নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নিউরণের মুক্ত ক্যানভাসে স্বপ্ন এঁকে যাই.....

নিরপেক্ষ নই; সত্য, ন্যায় ও স্বাধীনতার পক্ষেই আছি

মোঃ নাহিদ শামস্‌

ভীষণ কল্পনাপ্রবণ একজন মানুষ আমি। কল্পলোকের ক্যানভাসে ছবি এঁকে, মনোজগতের সুবিশাল হাইপার স্পেসে নিজের এক মহাবিশ্ব সৃষ্টি করে আমি হয়েছি ঈশ্বর। যখন প্রচন্ড কষ্টে কাঁদতে ইচ্ছে করে, তখন নিজের সৃজিত মহাবিশ্বের অসীম গ্যালাক্সিপুঞ্জ দেখে গর্বিত অনুভব করি। অতঃপর স্বপ্নীল জগতের দিকে তাকিয়ে উচ্চারণ করি দৈব বাণী- "নিশ্চই তোমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান। দুঃখ কিংবা কষ্ট তাকে স্পর্শ করে না।"

মোঃ নাহিদ শামস্‌ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্বওমী মাদ্রাসাঃ একটি বিচিত্র প্রজাতির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

০৩ রা আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:৩৯

ক্বওমী মাদ্রাসা হল পৃথিবীর সবচেয়ে বিচিত্র প্রজাতির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে শিক্ষার্থীরা শুধু তথাকথিত ‘ধর্মীয় জ্ঞান’ অর্জন করে, আধুনিক জ্ঞান চর্চা এবং বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশের কোন সুযোগ সেখানে নেই। সেখানে তারা না শেখে বিজ্ঞান, না শেখে গণিত, না শেখে মানবিক, না শেখে ব্যবসায়। আধুনিক জ্ঞানচর্চার অভাবের ফলে তারা এক প্রকার মস্তিষ্ক বিহীন জাতিতে পরিণত হয়, বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে পারে না, সৃষ্টিশীল কিছু করার ক্ষমতা রাখে না, কর্মজীবনে খুব ভালো কোন পেশায় যেতে পারে না, দেশ এবং জাতিকে দেবার মত তাদের আর কিছু অবশিষ্ট থাকে না।

আমার এই কথাগুলো শুনে কেউ কেউ ভাবছেন আমি ধর্মীয় শিক্ষার বিরুদ্ধে বলছি, এবং আপনাদের এই মানসিকতাই প্রমাণ করে যে বৌদ্ধিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আপনারা কতটা পিছিয়ে, Critical Reasoning করার মত বুদ্ধি আপনাদের নেই। ইসলাম ধর্মের প্রধান উৎসগুলো হলো- ৩০ পারা পবিত্র কোরআন শরিফ এবং ৬ টি বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থ। সবমিলিয়ে মোট ৭টি বই। আর সহায়ক কিছু বিষয় নিশ্চই শেখা প্রয়োজন সেগুলো মিলিয়ে মোট ১০ টি বইয়ের বেশি নিশ্চই হবে না! এগুলো পড়াতে কিংবা পড়তে আসলে কয়দিন লাগে? কত বছর লাগে?

শুধুমাত্র ধর্মীয় শিক্ষার জন্য এরকম একটা বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান (!) বানিয়ে সেখানে বছরের পর বছর ধরে আপনারা ঠিক কি শেখাচ্ছেন? ধর্ম-কর্ম পড়িয়ে কি এমন উল্টাইয়া ফেলতেছেন? ও হ্যা, আপনারা সেখানে আরবি সাহিত্য শেখাচ্ছেন, ফিকহ শাস্ত্র শেখাচ্ছেন, ফার্সি শেখাচ্ছেন, উর্দু শেখাচ্ছেন- শেখাচ্ছেন কিভাবে মসজিদে দাঁড়িয়ে ঢুলে ঢুলে উর্দু গজল গাইতে হয়, উর্দু কবিতা আবৃতি করতে হয়। And sorry to say, আমি এসব ফাউল শিক্ষাকে ধর্মীয় শিক্ষাই মনে করি না!

