![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
.
-ইদানিং ব্যাস্ত থাকো না কি?
-কেন?
-ফোন দিলে অল্প কথা বলো,
-ও, কবিতা লিখি।
-সারাদিন কবিতা লিখো,
-হুম,,
-আমার জন্য?
-হুম,,
-কতগুলো লিখছ,
-একটা,
-আচ্ছা,শোনাও
.
নিরব চারপাশে তাকিয়ে দেখে নিল,কেউ আছে কিনা।এপাশে কেউ থাকার কথাও না, নিরব সচারচর তুলিকে নিয়ে পার্কের নির্জন জায়গায় এসে বসে।আজো সেদিকেই বসেছে।
আশেপাশে দেখে নেওয়ার কারণ হল ও কবিতা বলবে, যার জন্য কবিতা বলবে সে শুনলেই হবে। অন্য কেউ শুনে নিলে একটা লজ্জার ব্যাপার আছে। যদিও এখন কার দিনে পার্কে আসলে লজ্জার কিছু থাকেনা সবাই খোলামেলা ভাবেই অনেক কিছু করে।কেউ শুনলেও হয়ত মনোযোগ দিবেনা নিরবের কবিতার উপর।তারা সবাই নিজেদের কাজে ব্যাস্ত থাকবে।
.
ইদানিং অনেক অশ্লীল কাজ হয় পার্ক এ। সে সব কাজ নিরবের জন্য লজ্জার, নিরব তেমন ছেলেনা, নিরব ভাল ছেলে। নিরব এ জন্য পার্ক এও আসতে চায়না কিন্তু তুলি নিরব কে পার্কেই আসতে বলে। পার্ক এ গাছপালা বেশি,তাই সাস্থ্যর জন্য ভাল।যদিও তুলি আর নিরব দুজনের সাস্থ্যই ভাল।
.
নিরব ভাল ছেলে, বলতে গেলে খুব ভাল। এত ভাল, এত সাধা সিধে ছেলে যেখানে সেখানে পাওয়া যাবেনা।
এমন টাইপ ছেলে যে কিছু পারেনা, এমন কি বাইক চালাতেও পারেনা,পারেনা সাঁতার কাটতে, ঠিকমত লেখাপড়াও পারেনা, পারেনা গল্প কবিতা লিখতে ! আসলে সে কিছুই পারেনা।
তবুও তুলির মত একটা মেয়ে ওকে কেন ভালবাসে এটা নিরবের কাছে অজানা।
.
তুলিকে ইমপ্রেস করার জন্য সাত দিন ধরে চেষ্টা করে আজ কবিতা লিখে আনা,তাতে যদি একটু ইমপ্রেস হয় মেয়েটা।নিরব জানে তুলি ওর প্রতি ইমপ্রেস তবুও নিরব চায় তুলি ওকে নিয়ে খুশি হোক।বলুক যে নিরবের অনেক কিছু ওর ভাল লাগে।নিরব জানে ওর মাঝে ভাল লাগার কিছু নেই। ওর বন্ধুরা বলে, তুলি পাগলী তাই তোর মত ছেলেকে ভালবাসে।এটা শুনে নিরবের খারাপ লাগে।তবে মাঝে মাঝে কথাটা সত্য ও মনে হয়। বন্ধুরা আরো বলে কদিন পর তুলি ছেড়ে যাবে তোকে।তোর সাথে কেউ থাকতে পারবেনা ইত্যাদি ইত্যাদি।
এগুলো শুনে খুব মন খারাপ হয় নিরবের। সাথে সাথে ও তুলিকে ফোন দেয়।তুলির সাথে এক মিনিট কথা বললেই নিরবের মন ভাল হয়ে যায়।
তুলি বলে দিয়েছে,যখনি তোমার মন খারাপ হবে তখনি আমাকে ফোন দেবা।নিরব এটা মেনে চলে।
.
এত ভালবাসে মেয়েটা নিরবকে,তার বদলে নিরব ও ভালবাসে কিন্তু তবুও কিছু কম আছে নিরবের, এজন্যই কবিতা লিখে আনা,কবিতাতে যদি একটু তুলি খুশি হয়।
নিরব কোন ভাবেই তুলিকে হারাতে চায় না।নিরব জানে তুলিকে ছাড়া ওর একটা দিন ও চলবেনা।
.
নিরব পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে সেটা দেখে দেখে কবিতা আবৃত্তি শুরু করল,
আমি আর তুমি পাশা পাশি হাঁটি
হাটা হাটি শেষে একখানে বসি
আবার উঠি আবার হাঁটি,
এভাবেই তোমায় ভালবাসি।
.
রাস্তা শেষে হাঁটি মাঠে,
এভাবে আমার দিন কাটে।
.
এটুকু বলে নিরব তুলির মুখের দিকে তাকাল। তুলির মুখ দেখে মনে হল ওর খুব ভাল লেগেছে। তবে তুলি মাঝে মাঝে মিথ্যা বলে।
এইতো গতবার যখন নিরব কবিতা লিখে আনল সে বার তুলি খুশি হয়ে কত কি বলল?
