্পের মতো।
১১ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:১৩
নাহিদ পারভেজ নয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ
৫| ১০ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৮
বাকি বিল্লাহ বলেছেন: ইসস.... এমন একটা ভালবাসার মানুষ পেতাম
১২ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:০৯
নাহিদ পারভেজ নয়ন বলেছেন: পাবে,,অপেক্ষা করেন।
ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:৪৫
জে আর শুভ বলেছেন: অসাধারন লিখনি। বিয়ের আগে রিলেশন করা মানে যন্ত্রনা আপনি বাজার থেকে কিনে আনা :-D