![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এ দেখা হয়ত শেষ নয়!
এর পরেও আরো কিছু আছে,
কোন এক গোধূলি বেলায়
ফিরবে আমার কাছে।
.
কবিতার শেষ চারটা লাইন লিখে ডায়েরীটা বন্ধ করে অন্তু।ডায়েরী বন্ধ করতেই হাজার চিন্তা মাথায় এসে হানা দেয় ওর।আনমনেই কিছুক্ষন ডায়েরীর টা দিকে তাকিয়ে থাকে। ডায়েরীটা সুপ্রভা দিয়েছিল।সুন্দর ডায়েরী,মোট চল্লিশ পেজ, ডায়েরীর পাতা গুলোতেও ফুল আঁকা, দেখতে ভারী সুন্দর।
সুপ্রভা অন্তুর হাতে ডায়েরীটা দিয়ে বলেছিল,
-আমি আর এক মাস থাকব দেশে,,তার আগে কবিতা লিখে ডায়েরীটা পূরণ করে দিও আমাকে।
.
অন্তু ডায়েরী হাতে নিয়ে শুধু বলেছিল,
-কেন?
-কেন আবার,তোমার একটা স্মৃতি থাকা উচিত আমার কাছে,
-ও আচ্ছা।
.
অন্তু ডায়েরী খোলে, কবিতা গুনে।
আজকের টা সহ মোট পনের টা কবিতা।এখনো এক মাস হয়নি, পনের দিন হয়েছে।পনের দিনে পনেরটা কবিতা।তবে হাতে আর সময় নেই,সুপ্রভা বলেছিল এক মাস পর যাবে কিন্তু আজ সকালে ফোন করে জানাল ওর ফ্লাইট আগামী কাল রাতে।
খুব সহজ ভাবেই বলল,
-এই অন্তু শোন,আমরা কাল চলে যাচ্ছি।
তোমার কি কবিতা লিখা শেষ?
-নাতো,
-আচ্ছা,আমি ভেবেছি কাল তোমার সাথে সারা বিকেল টা ঘুরব,,আসবে তো।
-হুম আসব,
.
এটুকু বলেই ফোন রেখে দিয়েছিল সুপ্রভা।
মানুষ গুলো কত সহজেই ছেড়ে যাওয়ার কথা বলতে পারে।কই অন্তু তো পারেনা।
.
ডায়েরী টা বুকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে অন্তু, ইদানিং ওর খুব ঘুম পায় মাঝে মাঝে না পেলেও ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমায়।মাঝে মাঝে মা এসে জিজ্ঞেস করে,
-কি হয়েছে অন্তু তোর,ঘুমাস কেন সারাদিন,ঘর থেকে বের হস না কেন?
.
অন্তু জবাব দেয়না,মাকে এসব বলা যায়না। অন্তু গায়ের উপরের কাথাটা ভাল ভাবে জড়িয়ে নেয়। তাই দেখে মাও বিরক্ত হয়ে চলে যায়,জানে কিছু. বলে লাভ হবেনা।
.
সুপ্রভা বলে, ও নাকি দুবছর পর ফিরবে, অন্তু জানে চলে যাওয়া মানুষ গুলো কখনো ফিরেনা। অন্তুর বাবা চলে গিয়েছিল,আর ফেরেনি। সুপ্রভাও ফিরবেনা।
সুপ্রভাকে বলতেও পারেনা অন্তু যে, আমাকে ছেড়ে যেওনা।মানুষ গুলো নিজের ইচ্ছাতে যেতে চাইলে তাদের যেতে দেয়া উচিত।সেখানে যতই বাধা দেয়া হোক,বাঁধা কাজ করেনা।
.
অন্তু সময় গুলোকে বেঁধে রাখতে চায় যেন কালকের বিকেল না আসে,বিকেল এলে সুপ্রভাকে বিদায় দিতে হবে।জানেনা আর কখনো দেখাও হবে কি না?
.
সুপ্রভা চলে গেলে আগের মত কেউ সকালে ফোন করে জাগাবে না?
কেউ রাত জাগলে বকবে না,অভ্যাস গুলী চেঞ্জ হয়ে যাবে খুব সহজেই।অন্তু চায়না ওর অভ্যাস গুলো বদলে যাক।
.
অন্তুর ঘুম ধরে,এক ঘুমে দুপুর পার হয়ে যায়।
অন্তুর ঘুম ভাঙে সুপ্রভার ফোনে।ফোন ধরতেই সুপ্রভা বলে,
-শোন ডায়েরীটাও নিয়ে এসো ঠিকাছে,
-আচ্ছা,
-আর একটু পরই এসো,,অনেক কিছু গোছানোর বাকী আছে,আর সন্ধ্যার পরেই বের হতে হবে এয়ার পোর্ট এর জন্য,
-আচ্ছা,আমি বেরুচ্ছি।
.
