নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নাহিদ পারভেজ নয়ন।

নাহিদ পারভেজ নয়ন

যা মনে আসে তাই লিখি।সব লেখা পড়ার যোগ্য নয় তবুও লিখি।

নাহিদ পারভেজ নয়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

কালো শাড়ি

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:২৯

জাহিন কে ওর গত জন্মদিনে একটা শাড়ি উপহার দিয়েছিলাম।উপহার হিসেবে শাড়ি পেয়ে ও একটু অবাকই হয়েছিল।
শাড়িটা হাতে নিয়ে বলেছিল,
-আমি তো শাড়ি পড়তে পারিনা,
.
আমি একটু হেসে বলেছিলাম,
-যখন পারবে,তখন পরিও !
-আচ্ছা,
.
আসলে জাহিন কে শাড়িতে দেখার আমার খুব ইচ্ছা,তাই ওকে শাড়ি গিফট করা।সব সময় জিন্স আর টপস এ দেখে ভাল লাগেনা আর তাছাড়াও একমাত্র শাড়ি পড়লেই মেয়েদের কে মেয়ে মনে হয়।আমার মনে হয়েছে কালো শাড়িতে জাহিনকে কোন পরীর চেয়ে কম লাগবেনা,যদিও পরী দেখিনি আমি তবুও। তাই খুঁজে বেছে কালো শাড়ি গিফট করেছি।
.
শাড়ি গিফট করার প্রায় মাস তিনেক হয়ে গেছে, তবুও ওকে এখনো শাড়ি পরিহিত অবস্থায় দেখতে পারিনি।যদিও এ বিষয়ে কখনো আমি জাহিনকে জোর করিনি।আমার সাথে রিলেশন হওয়ার পর জাহিন প্রায় নিজের সব কিছুই বদলে ফেলেছে।
জিন্স টপস এর জায়গায় এখন সেলোয়ার কামিজ পরে।তবুও আমার মন মানছিল না, আমার মন তো ঐ কালো শাড়িতেই আঁটকে ছিল।
.
তবে আজ মনে হয় আমার মনের আশাটা পূরণ হবে।কাল রাত্রে জাহিন হঠাৎ জিজ্ঞেস করল,
-কালো শাড়ি, লাল টিপ, লাল লিপস্টিক, আর তার সাথে খোলা চুলে ওকে কেমন লাগবে?
.
আমি প্রথমে ওর প্রশ্নের কোন জবাব দেইনি। আসলে বিষয় টা বুঝতেই পারিনি।
ও একটু পর আবার বলল,
-তার সাথে চোখ ভর্তি কাজল ও থাকবে।এটাতো তোমার প্রিয়,
.
আমি এসব শুনে একটু অবাকই হলাম।যে মেয়ের জিন্স ছাড়া অন্য কিছুর প্রতি আগ্রহ নেই , সে সত্যি কি শাড়ি পড়বে।ও কি শাড়ি পড়া শিখেছে?
.
-কি হল, বলো কেমন লাগবে?
-জানিনা তো, দেখতে হবে আগে,
-আচ্ছা,কাল দেখে তারপর বলিও,
-সত্যি কি শাড়ি পড়বে কাল?
.
জাহিন আমার প্রশ্নের জবাব দিল না,শুধু একটু হাসল তারপর ফোন রেখে দিল।
.
আমি কল্পনা করতে লাগলাম,
ওকে কালো শাড়ি,লাল টিপ,লাল লিপস্টিক, খোলা চুল আর চোখ ভর্তি কাজলে কেমন লাগবে?
কি অদ্ভুত সব চিন্তা এল মাথায়,আমি ওর মত সুন্দর মেয়ে কখনো দেখিনি।এটুকুই হয়ত যথেষ্ট হবে ওর মায়ায় সারাজীবন পড়ে থাকার জন্য, ওকে নিজের চাইতে বেশি ভালবাসার জন্য ।
এই খুশি তে সারা রাত ঠিকমত একটুও ঘুম হলনা।
তবে এর মধ্য একটা শঙ্কা আছে?
ও কি সত্যি শাড়ি পড়বে নাকি ঢপ দিল।মজা করার অভ্যাস খুব ভাল আছে ওর।
.
ঘুম থেকে উঠেই ওর হলের সামনে চলে এলাম, অপেক্ষা করছি প্রায় আধাঘন্টা ধরে।অবশ্য জাহিন জানেও না যে আমি অপেক্ষা করছি। জানলে সাথে সাথে চলে আসবে।আমি চাই ও সময় নিয়ে সাজুক,সুন্দর করে শাড়ি পড়ুক,চোখে কাজল দিক, ঠোটে লাল লিপস্টিক দিক,কপালে লাল টিপ দিক,চুল গুলো খোলা রাখুক।এরকম একটা জাহিন কে দেখার জন্য কত দিন অপেক্ষা করেছি আর কয়েক টা ঘন্টা অপেক্ষা করতে পারব না?
.
জাহিন হল থেকে বেরোবার আগে সব সময় আমাকে ফোন দিয়েই বের হয়,আজো তার ব্যাতিক্রম হল না।আমি ফোন ধরে বললাম,
-বেরিয়েছ?
-না বেরোব,তুমি কি ঘুমে?
-না, আমিও বেরুচ্ছি,
-আচ্ছা,
.
মিনিট দুয়েক যেতেই জাহিন ওর হল থেকে বের হয়ে এল।হুম,আমার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে।ও শাড়ি পড়ে এসেছে।শুধু একটা জিনিষ মিস,ওর চুল বাঁধা।ওকে কালো শাড়িতে দেখে মনে হল এটা দেখার জন্যই হয়ত বেঁচে ছিলাম,এখন মরে গেলেও ক্ষতি নেই।
