নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নিউরণের মুক্ত ক্যানভাসে স্বপ্ন এঁকে যাই.....

নিরপেক্ষ নই; সত্য, ন্যায় ও স্বাধীনতার পক্ষেই আছি

মোঃ নাহিদ শামস্‌

ভীষণ কল্পনাপ্রবণ একজন মানুষ আমি। কল্পলোকের ক্যানভাসে ছবি এঁকে, মনোজগতের সুবিশাল হাইপার স্পেসে নিজের এক মহাবিশ্ব সৃষ্টি করে আমি হয়েছি ঈশ্বর। যখন প্রচন্ড কষ্টে কাঁদতে ইচ্ছে করে, তখন নিজের সৃজিত মহাবিশ্বের অসীম গ্যালাক্সিপুঞ্জ দেখে গর্বিত অনুভব করি। অতঃপর স্বপ্নীল জগতের দিকে তাকিয়ে উচ্চারণ করি দৈব বাণী- "নিশ্চই তোমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান। দুঃখ কিংবা কষ্ট তাকে স্পর্শ করে না।"

মোঃ নাহিদ শামস্‌ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুরতাদ মাওলানা!

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৬

রূপপুর গ্রামের জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা বশির খাঁ চুপচাপ দাঁড়িতে হাত বোলাচ্ছেন। তাঁর উঠোন জুড়ে অজস্র মানুষের একটা জটলা গোল হয়ে ঘিরে আছে তাঁকে। তিনি যে চেয়ারটিতে বসেছেন সেটিতে কোন আরাম নেই, এক ধরণের অস্বস্তি বোধ হচ্ছে। এই মুহূর্তে কাউকে চেয়ার পাল্টাতে বলাটাও ঠিক হবে না। গুরুত্বপূর্ণ একটা সালিশ বসেছে, বিচারকের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি নিজেই। সালিশের বিষয়বস্তু জমি-জমা সংক্রান্ত। গ্রামের অবস্থাসম্পন্ন দুই পরিবারের মধ্যে জমি-জমার মালিকানা বিষয়ক বড় ধরনের গোলযোগ হয়েছে, সেটাই মিটমাট হবে আজ। দুই পরিবারের কর্তা ব্যক্তি যথাক্রমে- সোবহান আলী এবং কাদের ব্যাপারি। সোবহান আলী নাকি ইতোমধ্যে কাদের ব্যাপারির বাড়িতে হামলাও করেছে। ব্যাপারখানা বেশ জটিল হয়ে গেছে, কোর্ট-কাছারির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে পারলেই ভালো হত। কিন্তু গ্রামের অল্পশিক্ষিত মানুষ, সালিশেই তাদের সন্তুষ্টি।



তাঁর চারপাশে আরো দু’চারজন হুজুর বসে আছেন। সামনের দিকে দু’পাশের দু’টো চেয়ারে বসেছেন সোবহান আলী এবং কাদের ব্যাপারি। সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না। সালিশ শুরু করতে হবে। মানুষ অপেক্ষা করছে।

বশির খাঁ কাশি দিয়ে কথা শুরু করলেন- “সোবহান আলী, আপনার বক্তব্য পেশ করেন।“



সোবহান আলী শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়লেন। তারপর বক্তব্য শুরু করলেন।–

“জনাব, আমার প্রতিবেশী কাদের ব্যাপারি পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে না। সারাদিন সে বিবিধ প্রকারের বিদ’আত কাজ-কারবারে লিপ্ত থাকে। লোকমুখে শুনি, সে নাকি আল্লাহ-খোদা মানে না। ছিঃ ছিঃ! এইরকম একজন কাফেরের শাস্তি হওয়া উচিৎ।“



কাদের ব্যাপারি হঠাৎ ক্ষেপে গেলো-

“হই মিয়া! ফালতু কথা বলেন! উপস্থিত আলেমগণ এর বিচার করেন। সোবহান মিয়া নিজেই একজন কাফের। তাঁর দোকানে অশ্লীল, বেগানা নারীর ছবি পাওয়া যায়। তারে আমি কোনদিনই জুম্মাবারে মসজিদে দেখি নাই। দুনিয়ার যত বেদ’আত কাজ কারবার আছে, সেইগুলা সেই বেশি করে। আপনি পারলে এখানে উপস্থিত মানুষগোরে জিগাইতে পারেন।“