পবিত্র কোরআনের এক হাজার আয়াত এসেছে বিজ্ঞানের ওপর, অসংখ্য আয়াতে স্রষ্টার অস্তিত্ব বিষয়ক উচ্চ স্তরের গঠনমূলক যুক্তির অবতারনা করা হয়েছে, অবিশ্বাসীদের চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে, তাদের চ্যালেঞ্জের জবাব দেয়া হয়েছে যুক্তি দিয়েই। এক আয়াতে বলা হয়েছে- “আকাশের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ কর...” এবং ক্বওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কাছে টেলিস্কোপ নেই, তারা কি করে আকাশের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করবে? আল্লাহ বলেছেন- “আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে বুদ্ধিমানদের জন্য নিদর্শন আছে...” কিন্তু না, সেই নিদর্শন বের করার মত ক্ষমতা ক্বওমী শিক্ষার্থীরা রাখে না। আল্লাহ বলেছেন- “আমি আকাশকে করেছি তোমাদের জন্য ছাদস্বরূপ...” হ্যা, কিন্তু ক্বওমীরা কোনদিনই এ কথার মানে বুঝতে পারবে না। কারণ তারা আকাশের ওজন স্তর সম্পর্কে জানে না, জানে না কিভাবে সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি বায়ুমন্ডলে এসে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এরা কিভাবে ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করবে? আল্লাহ বলেছেন, “নামাজ শেষ হয়ে গেলে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর প্রদত্ত অনুগ্রহ (জীবিকা) অন্বেষণ কর...” নাহ! সেই ক্ষমতাও তাদের নেই। তারা উঁচু মাপের পেশা গ্রহণের ক্ষমতা রাখে না। তারা শুধু ধর্মই শিখেছে, বড়জোর ধর্ম বেচেই খেতে পারবে।

আমাদের মহানবী (সাঃ) শুধু ইসলাম প্রচারই করেন নি, তিনি ব্যবসায় করেছেন... তিনি রাজ্য পরিচালনা করেছেন। বড় বড় সাহাবীগণও ব্যবসায় করেছেন, রাষ্ট্রের বিভিন্ন দাপ্তরিক কার্য পরিচালনা করেছেন। এ জমানার আলেমদের সে ক্ষমতা নেই, তারা শুধু জানে কিভাবে মসজিদে নামাজ পড়াতে হয়, বয়ান করতে হয়, খুতবা পাঠ করতে হয়, ওয়াজ-মাহফিল করতে হয়, ঢুলে ঢুলে উর্দু কবিতা আবৃতি করতে হয়, বাচ্চাদের আরবি শেখাতে হয়, মিলাদ পড়াতে হয়, তাবিজ-ক্ববজ করতে হয়, কুরবানির সময় একশ বাড়িতে খ্যাপ মেরে দু’শ গরু জবাই দিতে হয়। ব্যস!

এসব মাদ্রাসা থেকে বের হবার পর পৃথিবী সম্পর্কে তাদের ভেতরে খুব সংকীর্ণ এবং বিপজ্জনক কিছু দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করে। তথ্য প্রযুক্তির জগৎ তাদের কাছে অন্ধকারাচ্ছন্ন, তারা জানে না ইন্টারনেট কিভাবে ব্যবহার করতে হয়, ব্লগ কিভাবে পড়তে হয়, ইমেইল কিভাবে পাঠাতে হয়, বিশ্বের অসংখ্য মিডিয়ায় কোথায় কি বলা হচ্ছে, কোথায় কি লেখা হচ্ছে- সে সম্পর্কে তাদের কোন ধারনাই নেই। ফলে কোনটি সত্য আর কোনটি মিথ্যে তারা সেটা ধরতে পারে না, সত্য এবং মিথ্যের মাঝে পার্থক্য করার ক্ষমতা তাদের অনেক আগেই লোপ পেয়েছে। অথচ আল্লাহ বলেছেন- “কোন ফাসিক ব্যক্তি যখন তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিয়ে আসে তখন তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে...” কিন্তু না, কোন তথ্য পরীক্ষা করার মত বিচার-বিবেচনা তাদের নেই। তারা জানে না, কিভাবে cross-referencing করতে হয়, অসংখ্য তথ্যসূত্র ঘেঁটে ঘেঁটে দেখতে হয়, কিভাবে Verify করতে হয়, validity যাচাই করতে হয়, probability estimate করতে হয়! ফলে তাদের কাছে যাই আসে, তাই তারা সত্য বলে মনে করে। অবশেষে রাজপথে নেমে পড়ে, সৃষ্টি করে ত্রাস! কি ভয়ংকর!

আমি জানি, কেউ কেউ হয়তো প্রশ্ন করবেন- ক্বওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা যদি আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে চাকরি বাকরি করে, তাহলে মসজিদে ইমামতি করবে কে? আজান দেবে কে?

