![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
-আপনি কি টাই বাঁধতে পারেন?
.
প্রশ্ন টা শুনে তাজরী অবাক হয়ে আমার দিকে তাঁকাল। ও হয়ত আমার কাছে এমন একটা প্রশ্ন আশা করেনি।
.
মেয়ে দেখতে এসে কেউ এমন প্রশ্নও করেনা। সবাই কনে কে জিজ্ঞেস করে, রান্না পারে কিনা?
লেখাপড়া কতদূর? ইত্যাদি ইত্যাদি।
এসব আমার জিজ্ঞেস করে কাজ নেই কারণ আমি চাকরাণী বিয়ে করব না যে আমার বাসায় গিয়ে রান্না করতে হবে ওকে আর তাজরী শিক্ষিত ও ভার্সিটি তে পড়ে।
তাই আমার জানা দরকার সেটাই যেটা আমার প্রয়োজন।
.
আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম,
-টাই বাঁধতে পারো?
.
আপনি থেকে তুমি করে বললাম।আমি এক প্রকার শিউর এই মেয়ের সাথেই আমার বিয়ে হবে কারণ বাবা এই মেয়েকেই পছন্দ করেছেন। আর আমি চাইলেও বাবার মতের বিপক্ষে যেতে পারবনা।অবশ্য আমারো দিমতের কারণ নাই, মেয়ে আমারো যথেষ্ট পছন্দ হয়েছে এখন শুধু টাই বাঁধতে পারলেই সব হয়।অবশ্য না বাঁধতে পারলেও খুব একটা প্রবলেম নেই আম্মাকে বললে দারুন করে শিখাই দিবে ওকে।
.
তাজরী একটু মুচকি হেসে বলল,
-কেন?
-আমি টাই বাঁধতে পারিনা তো তাই,
.
তাজরী আবার হাসল। এই মেয়েটার হাসি সুন্দর তাই মেয়ে এ চাইলে বার বার হাসতেই পারে।
-টাই বাঁধতে পারলেই কি আমি সিলেক্টেড?
-এভাবে কেন বলছ?
-না সবাই পাত্রী দের কে কত কি জিজ্ঞেস করে?
আর আপনি পাত্রী দেখতে এসে আধাঘন্টা ধরে কথা বলে শুধু একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেন,টাই বাঁধতে পারি কিনা?
.
আমি একটু হাসলাম,তারপর বলতে লাগলাম,
-আসলে, আমি রান্না বান্না পারি।তাই তুমি না পারলেও সমস্যা হবে না।
-শিখেছেন?
-হুম,মেসে থাকাতে করতে হয়েছিল,
-ভাল তো,
-হুম,আসলে আমি অনেক চেষ্টা করেও টাই বাঁধা শিখতে পারিনি,
-এখন কে বেঁধে দেয়,
.
আমি একটু লজ্জিত মুখে বললাম,
-আম্মা।
-ও আচ্ছা।
.
আমি আবার বললাম,
-আমার এক বন্ধু বলে কি জানো?
-কি বলে?
-বলে স্ত্রী টাই বেঁধে দিলে নাকি ভালবাসা বাড়ে?
-তাই,
-হুম,যা ইচ্ছা ছিল টাই বাঁধা শেখার।এটা শুনে তাও বাদ দিয়েছি।
-ভাল করেছেন।
-হুম,রোজ অফিস যাওয়ার আগে টাই বেঁধে দিবা দারুন ব্যাপার। আর তুমি আমাকে তুমি করে বলতে পারো,
-আচ্ছা,
-পারো কি বাঁধতে?
-না পারলে,
-না পারলে, সমস্যা নেই।আমার মা খুব ভাল টাই বাঁধতে পারে। তোমাকে একবার দেখালেই তুমি শিখে যাবে।
.
আমার কথা শুনে তাজরী হাসল তারপর বলল,
-আচ্ছা।আমাকে তোমার পছন্দ হয়েছে?
-হুম,
-এক কাজ করি,তোমার টাই টা এখনি বেঁধে দেই,
-তুমি পারো,
.
ও হেসে উঠল,তারপর ওর চেয়ার থেকে উঠে আমার চেয়ারের সামনে এসে দাঁড়াল।আমি ও দাঁড়ালাম,আমার গলায় টাই বাঁধা আছে।সেটা তাজরী টান দিয়ে খুলল।
তার পর আবার সযত্নে সেটা বাঁধতে লাগল।
আমি চারপাশে তাকিয়ে দেখি রেস্টুরেন্টের সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে দেখছে।সবাই হয়ত আমাদের সামী স্ত্রী ভাবছে, এক মুহূর্তর জন্য মনে হল তাজরী আমার বিয়ে করা বউ।
.