মাওলানা বশির খাঁ বেশ বিরক্ত হলেন। তিনি বললেন- “দ্যাখেন ভাই, আমরা এখানে বিচার করতে আসছি জমি-জমা নিয়া। পুকুর পাড়ের জমিখানার আসল মালিক কে, আমরা সেইটা নিয়ে কথা বলব। আর তাছাড়া, গতকাল রাইতে যে মাইর-পিট খানা হয়েছে, সেইটা নিয়া কথা হবে। আপনারা এখানে আল্লাহ-খোদা, নামায-রোজা নিয়া আসছেন ক্যান! সেইগুলা নিয়া পরেও আলোচনা হতে পারে। এখন কাজের কথায় আসেন! বলেন সোবহান আলী, আপনি যে জমির মালিক তার প্রমাণ কি?”

সোবহান আলী জোর গলায় ঘোষণা করলেন- “আমিই পুকুর পাড়ের দুই বিঘা জমির মালিক। কারণ আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ি। রোজা রাখি, তাহাজ্জুদ পড়ি...”

কাদের ব্যাপারি তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, “নাউজুবিল্লাহ! এত্ত বড় মিছা কথা ক্যামনে কইলেন। খোদা তায়ালা সাক্ষী আছেন। এই জমির মালিক আমি। কারণ, আমি সারাদিন-রাইত নফল ইবাদতে মশগুল থাকি। আপনার মত কাফের-মুরতাদ এই জমির মালিক হইতে পারেন না।“ কাদের ব্যাপারির সমর্থকগণ হই হই করে তাঁকে সমর্থন যোগাতে থাকে।



দুই পক্ষ হঠাৎ করে উত্তেজিত হয়ে পড়ল।

মাওলানা বশির খাঁ পড়লেন মহা বিপাকে। এইভাবে তো সালিশ চলতে পারে না। তিনি উভয় পক্ষকে শান্ত হবার নির্দেশ দিলেন।



“ভাইসব, আপনারা একটা ব্যাপার বুঝতে পারতেছেন না। এইখানে কে নামায পড়ে, কে পড়ে না, কে কাফের, কে কাফের না... এইসব নিয়া কথা হইতাছে না। কথা হইতাছে জমি নিয়া। আবারও বলি, কথা হইতাছে জমি নিয়া। আপনারা দলিল-দস্তাবেজ নিয়া আইসা প্রমাণ করেন যে, জমির মালিক আপনাদের মধ্যে কে। আর কালকের মাইর-পিট এবং লুটপাটের ঘটনার সাক্ষী কারা কারা আছেন, তাদের নিয়া আসেন। সাক্ষ্য-প্রমাণ দেইখা বিচার করব। হুদাই আল্লাহ-খোদার পিছনে লাগছেন ক্যান।“

এই কথা শুনে জনতা নীরব হয়ে গেলো। কুতকুতে চোখে সবাই মাওলানা বশির খাঁকে দেখছে। বশির খা’র ব্যাপারটা খুব ভালো ঠেকছে না।



সোবহান আলী হঠাৎ রেগে গিয়ে বললেন- “হুজুর, তারমানে আপনি বলতে চাইতেছেন নামাজ-রোজা এইখানে বিষয় না? এত বড় গুনাহের কথা আফনে বলতে পারলেন। আফনে তো মুরতাদ। এই সালিশ মানি না!” বেশ কিছু মানুষ চিৎকার করে তাঁকে সমর্থন যোগাতে থাকে।



তার কথায় সায় দিয়ে কাদের ব্যাপারি উঠে দাঁড়িয়ে দ্বিগুণ জোরে ঘোষণা করলেন- “মাওলানা বশির খাঁ, আল্লাহ পাক আপনার ওপর বেজার হয়েছেন। আফনে খোদার সাথে বেঈমানি করেছেন, রসূলের সাথে বেঈমানি করেছেন! এজন্যই তো বলি, আফনে গতকাল এশার নামাজ পড়ান নাই কেন! আফনে কাফের! আফনে মুরতাদ!”