কিন্তু কবিতা তেমন ভাল ছিলনা, নিরবের মেসের রুমমেট রা কবিতা শুনে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেয়েছে। আজকের কবিতা শুনেও হেসেছে তবে নিরবের মনে হয়েছে আজকের কবিতাটা আগের দিনের চাইতে ভাল,যথেষ্ট ভাল।
.
-কবিতা শেষ?
.
তুলির কথায় নিরবের চিন্তা ভাঙল, ও তুলির মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
-হুম,
-এত জলদি কেন,
-উম,
-সাতদিন ধরে এই লিখছ,
-কবিতা লেখা খুব কঠিন,
-তাই বলে এই টুকু,
-হুম,
-এর পর থেকে আরো বড় লেখবা,ঠিকাছে?
-আচ্ছা, কেমন লাগল।
-খুব খুব খুব ভাল।
.
তুলির এ কথাটা পছন্দ হল না নিরবের,মনে হল তুলি মিথ্যা বলছে।প্রিয় মানুষেরা মিথ্যা বলে কাছের মানুষদের খুশি করার জন্য।তুলিও হয়ত তেমন বলছে।নিরবের কবিতা কখনোই তেমন ভাল হয়না।তুলি যদি শুধু ভাল বলত, তবে বিশ্বাস হত কিন্তু খুব খুব খুব ভাল এটা একটু অতিরিক্ত।
.
নিরব একটু মন খারাপ করে অন্য দিকে তাকাল।
তুলি বুঝতে পেরে বলল,
-মুখ গোমড়া কেন?
-তুমি মিথ্যা বলছ তাই,
-কই মিথ্যা বললাম?
-এই যে খুব খুব খুব ভাল বললা।
-ভাল কে ভাল বলব না,
-আমার রুমমেট রা এটা শুনে হাসাহাসি করছে।
.
নিরব কথা টা বলে আকাশের দিকে তাকাল। আকাশ মেঘলা, মেঘলা আকাশ তুলির পছন্দ।
মেঘলা আজ নিরবের মনও,নিরব মাঝে মাঝে তুলির জন্য কাঁদে।হয়ত এখনো কাঁদত কিন্তু পাশে তুলি বসে আছে বলে কাঁদতে পারছেনা।
তুলি নিরবের আরেক টু কাছে এসে হাত ধরে বলল,
-শোন,এটা কি তুমি তোমার বন্ধুদের জন্য লিখছ?
-না,
-আমার জন্য লিখছ তো?
-হুম,
-কষ্ট করে লিখছ,,
-হুম,
-তাই তো এত ভাল লাগছে।
-বাট,
-আবার কি?
-কিছুনা।
.
নিরবের মাঝে মাঝে মনে হয় ও তুলির যোগ্য নয়। তুলি কত কি পায়,আর ও নিজে কিছুই পারেনা।সব কাজেই ভুল করে তবুও তুলি ওর প্রতি ইমপ্রেস।এটা কেন নিরব জানেনা।
তুলি কে ভার্সিটির সব ছেলেই পছন্দ করে তবুও তুলি নিরব কে ভালবাসে। নিরব মাঝে মাঝে মনে করে এটা করুনা। তুলি জানে ওকে ছাড়া নিরব ভাল থাকতে পারবেনা। তাই হয়ত করুনা করছে।
.
তুলি আবার বলল,
-আমি তোমার প্রতি ইমপ্রেস, নিরব।
-নাহ,,
-হুম,,আমার জন্য কষ্ট করে তোমাকে কবিতা লিখতে হবে না,আমি এমনিতেই তোমার জন্য খুশি।
-কিভাবে ইমপ্রেস? আমি কি এমন করি যে তুমি ইমপ্রেস,যার কারণে আমাকে ভাল লাগে,
.
তুলি নিরবের কথা শুনে হাসতে হাসতে বলল,
-তোমার সব কাজেই আমি ইমপ্রেস, কত গুলো কারণ বলব?
-দুইটা বলো,
-হুম,এই যে তুমি আমার জন্য এত কষ্ট করে কবিতা লিখে আনছ এতে আমি ইমপ্রেস।
-কিন্ত কবিতাটা তো ভাল হয়নি,
-কবিতা ভাল না খারাপ, এটা দিয়ে আমি কি করব।তুমি আমার জন্য কি করছ এটা ব্যাপার তাই না।
-হুম,,
-জানো, আমার বান্ধবীদের কাছে তোমার কথা বলি। বলি তুমি আমার জন্য কবিতা লিখো।ওরা কিছু বলেনা কারণ ওদের বয় ফ্রেন্ড ওদের জন্য কবিতা লিখেনা।
-আরেক টা,,,
.
-ভাই ফুল নিবেন,,
তুলি যেই কথা শুরু করবে তখনি এক বাচ্চা মেয়ে এসে কথাটা বলল। নিরব ফুল কেনে?