আমি তাজরীর দিকে তাকালাম,ও টাই বাঁধায় মগ্ন। ও একবার উপরে তাকাল,চোখে চোখ পরে গেল।ও মনে হয় লজ্জা পেল,তারপর আবার চোখ নামিয়ে নিল।ততক্ষনে টাই বাঁধা শেষ।
.
ও গিয়ে ওর নিজের চেয়ারে বসল,আমিও বসে পরলাম।বসে ভালভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে টাই বাঁধা দেখতে লাগলাম।খারাপ না ভাল বেঁধেছে টাই।
.
-কেমন হল বাঁধা?
.
আমি হাসি মুখে জবাব দিলাম,
-ভাল খুব ভাল
-থ্যাংক্স,
-কোথায় শিখেছ?
-মার কাছে,মা বলে ওয়াইফদের নাকি হ্যাজবেন্ডের টাই বেঁধে দিতে হয়।তাই শিখে নিয়েছি।
.
তাজরীর মুখে হ্যাজবেন্ড কথাটা শুনে ভাল লাগল, নিজের মধ্য হ্যাজবেন্ড হ্যাজবেন্ড ফিল হওয়া শুরু হল।যত তারাতারি আপন হবে তত ভাল।
.
আমি বললাম,
-চল,উঠি।তোমাকে বাসায় পৌছে দেই,
-হুম,
.
রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে রিকশা নিলাম।
রিকশাটা খুব ছোট,দুজনের গা অতিরিক্ত হারে লেগে যাচ্ছিল।আমি একটু চেপে বসছিলাম। তাজরী বলল
-স্বাভাবিক হয়ে বস.
-হুম,
.
রিকশায় এটুকু কথা হয় ওর সাথে আমার। আসলে বলার কিছুই খুঁজে পাইনি।
ওর বাসার সামনে এসে রিকশা থামতেই সেখানে দুজনেই নেমে পড়লাম।
.
তাজরী বলল,
-আসি
-হুম,তোমাকে ফোন দেব কখন?
-তোমার যখন ইচ্ছা।
.
আর কিছু বলল না তাজরী,সোজা ভিতরে চলে গেল।আমি কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইলাম তাজরীর বাড়ির সামনে। তাজরীদের বাড়ি দোতলা, আমার মনে হচ্ছিল তাজরী ওর বারান্দায় আসবে।
মিনিট খানেকের মধ্য আমার কথা সত্য প্রমান করে ও দোতলার বারান্দায় চলে আসল।
আমি হাত নাড়ালাম,ও আমাকে দেখে হাত নাড়ল।
.
সম্ভাব্য শশুর বাড়ির সামনে বেশিক্ষন দাঁড়িয়ে থাকা উচিত নয় তাই চলে আসলাম, যদিও মোটেও আসার ইচ্ছা হচ্ছিল না।রিকশায় উঠে নিজের টাইয়ের দিকে তাকয়ে রইলাম। কত সুন্দর করে টাই বেঁধেছে মেয়েটা।বাসায় এসে সারাদিন টাই খুললাম না।আম্মু অবাক,ব্যাপার কি?
একেবারে রাত্রে খুললাম টাই। গোসল করতে হয়েছে তাই খোলা লাগল, টাই পরে তো আর গোসল করা যায়না। টাই খুলে বড় রকমের আফসোস হচ্ছিল।কেন যে খুললাম?
মা কিছু আন্দাজ করেছে কিনা কে জানে?
এসেই বলে দিয়েছি,মেয়ে পছন্দ হয়েছে।ভাবতেই পারে মেয়ে দেখে ছেলে পাগল হয়েছে।
.
শুয়ে শুয়ে খুব মিস করতে লাগলাম তাজরীকে, ভাবলাম ফোন দেই।নাম্বার তো আছেই।দেই দেই করতে করতে রাত প্রায় একটার দিকে ফোন দিলাম তাজরীকে। প্রথম বার বেজে কল কেঁটে গেল।ভাবলাম ঘুমিয়ে পরেছে নাকি ,পরের বার আবার দিলাম।এবার ফোন বাজতেই রিসিভ হল। রিসিভ করে তাজরী বলল,
-হ্যালো,
-হ্যালো,
-ঘুমাও নি?