উপস্থিত জনতা ক্ষোভে ফেটে পড়ল।



সোবহান আলী চিৎকার করে বলতে লাগলেন- “ইনার সালিশ মানি না। ইনার পেছনে আর নামাযও পড়ব না। এই মুরতাদ মাওলানারে দোর্‌রা মাইরা আজকেই গেরাম ছাড়া করন লাগবো।“

জনতা আবারও চরম আক্রোশে হই হই করে উঠলো- “ হ হ, গেরাম ছাড়া করন লাগবো, গেরাম ছাড়া করন লাগবো।“

সবাই ধীরে ধীরে বশির খাঁর দিকে এগিয়ে আসতে থাকে।



মাওলানা বশির খাঁর শিরদাঁড়া দিয়ে ভয়ের স্রোত বয়ে যাচ্ছে। তিনি মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করতে লাগলেন। হঠাৎ খেয়াল করলেন, কেউ তাঁকে পেছন থেকে সজোরে ধাক্কা দিলো। মাওলানা সাহেব চেয়ার থেকে মুখ থুবড়ে পড়ে গেলেন। “কাফের মাওলানা! মুরতাদ মাওলানা!” বলতে বলতে মানুষ তাঁর দিকে ছুটে আসতে থাকে। মাওলানা বশির খাঁ গায়ের অগণিত পায়ের চাপ অনুভব করছেন। কেউ একজন প্রচন্ড বেগে তাঁর তলপেটে লাথি ছুড়লো। বশির খাঁ ব্যথায় মুখ বিকৃত করে ফেললেন। শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে চিৎকার করে উঠলেন- “ভাই, আমি কাফের না। আমি কাফের না। আমি আল্লাহ-খোদা মানি। আমারে আল্লাহর ওয়াস্তে ছাইড়া দ্যান।“ কিন্তু কেউ তাঁর সে কথা শুনতে পেলো না।

বশির খাঁর দৃষ্টি অস্পষ্ট হতে শুরু করল। জিভে গলা বেয়ে উঠে আসা রক্তের নোনতা স্বাদ অনুভব করতে থাকেন।



প্রচন্ড ব্যথায়, যন্ত্রনায় মাওলানা বশির খাঁ মূর্চ্ছা গেলেন।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:০৪

মোঃ আনারুল ইসলাম বলেছেন: ভাল হয়েছে

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:১২

মোঃ নাহিদ শামস্‌ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

২| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:২৬

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: ক্ষমতাবান ব্যক্তি ছাড়া বিচার শালিশ হওয়াটা কঠিন। ক্ষমতাবান ব্যক্তির আশে পাশে ষন্ডামার্কা কিছু বডিগার্ড থাকবে, যাদের বগলে বা কোমরে পিস্তল থাকবে, কারো হাতে লাঠি থাকবে, এমন হলেই না বিচার, শালিশ হয়। বশির খাঁর আশেপাশে এগুলো কিছু রাখেননি। তাহলে উচিত কথা বলতে গেলে সেতো মার খাবেই।

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:১৪

মোঃ নাহিদ শামস্‌ বলেছেন: আপনার গঠনমূলক সমালোচনার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আসলে কোন একটি গল্পে সবকিছুই যে 'পারফেক্টলি লজিক্যাল' হতে হবে, এমন কোন কথা নেই। গল্পকার যে উদ্দেশ্য এবং থিম মাথায় রেখে লিখছেন, সেটি পূরন করার স্বার্থ্যে যেকোন সেটিংসই ব্যবহার করা যেতে পারে। সত্য কথা বলার ফলে একজন নিরপরাধ মানুষ যে মার খাচ্ছেন, আমি আসলে এটিই দেখাতে চেয়েছি। প্রথমতঃ গল্পের অনেকগুলো বিষয় 'অস্বাভাবিক।' একজন অপরাধীকে বিচার করতে হয় তার 'অপরাধ' দিয়ে, সে নামাজ পড়ে কিনা, আল্লাহ-খোদা মানে কিনা- সেটি দিয়ে নয়। এই গল্পটি লেখার মূল উদ্দেশ্য ৭১-এর মানবতাবিরোধী অপরাধীদের শাস্তির দাবির বিরুদ্ধে কিছু মানুষের প্রোপাগান্ডাকে তুলে ধরা। এটি তুলে ধরার স্বার্থেই সেটিংসটি ব্যবহার করা হয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.