বেলী ফুল বেশি কেনে?বেলী ফুল তুলির পছন্দ।
রোজ দেখা করতে আসার আগে ফুল কিনে আনে আজো আনতো কিন্তু খুঁজে পায়নি।সব দোকানে শুধু গোলাপ আর রজনীগন্ধ্যার স্টিক পাওয়া যায়। বেলী ফুল পাওয়া যায়না।বেলী ফুল পাওয়া যায় টোকাই দের কাছে।ওরা ফুল কুঁড়িয়ে মালা বানিয়ে বিক্রি করে। প্রতি মালার দাম বিশ টাকা।মাঝে মাঝে দশ টাকাতেও বিক্রি করে।
.
নিরব বিরক্ত হল না,ও বাচ্চা মেয়েটার দিকে তাকাল।মেয়েটাকে নিরব চেনে। মেয়েটার নাম জেসমিন।এর কাছ থেকে প্রায় বেলী ফুল কিনে থাকে নিরব।
-কি ফুল।
মেয়েটা হাত উচিয়ে বলল,
-বেলী,আপনার প্রিয় ফুল।
-একটু আগে কই ছিলি,
-ফুল নিয়াসতে দেরী হইল,
-দে সব দে,,
.
জেসমিন সব গুলো ফুল নিরবের দিকে বাড়িয়ে দিল।ফুল গুলো মালা করা।মোট মালা চারটা। নিরব একশত টাকা বের করে জেসমিনের হাতে দিয়ে দিল আর বলল,প্রতি শনিবার যেন মালা নিয়ে আসে কারণ প্রতি শনিবার নিরব আর তুলি দেখা করে।আর অন্য কোনদিন তুলিকে দেখার খুব ইচ্ছা হলে তুলির হলের সামনে চলে যায় নিরব।
জেসমিন "আচ্ছা" বলেই দৌড় লাগালো।
.
নিরব ফুলের মালা গুলো তুলির দিকে বাড়িয়ে দিতে দিতে বলল,
-আসার সময় বেলী ফুল পাইনি,
.
তুলি হাত বাড়িয়ে ফুল গুলো নিতে নিতে বলল,
-এ জন্য,
-এ জন্য মানে,
-ফুলের জন্য আমি তোমার প্রতি ইমপ্রেস,
-কিভাবে?
-তুমি কোনদিন আমাকে ফুল দিতে ভোলো না।
-এটাতো সবাই করে?
-না সবাই করেনা,,তুমি আমার খেয়াল রাখো,
-উম,
-আমি জানি তুমি আমাকে কখনো কষ্ট দিবানা। আমি যা বলব তাই শুনবা এজন্য তোমার প্রতি আমি ইমপ্রেস।
-আচ্ছা।
-সত্যি,,ভালবাসা তো এসব দেখে হয়না। তোমার ভাল কিছু আছে না আছে সেটা দেখার বিষয় নেই।বিষয় তুমি আমার জন্য কি করো,
-হুম,,
-আর তুমি আমার জন্য অনেক করো। তোমার সব কিছুই আমার ভাল লাগে।যখন কাওকে ভালবাসা যায় তখন তার সব কিছু ভাল লাগে,আমারো তোমার সব কিছু ভাল লাগে।
ভালবাসা ব্যাপার টাই এরকম, কাওকে ভালবেসে ফেললে তার সব কিছু ভাল লাগে।
.
নিরিব চুপ চাপ সব শুনল তুলির কথা।আসলে
নিরব খুব একটা তুলির কথা বোঝেনা তবে ওর মনে হয় এই তুলি নামের সুন্দর মেয়েটা ওকে ভালবাসে,খুব ভালবাসে।
ও এটাও জানে দোষ গুন দেখে ভালবাসা হয়না, ভালবাসা তো হয়ে যায়।
নিরব জানে তুলি ওকে ছেড়ে যাবেনা।করুনা নয় ভালবেসেই থেকে যাবে ওর হাত ধরে।
.
আমরা মানুষ গুলো তো এরকমই, সব কিছুতেই সন্দেহ করি।করি হারানোর ভয়।
নিরব ও ঠিক তেমন,হয়ত আবার পরের সপ্তাহে সে তুলির জন্য কবিতা লিখে নিয়ে আসবে, ইমপ্রেস করার চেষ্টা করবে।
এভাবেই চলবে ওদের ভালবাসা।আমরা মানুষ গুলো খুব ভীতু, কাছের মানুষদের হারানোর ভয়ে সারক্ষন ভীত থাকি।
.
ভালবাসা টা আমাদের দূর্বল বানিয়ে দেয়,দেয় হিংসুক বানিয়ে।আমরা ভালবাসার জন্য যে কোন কিছু করতে পারি,হয়ত খুব খারাপ আবার খুব ভাল কিছু।তারপরেও ভালবাসা হারাতে চাইনা,তবুও হারাতে হয়।
.
এত কিছু করেও কিছু মানুষ ভালবাসা পায়না,, তাদের প্রতি কেউ করুনা করেনা।
তারা একা, তারা একাই থাকবে।
এটা প্রকৃতির নিয়ম।
.
.
.
-নাহিদ পারভেজ নয়ন
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৮
মরা পাখি বলেছেন: nirober preemer jonno suvo kamona roilo