ওয়াও! অসাধারন প্রশ্ন! তার মানে দাঁড়াল, কিছু মানুষকে জোর করে শুধু ইসলামই শেখাতে হবে যাতে করে তারা মসজিদের ইমাম হতে পারে, নামাজ পড়াতে পারে, খুতবা দিতে পারে, আজান দিতে পারে... তাই না? তার কোন স্বাধীনতা নেই? সে মসজিদের ইমাম হবে নাকি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির ম্যানেজার হবে- সেটা নির্বাচন করার স্বাধীনতা তার নেই? তাকে আপনি জোর করে মাদ্রাসায় পাঠিয়ে দেবেন, যাতে করে আপনার আত্মীয় মারা গেলে তার কাছে গিয়ে দোয়া চেয়ে আসতে পারেন, অসুস্থ হয়ে পড়লে পানি পড়া নিতে পারেন, কুরবানির ঈদে ডেকে এনে গরুটা জবাই করাতে পারেন! Its amazing!

জোর করেই যা শেখাতে হয়, তার আর মহত্ম্য থাকলো কই? প্রথমতঃ আমি কখনোই মনে করি না, মাদ্রাসায় আধুনিক শিক্ষা চালু করলে দেশে ইমামের অভাব হবে। আপনি কখনো শুনেছেন- দেশে ডাক্তারের অভাব, ইঞ্জিনিয়ারের অভাব, চাকরুজীবির অভাব, ব্যবসায়ীর অভাব? শুনেছেন কখনো? আপনার কি মনে হয়, যারা আজকে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে তারা ছোট বেলা থেকে ডাক্তারি পড়েছে? ছোটবেলা থেকেই লাশ কাটাকুটি করে ওস্তাদ হয়েছে? না! তাদের স্বাধীনতা ছিলো। তারা সবকিছুই শিখেছে। যথেষ্ঠ বড় হবার পরই তারা মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছে, ডাক্তার হবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিক্ষা জীবনের অধিকাংশ সময়ই শিক্ষার্থীরা সব বিষয় আয়ত্ব করে, তারপর উচ্চশিক্ষার সময় নিজেরাই নিজেদের গন্তব্য ঠিক করে। এ ব্যাপারে তারা স্বাধীন। এবং তাই দেশে বিভিন্ন পেশাজীবির অভাব কখনো হবে না।

ঠিক তেমনি ক্বওমী মাদ্রাসায় আধুনিক শিক্ষা চালু করলেও দেশে ইমামের অভাব হবে না, মুয়াজ্জিনের অভাব হবে না। বরং, তারা অনেক বেশি স্বচ্ছল হতে পারবে। হতে পারবে অনেক বেশি জ্ঞানী। ডঃ জাকির নায়েক কোন মাদ্রাসায় পড়েছেন জানেন? না, তিনি কোন মাদ্রাসায় পড়েন নি। তিনি ইসলাম নিয়ে যথেষ্ঠ গবেষনা করেছেন, তাই তিনি আজ এই পর্যায়ে। তিনি মেডিক্যালের ছাত্র ছিলেন, পেশায় ছিলেন ডাক্তার। আপনি কি চান না, বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মসজিদের ইমাম একেকজন জাকির নায়েক হয়ে উঠুক?

সময় আছে, ক্বওমী মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কার করে স্ট্যান্ডার্ড শিক্ষা ব্যবস্থার আওতায় আনতে হবে খুব শীঘ্রই। ভেবে দেখুন, দেশের আনাচে কানাচে এখনো অসংখ্য সম্ভাবনাময় শিশু আছে, তাদের ভেতরে স্বপ্ন আছে, মেধা আছে, মননশীলতা আছে, সৃষ্টিশীলতা আছে- ক্বওমী মাদ্রাসার বন্দিশালায় সেসব আস্তে আস্তে মরে যাবে। অচিরেই তারা একধরণের মস্তিষ্কবিহীন তোতা পাখিতে পরিণত হবে! যদি এভাবে চলতে থাকে, তবে নির্দ্বিধায় বলে দিতে পারি, এ জাতির কোন ভবিষ্যৎ নেই। ‘শিক্ষা’র নাম দিয়ে অশিক্ষার যে প্রহসন যুগ যুগ ধরে চলে আসছে, তার ভয়াবহ পরিণতি থেকে বাঙ্গালী জাতি রেহাই পাবে না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.