নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নাহিদ পারভেজ নয়ন।

নাহিদ পারভেজ নয়ন

যা মনে আসে তাই লিখি।সব লেখা পড়ার যোগ্য নয় তবুও লিখি।

নাহিদ পারভেজ নয়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

টুকরো ভালবাসা

২০ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:৩৮

রাফি নিশির পাশে এসে বসতেই নিশি নাক ছিটকে বলল,
-তোমার গা থেকে ঘামের গন্ধ আসছে কেন?
.
রাফি ওর নিজের শরীর সুঙে বলল,
-কই আমি তো পাচ্ছিনা?
-তুমি পাবেও না,নোংরা কোথাকার।
.
রাফি আর কিছু বলল না,চুপ করে রইল।
নিশি এভাবে নোংরা কেন বলল?
সবার মুখে এটা শোনা যায় কিন্তু পছন্দের মানুষের কাছ থেকে এটা শুনতে খারাপ লাগে,মন খারাপ হয়ে যায়।
.
নিশি আবার বলল,
-যে পারফিউম টা কিনে দিয়েছিলাম,ওটা দাওনি গায়ে?
-না!
-কেন?
-ভাল লাগে না!!
-ওটা মার্কেট এর বেস্ট পারফিউম ছিল।তাহলে কি ব্রান্ড ভাল লাগে??
-তোমার গায়ের টা,
-ও,, আচ্ছা। আমার ব্যাগেই আছে তুমি নিয়ে যাও।
-ওটা তো মেয়েদের পারফিউম,
-মেয়েদের তো পছন্দ কর কেন?
.
নিশি ওর ব্যাগে হাত দিল পারফিউম বের করার জন্য,নিশির ব্যাগে অনেক কিছু থাকে।যেমন রুমাল, পারফিউম,সুই সুতা,পানির বোতল আরো অনেক কিছু।
নিশি পারফিউম বের করে রাফির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
-নাও গায়ে দেও,,
-না,
-দাড়াও আমি দিয়ে দিচ্ছি।
.
নিশির কথা শোনা মাত্র রাফি লাফ দিয়ে ব্রেঞ্চ থেকে উঠে গেল।মেয়েদের পারফিউম গায়ে দেওয়া লজ্জার ব্যাপার, মেয়ে মেয়ে মনে হবে নিজেকে। রাফি নিশির থেকে দূরে সরতে সরতে বলল,
-আমি কি বলছি যে ওটা গায়ে দেব,আমি বলছি তোমার গায়ে ভাল লাগে,,
-মানে?
-মানে তোমার গা থেকে যে সুগন্ধ আসে সেটা ভাল লাগে।
-ও,তো এই জন্য তুমি গায়ে পারফিউম দেওনা?
-হুম,,ওটা দিলে তখন আমার গায়ের পারফিউমই আমার নাকে আসবে তোমার টা আসবেনা,,
.
নিশি রাফির কথাটা শুনে কিছুটা লজ্জাই পেল।
রাফি আবার বলল,
-এই জন্যই তো পার্কে আসলে এই ছোট ব্রেঞ্চ টাতে বসি যেন তুমি আমার খুব কাছে বস,
-কাছে বসলে কি হবে?
-তোমার গায়ের গন্ধ টা আমার নাকে বেশি আসবে,,এত টুকুই যথেষ্ট তোমায় মোহিত হওয়ার জন্য।
.
নিশি এবার লজ্জায় মুখ টা নামিয়ে নিল,,হিল দিয়ে মাটিতে আঘাত করতে লাগল।
এই দৃশ্য টা রাফির খুব ভাল লাগে,এসময় নিশির কান মুখ গাল সব লাল হয়ে যায়,কি সুন্দর যে লাগে নিশিকে দেখতে রাফি বোঝাতে পারবেনা।
.
রাফি মনে মনে ভাবছিল যে লাভ হল একদিক দিয়ে,ও যে দশ মিনিট লেট হয়ে এসেছিল সেটা আর নিশির মনে নেই।
মনে থাকলে নিশি এমন করত না যদিও প্রথমে রাগী ভাবেই কথা বলেছিল।
.
কিন্তু নিশির যে সব মনে ছিল সেটা ওর পরের কথাতেই প্রকাশ পেল।
নিশি বলল,
-আমি কতক্ষন ধরে বসে আছি জান?
-না তো,
-জানবে কিভাবে?তুমি তো মজায় থাক!!
-মজায় মানে কি?
-মজায় মানে মজায়,মানে ফূর্তিতে
-আচ্ছা সরি।এরপর আর লেট হবেনা।
-রোজই তো বল,আগে ৫-১০ মিনিট লেট হত এখন আধাঘন্টা লেট কর।।
.
কথাটা বলে নিশি অভিমান করে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল।এ সময় টাতেও নিশিকে দেখতে সুন্দর লাগে,কিন্তু রাফি অন্য চিন্তা করছে।
.
রাফি নিশির কথা শুনে অবাক হয়েছে,ভালরকম অবাক! আধাঘন্টা কিভাবে?
রাফি ওর ঘড়ি টা বের করে দেখল,৫টা ১৫বাজে!
ওর আসার কথা ছিল ৫ টায়,ও এসেছে ৫টা ১০ এ। ১০ মিনিট লেট,আর নিশি দশ মিনিট কে আধাঘন্টা বানিয়ে দিয়েছে।
মেয়েরা পারেও বটে।
.
রাফি সময়ের ব্যাপার টা আনল না,ফালতু অজুহাতের ব্যাপার দিয়ে ও এত সুন্দর সময় টাকে নষ্ট করতে চায়না।সূর্যর আলোয় নিশিকে মায়াবী লাগছে সেটাকে সে নষ্ট করতে নয় আরেকটু বাড়িয়ে দিতে চায়।
.
রাফি বলল,
-আসলে তোমার জন্য একটা গিফট আনতে লেট হল?
-কেন? কি আনছ?
তোমাকে না বলছি আমার জন্য কিছুই আনবা না?শুধু শুধু টাকা নষ্ট কর কেন?
.
এত গুলো কথা শুনে রাফির মন টা খারাপ হয়ে গেল,ও অনেক শখ করে একটা ব্যাচ এনেছিল নিশির জন্য।
অবশ্য কম দামী আড়াইশ টাকার,তবে ডিজাইন ভাল।দোকান দার দাম চেয়েছিল পাচশ,কিন্তু ওই দোকানে রাফির এক বন্ধু কাজ করে সেই আড়াইশ তে ব্যাবস্থা করে দিছে।
.
নিশি রাফির মন খারাপ বুঝতে পেরে বললল,
-কি আনছ দেখি?