-না,একটা প্রবলেম হইছে
-কি?
-টাই খুলে ফেলেছি,
-মানে,
-একটু আগে গোসল করেছি, তাই টাই খুলতে হয়েছে,
-খুলেছ তো কি হয়েছে,
-অনেক কিছু হইছে,তুমি এই প্রথম টাই বেঁধে দিলা আর আমি সেটা খুলে ফেললাম কেমন না।
.
ফোনের ও পাশ থেকে হাসির শব্দ আসল,
-হাসো কেন?
তাজরী হাসি বন্ধ করে বলল,
-কাল,এসো।আবার বেঁধে দেব।
-আচ্ছা,ভাল থেকো। কাল দেখা হবে।
-হুম,
-শুভ রাত্রী
-শুভ রাত্রী,
.
পরের দিন অফিস যাওয়ার আগে মা আসল আমার ঘরে।আম্মা রোজ এসে আমার টাই বেঁধে দিয়ে যায়।আজ মানা করে দিলাম।আম্মা বলল,
-অফিসের নতুন নিয়ম নাকি,টাই বাদ
-না,টাই বাঁধার অন্য মানুষ আছে
-মানে?
-কিছুনা।
.
বাসা থেকে সোজা আসলাম তাজরীর ক্যাম্পাসে। তাজরী আমাকে দেখতে পেয়ে আমার কাছে এসে বলল,
-তুমি এখানে?
.
আমি হাতের টাই টা ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে হাসি মুখে বললাম,
-টাই বাঁধতে পারিনা।
.
ও হাসল,তারপর আমার হাত থেকে টাই টা নিয়ে বেঁধে দিতে লাগল।ক্যাম্পাসের সবার নজর তখন আমাদের দিকে। ভাল লাগছিল আমার। আমি চোখ নামিয়ে তাজরীর দিকে তাকিয়ে রইলাম, তাজরী লজ্জায় লাল।তবুও আমি তাকিয়ে রইলাম লজ্জাবতী তাজরীর দিকে।
উফ,কত সুন্দর দৃশ্য,টাই বাধার দৃশ্য যে এত সুন্দর হতে পারে তা আগে জানা ছিল না।
.
আমি নিজের মুখ টা তাজরীর কানের কাছে নামিয়ে এনে বললাম,
-ভালবাসি,
.
তাজরী কিছু বলল না,শুধু হাসল।আমিও হাসলাম । তাজরী জবাব না দিলেও আমি জানি এখানে একটা ভালবাসার সম্পর্ক আছে আর মেয়েটা আমাকে ভালবাসে।
.
.
.
-নাহিদ পারভেজ নয়ন
১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:১৫
নাহিদ পারভেজ নয়ন বলেছেন: সব ভালবাসা শুধু
২| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০২
রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: আমার প্রথমে একটা টাই কিনতে হইবে, তারপর পাত্রী দেখতে হইবে। যুগান্তকারী আবিষ্কার।
১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:১৫
নাহিদ পারভেজ নয়ন বলেছেন: টাই কিনেন বাট পড়তে শিখিয়েন না
৩| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১২
সাহসী সন্তান বলেছেন: গল্পটা ছক বাঁধা নিয়মে চমৎকার ভাবে এগিয়ে গেছে! গল্পের প্লট সাধারন হলেও আপনার ঝরঝরে বর্ননা ছিল অসাধারণ! অনেক ভাল লাগলো........!!
বিঃদ্রঃ- গল্পের মধ্যে 'হুম' শব্দটাকে অত্যাধিক ব্যবহার করায় পড়তে একটু কেমন জানি লাগছে! সব জায়গায় হুম না বলে কিছু কিছু জায়গায় Ok, ঠিক আছে শব্দটা ব্যবহার করলে গল্পটা আরো চমৎকার হতো!
তারপরেও সমস্যা নেই! পপরবর্তিতে আরো সুন্দর সুন্দর গল্প আপনার কাছ আমরা অবশ্যই পাবো?
১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৪৯
নাহিদ পারভেজ নয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:১৪
ইকরাম বাপ্পী বলেছেন: খুব বালা খুব বালা...... ভালো লাগলো... ... মাঝে মাঝে এমন কিছু গল্প পড়ে মনে হয় সেইভ করে রাখি...
১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫০
নাহিদ পারভেজ নয়ন বলেছেন: সেভ কইরালান
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪২
সুমন কর বলেছেন: ভালোবাসায় ভরপুর.............