.
জাহিন আমাকে দেখেনি তাই ও সোজা হেঁটে গিয়ে রিকশা ঠিক করল,যেই ও রিকশায় উঠে বসেছে সাথে সাথে আমিও গিয়ে রিকশায় বসলাম।
.
-তুমি?
-হুম,আমি।
-কই ছিলা?
-তোমার কাছেই?
-দেখলাম না যে,
-তোমার নয়ন আমারে পায়না দেখিতে,রয়েছি তোমার নয়নে
-হি হি হি
.
-মামা টানেন,
রিকশাওয়ালা আমার কথা শুনে রিকশা টানা শুরু করল।জাহিন আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
-কেমন লাগতেছে?
.
আমি ওর মুখের দিকে তাকালাম,সত্যি এত সুন্দর কি কেউ হতে পারে?খাতা কলম থাকলে কবিতা লিখতে বসতাম।কে জানে দু একটা কবিতার বই ও লেখা হয়ে যেত।
.
আমি আস্তে করে বললাম,
-হুম,ঠিকঠাক লাগতেছ,
-শুধু ঠিকঠাক,
-না একটু সমস্যা আছে?
-কি?
.
আমি ওর চুল থেকে ক্লিপ টা খুলে নিয়ে চুল গুলোকে মুক্ত করে দিয়ে বললাম,
-এখন সব ঠিকঠাক আর তুমি এত সুন্দর কেন?
.
জাহিন আমার প্রশ্নের জবাব দিলনা। আমি আবার বললাম,
-কয় কেজি ময়দা মাখছ মুখে?
.
জাহিন আমার দিকে রাগ হয়ে তাকাল তারপর আমার হাত নিয়ে ওর মুখে স্পর্শ করিয়ে বলল,
-দেখ কোন কিছু পাও নাকি,
.
আমি হাত সরিয়ে নিয়ে হাসতে হাসতে বললাম,
-এমনি মজা করলাম,
.
জাহিন রাগ করে অন্য দিকে তাকাল।আমি আবার বললাম,
-শুনবে না তোমাকে কেমন লাগছে?
.
জাহিন আমার দিকে মুখ না ফিরিয়েই বলল,
-বলো,
.
আমি বলতে লাগলাম,
-সবাই প্রেয়সীর রুপের বর্ণণা দেয় চাঁদের সাথে আমি তোমার রুপের বর্ণণা দেব জীবনের সাথে। কারণ পৃথিবীতে জীবনের চাইতে সুন্দর আর কিছুই নেই।
.
জাহিন তাও মুখ ফেরাল না।ওর খোলা চুল এখন বাতাসে উড়ছে,কি দারুন লাগছে দেখতে।আমি সমস্যায় পড়ে গেলাম, কিভাবে ওর বণর্ণা করি। কোন ভাবেই সম্ভব না। তবুও বললাম,
"বর্ণণা কি দেব, কল্পনা কি করব?
সবই তো বিবর্ণ তোমার ওই চোখের কাজলে,
সবই চূর্ণ বিচূর্ণ তোমার ওই স্নিগ্ধ খোলা চুলে।"
.
এবার জাহিন মুখ ফেরাল আমার দিকে।আমার দিকে সন্দেহ চোখে তাকিয়ে বলল,
-ঢপ দাও,
-অদ্ভুত কথা,সত্য বললেও দোষ?
-হুম,দোষ।তুমি ভাল করে কিছু বল,
.
আমি আর থামলাম না, বলে দিলাম,
-তোমাকে এত টাই সুন্দর লাগছে,মনে হচ্ছে এক মুহূ্র্তে তোমার সব সাজ নষ্ট করে দেই,তোমার ঐ ঠোঁটের লিপস্টিক গুলো ছড়িয়ে দেই,তোমার চুল গুলো এলোমেলো করে দেই,তোমার কপালের টিপ টার জায়গা চেঞ্জ করে দেই,
.
আমি কথা বলা শেষে জাহিনের দিকে তাকালাম, ও মুখ নিচু করে আছে, ওর গাল গুলো ও লাল হয়ে গেছে।ও মুখ তুলে বলল,
-তুমি বড়ই অসভ্য,
-অসভ্যতা না করতেই অসভ্য বানিয়ে দিলা।
-এই শোন,কোন কিছু করবানা কিন্তু
-কি করব না,
-উফ,
-কি উফ,
-জানিনা,
-ভালবাসি,
-আমিও,
-খুব,
-হুম খুব।
-শাড়ি টা ভাল মানিয়েছে কিন্তু?
-জানি,এটাই শেষ বার,
-তুমি নিজেও জাননা কত সুন্দর লাগতেছে,
-জানতে হবেও না,
-সপ্তাহে একদিন,
-খুব কঠিন আর সামলানো প্রবলেম,
-আচ্ছা,যেদিন শাড়ি পড়বা,সেদিন আমরা কোন হাঁটা হাঁটি করব না,পুরো সারাদিন রিকশায় ঘুরব।
.
জাহিন আমার কথা শুনে হেসে ফেলল।হাসতে হাসতে বলল,
-তুমি এমন কেন?
-কেমন,
-এই যে পাগল পাগল,
-তোমার জন্যই তো,
কালো শাড়ির মায়ায় বেধে গেছি,যা থেকে বের হওয়া মুশকিল,আর হতেও চাইনা।ভালবাসি তোমাকে জাহিন,অনেক।
.
উৎসর্গ - সেই সব জাহিন দের যারা শাড়ি পড়তে পারেনা,তারা জানেইনা তাদের শাড়ি পড়লে কত সুন্দর লাগে।
.
.
-নাহিদ পারভেজ নয়ন

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:২৩

অভ্রনীল_৫০ বলেছেন: +++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.