![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভীষণ কল্পনাপ্রবণ একজন মানুষ আমি। কল্পলোকের ক্যানভাসে ছবি এঁকে, মনোজগতের সুবিশাল হাইপার স্পেসে নিজের এক মহাবিশ্ব সৃষ্টি করে আমি হয়েছি ঈশ্বর। যখন প্রচন্ড কষ্টে কাঁদতে ইচ্ছে করে, তখন নিজের সৃজিত মহাবিশ্বের অসীম গ্যালাক্সিপুঞ্জ দেখে গর্বিত অনুভব করি। অতঃপর স্বপ্নীল জগতের দিকে তাকিয়ে উচ্চারণ করি দৈব বাণী- "নিশ্চই তোমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান। দুঃখ কিংবা কষ্ট তাকে স্পর্শ করে না।"
অতি সাধারণ একটি দৃশ্যপটকে অবলম্বন করে একজন পাঠককে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখার ক্ষমতা সব লেখকের থাকে না। যারা পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধ করতে চেয়েছিলেন, তারা সবাই অ্যাডভেঞ্চার কিংবা রহস্য উপন্যাসেই আশ্রয় নিয়েছেন। আর যারা সাদামাটা একটি গল্পকে বেছে নিতে চেয়েছিলেন, তারা শেষপর্যন্ত একটি অখাদ্য রচনা করতে সমর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ এমনি একজন লেখক যিনি সাদামাটা চরিত্রকে অবলম্বন করেও লিখে ফেলতে পারতেন প্রাণবন্ত সব উপন্যাস। উঠতি বয়সী ফেসবুকার, গেমারসহ বই বিমুখ প্রজন্ম সেসব বই এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলতো। ছোট ছোট বাক্যে হাস্যরসের ভেতর দিয়ে তিনি অনবদ্য স্যাটায়ার লিখে ফেলতেন; শুধু নায়ক-নায়িকার মাঝে আটকে না থেকে কাজের বুয়া, গাড়ির ড্রাইভার পর্যন্ত প্রত্যেকটি চরিত্রকে সাবলীলভাবে মূর্ত করে তুলতেন। আপনি তাঁর লেখায় নিছক রসিকতাও খুঁজে পাবেন, আবার গাম্ভীর্যপূর্ণ তত্ত্বকথাও খুঁজে পাবেন। এরকম Multi-dimensional কিংবা Multi-layered উপন্যাস ক’জন লিখতে পারেন? কিন্তু তিনি পেরেছিলেন, কারণ তিনি হুমায়ূন আহমেদ।
হুমায়ূন আহমেদের ‘মিসির আলী’ আমার সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র। এটি যে শুধুই মিসির আলীর যুক্তিবাদী মানসিকতার কারণে, সেটি কিন্তু নয়। এটি লেখকের duality বা দ্বৈততার কারণে।
এই সিরিজের উপন্যাসগুলো পড়তে পড়তে আপনার কখনো মনে হবে পুরো ঘটনাটির আসলে যৌক্তিক ব্যাখ্যা আছে, বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ আছে, মিসির আলী বিজয় হচ্ছেন, বিজ্ঞানমনস্কতা এবং যুক্তিবাদী মানসিকতাই সঠিক। লেখক বৌদ্ধিক দৃষ্টিভঙ্গির পক্ষেই আছেন।
কিন্তু ঠিক একটু পরই আপনার মনে হবে- পুরো ঘটনাটি আসলেই অলৌকিক, এর কোন যৌক্তিক ব্যাখা নেই, মিসির আলী হেরে যাচ্ছেন, যুক্তিবাদী মানসিকতার পরাজয় ঘটছে। লেখক অলৌকিকত্বকেই বিজয়ী করছেন।
মিসির আলী আসলে কোন উপসংহার টানে না। অলৌকিকত্ব এবং বিজ্ঞানমনস্কতার ভেতরে কোনটিকেই বিজয়ী করে না। এখানেই হুমায়ূন আহমেদের স্বার্থকতা। সম্পূর্ণ ভিন্ন দু’টি দর্শনের মাঝে সংঘর্ষ সৃষ্টি করে, পাঠকের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দকে প্রজ্জলিত করে লেখক একটি অপূর্ব খেলা খেলেন। এই আলো-ছায়ার খেলা খেলার ক্ষমতাও সব লেখক রাখেন না। হূমায়ুন আহমেদ রাখতেন। মানব মন খুব বিচিত্র। এটি অনিশ্চয়তার ভেতরে, সন্দেহ ও সম্ভাবনার দোলাচলে ঘুরপাক খেতে ভালোবাসে। কিন্তু যখনই সে চূড়ান্ত সত্য আবিষ্কার করে ফেলে, তখনই তার আগ্রহের পরিসমাপ্তি ঘটে। হুমায়ূন আহমেদের মত খুব বড় মাপের লেখকরা তাই চূড়ান্ত সত্যকে ধরে পাঠকের হাতে তুলে দিতেন না।
সমালোচকরা বলেন, হুমায়ূন আহমেদের খুব সাম্প্রতিক লেখাগুলো ‘অন্তঃসারশূন্য।‘ তাঁরা ভুলে যান ‘অন্তঃসারশূন্যতা’ খুব আপেক্ষিক একটা ব্যাপার। তাঁরা প্রত্যাশা করেন, প্রত্যেকটি বইতেই একখানা মহা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাসেজ থাকতে হবে, সমাজ গঠনে তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থাকতে হবে ইত্যাদি। তাঁরা ভুলে যান- যেই কমবয়েসী ছেলেটি চুল স্পাইক করে, হেডফোন কানে গুঁজে, গুনগুনিয়ে জাস্টিন বিবারের গান গাইতে গাইতে ক্যাম্পাসমুখী হয়, আড্ডার ঝড় তোলে, সারাদিন মোবাইল, ফেসবুকিং কিংবা গেমিং-এ মত্ত থাকে; কিংবা যে মেয়েটি পার্সোনা থেকে নতুন হেয়ার স্টাইল করিয়ে এসে বান্ধবীদের সামনে চিৎকার করে নিজের চুলের প্রশংসা করতে থাকে, দশ দোকান ঘুরে স্টাইলিশ একটি নতুন পোশাক কিনে আনে- তাদের অগোছালো, অতিপ্রাযুক্তিক শোবার ঘর কিংবা পড়ার ঘরে আপনি রবী ঠাকুর, শরৎচন্দ্র, কিংবা বঙ্কিমচন্দ্র খুঁজে পাবেন না; খুঁজে পাবেন হুমায়ূনকে।
এখানেই হুমায়ূন আহমেদের সার্থকতা। এখানেই তাঁর অনন্যতা।
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৩
রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ভাল লাগল কথাগুলো। হুমায়ূন আহমেদ কে অনেকের সাথেই তর্ক করি। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ সব তর্কের উপরে। হুমায়ূন আহমেদ দিনে দিনে আসে না।