তখনি বিছানা থেকে উঠে রেডি হয়ে অন্তু বের হয় বাসা থেকে।ডায়েরীটাও সাথে নিয়ে নেয়।
যেখানে রোজ দেখা করে সেখানেই গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে সুপ্রভার জন্য। অনেক সময় চলে যায়, সুপ্রভা আসেনা।তবে অন্তুর ফোনে ছোট্ট একটা ম্যাসেজ আসে,
-আমাদের আগেই বের হতে হচ্ছে,তাই দেখা হবেনা। ভাল থেকো।
.
অন্তু কয়েক বার ম্যাসেজ টা পড়ে,এক ম্যাসেজ পড়তে ওর বিরক্ত লাগছেনা।কেন জানি ভাল লাগছে,হয়ত সুপ্রভার ম্যাসেজ বলে।
অন্তু জানে এটাই শেষ ম্যাসেজ সুপ্রভার,ওর নাম্বার থেকে আর কখনো ম্যাসেজ আসবেনা, আসবেনা কোন কল ও। অন্তুকে মাঝে মাঝে বিপদেও পরতে হবে না।সুপ্রভার নাম্বার অন্তুর মোবাইলে জান লিখে সেভ করা।দুদিন প্রায় ধরাই পরে গেছিল অন্তু ওর মায়ের কাছে,অনেক কষ্টে রক্ষা পেয়েছিল,তার পর থেকে খুব সাবধানে কথা বলত,সুপ্রভাকে বলেই দিয়েছিল যেন ওকে ফোন না দেয়।তবুও মাঝে মাঝে ফোন দিত।সেই চিন্তা আর থাকছেনা।বিদেশে আর এই নাম্বার কাজ করবেনা,কাজ করবেনা সুপ্রভার জন্য অন্তুর ভালবাসাও।
.
অন্তু ওখানেই রাত পর্যন্ত বসে রইল, উঠতে ইচ্ছা করেনা। শীতের শেষ দিক,হালকা বাতাস বয়, ভালই লাগে। তবে শুধু একটু আফসোস হয় ডায়েরীর কবিতা গুলো সুপ্রভার জন্য লেখা,কিন্তু মেয়েটা শুনতেও পেলনা।
.
সুপ্রভা চলে গেল কিনা দেখতে ইচ্ছা করছে, অন্তু সুপ্রভার বাড়ি চেনে, কয়েক বার গিয়েছিল। অবশ্য বাড়িতে ঢোকা হয়নি,বাড়ির সামনে একটা মাঠ আছে ওখানেই দেখা করেছিল।যাবে কি যাবেনা ভাবতেই অন্তুর মোবাইল বেজে উঠে,অন্তু জানে এটা মা।মা ছাড়া ওর কেউ নেই?
আরেকজন ছিল সুপ্রভা, এখন আর নেই।
.
-হ্যালো মা,
-কোথায় তুই?
-আসছি,
-আয় বাবা চিন্তা হচ্ছে অনেক,
-আসছি, রাখো।
.
ফোন কেঁটে দিয়ে অন্তু উঠে পরে। সুপ্রভা দের বাড়ি ঘুরে নিজের বাসা যাবে।একি দিকে, তাই সমস্যা হবেনা।রাত কত হয়েছে বোঝা যাচ্ছেনা, ফোনের সময় নষ্ট, ঠিক করা হয়নি।
.
অন্তু সুপ্রভাদের এলাকার মাঠটার সামনে এসে দাঁড়ায়। কি অদ্ভুত, সুপ্রভাদের বাসা টা খুঁজে পাচ্ছে না অন্তু, হলুদ কালারের দোতলা বাসাটা হারিয়ে গেছে নাকি?
নাকি অন্তু পাগল হয়ে গেল,স্মৃতি শক্তি গুলো হারিয়ে গেছে।মানুষ গুলো খুব সহজেই অচেনা হয়ে যাচ্ছে।কবিতার ডায়েরী টা এক হাতে এখনো আছে অন্তুর।ডায়েরী টা খোলে অন্তু,অন্ধকারের জন্য পড়া যায়না সেটা,তবুও তাকিয়ে থাকে ডায়েরীর পাতার দিকে।এক গুচ্ছ ভাল লাগা কাজ করে,ভাবতেই ভাল লাগে এটা সুপ্রভা দিয়েছে।
ভালবাসা গুলো না থাকুক,ভালবাসার মানুষ গুলো ভাল থাকুক।
.
.
.
-নাহিদ পারভেজ নয়ন
২৭ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:৫৬
নাহিদ পারভেজ নয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:৫৮
বিজন রয় বলেছেন: ভাল লিখেছেন।
++++