কথাটা শোনা মাত্রই রাফির মুখ হাসিতে ভরে গেল।সব সময় নিশিই ওকে দেয়,এবার রাফি নিশিকে দেবে।কম দামী হোক বাট এতে ভালবাসা প্রচুর আছে।
.
রাফি পকেট থেকে ব্যাচ টা বের করে নিশির হাতে দিয়ে বলল,
-দেখ তো পছন্দ হয় কিনা?
.
নিশি ব্যাচ টা নাড়িয়ে চাড়িয়ে বলল,
-ভালই,দাম কত?
-আড়াইশ,
-মিথ্যা বলিও না,পাচশর নিচে পাবানা কোন দোকানে।আমার বান্ধবি একটা নিছে সেম।
-না সত্য।আমার বন্ধুর দোকান তাই,
-ও আচ্ছা।
-তোমার পছন্দ হইছে?
-হুম অনেক।
.
নিশির পছন্দ হয়েছে শুনে রাফির খুব খুশি লাগতেছে।নিশি না থাকলে ও নাচত।
যদিও রাফি নাচ পারেনা,তবে ও টিভিতে দেখে হাত পা ছড়াছড়ি করলেই নাচ হয়ে যায়,রাফি অবশ্য সেরকমই করত।
.
রাফি বলল,
-পড়ো হাতে,দেখি কেমন লাগে?
-তুমি পড়াই দাও,
.
রাফি নিশির ডান হাত টা নিজের কাছে নিয়ে, ব্যাচ টা পরিয়ে দিল,উফ কি যে সুন্দর লাগছে নিশির হাত টাকে। নীল ব্যাচটাকে ফর্সা হাতে দারূন মানিয়েছে।
.
রাফি ব্যাচ পড়িয়ে দিয়ে হাত টা ছাড়ল না,ধরেই রইল।ব্যাচ পরা হাতটার দিকে এক যোগে তাকিয়ে রইল।নিশি তাই দেখে লজ্জায় মাটির দিকে তাকিয়ে রইল।
রাফি জানে খুব কম দামী জিনিষ এটা নিশির হতের জন্য,তবুও এতে ভালবাসা আছে।
ভালবাসা দিয়ে সব হয়না,যদি ভালবাসার মানুষ টা ঠিক না থাকে।
তবে নিশি ঠিক,সে ভালবাসতে জানে ভালবাসা বাচাতে জানে।যা অনেকেই জানে।
.
রাফি আকাশের দিকে তাকাল,নীল আকাশে পাখি উড়ছে,সব গুলো জোড়ায় জোড়ায় উড়ছে। বড় সুন্দর লাগে জোড়ায় জোড়ায় বসে থাকা পাখি দেখতে,কিন্তু এখন উড়ছে।তবে উড়তে থাকা পাখি দেখেও রাফির ভাল লাগছে এখন।
রাফি জানে নিশির হাত ওর হাতে থাকলে ওর সব ভাল লাগবে,চিলের একাকিত্ত ও ভাল লাগবে।
.
নিশি এখনো মাটির দিকে তাকিয়ে আছে আর রাফি নিশির হাতের দিকে।
দুজনেই সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারবে এ ভাবে।ভালবাসা তো এটুকুই।

মেঘ জমছে আকাশে,হয়ত বৃষ্টি হবে।
হোক বৃষ্টি, ভেঙে পড়ুক সব মেঘ পৃথিবীর বুকে তবুও রাফি ছাড়বেনা নিশির হাত।
.
.
.


-নাহিদ পারভেজ নয়ন

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.